গতকাল শনিবার বাদ মাগরিব নোয়াখালীর সোনাইমুড়ীতে হেযবুত তওহীদের এমাম জনাব হোসাইন মোহাম্মদ সেলিমের উদ্যোগে মহা ধুমধামের সাথে যৌতুকবিহীন চারটি বিয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে। চাষীর হাট ইউনিয়নের পোরকরায় অবস্থিত নিজ বাসভবন প্রাঙ্গণের কনফারেন্স হলে এ বিয়ে অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন হেযবুত তওহীদের এমাম। এ বিয়ে উপলক্ষে বর ও কনে পক্ষের আত্মীয়-স্বজনসহ স্থানীয় সাধারণ মানুষ দলে দলে এসে দুপুর থেকেই জড়ো হতে থাকে হেযবুত তওহীদের এমামের বাড়িতে। বিয়ে পরবর্তী ওয়ালীমা অনুষ্ঠানে সহস্রাধিক মানুষের খাবারের আয়োজন করা হয়। হেযবুত তওহীদের এমামের উদ্যোগে সোনাইমুড়ীর চাষীরহাটে যে ৪২ টি উন্নয়ন প্রকল্প চালু হয়েছে সেই প্রকল্পগুলোতেই বরদের প্রত্যেকে চাকুরি করেন।
হোসাইন মোহাম্মদ সেলিমের বাড়ির আঙিনায় অবস্থিত গার্মেন্ট-এ কর্মরত মো. জিয়া, পিতা: মো. করিম শেখ ও স্মৃতি আক্তার, পিতা মো. বেলাল হোসেন; চাষীরহাট উন্নয়ন প্রকল্পের অফিস সহকারী মো. সাইফুল ইসলাম, পিতা: মৃত আব্দুল গোফরান ও রাবেয়া বসরি, পিতা: মো. লোকমান হোসেন; উন্নয়ন প্রকল্পের নিরাপত্তাকর্মী মো. আমজাদ হোসেন, পিতা: মৃত জহিরুল হক ও ইসমাতারা বকশি, পিতা: মো. ইউনুস বকশি এবং চাষীরহাট উন্নয়ন প্রকল্পের আওতাধীন মসলামিলের টেকনিশিয়ান মো. নাহিদ মোল্লা, পিতা: মো. জালাল মোল্লা ও সাবিনা আক্তার, পিতা: মৃত তসলিম ভুঁইয়া এর মধ্যে এ বিয়ে অনুষ্ঠিত হয়। বর ও কনের পরিবারের উপস্থিতিতে ইসলামি শরিয়া মোতাবেক এ বিয়ে কার্যক্রম পরিচালিত হয়। তবে এ বিয়ের বিশেষ উল্লেখযোগ্য দিক হলো- এ বিয়েতে কোনো যৌতুকের লেনদেন হয়নি, বিয়ে পড়িয়ে কেউ অর্থ গ্রহণ করেনি, পছন্দের ব্যাপারে পাত্র-পাত্রীর পারস্পরিক স্বচ্ছন্দ মতামতের ভিত্তিতে প্রস্তাব দেওয়া এবং মোহরানা নগদ পরিশোধ করে বিয়ে সংঘটিত হয়েছে।
হেযবুত তওহীদের এমাম বিয়ে উপলক্ষে সকলের উদ্দেশে এক সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন। তিনি বলেন, বিয়ে হলো এক পবিত্র সম্পর্ক, আল্লাহর হুকুম-বিধান, কোর’আনের নির্দেশনা ও প্রকৃত ইসলামের শরীয়াকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে যদি বিয়েতে কেউ যৌতুকের আদান-প্রদান করে, মোহরানা পরিশোধ না করে, স্বাক্ষী উপস্থিত না রাখে এবং বিয়ে পড়ানোর বিনিময়ে কোনো ধর্মব্যবসায়ীকে অর্থ প্রদান করে ধর্মব্যবসার পথ প্রশস্ত করে তবে সেই বিয়ে আর পবিত্র থাকে না। রসুলাল্লাহ (সা.) ও তাঁর আসহাবদের যুগে বিয়ে হতো সম্পূর্ণ মোহরানা পরিশোধ করে, যৌতুকের তো কোনো প্রশ্নই ছিল না এবং বিয়ে পড়িয়ে অর্থ গ্রহণ ছিল ধারণারও অতীত। বিয়ে অনুষ্ঠানে সামর্থ অনুসারে মানুষকে খাওয়ানো হতো যাকে বলে ওয়ালীমা। আমরা প্রতিটা পদক্ষেপে রসুলাল্লাহ (সা.) কে অনুসরণ করার চেষ্টা করি। তিনি বলেন, বিয়ে বহির্ভূত সম্পর্ক ইসলামে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ, কারো বিয়ের প্রয়োজন হলে পরিবারকে জানাবে, আন্দোলনকে জানাবে, পাত্র-পাত্রী দেখবে, পছন্দ করবে, সামর্থ্য না থাকলে আমরা সকলে মিলে বিয়ের ব্যবস্থা করব ইনশাল্লাহ। পালিয়ে বিয়ে করা চলবে না, সামাজিকভাবে সামর্থ্য অনুসারে তোমাদের ধুমধামের সাথে বিয়ে হবে ইনশাল্লাহ। পালিয়ে বিয়ে করা কোনো সভ্য জাতির কাজ হতে পারে না। আর বিয়ের আগে তোমাদের কর্ম করতে হবে, বেকার থাকা চলবে না।
আশেপাশের বিভিন্ন এলাকা থেকে কৌতুহল বসত বিয়ে দেখতে আসেন বহু মানুষ। স্থানীয় মানুষ বিয়ের অনুষ্ঠান দেখে অভিভূত হয়ে যান। প্রত্যক্ষদর্শী সোহেল তালুকদার বলেন, এমন বিয়ে তো আগে কখনো দেখিনি, আনন্দ আছে কিন্তু কোনো উশৃঙ্খলতা নেই, সহস্রাধিক মানুষের আয়োজন কিন্তু কোনো উচ্চবাক্য নেই, কোনো ঝামেলা নেই। স্থানীয় দাওয়াতী মেহমানরা বলেন, যৌতুকের বিরুদ্ধে এক নীরব প্রতিবাদ দেখলাম, এমন উদ্যোগ যদি আরও বেশি বেশি নেওয়া হয় তাহলে যৌতুক প্রথা সমাজ থেকে ইতিহাস হয়ে যাবে, বিয়েতে জবরদস্তি থাকবে না, বিয়ে সহজ হবে এবং বিয়ে বহির্ভূত সম্পর্কও সমাজ থেকে দূর হয়ে যাবে। হেযবুত তওহীদের সদস্য, বরের (সাইফুল ইসলামের) ছোট ভাই শাহেদুল ইসলাম বলেন, হেযবুত তওহীদের মধ্যে যৌতুকের কোনো লেনদেন কখনোই হয় না, দেনমোহর সম্পূর্ণ পরিশোধ করেই বিয়ে অনুষ্ঠিত হয়, আমরা চেষ্টা করি সমস্ত কাজ প্রকৃত ইসলামের বিধান মেনে করতে।