হেযবুত তওহীদ

মানবতার কল্যাণে নিবেদিত

মাদারীপুর হত্যাকাণ্ড

৫ মে ২০০৩ সনে মাদারীপুরের ভুরঘাটা বাসস্ট্যান্ড এলাকায় “প্রকৃত ইসলামের ডাক” শিরোনামে হ্যান্ডবিল বিতরণকালে ভয়াবহ আক্রমণের শিকার হন প্রচারকার্যে নিয়োজিত নয় জন সদস্য। দীর্ঘসময় ধরে তারা মরণপণ লড়াই করেন হাজার হাজার রক্তপিপাসু দাঙ্গাবাজ সন্ত্রাসীদের সঙ্গে। ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের উপরই শাহাদাত বরণ করেন হেযবুত তওহীদের প্রথম শহীদ সাইফুল্লাহ।

শহীদ সাইফুল্লাহ

১৯৭০ সনে বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার আগরপুর গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। ৩য় শ্রেণি পর্যন্ত গ্রামের স্কুলে পড়াশোনার পর ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত মামার বাড়িতে থেকে মাউলতলা সিনিয়র মাদ্রাসায় পড়েন। পরে মাউলতলা হাইস্কুলে ভর্তি হন। ১৯৯১ সালে নিজ গ্রামের আলতাফ মেমোরিয়াল হাই স্কুল থেকে এস.এস.সি পাশ করেন। পরীক্ষা শেষে ঢাকায় এসে জার্মান টেকনিক্যাল ইন্সটিটিউটে রেফ্রিজারেশন ও ইলেকট্রিক্যাল বিষয়ে ৬ মাসের প্রশিক্ষণ নেন। এরপর আবার গ্রামে গিয়ে শিকারপুর শেরেবাংলা ডিগ্রী কলেজে ভর্তি হন। ধানমণ্ডিতে নিজ ওয়ার্কশপে তিনি ফ্রিজ, এয়ারকন্ডিশন ইত্যাদি মেরামতের কাজ করতেন। ছোটভাই সানাউল্লাহ নুরীর কাছে তওহীদের ডাক পেয়ে দীর্ঘদিন এর কঠোর বিরোধিতা করেন। এক সময় আল্ল্লাহ তাকে হেদায়াত করেন এবং ১০/০৮/০১ তারিখে মাননীয় এমামুয্যামান জনাব মোহাম্মাদন বায়াজীদ খান পন্নীর হাতে বায়াত গ্রহণ করেন। ১৬ জুন ২০০২ তিনি সহ মোট ১২ জন মোজাহেদ বালাগ থেকে গ্রেফতার হন এবং আটকাদেশ প্রাপ্ত হয়ে চার মাস কারাভোগ করেন।

৫ মে, ২০০৩ তারিখে তিনি বরিশালের ১৫ জন সদস্যের সঙ্গে তিনি মাদারীপুরের কালকিনী থানার ভুরঘাটা বাসস্ট্যান্ড এলাকায় যান প্রকৃত ইসলামের ডাক শীর্ষক হ্যান্ডবিল প্রচার করতে। ধর্মব্যবসায়ীদের উস্কানিতে ধর্মান্ধ সন্ত্রাসী রক্তলোলুপ হাজার হাজার নরপশু ধারালো অস্ত্র, লাঠিসোটা নিয়ে তাদের উপর হায়েনার মতো ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। আর সাইফুল্লাহর নেতৃত্বে হেযবুত তওহীদের সদস্যরাও তাদের ঐ আক্রমণের বিরুদ্ধে বিপুল বিক্রমে রুখে দাঁড়িয়েছিল। লড়াইয়ের এক পর্যায়ে সাইফুল্লাহকে একজন সন্ত্রাসী মাথায় প্রচণ্ড আঘাত করে। তিনি জ্ঞান হারিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। তাঁকে কাঁধে করে বেশ খানিক দূর নিয়ে যাওয়া হয়। এভাবে আক্রমণ, প্রতি আক্রমণ চলতে থাকে। এক সময় সাইফুল্লাহর জ্ঞান ফিরে আসে। তিনি চোখ মেলে দেখতে পেলেন লড়াই চলছে। শাহাদাতের ব্যাকুল পিপাসায় তিনি ছুটে যান সংঘর্ষের একেবারে কেন্দ্রস্থলে। আবারও তাঁর মাথায় প্রচণ্ড আঘাত করা হলে তিনি মাটিতে পড়ে যান। তার উপর বৃষ্টির মতো আঘাত নেমে আসতে থাকে। নিষ্ঠুর দাঙ্গাবাজদের উপর্যুপরি আঘাতে একে একে লুটিয়ে পড়েন অন্য সদস্যরাও। দুর্বৃত্তরা তাদের নিথর দেহের উপর অতৃপ্ত আক্রোশ মেটানোর জন্য লাঠি ও ধারাল অস্ত্র দিয়ে আঘাত করতে থাকে। তারা পিটিয়ে সাইফুল্লাহর দাঁত ভেঙ্গে ফেলে। শত-সহস্র আঘাতে তার দেহ এমনভাবে ক্ষতবিক্ষত ও বিকৃত হয়ে গিয়েছিল যে তাকে চেনার কোনো উপায় ছিল না। শাহাদাত বরণের ২৭ ঘণ্টা পরও তার দেহ শক্ত হয় নি, মাথার ক্ষতস্থান থেকে তাজা রক্ত ঝরে পড়ছিল।

সার্চ করুন

যুক্ত হোন আমাদের ফেসবুক পেজের সাথে...