দেশকে জঙ্গিবাদ, ধর্মব্যবসা, সাম্প্রদায়িকতা, হুজুগ, গুজব, সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসন, অপরাজনীতি, মাদক ইত্যাদি সংকট থেকে মুক্ত করার জন্য যে পরিমাণ জনসচেতনতা সৃষ্টির কাজ করছে, বেসরকারি পর্যায়ে এমন দ্বিতীয় কোনো উদ্যোগ বাংলাদেশে নেই। আমরা দেশজুড়ে এ যাবৎ দুই লক্ষাধিক জনসভা সেমিনার, পথসভা, পোর্টেবল ডিভিডি প্রোগ্রাম, প্রজেক্টর প্রোগ্রাম, সাংবাদিক সম্মেলন, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, ওয়াজ মাহফিল করেছি। দুই দুইটি দৈনিক পত্রিকা নিয়মিত প্রকাশ করে যাচ্ছি। লক্ষ লক্ষ বই ছাপিয়ে সেগুলো প্রচার করছি, পোস্টারিং করছি।
ফেসবুকে ইউটিউবে আমাদের হাজার হাজার কর্মী প্রতিদিন হাজার হাজার কর্মঘণ্টা ধর্মব্যবসা, সাম্প্রদায়িকতা, ধর্মের অপব্যবহার, জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে লিখে যাচ্ছেন, বলে যাচ্ছেন, ভিডিও বক্তব্য, ডকুমেন্টারি প্রচার করে যাচ্ছেন। তারা নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছেন মানুষের মুক্তির লক্ষ্যে কাজ করতে করতে। যদি এই কাজগুলো সরকারকে অর্থ ব্যয় করে তাদের কর্মচারীদেরকে দিয়ে করাতে হতো তাহলে কতো হাজার কোটি টাকা খরচ হতো সেটা অভিজ্ঞজনেরা বলতে পারবেন। নিজেরা খেয়ে না খেয়ে থেকে সেই অর্থ ব্যয় করে যাচ্ছেন হেযবুত তওহীদের সদস্য-সদস্যারা।
লক্ষ লক্ষ মানুষ আমাদের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ হয়েছেন। তারা শপথ করেছেন যে তারা আর ধর্মব্যবসায়ীদের তৈরি হুজুগে সাড়া দিয়ে জাতিবিনাশী কাজে লিপ্ত হবেন না, তারা জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন, তারা সাম্প্রদায়িকতা, মাদক, অপরাজনীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছেন। তারা নিজেরাও পরিশুদ্ধ জীবনযাপন করছেন, সমাজকে পরিশুদ্ধ করার জন্য সংগ্রাম করছেন, যাবতীয় অন্যায়ের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন।
দেশে নাগরিকদেরকে নৈতিক মূল্যবোধে উদ্বুদ্ধ করার কোনো শিক্ষা আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার সিলেবাস-কারিকুলামে নেই। তাই উচ্চশিক্ষিত মানুষগুলোও নৈতিক অধঃপতনের শিকার। তারা দেশের কোটি কোটি টাকা বিদেশে পাচার করে দিচ্ছে, তাদের জন্যই বাংলাদেশ বছর বছর দুর্নীতিতে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হচ্ছে। কিন্তু হেযবুত তওহীদ এমন একটি আন্দোলন যার সদস্যরা বিগত পঁচিশ বছরে দেশের একটি টাকাও নষ্ট করে নি, দেশবিরোধী কোনো কাজ করে নি, দেশের কোনো আইনভঙ্গ করে নি, কোনো অন্যায় অপরাধ, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত হয় নি। এটা সরকারি বাহিনীর তদন্ত প্রতিবেদনের ভাষ্য, এটা আমাদের কথা নয়। তাহলে এ দেশের মানুষগুলোকে সুনাগরিকে পরিণত করছে হেযবুত তওহীদ, যার আর কেউ করতে পারে নি।
দেশে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে প্রকৃত ইসলামের ভিত্তিতে আদর্শিক আন্দোলন গড়ে তুলেছি আমরা। আমাদের প্রচারের ফলে বহু জঙ্গিবাদী আদর্শের অনুসারী তাদের ভ্রান্তপথ ত্যাগ করেছে। একটি জঙ্গিবাদী হামলার মোকাবেলা করতে গিয়ে সরকারকে কোটি কোটি টাকা ব্যয় করতে হয়, দেশের ভাবমূর্তি ধ্বংস হয়। আমরা বিশ্বাস করি, যদি আমাদের বক্তব্য আরো ব্যাপকভাবে গণমাধ্যমে, শিক্ষাব্যবস্থায়, সভা-সেমিনারে প্রচার করা হয়, যদি সবাই এ কাজে এগিয়ে আসেন তাহলে এই দেশে জঙ্গিবাদ থাকবে না, ধর্মব্যবসা থাকবে না, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা থাকবে না, ধর্মের নামে হুজুগ সৃষ্টি করে জ্বালাও পোড়াও হত্যাকাণ্ড থাকবে না।
আমরা রাষ্ট্রের কর্তৃপক্ষের কাছে এবং জনগণের কাছে এই প্রস্তাবনা তুলে ধরছি যে আমরা মানুষের মানসিক পরিবর্তন সাধন করে শান্তিকামী, আইনমান্যকারী, রাষ্ট্রের কল্যাণে আত্মনিবেদিত, অন্যায়ের বিরুদ্ধে সংগ্রামী মনোভাবাপন্ন, সুসভ্য নাগরিক তৈরি করে করছি এবং করতে পারব। রাষ্ট্র কত হাজার কোটি টাকা খরচ করলে এই কাজটি করতে পারবেন বা আদৌ সেটা পারছেন কিনা আমরা জানি না। শুধু মাদকের বিরুদ্ধে লড়াই করতে গিয়ে রাষ্ট্র শত শত কোটি টাকা খরচ করে ফেলছে। কত লোক মরছে। প্রশ্নও সৃষ্টি হয়েছে অনেক। কিন্তু সেই মাদক থেকে জাতিকে রক্ষা করার জন্য আমাদের শত শত তরুণ মাঠে কাজ করছে। এই অবদান হেযবুত তওহীদ ছাড়া সরকারী বা বেসরকারী কোন প্রতিষ্ঠান রাখতে পারছে?
জঙ্গিবাদের ধুয়া তুলে পাশ্চাত্যে আগ্রাসী রাষ্ট্রগুলো একটার পর একটা মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ ধ্বংস করে ফেলছে। আমাদের এই দেশটাকে নিয়েও ষড়যন্ত্র চলছে কারণ এখানেও ৯০% মানুষ মুসলমান যাদের ঈমানী চেতনাকে নিয়ন্ত্রণ করে ধর্মব্যবসায়ীরা। আমরা হেযবুত তওহীদ অঙ্গীকার করেছি যে এই বাংলার মাটিকে আমরা সিরিয়া, আফগানিস্তান, ইরাক বানাতে দেব না। আমরা জীবন দেব তবু এ দেশ ছেড়ে যাবো না, আমরা উদ্বাস্তু হবো না, আমরা এ দেশকে শত্রুর কবল থেকে রক্ষা করব ইনশাল্লাহ।
আমাদের এ প্রতিজ্ঞা নির্বাচনী ওয়াদা নয়, ইতোমধ্যেই আমাদের বহু সদস্য সদস্যা জীবন দিয়ে, রক্ত দিয়ে আমাদের দাবির সত্যতা প্রমাণ করেছি। আরো হাজার হাজার সদস্য সর্বস্ব কোরবান করে সেই সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন। আমরা জানতে চাই, বাংলাদেশে কোন রাজনৈতিক দল, কোন পীর, কোন আলেম সমাজ এই অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন যে, দেশকে রক্ষার আমৃত্যু সংগ্রাম করবেন?
অনেক অবদান থাকে যার ফলাফল তাৎক্ষণিকভাবে বোঝা যায় না। আমরা একজন দরিদ্র মানুষকে এক সের চিড়া দিলাম, সেটা দেখে আপনারা বলবেন যে, আমরা মানুষের জন্য অবদান রাখছি। সেই মানুষটি চিড়া খেয়ে ফেলল, পরের বেলায় আবার সে ক্ষুধার্ত। সুতরাং এটা হচ্ছে স্বল্পমেয়াদী অবদান। আর আমি যদি এমন একটি সমাজ প্রতিষ্ঠা করি, ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করি যেখানে কোনো মানুষই ক্ষুধার্ত থাকবে না, অভাব দারিদ্র্য থাকবে না তাহলে আমাকে আর জনে জনে এক সের করে তিন বেলা চিড়া দিতে হচ্ছে না। প্রত্যেকটি মানুষ স্বচ্ছল হয়ে যাচ্ছে তাহলে সেটা হলো দীর্ঘমেয়াদী অবদান। আল্লাহর সকল নবী-রসুলও সমাজ পরিবর্তনের মাধ্যমেই মানবতার কল্যাণে ভূমিকা রেখেছেন। আমরাও আল্লাহর রহমতে জানতে পেরেছি যে কোন আদর্শে সমাজকে সাজালে যাবতীয় অন্যায় দূর হয়ে শান্তি ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হবে। সেই আদর্শটিই আমরা মানুষের সামনে তুলে ধরছি।