রিয়াদুল হাসান:
সারা দুনিয়াতে ইসলামকে জনপ্রিয় করে তোলার জন্য বহু তাত্ত্বিক, চিন্তাবিদ, রাজনৈতিক দল চেষ্টা করে যাচ্ছে কিন্তু রাজনৈতিক ও চরমপন্থী আন্দোলনগুলোও শুরুতে বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করলেও বর্তমান সময়ে এসে একে একে মুখ থুবড়ে পড়ছে, জনপ্রিয়তা হারাচ্ছে। কোনোভাবেই ইসলামকে আধুনিক মানুষ তাদের গ্রহণযোগ্য জীবনধারা হিসাবে বরণ করছে না, বিবেচনাও করছে না।
বর্তমানের এ পরিস্থিতির বীজ রোপিত হয়েছে ইতিহাসের ঐ ক্রান্তিলগ্নে যখন মুসলিমরা অসহায় মানুষদের মুক্তির জন্য সামান্য চেষ্টাও করে নি, অথচ তাদের জন্মই দেওয়া হয়েছিল বিশ্বমানবতার মুক্তির লক্ষ্যে। যে জাতিটিকে শেষ নবী প্রচণ্ড ঝড়ের বেগে ধাবিত করে দিলেন তারা যখন স্থবির হয়ে পড়ল তখন বহু বিকৃতি তাদের মধ্যে দানা বাঁধল। ফলে তাদের অভ্যন্তরেই পঁচন ধরল। তাদের হাতে সর্বোত্তম জীবনাদর্শ থাকা সত্ত্বেও মানুষের মুক্তির জন্য মধ্যযুগের বর্বরতা বন্ধ করার জন্য ইউরোপে ছুটে যায় নি, কৃষ্ণাঙ্গদেরকে দাসত্ব থেকে লুপ্ত করতে আমেরিকায় ছুটে যায় নি, জারতন্ত্রের নিষ্পেষণ থেকে শ্রমজীবী মানুষকে বাঁচাতে রাশিয়ায় ছুটে যায় নি। এ সময়গুলোতে স্থবির অন্তর্মুখী মুসলিমদের আলেম ওলামারা দীনের ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র বিষয় নিয়ে মাসলা মাসায়েল রচনায় ব্যাপৃত, কামেল বুজুর্গরা ছিলেন আধ্যাত্মিক সাধনায় রত, আর তাদের সুলতান, আমির, ওমরাহরা তাদের প্রাসাদের হেরেমে হাজার হাজার নারী আর অঢেল সুরার নেশায় বুঁদ হয়েছিল।
তখন অবশিষ্ট দুনিয়ায় নির্যাতিত নিপীড়িত জনগোষ্ঠীর জন্য জীবনব্যবস্থার সঙ্কট মেটাতে জন্ম নিল নতুন নতুন দর্শন। ধর্মের যে কাজ অর্থাৎ মানুষের জীবন পরিচালনার জন্য দিকনির্দেশনা প্রদান সেটা বিকল্প এই জীবনব্যবস্থাগুলো পূর্ণ করে দিল। গণজাগরণ হলো, বিপ্লব হলো, সুখী সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য উদ্দাম কর্মস্পৃহা নিয়ে ধর্মহীন নেতাদের নেতৃত্বে কাজে নামলো মানুষ। তাদের সামনে আর ইসলামের মাহাত্ম্য রইল না। তাদের সামনে আব্রাহাম লিংকন, রুশো, নেপোলিয়ন, কার্ল মার্কস, মাও সেতুং-ই উদ্ধারকর্তা হিসাবে গৃহীত হয়ে গেল। শেষ রসুলের (সা.) ১৬০ কোটি অনুসারীও এখন তাদের মতাদর্শকেই জাতীয় অর্থনৈতিক সামাজিক জীবনে শিক্ষাব্যবস্থায় অনুকরণ করছে।
বর্তমানে আমরা ইসলামের যে রূপটি দেখতে পাচ্ছি সেগুলো আধুনিক সমাজের চিন্তা ও সংস্কৃতির সাথে বহুলাংশে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করছে। সমাজের অর্থনৈতিক অবিচার, সামাজিক অশান্তি, নিরাপত্তাহীনতা, রাজনৈতিক সঙ্কট, বৈশ্বিক সঙ্কট, সাংস্কৃতিক সংকট, দারিদ্র্য ইত্যাদি ¶েত্রগুলো নিয়ে ইসলামের আলেমদের কোনো বক্তব্য নেই, সেখানে তাদের কোনো বিচরণ নেই। তারা আছেন নারীদের পোশাক কতটুকু ঢিলা হবে, প্রশ্রাব পায়খানার আগে ও পরে কী দোয়া পড়তে হবে, কুলুখ ব্যবহারের সঠিক পদ্ধতি কী হবে, টাখনুর কতটা উপরে পায়জামা পরতে হবে এগুলো নিয়ে। পূর্ববর্তী যুগের ফকীহ, ইমাম, মুফাসসিরগণ উম্মতে মোহাম্মদীর আরবীয় সংস্কৃতিনির্ভর সমস্ত আচরণকেই ইসলামের মাসলা মাসায়েলের মধ্যে, বিধি-বিধানের মধ্যে প্রবেশ করিয়ে দিয়েছেন, যা সকলের উপর চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা অব্যাহত আছে। তারা নারীদেরকে কার্যত গৃহবন্দী করে রাখার প¶পাতি অথচ বর্তমান যুগ মেয়েদেরকে বহু আগে মহাকাশে নিয়ে গেছে। এখন ঐ বাস্তবতার সাথে সম্পর্কহীন মাসলা-মাসায়েল সর্বস্ব বিকৃত ইসলাম এই অগ্রসর যুগের মানুষ কেন মেনে নেবে?
বর্তমানে কেবল আতঙ্ক বিস্তারের জন্য ইসলামিক জঙ্গিবাদীরা ইসলামের নাম দিয়ে নিরীহ সাধারণ মানুষকে রাতভর জবাই করছেন, মধ্যপ্রাচ্যে অসংখ্য মানুষকে জবাই করার বীভৎস দৃশ্য ভিডিও করে তা অনলাইনে প্রচার করছেন, যেন তাদের নৃশংসতা দেখে মানুষ শিউরে ওঠে। সাম্রাজ্যবাদীদের তাণ্ডবের মোকাবেলায় জঙ্গিবাদীরা এসব করছেন বলে মনে করা হয় কিন্তু সেটা সঠিক পথ নয়, ওপথে ইসলাম প্রতিষ্ঠা হবে না, মুসলিমরাও রক্ষা পাবে না। উপরন্তু তাদের এসব কাজের ফলে ইসলাম কেবল অমুসলিম নয়, মুসলিমদের কাছেও আবেদন হারাচ্ছে। এমতাবস্থায় ইসলামকে যারা আবার তার অতীত গৌরবের অবস্থানে দেখতে চান তাদের এখন কী করণীয় সেটা হেযবুত তওহীদ তাদের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করছে।