যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে গত ২২ জানুয়ারি ২০২২ ইং রোজ শনিবার দিনব্যাপী রাজধানীর গেন্ডারিয়ায় জহির রায়হান সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে এই বর্নাঢ্য সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এবারের সম্মেলনের প্রতিপাদ্য ছিল ‘ব্যর্থ বিশ্বব্যবস্থা- যোগ্য নেতৃত্ব সৃষ্টির বিকল্প নেই’।
সকাল আটটা থেকেই সম্মেলনকেন্দ্রে হেযবুত তওহীদের নেতৃবৃন্দ প্রবেশ করতে শুরু করেন। নয়টার মধ্যেই হলরুম কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়।
ইতোমধ্যেই অনুষ্ঠানস্থলে উপস্থিত হন সম্মেলনের মধ্যমণী, লাখো জনতার হৃদস্পন্দন, সত্যনিষ্ঠ মানুষদের কাণ্ডারি, অনুষ্ঠানের সভাপতি ও হেযবুত তওহীদের মাননীয় এমাম জনাব হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম। ব্যাপক করতালি ও স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে সম্মেলনস্থল।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনার দায়িত্বে ছিলেন চিত্রগ্রহণ ও সম্পাদনা বিভাগের সদস্য জনাব রফিকুল ইসলাম এবং সাহিত্য ও গবেষণা বিভাগের সদস্য জিনাত ফেরদাউস তাবাসুম। সঞ্চালকরা অনুষ্ঠান শুরুর ঘোষণা দিতেই সম্মেলনের মূল থিমের উপর নির্মিত উদ্বোধনী ভিডিও বেজে ওঠে এল.ই.ডি স্ক্রিনে। এসময় অসাধারণ এক উৎসবমুখর আবহ তৈরি হয়।
পবিত্র কোর’আন থেকে তেলাওয়াতের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু হয়। তেলাওয়াত করেন বিশিষ্ট আলেমে দ্বীন, নোয়াখালীর শহীদী জামে মসজিদের খতিব জনাব মেহেদী হাসান সাগর।
এরপর হেযবুত তওহীদের দলীয় সঙ্গীত পরিবেশিত হয়। দলীয় সঙ্গীতের পর হেযবুত তওহীদের প্রতিষ্ঠাতা এমামুযযামান জনাব মোহাম্মদ বায়াজীদ খান পন্নীর স্মরণে “যামানার এমাম, এমামযযামান/তোমায় জানায় মোরা হাজার সালাম” গানটি পরিবেশিত হয়। এসময় হলরুমে অত্যন্ত আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়।
গান শেষে উদ্বোধনী বক্তব্য প্রদান করেন ঢাকা মহানগর হেযবুত তওহীদের আমির ডা. মাহবুব আলম মাহফুজ। এসময় তিনি অনুষ্ঠানের সভাপতি ও হেযবুত তওহীদের এমাম জনাব হোসাইন মোহাম্মদ সেলিমকে মঞ্চে আসন গ্রহণের বিনীত অনুরোধ জানান ও মাননীয় এমামকে মঞ্চে ফুল দিয়ে বরণ করে নেন হেযবুত তওহীদের দপ্তর বিভাগের সদস্যগণ। এসময় মুহূর্মুহু করতালি ও স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে হলরুম।
এরপরই অনুষ্ঠানের সবচেয়ে আকর্ষণীয় পর্বটি অনুষ্ঠিত হয়। হেযবুত তওহীদের নবগঠিত কেন্দ্রীয় কমিটির সম্পাদক ও উপকমিটির সদস্যদের নাম ঘোষণা করেন মাননীয় এমাম। এছাড়াও জেলা কমিটির সভাপতি ও থানা সভাপতিদের নাম ঘোষণা করেন তিনি। কেন্দ্রীয় কমিটির সম্পাদক ও জেলা কমিটির সভাপতিদেরকে নিজ হাতে মনোনয়নপত্র তুলে দেন হেযবুত তওহীদের মাননীয় এমাম। কমিটির সম্পাদকদেরকে ফুল দিয়ে বরণ করে নেওয়া হয় এবং অভাবনীয় শৃঙ্খলার সঙ্গে অনুষ্ঠানে আগত সকল নেতৃবৃন্দের সঙ্গে মাননীয় এমাম ফটোসেশনে অংশগ্রহণ করেন। ফটোসেশন চলাকালে ব্যাকগ্রাউন্ডে হেযবুত তওহীদের জাগরণমূলক গান বাজতে থাকে।
ফটোসেশন শেষে সদ্যঘোষিত হেযবুত তওহীদের কেন্দ্রীয় কমিটির সম্মানীত সম্পাদক ও উপদেষ্টামণ্ডলীকে সঙ্গে নিয়ে মঞ্চে আসন গ্রহণ করেন হেযবুত তওহীদের এমাম। এরপর শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন হেযবুত তওহীদের রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের আমির জনাব মশিউর রহমান। মহামান্য এমামুযযামানের পারিবারিক ইতিহাস ও ঐতিহ্য নিয়ে নির্মিত একটি ডকুমেন্টারি ভিডিও পরিবেশিত হয় এবং এরপরই হেযবুত তওহীদের নবগঠিত কমিটির সম্মানীত দপ্তর সম্পাদক ও মহামান্য এমামুযযামানের সহধর্মীণী শ্রদ্ধেয়া খাদিজা খাতুন শুভেচ্ছা বক্তব্য প্রদান করেন।
এরপর মাননীয় এমাম জনাব হোসাইন মোহাম্মদ সেলিমের জীবনী নিয়ে সম্প্রতি নির্মিত একটি ভিডিওচিত্র পরিবেশিত হয় এবং তারপরেই বক্তব্য প্রদান করেন হেযবুত তওহীদের মাননীয় এমাম জনাব হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম। মাননীয় এমাম তাঁর বক্তব্যে নবগঠিত কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যদের শপথবাক্য পাঠ করান এবং তাদের উদ্দেশ্যে দিক-নির্দেশনামূলক বক্তব্য প্রদান করেন। চলমান বিশ্বব্যবস্থার ব্যর্থতা প্রকট হয়ে ওঠার পর নতুন সভ্যতায় নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য হেযবুত তওহীদের নেতৃবৃন্দকে প্রস্তুতি গ্রহণের আহ্বান জানান।
মাননীয় এমামের বক্তব্যের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের প্রথম পর্ব সম্পন্ন হয়। খাবারের বিরতি ও সালাহর বিরতির পর বিকেলে পুনরায় অনুষ্ঠান শুরু হয়। এসময় হেযবুত তওহীদের সংস্কৃতি বিভাগের উদ্যোগে মনোজ্ঞ এক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়। জাগরণমূলক গান পরিবেশন করেন হেযবুত তওহীদের সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক জনাব শাহীন আলম ও সংস্কৃতি বিষয়ক উপকমিটির সদস্য জনাব নাজমুল আলম শান্তু।
অনুষ্ঠানের এ পর্যায়ে হেযবুত তওহীদের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ সংক্ষিপ্ত বক্তব্য প্রদান করেন। বক্তব্য রাখেন অর্থ সম্পাদক জনাব আইনুল হক, প্রচার সম্পাদক জনাব শফিকুল আলম উখবাহ, নারী সম্পাদক রূফায়দাহ পন্নী, গণমাধ্যম সম্পাদক এস এম সামসুল হুদা, চট্টগ্রাম বিভাগীয় আমির নিজাম উদ্দিন, সিলেট বিভাগীয় আমির মো. আলী হোসেন, খুলনা-২ বিভাগীয় আমির মোতালেব খান, খুলনা-১ বিভাগীয় আমির শামসুজ্জামান মিলন, বরিশাল বিভাগের আমির আলামিন সবুজ প্রমুখ। এছাড়া হেযবুত তওহীদের স্বাস্থ্য সম্পাদক উম্মুততিজান মাখদুমা পন্নী একটি স্বাস্থ্য ফাইল প্রদর্শনপূর্বক সংক্ষিপ্ত বক্তব্য প্রদান করে স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিতে হেযবুত তওহীদের সদস্যদের করণীয় তুলে ধরেন।
নতুন বছরে হেযবুত তওহীদের প্রকাশনা ভাণ্ডারে যুক্ত হওয়া নতুন বছরের ক্যালেন্ডার, নতুন ডায়রি, সম্মেলন স্মারক ও এক নজরে হেযবুত তওহীদ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন হেযবুত তওহীদের মাননীয় এমাম জনাব হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম। এসময় সম্মেলনস্থলের সবার হাতে হাতে সম্মেলন স্মারক ও নতুন বছরের ক্যালেন্ডার পৌঁছে দেওয়া হয়। সবাই যার যার ক্যালেন্ডার ও স্মারক হাতে ধরে ফটোসেশনে অংশগ্রহণ করেন। এসময় পুরো হলরুম বর্ণিল ও উৎসবমুখর হয়ে ওঠে।
অনুষ্ঠানের আরেক আকর্ষণ ছিল পুরস্কার বিতরণী পর্ব। সত্য প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে বিশাল অবদান রাখায় ১০জন সদস্যের হাতে পুরস্কার তুলে দেন মাননীয় এমাম জনাব হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম। এসময় গ্যালারিতে মুহূর্মুহু করতালি দিতে থাকেন হেযবুত তওহীদের সম্মানীত নেতৃবৃন্দ।
এরপর দ্বিতীয় সেশনের বক্তব্য প্রদান করেন হেযবুত তওহীদের মাননীয় এমাম জনাব হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম। তাঁর বক্তব্যে হেযবুত তওহীদের বিগত দিনের কর্মকাণ্ডের মূল্যায়ন, আগামী দিনের কর্মপরিকল্পনা, চ্যালেঞ্জ ও চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় করণীয় দিকগুলো চমৎকারভাবে ফুটে ওঠে। সাধারণ আলোচনা শেষে মাননীয় এমামের প্রশ্নোত্তর পর্ব শুরু হয়। সম্মেলনে উপস্থিত হেযবুত তওহীদের নেতৃবৃন্দের প্রশ্নের জবাব দেন হেযবুত তওহীদের মাননীয় এমাম। প্রশ্নোত্তর পর্বে হেযবুত তওহীদের বিরুদ্ধে অপপ্রচারেরও জবাব প্রদান করেন তিনি।
মাননীয় এমামের এই বক্তব্যের মধ্য দিয়েই অনুষ্ঠানের নির্ধারিত সময় শেষ হয়। মাননীয় এমামের মুনাজাতের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের সঞ্চালকরা হেযবুত তওহীদের কেন্দ্রীয় সম্মেলন ২০২২ সমাপ্ত ঘোষণা করেন।
সম্মেলনের বিভিন্ন সময় হেযবুত তওহীদের উন্নয়ন প্রকল্প, খেলাধূলা, নারী ও শিশু স্বাস্থ্য ইত্যাদি বিষয়ের উপর ভিডিওচিত্র প্রদর্শন করা হয়। দিনব্যাপী এই আয়োজনের অন্যতম নজরকাড়া দিক ছিল শৃঙ্খলা। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পুরো অনুষ্ঠানজুড়ে শৃঙ্খলার অপূর্ব নিদর্শন রেখে গেলেন হেযবুত তওহীদের সদস্যগণ।
অনুষ্ঠানটি আরও বড় পরিসরে হবার কথা ছিল। কিন্তু করোনা পরিস্থিতিতে হঠাৎ সরকারি বিধি-নিষেধ আরোপ হওয়ায় সীমিত পরিসরে আয়োজন করা হয়। অনেকে দূর দূরান্ত থেকে সম্মেলনে যোগ দেওয়ার জন্য রওনা হবার পরও তাদেরকে ফেরত যেতে হয়েছে, যা অত্যন্ত বেদনাদায়ক হলেও করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় বিষয়টিকে মেনে নিতে হয়েছে। তবে যারা সম্মেলনে সরাসরি যোগ দিতে পারেননি তাদের জন্য ও বিভিন্ন শাখার সদস্য-সদস্যাদের জন্য অনলাইনে সম্মেলনটি লাইভ সম্প্রচার করা হয়।
সম্মেলনটিকে হেযবুত তওহীদের পথচলায় একটি মাইলফলক বললে অত্যুক্তি হবে না। ইনশা’আল্লাহ ২২ জানয়ারি ২০২২ তারিখটি হেযবুত তওহীদের সংগ্রামী পথচলায় অত্যন্ত স্মরণীয় একটি দিন হিসেবে ইতিহাসে জায়গা করে নিবে।