গত ২৪ ফেব্রুয়ারি রংপুরের পীরগাছায় হেযবুত তওহীদের বিভাগীয় সভাপতির বাড়িতে হামলা করে লুটপাট, ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ ইত্যাদির প্রতিবাদ জানিয়েছেন হেযবুত তওহীদের সর্বোচ্চ নেতা ইমাম হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম। গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, হেযবুত তওহীদ গত ত্রিশ বছর থেকে দেশের আইন মান্য করে শান্তিপূর্ণ উপায়ে আল্লাহ রসুলের প্রকৃত ইসলামকে আধুনিক, যৌক্তিক এবং প্রাঞ্জল ভাষায় জনগণের সামনে তুলে ধরছে। হেযবুত তওহীদের কোনো রাজনৈতিক সম্পৃক্ততাও নাই, কোনো অর্থনৈতিক স্বার্থও নাই। কিন্তু একটা উগ্রবাদী গোষ্ঠী প্রতিনিয়ত পরিকল্পিতভাবে সাধারণ মানুষকে মিথ্যা কথা বলে উস্কানি দিয়ে সারাদেশে একটা মব সৃষ্টি করার অপচেষ্টা করছে।
হেযবুত তওহীদের ইমাম আরও বলেন, আপনারা জানেন বাংলাদেশে দীর্ঘদিন থেকে আল্লাহর পবিত্র ধর্ম ইসলামকে ব্যবহার করে একটা গোষ্ঠী রাজনীতি করছে। অপরাজনীতিতে ধর্মকে ব্যবহার করছে। ধর্মকে ব্যবহার করে তারা গোষ্ঠী স্বার্থ, ব্যক্তি স্বার্থ, উদ্ধার করছে। ফলে মানুষের ধর্মীয় সেন্টিমেন্ট ভুল খাতে প্রবাহিত হচ্ছে। নানান ধরনের গুজব, মিথ্যা, বানোয়াট তথ্য ইত্যাদি রটিয়ে দিয়ে সাধারণ মানুষের উপর আক্রমণ চালাচ্ছে।
রংপুরের পীরগাছা উপজেলার ছিদাম হাটের ঘটনা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই এলাকার মানুষ আগে থেকে খুবই শান্তিপ্রিয় হিসেবে পরিচিত। বিশেষ করে আবদুল কুদ্দুস শামীম নিজ এলাকায় আইনমান্যকারী একজন ভদ্র, সভ্য, সজ্জন মানুষ হিসেবে পরিচিত। তার পরিবারেরও অত্র এলাকায় সুপরিচিতি রয়েছে। আবদুল কুদ্দুস শামীমের বাড়িতে একটি অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে জামায়াতের কিছু স্থানীয় কর্মী নেতৃত্বে দিয়ে সাধারণ জনগণকে উসকে দিয়ে এই ন্যাক্কারজনক হামলার ঘটনা ঘটায়, যা সত্যিই নিন্দনীয়।
হেযবুত তওহীদের এই সর্বোচ্চ নেতা বলেন, এখানে প্রকৃতপক্ষে তওহীদি জনতার ব্যানার ব্যবহার করে সাধারণ মানুষের মধ্যে চরম মিথ্যা অপপ্রচার চালানো হয়েছে। অপপ্রচারকারীরা একবার বলেছে- এখানে হিন্দুরা মুসলমানদের ঘরে আক্রমণ করছে; আবার বলেছে- এখানে এরা শেষ নবীকে কটুক্তি করেছে, অবমাননা করেছে। আবার বলেছে- এরা মাদ্রাসা-মসজিদে হামলা চালিয়েছে। আসলে সমস্ত কথাগুলি মিথ্যা। সাধারণ ধর্মপ্রাণ মানুষকে উত্তেজিত করার একটা অপচেষ্টা ও অপপ্রয়াস মাত্র। ফলাফল হিসেবে আমরা দেখলাম তারা মিছিল করে এসে হামলা করে, আগুন লাগিয়ে ঘড়বাড়ি, গরুর খামার লুটপাট করে। যেভাবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সামনে লুটপাটের মহোৎসব হয়েছে সেটা অকল্পনীয় ও অচিন্তনীয়। এতে করে সারাবিশ্বের কাছে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি বিনষ্ট হচ্ছে। সরকার চেষ্টা করছেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে। কিন্তু একটি গোষ্ঠী পরিকল্পিতভাবে দেশের আইন শৃঙ্খলার অবনতি ঘটিয়ে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা করছে। বিবৃতিতে হেযবুত তওহীদের এমাম উক্ত ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে ঘটনার সাথে সংশ্লিষ্ট, সম্পৃক্ত ও ষড়যন্ত্রকারীদেরকে দ্রুত আইনের আওতায় আনার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি আহ্বান জানান।
মিডিয়ার উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, “এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে কিছু মিডিয়ায় আমরা বিভ্রান্তিমূলক তথ্য প্রচার করতে দেখেছি। যেমন কোনো মিডিয়া বলছে- হেযবুত তওহীদ আক্রমণ করছে, কোনো মিডিয়া বলছে- হেযবুত তওহীদ নিষিদ্ধ, কোনো মিডিয়া বলছে- হেযবুত তওহীদ গোপন মিটিং করছে। যা সম্পূর্ণ মনগড়া, মিথ্যা ও বানোয়াট। প্রোগ্রামটি সম্পর্কে প্রশাসনকে জানিয়ে ও প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে বিভাগীয় আমির তার বাড়ির আঙিনায় একটা প্রীতি অনুষ্ঠান ও ভোজের আয়োজন করেছিল। প্রকৃতপক্ষে হেযবুত তওহীদ নিষিদ্ধ নয়, সুতরাং গোপন অনুষ্ঠান করার কোনো কারণ নেই।” এ ধরনের বিভ্রান্তিকর তথ্য পরিবেশন করা থেকে মিডিয়া কর্মীদেরকে বিরত থাকার এবং বস্তুনিষ্ঠ খবর প্রচারের অনুরোধ জানান তিনি।
উগ্রবাদীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার ও নিরাপত্তার দাবি জানিয়ে সরকারের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, সরকার যেন কঠোর হস্তে এ ধরনের সাম্প্রদায়িক উস্কানিদাতা, উগ্রবাদী ও জঙ্গিগোষ্ঠীকে আইনের আওতায় এনে দেশের শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখে। হেযবুত তওহীদ সদস্যদের জানমাল রক্ষা করা সরকারের দায়িত্ব। বাংলাদেশে হেযবুত তওহীদ একটি আইনমান্যকারী সংগঠন। তাদের মৌলিক মানবাধিকার রয়েছে, সাংবিধানিক অধিকার রয়েছে। সুতরাং তাদের মানবাধিকার লঙ্ঘন হয় এমন কোনো কর্মকাণ্ড সরকার প্রতিহত করবেন বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
এর সঙ্গে তিনি আরও জানান, এই গ্রামের প্রায় চল্লিশটি পরিবার এখন বাড়িঘর হারিয়ে উদ্বাস্তু জীবন যাপন করছে। তাদেরকে তাদের এলাকায় ন্যায়সঙ্গতভাবে বসবাস করার জন্য অনুকূল পরিবেশ ও নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য তিনি সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।