ওবায়দুল হক:
যে তওহীদের উপর ভিত্তি করে পৃথিবীর সমস্ত জীবন-ব্যবস্থা, দীন অবতীর্ণ হয়েছিল, সেই তওহীদ যেমন পৃথিবীর কোন জাতির মধ্যে নেই, তেমনি এই তথাকথিত ‘মুসলিম’ জাতির মধ্যেও নেই। অন্য সব ধর্ম ও জাতি যেমন এবং যতখানি বহুত্ববাদের (শিরক) ও নাস্তিক্যে ডুবে আছে এই জাতিও ততখানিই ডুবে আছে। অন্য ধর্মের মানুষগুলোর মত এই ধর্মের মানুষগুলোও বুঝছেনা, কেমন করে আজ আর তারা মুসলিম নেই। আকিদার (Concept) বিকৃতিতে তওহীদ এদের কাছে শুধু মাটির, পাথরের তৈরী মূর্তিকে সাজদা না করার মধ্যে সীমাবদ্ধ। আল্লাহর শেষ রসুলের (দ.) মাধ্যমে প্রেরিত ইসলাম আর বর্তমানের “ইসলাম ধর্ম” দু’টি সম্পূর্ণ ভিন্ন ও বিপরীতমুখী জিনিস।
যে জাতিকে আল্লাহ বলেছেন তোমরা যদি মো’মেন হও তবে পৃথিবীর প্রভূত্ব, কর্তৃত্ব তোমাদের হাতে দেব (সুরা নূর ৫৫) এবং সত্যই রসুলাল্লাহর হাতে গড়া সেই ছোট্ট জাতির হাতে আল্লাহ তাই দিয়েছিলেন। বর্তমান মুসলিম জাতির হাতে পৃথিবীর কর্তৃত্ব তো দূরের কথা, এ জাতি আজ পৃথিবীর অন্য প্রত্যেক জাতি দিয়ে অপমানিত, অত্যাচারিত, লাঞ্ছিত, পরাজিত, এক কথায় নিকৃষ্টতম জাতি। আর নিজেদের মধ্যে অনৈক্য, শিয়া-সুন্নী দাঙ্গা, শাফেয়ী-হাম্বলী-ওয়াহাবী নিয়ে বাহাস, হানাহানি, যুদ্ধে লিপ্ত এবং ভয়াবহ কুসংস্কার ও দারিদ্র্যে নিমজ্জিত। তারা আজ আল্লাহর লা’নতের পাত্র। প্রশ্ন হলো- কেন এই লা’নত? এর জবাব হচ্ছে এই, আল্লাহ বলেছেন যারা আল্লাহ ও রসুলের উপর ঈমান এনে তারপর কুফরে প্রত্যাবর্তন করছে তাদের উপর আল্লাহ, আল্লাহর মালায়েকদের ও মানব জাতির সম্মিলিত লা’নত (অভিশাপ) (সুরা ইমরান ৮৬-৮৯)।
তওহীদ অর্থ হচ্ছে ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, রাষ্ট্রীয়, আইন-কানুন, দণ্ডবিধি, অর্থনীতি ইত্যাদি সর্ব বিষয়ে বিশেষ করে সমষ্টিগত জীবনে আল্লাহর সার্বভৌমত্বকে স্বীকার করে ও বিশ্বাস করে নেয়া। আল্লাহ বলছেন- মো’মেন শুধু তারা যারা আল্লাহ ও তার রসুলকে বিশ্বাস করে (অর্থাৎ জীবনের সর্বস্তরে আল্লাহর বিধান ছাড়া আর কাউকে মানে না) তারপর তা থেকে বিচ্যুত হয় না এবং নিজেদের প্রাণ ও সম্পদ দিয়ে (তা প্রতিষ্ঠার জন্য) আল্লাহর রাস্তায় সংগ্রাম, জেহাদ করে (সুরা হুজরাত ১৫)। অর্থাৎ মো’মেন হবার জন্য আল্লাহ দু’টি শর্ত ও সংজ্ঞা দিচ্ছেন। একটা জীবনের সর্বস্তরে আল্লাহর সাবভৌমত্ব স্বীকার অর্থাৎ তওহীদ এবং দ্বিতীয়টি সেই তওহীদকে সমস্ত পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম। এই দু’টোর যে কোন একটা বাদ গেলেই সে বা তারা আর মো’মেন নয়। সারারাত তাহাজ্জুদ পড়লেও নয়, সারা বছর রোযা রাখলেও নয়। মুসলিম হবার দাবিদার এই জাতি বহু শতাব্দী আগেই তওহীদ প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম ছেড়ে দিয়েছে, যার ফলে আল্লাহ তার প্রতিশ্রুতি মোতাবেক এই জাতিকে খ্রিষ্টান জাতিগুলির দাসে পরিণত করে দিয়েছেন। এ তওহীদকে (আল্লাহর একত্ব ও সার্বভৌমত্ব) সার্বিক জীবন থেকে প্রত্যাখ্যান করে সমষ্টিগত জীবনে খ্রিষ্টান, ইহুদীদের সার্বভৌমত্ব গ্রহণ করে আল্লাহর সার্বভৌমত্বকে শুধু ব্যক্তি জীবনে সীমাবদ্ধ করায় অর্থাৎ শেরক ও কুফরে ফিরে যাওয়ায় এই জাতিকে লা’নত দিয়েছেন।