হেযবুত তওহীদ একটা মহাসত্য নিয়ে কাজ করছে, একটা আদর্শ নিয়ে কাজ করছে। সেই আদর্শটা আমরা পত্র-পত্রিকায়, হ্যান্ডবিল, বইপুস্তক আকারে জনগণের মাঝে তুলে ধরছি। আদর্শটা হচ্ছে, বর্তমান বিশ্ব ব্যবস্থায় যে সংকট চলছে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক, পারিবারিক সংঘাত চলছে- এ সংঘাত বন্ধ করার জন্য ইসলামের প্রকৃত শিক্ষা মানবজীবনে কার্যকর করতে হবে। আল্লাহর দেওয়া দীনুল হক প্রতিষ্ঠা করলেই মানুষের শান্তি। এই আদর্শটা প্রচার করছি আমরা সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ উপায়ে। এটা প্রচার করা একদিকে আমাদের সাংবিধানিক অধিকার, অন্যদিকে মানবাধিকার। এই কাজ করতে গিয়ে আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীসহ কেউ কোনদিন বলতে পারবেনা হেযবুত তওহীদ কোন আইন ভঙ্গ করেছে, কোন অন্যায় করেছে। আজকে সমাজে যখন ধর্মের দোহাই দিয়ে, মিথ্যা ফতোয়া দিয়ে মেয়েদেরকে তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছিল, মেয়েদের হেনস্তা করা হচ্ছিল, তাদের শিক্ষার পথ রুদ্ধ করা হচ্ছিল, তাদের কথা বলার স্বাধীনতাকে হরণ করা হচ্ছিল, মেয়েদের যাবতীয় অধিকার প্রয়োগ করার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হচ্ছিল তখন আমরা কোর’আন-হাদিস থেকে ইসলামের ইতিহাস তুলে এনে প্রমাণ করার চেষ্টা করেছি, যে ইসলামে নারীদের পূর্ণাঙ্গ স্বাধীনতা রয়েছে। ইসলাম তাদের সম্মান দিয়েছে, তাদের মুক্তবুদ্ধি প্রকাশ করার অধিকার দিয়েছে, তাদের কাজে অংশগ্রহণ করার ক্ষেত্রে স্বাধীনতা দিয়েছে।
যখন আমরা এই দায়িত্ব নিয়ে মাঠে কাজ করছিলাম তখন আমাদের পথেঘাটে, গ্রামেগঞ্জে, শহরে সর্বত্র আমাদের নারীরা আক্রান্ত হচ্ছেন, আক্রমণের শিকার হচ্ছেন। কারা আক্রমণ করছে? একটা বিশেষ গোষ্ঠী, একটা বিশেষ শ্রেণি। তারা হচ্ছে, যারা ধর্মের নামে বিভিন্ন ধরনের স্বার্থ উদ্ধার করে অপরাজনীতি করে। উগ্রবাদী-সন্ত্রাসবাদী একটি গোষ্ঠী। তারা কোর’আন-হাদিসের অপব্যাখ্যা দিয়ে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টির অপচেষ্টা করে। ওয়াজ-মাহফিলের মতো জায়গায় বসে তারা একদল আরেকদলের বিরুদ্ধে হুমকি দেয়। হেযবুত তওহীদের বিরুদ্ধে তাদের এত আক্রোশ কেন? তাদের আক্রোশ হচ্ছে এইজন্য যে, তারা এতদিন ধরে ধর্মের নামে অধর্ম চর্চা করে আসছে, আল্লাহ কোর’আনে যা বলেননি তারা নিজেদের মনের রঙ মিশিয়ে সেগুলি আল্লাহর নাম বলে চালিয়ে দিচ্ছে, মিথ্যা ফতোয়া দিয়ে নারীদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করছে। তাদের এই অপকর্মকে প্রকাশ করে দিয়েছে হেযবুত তওহীদ। এ জন্য তারা হেযবুত তাওহীদের বিরুদ্ধে নানা মিথ্যা প্রোপাগান্ডায় লিপ্ত হয়েছে।
হেযবুত তওহীদের নারীদের উপর অনেক জায়গায় আক্রমণ চালানো হয়েছে। লাঞ্ছনা করা করেছে, অপমান করা হয়েছে, কাপড়-চোপড় ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে, ধর্ষণের হুমকি দেওয়া হয়েছে, মারধর করা হয়েছে। শুধু তাই নয় সেগুলি ভিডিও করে স্যোশাল মিডিয়ায় প্রচার পর্যন্ত করা হয়েছে। অনলাইনে সেগুলো আবার তাদের লক্ষ লক্ষ অন্ধ অনুসারী ছড়িয়ে দিচ্ছে। হেযবুত তওহীদের মেয়েরা সভ্য, ভদ্র, শিক্ষিত ঘরের মেয়ে। তারা তাদের জীবনকে উৎসর্গ করেছে দেশের কল্যাণে, মানুষের কল্যাণে, দ্বীন ইসলামের কল্যাণে। অথচ আজকে তাদের আক্রান্ত হতে হচ্ছে। এই আক্রান্ত হওয়ার প্রতিবাদে আমরা তাৎক্ষণিকভাবে আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীকে জানিয়েছি, সরকারকে জানিয়েছি, থানায় জিডি করেছি। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রে থানা পুলিশ বিষয়টিকে অবজ্ঞা করেছেন, এড়িয়ে গিয়েছেন। যেখানে আইনি পদক্ষেপ নিয়েছেন সেখানে ওই ধর্মান্ধরা ক্ষমা চেয়েছে, ‘তারা কোনদিন আর এই অন্যায় করবে না’ বলে মুচলেকা দিয়েছে।
আমি আজকে পরিষ্কার করে বলতে চাই, বাংলাদেশের সরকারপ্রধান একজন নারী। যিনি তিন টার্মে ক্ষমতায় আসীন রয়েছেন। বিরোধীদলের নেত্রী তিনিও নারী, জাতীয় সংসদের স্পিকারও একজন নারী, স্বাধীনতার পর যারা দেশ পরিচালনা করেছেন তাদের অধিকাংশই নারী। এই শীর্ষ পদে নারীদের ক্ষমতায়ন হওয়া সত্ত্বেও আজকে হেযবুত তওহীদের নারীদেরকে রাস্তাঘাটে হেনস্তা হতে হচ্ছে, লাঞ্ছিত হতে হচ্ছে। তাদেরকে ধর্মান্ধ, ধর্মব্যবসায়ী মোল্লাগোষ্ঠীর দ্বারা আক্রান্ত হতে হচ্ছে। এটা অত্যন্ত নিন্দাজনক, হতাশাজনক ও ন্যক্কারজনক বিষয়।
বাংলাদেশকে আমরা জঙ্গিবাদী, উগ্রবাদী, ধর্মব্যবসায়ী মোল্লাদের হাতে ইজারা দিতে পারি না। আমাদের পরিষ্কার বক্তব্য, হেযবুত তওহীদের নারীদের উপরে যেসব স্থানে হামলা করা হয়েছে, যারা তাদেরকে আহত-রক্তাক্ত করেছে তাদের তালিকা আমাদের কাছে আছে, সবাইকে আইনের আওতায় আনুন।
মানবাধিকার নিয়ে যারা কাজ করেন তাদের বলতে চাই, হেযবুত তওহীদের বেলায় আপনাদের মুখগুলো বন্ধ থাকবে এটা মেনে নেওয়া যায় না। যদি কোন ব্যবস্থা না নেওয়া হয় তাইলে বড় ধরনের কর্মসূচি নিয়ে নারীরা মাঠে নামবে। আমরাও মানুষ, আমাদের রক্ত মাংস আছে, আমাদেরও আত্মরক্ষার অধিকার আছে। কিন্তু আমরা সেই কঠিন কর্মসূচি দিতে চাই না। আমরা বিশ্বাস করি, দেশে আইন আছে, আইনের প্রয়োগ হবে। আইনের প্রতি আস্থা রাখতে চাই।