মোহাম্মদ আসাদ আলী:
(পূর্ব প্রকাশের পর) এই যে কোর’আনের আয়াত ও হাদীসগুলো উল্লেখ করা হলো, যেগুলোতে দেখা যাচ্ছে কেবল তওহীদের স্বীকৃতি দেওয়ার কারণে ছোট ছোট অপরাধ তো বটেই, এমনকি চুরি, ব্যভিচার, হত্যা সমস্ত অপরাধকেই ক্ষমার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে- এই আয়াতগুলো ও হাদীসগুলো কিন্তু সবার অজানা বা অজ্ঞাত নয়। কোর’আনে ও হাদীসে যেহেতু উল্লেখ আছে, কাজেই লক্ষ লক্ষ মানুষ প্রতিনিয়ত পড়ছেন, আলেমরা মোহাদ্দীসরা মোফাস্সিররা এগুলোর শানে নজুল বের করছেন, বই লিখছেন, ব্যাখ্যা করে ওয়াজ মাহফিল ইত্যাদিতে জনগণকে শোনাচ্ছেন, লক্ষ লক্ষ মানুষ পাড়া কাঁপিয়ে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’র জিকিরও করে চলেছেন প্রতিনিয়ত। কিন্ত বাস্তবতা হচ্ছে, যে উদ্দেশ্যে আল্লাহ তাঁর রসুলের মাধ্যমে তওহীদের বাণী পাঠালেন, সমস্ত পৃথিবী থেকে অন্যায়, অবিচার, যুদ্ধ, রক্তপাত বন্ধ করে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা সেই শান্তির দেখা মিলছে না। সমস্ত পৃথিবী আজ ফাসাদ ও সাফাকুদ্দিমায় ভর্তি এবং আজকের মত এত অন্যায়, অপরাধ, অশান্তি মানবজাতির ইতিহাসে আর কখনও ঘটে নি। এক কথায় বলতে চাইলে যদিও আমরা ১৬০ কোটি মুসলমান ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ কলেমা পড়ছি, কিন্তু কার্যত ইবলিসেরই লক্ষ্যপূরণ হয়ে আছে। এমন তো হবার কথা নয়। যে তওহীদের ঘোষণা দিলে যাবতীয় অন্যায়, অশান্তি থেকে মুক্তি পাওয়ার কথা সেই তওহীদ কেন আমাদেরকে মুক্তি দিতে পারছে না?
এই প্রশ্নের দুইটি উত্তর হতে পারে। হতে পারে আল্লাহ ইবলিসের চক্রান্ত থেকে বাঁচার জন্য যুগে যুগে নবী-রসুল পাঠিয়ে এবং সর্বশেষ আখেরী নবী মোহাম্মদ (সা.) কে পাঠিয়ে বনি আদমকে যে তওহীদের রাস্তা দেখিয়েছেন সেটা শান্তি আনতে ব্যর্থ হয়েছে (নাউজুবিল্লাহ), আর যদি তা না হয় (অবশ্যই তা হবার নয়, কারণ আল্লাহ হচ্ছে সোবহান, ত্রুটিহীন, তাঁর বিধান ব্যর্থ হতে পারে না) তাহলে এটাই দাঁড়ায় যে, আল্লাহর রসুল যে তওহীদের ঘোষণা দিয়েছেন, যে তওহীদ প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম করেছেন এবং যে তওহীদ প্রতিষ্ঠার ফলে অর্ধপৃথিবী থেকে যাবতীয় অন্যায়, অবিচার, অনিরাপত্তা দূর হয়ে গিয়েছিল সেই তওহীদ আমরা হারিয়ে ফেলেছি। তৃতীয় কোনো সিদ্ধান্ত হতে পারে না। তবে এই কথাটি অনেকেই সহজভাবে মেনে নিতে পারবেন না এবং পারবেন না বলেই আমরা হেযবুত তওহীদ যখন জাতিকে তওহীদের ভিত্তিতে ঐক্যবদ্ধ হবার আহ্বান জানাই, তখন অনেকেই অভিযোগের সুরে বলেন, ‘আমরা তো আল্লাহর একত্ববাদে ঈমান রাখি, আল্লাহর প্রতি ঈমান আছে বলেই আমরা নামাজ পড়ি, রোজা রাখি, হজ্ব করি, যাকাত দেই, মিলাদ মাহফিল করি। ঈমান না থাকলে তো আমল করতাম না। তাহলে হেযবুত তওহীদ কেন আমাদেরকে কলেমা তওহীদে ঈমান আনতে বলে? অন্য ধর্মের লোকদেরকে বলুক, আমরা তো তওহীদেই আছি।’
এখানেই তারা সাংঘাতিক ভুলটি করেন। তারা আল্লাহর অস্তিত্বে বিশ্বাস রাখেন এতে সন্দেহ নেই। আল্লাহ আসমান-জমিন, গ্রহ-নক্ষত্র, বৃক্ষরাজি, তরুলতা সমস্তকিছু সৃষ্টি করেছেন, মানুষকেও সৃষ্টি করেছেন, তিনি আমাদের রিজিকদাতা, পালনকর্তা এতেও সন্দেহ নেই। এই বিশ্বাস আছে বলেই তো বিবিধ প্রকার আমল করা হচ্ছে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে। কিন্তু এই বিশ্বাস থাকা মানেই কি তওহীদে ঈমান থাকা? আল্লাহর অস্তিত্বে বিশ্বাস থাকলেই এবং নামাজ রোজা উপাসনা করলেই যে কেউ মো’মেন হয়ে যায় না তা পরিষ্কার হয়ে যায় রসুলের একটি হাদীস থেকে। রসুল (সা.) আখেরী জামানা স¤পর্কে বলেছেন, এমন সময় আসবে যখন- (১) ইসলাম শুধু নাম থাকবে, (২) কোর’আন শুধু অক্ষর থাকবে, (৩) মসজিদসমূহ জাঁকজমকপূর্ণ ও লোকে লোকারণ্য হবে কিন্তু সেখানে হেদায়াহ থাকবে না, (৪) আমার উম্মাহর আলেমরা হবে আসমানের নিচে সবচেয়ে নিকৃষ্ট জীব, (৫) তাদের তৈরি ফেতনা তাদের ওপর পতিত হবে। [হযরত আলী (রা.) থেকে বায়হাকী, মেশকাত]।
পাঠক খেয়াল করুন- রসুল (সা.) কী বললেন? এত নামাজী থাকবে যে, মসজিদ লোকে লোকারণ্য হয়ে যাবে এবং নামাজ পড়াকে বা আল্লাহর উপাসনা করাকে কতখানি গুরুত্বপূর্ণ মনে করা হবে তা বোঝা যায় এই থেকে যে, মসজিদগুলোকে জাঁকজমকপূর্ণ করে ফেলা হবে। কিন্তু আল্লাহর রসুল বললেন এতকিছু করেও তারা হবে পথভ্রষ্ট, তাদের মধ্যে হেদায়াহ থাকবে না। হেদায়াহ হচ্ছে একমাত্র আল্লাহকে ইলাহ হিসেবে গ্রহণ করে নেওয়া অর্থাৎ এই হাদিসে যাদের কথা বলা হচ্ছে তারা খুব ভালো মুসল্লি হবে বটে, কিন্তু আল্লাহকে তারা একমাত্র ইলাহ হিসেবে গ্রহণ করে নিবে না। আরেকটি হাদিস উল্লেখ না করলে বিষয়টি অপূর্ণ থেকে যাবে। আল্লাহর রসুল বললেন, ‘এমন সময় আসবে মানুষ রোজা রাখবে কিন্তু তা হবে কেবল উপবাস (রোজা কবুল হবে না), তাহাজ্জুদ পড়বে কিন্তু তা হবে কেবল ঘুম নষ্ট (নামাজ কবুল হবে না) (আবু হোরায়রা (রা.) থেকে সুনানে ইবনে মাজাহ)।’ প্রথমত, এই হাদীসে আল্লাহর রসুল রোযা ও তাহাজ্জুদ না বলে অন্য কোনো আমলের কথাও বলতে পারতেন। কিন্তু বেছে বেছে ফরদ আমলগুলোর মধ্যে তিনি রোযার কথা বললেন এবং নফলগুলোর মধ্যে তাহাজ্জুদের কথা বললেন কেন? কারণ এই দুইটি আমল এমন যা কখনও লোক দেখানোর জন্য করা যায় না, একমাত্র আল্লাহর প্রতি মোকাম্মাল ঈমান থাকলেই তা সম্ভব। আল্লাহর রসুল বোঝালেন তিনি যাদের ব্যাপারে কথাগুলো বলেছেন তাদের গলদটা আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসে নয়, আন্তরিকতায় নয়, তাদের গলদ অন্যখানে! দ্বিতীয়ত, কোর’আন ও হাদীসের বর্ণনা থেকে আমরা পূর্বে দেখে এসেছি যে, আল্লাহ কেবল তাদের আমলকেই কবুল না করার ঘোষণা দিয়েছেন যারা তওহীদের স্বীকৃতি দিবে না। অতএব এই হাদীসে যাদের কথা আল্লাহর রসুল বলেছেন তারা ব্যক্তিগত জীবনে পাক্কা মোকাম্মাল বিশ্বাসী হলেও আল্লাহ মানুষের কাছে যে তওহীদের স্বীকৃতি চান সেই জায়গায় তারা হবে ব্যর্থ। তারাও তওহীদহীন মুসল্লিদের মতই তওহীদহীন রোজাদার ও তওহীদহীন তাহাজ্জুদী! প্রশ্ন হচ্ছে, কীভাবে?
এই প্রশ্নেরই উত্তর আল্লাহ রব্বুল আলামিন তাঁর এক বান্দা এমামুয্যামান জনাব মোহাম্মদ বায়াজীদ খান পন্নীর মাধ্যমে মানবজাতিকে দান করেছেন। তিনি আজ থেকে বাইশ বছর আগেই বই লিখে প্রকৃত তওহীদকে মানবজাতির সামনে তুলে ধরেছেন এবং সেই তওহীদ প্রতিষ্ঠার জন্যই হেযবুত তওহীদ আন্দোলনের যাত্রা শুরু হয়েছে। এমামুয্যামান বলেছেন, বর্তমানে পৃথিবীর কোথাও প্রকৃত তওহীদ প্রতিষ্ঠিত নেই এবং তওহীদের যে ধারণা পৃথিবীময় অধিকাংশ মুসলিম জনসাধারণের মধ্যে চালু আছে সেটা বিকৃত ধারণা। বর্তমানে ইলাহ শব্দের অর্থ করা হয় উপাস্য। তওহীদের কলেমার অর্থ করা হয় আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই। আল্লাহ তো অবশ্যই উপাস্য, কিন্তু এটা এই দ্বীনের মূলমন্ত্র নয়, যে মূলমন্ত্রের স্বীকৃতি দিলে অন্য কোনো গুনাহের কাজ কাউকে জান্নাত থেকে ফেরাতে পারবে না। প্রকৃতপক্ষে ইলাহ হচ্ছেন সেই সত্তা যার হুকুম মানতে হয়, জীবনের যে অঙ্গনে তাঁর কোনো বক্তব্য আছে সেখানে অন্য সকল হুকুম প্রত্যাখ্যান করতে হয়, অর্থাৎ সর্বময় হুকুমদাতা। যেমন অর্থনৈতিক অঙ্গনে আল্লাহর হুকুম হচ্ছে সুদ হারাম। কাজেই যারা আল্লাহকে একমাত্র ইলাহ বা হুকুমদাতা হিসেবে গ্রহণ করবেন তাদের অর্থনৈতিক জীবন হবে সুদমুক্ত। তারা সুদভিত্তিক বা সুদসংশ্লিষ্ট ব্যবস্থাকে প্রত্যাখ্যান করবেন এবং আল্লাহ যে ব্যবস্থা নাজেল করেছেন সেটাকে কার্যকর করবেন। একইভাবে আল্লাহ জাতির মধ্যে অনৈক্য সৃষ্টি করাকে নিষিদ্ধ করেছেন। কাজেই তওহীদে যাদের ঈমান আছে তারা এমন কোনো রাজনৈতিক সামাজিক বা পারিবারিক ব্যবস্থাকে নিজেদের জীবনে প্রতিষ্ঠা করতে পারে না যেটার কারণে জাতির মধ্যে অনৈক্য সৃষ্টি হয়। এক কথায় ‘আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই’ এই কলেমার অর্থ হচ্ছে ব্যক্তিজীবন থেকে আরম্ভ করে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক, পারিবারিক, বিচারিক ইত্যাদি জীবনের সমস্ত অঙ্গনে আল্লাহকে একমাত্র হুকুমদাতা-বিধানদাতা হিসেবে গ্রহণ করে নেওয়া এবং আল্লাহর হুকুমপরিপন্থী সমস্ত হুকুম, বিধান, ব্যবস্থাকে প্রত্যাখ্যান করা। এই ঘোষণা যদি কেউ দেয় তাহলে তিনি হবেন তওহীদের সাক্ষ্যদানকারী, স্বীকৃতিদানকারী, তার জান্নাত নিশ্চিত। অন্যদিকে এই তওহীদের বিপরীতে শেরক সম্বন্ধে আল্লাহ বলেছেন- আল্লাহ যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করে দিবেন, কিন্তু শেরক অর্থাৎ আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো হুকুম মেনে নেওয়াকে কখনই ক্ষমা করবেন না (নিসা: ৪৮)। এমনকি নবী-রসুলদের মধ্যেও যদি কেউ শেরক করতেন তাহলে তার সমস্ত আমল বরবাদ হয়ে যেত (আন’আম: ৮৮)। শেরক কতটা অমার্জনীয় অপরাধ তা আরও পরিষ্কার বোঝা যায় যখন কোর’আনে আল্লাহ তাঁর সবচাইতে প্রিয় বান্দা তাঁর আখেরী নবীকেও সতর্ক করে বলে দিচ্ছেন- হে নবী, আপনার প্রতি এবং আপনার পূর্ববর্তীদের প্রতি ওহি করা হয়েছে যে, যদি আল্লাহর সঙ্গে আপনি অংশীদার স্থাপন করেন, তাহলে আপনার সমস্ত আমল বিনষ্ট হয়ে যাবে এবং আপনি ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবেন (সুরা যুমার: আয়াত ৬৫)। এত গর্হিত অপরাধ শেরক, অথচ পরিহাসের বিষয় হচ্ছে, আজ আমরা যারা নিজেদেরকে মো’মেন, মুসলিম ও উম্মতে মোহাম্মদী বলে বিশ্বাস করে আত্মতৃপ্তি লাভ করি আমরা আপাদমস্তক তাতে ডুবে আছি এবং তার কারণে আল্লাহর সাহায্য থেকে বঞ্চিত হয়ে পৃথিবীর সমস্ত জাতিগোষ্ঠীর দ্বারা নির্যাতিত, নিগৃহীত, লাঞ্ছিত, অপমানিত ও গণহত্যার শিকার হচ্ছি। সমষ্টিগত জীবনে আল্লাহকে একমাত্র হুকুমদাতা হিসেবে গ্রহণ করা আমাদের কাছে কোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ই নয়, আমাদের কাছে মহাগুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে দ্বীনের খুঁটিনাটি, মাসলা-মাসায়েল, ওজু, গোসল, হায়েজ নেফাজ, ঢিলা, কুলুখ, মেসওয়াক, পাগড়ি, পাঞ্জাবি, টুপি, তসবিহ ইত্যাদি। আমরা উপাসনা-আরাধনায় আছি, খুব ভালোভাবেই আছি। আমাদের লক্ষ লক্ষ মসজিদ আছে। এসি মসজিদ, টাইলস মসজিদ, সোনার গম্বুজ বসানো মসজিদ। লক্ষ লক্ষ মাদ্র
াসা আছে, সেখানে নিখুঁত আরবি শেখানো হয়, ব্যাকরণ শেখানো হয়, কোর’আন-হাদীস, ফেকাহ, তাফসির, মাসলা-মাসায়েল মুখস্থ করানো হয়। এসবের সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম জ্ঞান নিয়ে অসংখ্য আলেম, প-িত বের হন। মিলাদ, মাহফিল, ইজতেমা, হজ্ব ইত্যাদিতে লক্ষ লক্ষ মানুষের জমায়েত হয়। অনেকে নিয়মিত তাহাজ্জুদ পড়েন। পাড়া-মহল্লা কাঁপিয়ে জিকির করেন। কিন্তু একটি জায়গায় আমরা ধরা এবং সেই জায়গাটি দ্বীনের একেবারে মূলমন্ত্র, ভিত্তিমূল, যেখানে কোনো আপস চলে না। সেটা হচ্ছে আমরা আল্লাহকে সর্বাঙ্গীন জীবনের একমাত্র হুকুমদাতা, বিধানদাতা অর্থাৎ ইলাহ হিসেবে মানছি না। আমরা আল্লাহর দেওয়া জীবনবিধানকে কয়েক শ’ বছর পূর্বেই পরিত্যাগ করে পাশ্চাত্যের তৈরি বিধানকে কার্যকর করে নিয়েছি। পাশ্চাত্যের তৈরি রাজনৈতিক ব্যবস্থা, অর্থনৈতিক ব্যবস্থা, বিচারব্যবস্থা, শিক্ষাব্যবস্থা, আইন, কানুন, দ-বিধি দিয়ে পরিচালিত হচ্ছে আমাদের জাতীয় জীবন। আমাদের ইলাহ এখন আল্লাহ নেই, দ্বীন বা জীবনব্যবস্থাও ‘ইসলাম’ নেই। আমরা উপাসনা করছি আল্লাহর, আর হুকুম মানছি মানুষের। পূর্বে একটি হাদীস বর্ণনা করেছি যেখানে আখেরী যামানায় কি কি হবে সে সম্বন্ধে ভবিষ্যদ্বাণীতে আল্লাহর রসুল বলেছিলেন, তখন মসজিদসমূহ এমনভাবে পূর্ণ হবে যে, জায়গা পাওয়া যাবে না, কিন্তু সেখানে হেদায়াহ থাকবে না (বায়হাকী)। হেদায়াহ’ই হলো আল্লাহকে একমাত্র ইলাহ, হুকুমদাতা বলে বিশ্বাস করা, মেনে নেওয়া অর্থাৎ লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ। মুসল্লি দিয়ে ভর্তি মসজিদগুলোতে যদি হেদায়াহ’ই না থেকে থাকে তবে সেখানে আর রইল কী? আল্লাহ বলেছেন, আল্লাহ যে আইন, বিধান নাযেল করেছেন তা দিয়ে যারা হুকুম করে না তারাই কাফের, জালেম, ফাসেক (সুরা মায়েদা- ৪৪, ৪৫, ৪৭)। পরিহাসের বিষয় হচ্ছে- আল্লাহর ভাষায় কার্যত কাফের, জালেম, ফাসেক হবার পরেও ব্যক্তিজীবনে আমরা খুব আমল করে যাচ্ছি, নামাজ পড়তে পড়তে কপালে কড়া ফেলে দিচ্ছি, আর ভাবছি- খুব বোধহয় সওয়াবের কাজ করে ফেলছি, মহান আল্লাহ কতই না খুশি হচ্ছেন। এই ঈমানহীন আমল যে আল্লাহ ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে আমাদেরকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন সেটা বোঝার সাধারণ জ্ঞানটাও আমাদের লোপ পেয়েছে। (সমাপ্ত)
লেখক: সহকারী সাহিত্য সম্পাদক, হেযবুত তওহীদ।