‘সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, সাম্প্রদায়িকতা, অপরাজনীতি, ধর্মব্যবসাসহ যাবতীয় অন্যায়ের বিরুদ্ধে নিঃস্বার্থভাবে মাঠে-ময়দানে আদর্শিক সংগ্রাম করে যাচ্ছে হেযবুত তওহীদ। হেযবুত তওহীদের এই নিঃস্বার্থ কার্যক্রমে স্বতঃস্ফূর্তভাবে নারীরাও অংশগ্রহণ করছেন। শত বাধা প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও নারীদের এই অংশগ্রহণ প্রশংসনীয়। কিন্তু এক শ্রেণির ধর্মব্যবসায়ীরা নারীদেরকে ফতোয়ার চোখ রাঙানি দেখিয়ে অন্ধত্বের অচলায়তনে আটকে রাখতে চায়। নারীরা যদি এই অচলায়তন ভাঙতে পারে এবং সামাজিক রাষ্ট্রীয় সকল অঙ্গনে নিজেদের যোগ্যতা অনুযায়ী অংশগ্রহণ করতে পারে তাহলেই কেবল প্রকৃত নারীমুক্তি সম্ভব।’ গত ০৬ নভেম্বর ২০১৮ রোজ মঙ্গলবার রাজধানীতে হেযবুত তওহীদের কেন্দ্রীয় নারী সম্মেলনে বক্তারা এসব কথা বলেন। রাজধানীর কৃষিবিদ ইন্সটিটিউশন মিলনায়তনে দিনব্যাপী চলমান এই সম্মেলনের প্রতিপাদ্য ছিল ‘‘ধর্মের অপব্যবহার নারী প্রগতির অন্তরায়’’। হেযবুত তওহীদের নারী বিষয়ক সম্পাদক রুফায়দাহ পন্নীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন হেযবুত তওহীদের এমাম হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম।
সকাল আটটা থেকেই দলে দলে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হেযবুত তওহীদের নারী সদস্যরা অনুষ্ঠানস্থলে আসতে থাকেন। দশটার মধ্যেই কে.আই.বি কমপ্লেক্স কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। হেযবুত তওহীদের এমাম সম্মেলনস্থলে প্রবেশ করলে মুহুর্মুহু স্লোগান ও ছন্দবদ্ধ করতালির মাধ্যমে সবাই তাকে বরণ করে নেন। এসময় পবিত্র কোর’আন থেকে তেলাওয়াতের মাধ্যমে সম্মেলনের আনুষ্ঠানিকতা আরম্ভ হয়। প্রথমে শুভেচ্ছা বক্তব্য প্রদান করেন অনুষ্ঠানের সভাপতি ও হেযবুত তওহীদের নারী বিষয়ক সম্পাদক রুফায়দাহ পন্নী। তিনি তার বক্তব্যে বলেন, ‘‘আজকে অন্য জাতির নারীরা যখন বৈমানিক হয়, নভোচারী হয়, প্লেন চালায়, সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন হয়, মেজর জেনারেল হয়, বৈজ্ঞানিক হয়, তখন কোণায় কোণায়, পাড়ায় পাড়ায়, মহল্লায় মহল্লায় আমার জাতির নারীদেরকে এই শিক্ষা দেওয়া হয় যে, ‘সাবধান! ঘরের চার দেওয়ালের মধ্যে থাকো, সুবহানাল্লাহ সুবহানাল্লাহ করো, ঘরের বাইরে যাবা না। ঘরের বাইরে বের হওয়াই পাপ!’ তাহলে দুনিয়া তারা শাসন করবে না তো আমরা করব? ইসলামের নামে এই বিকৃত শিক্ষা কখনই দাজ্জালীয় সভ্যতার হাত থেকে জাতিকে মুক্ত হতে দিবে না। চিরজীবন তাদের অনুসারী হয়েই থাকতে হবে। আমার বুঝে আসে না, তারা দাজ্জালীয় সভ্যতার অনুসরণ করে সুবহানাল্লাহ সুবহানাল্লাহ তসবিহ জপে জান্নাতের আশা করে কীভাবে?’’
সভাপতির উদ্বোধনী বক্তব্যের পর আরও শুভেচ্ছা বক্তব্য প্রদান করেন হেযবুত তওহীদের কেন্দ্রীয় কমিটির প্রধান উপদেষ্টা খাদিজা খাতুন, সাধারণ সম্পাদক মশিউর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আলী হোসেন, স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক উম্মুততিজান মাখদুমা পন্নী, তথ্য সম্পাদক এসএম সামসুল হুদা প্রমুখ। বক্তারা নারীদেরকে যাবতীয় ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে, অশ্লীলতার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে একটি সঠিক আদর্শকে ধারণ করে সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদসহ যাবতীয় অন্যায়, অবিচারের বিরুদ্ধে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান। অনুষ্ঠানের মূল পর্ব শুরু হয় প্রধান অতিথির বক্তব্যের মধ্য দিয়ে। প্রধান অতিথির বক্তব্যে হেযবুত তওহীদের এমাম সারা দেশ থেকে আগত হেযবুত তওহীদের নারী সদস্যদের উদ্দেশে দিক-নির্দেশনা প্রদান করেন।
হেযবুত তওহীদের এমাম বলেন, ‘পশ্চিমা সভ্যতার ইতিহাস নারীদের জন্য কখনই সুখকর হয়নি। এই সেদিনও নারীদের ভোটাধিকার পর্যন্ত ছিল না। আর এখন অধিকারের নামে, আধুনিকতার নামে নারীদেরকে বানানো হচ্ছে বাজারের পণ্য। নারীর সম্মান, মর্যাদা হচ্ছে ভূলুণ্ঠিত। এমনটাই হবার কথা। কারণ এই সভ্যতায় আল্লাহর হুকুম বলে কিছু নেই, ন্যায়-অন্যায়ের মানদ- নেই। বস্তুগত উন্নতি হয়েছে। প্রযুক্তি এসেছে অস্বীকার করি না। কিন্তু এই অগ্রগতি মানবজীবনের স্বাভাবিক প্রক্রিয়া, অতীতের সভ্যতাগুলোতেও বস্তুগত দিক দিয়ে অনেক উন্নতি-প্রগতি হয়েছে, কিন্তু আত্মিক ও নৈতিক অবক্ষয়ের কারণে সেই বস্তুগত প্রগতি কোনো কাজে আসে নাই। সভ্যতার পতন হয়েছে। আজকের এই পাশ্চাত্য সভ্যতা এক ভারসাম্যহীন সভ্যতা। এখানে প্রযুক্তিগত চোখ ধাঁধানো উন্নতি হয়েছে, কিন্তু মানুষের উন্নতি হয় নাই। হানাহানি ভেদাভেদ দূর হয় নাই। একটা পৃথিবীকে এই সভ্যতা দুইশ’ ভাগে বিভক্ত করেছে, এক ভাগকে আরেক ভাগের বিরুদ্ধে লাগিয়ে রেখেছে। প্রযুক্তিগতভাবে মানুষ যতটা উন্নতির চূড়ায় অবস্থান করছে, আত্মিকভাবে নৈতিকভাবে মানুষ ততটাই নিচে নেমে গেছে। প্রতিনিয়ত খুন, ধর্ষণ, লুটপাট, দুর্নীতি, যুদ্ধ, রক্তপাতে মানবজীবন আজ বিপর্যস্ত। নিরাপরাধ শিশুর রক্তে পৃথিবীর মাটি ভেজা। গত এক শতাব্দীতে যত নারী লাঞ্ছিত হয়েছে, ধর্ষিতা হয়েছে, তা পৃথিবীর ইতিহাসে অতীতে কখনও হয় নাই।’
প্রধান অতিথির বক্তব্য শেষে দুপুরের খাবারের বিরতি দেওয়া হলে অত্যন্ত সুশৃঙ্খলভাবে সবাই দুপুরের খাবার গ্রহণ করেন। আর এরপরই শুরু হয় মাটি শিল্পগোষ্ঠীর আয়োজনে মনোজ্ঞ এক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এছাড়া এল.ই.ডি স্ক্রিনে হেযবুত তওহীদের কার্যক্রমের উপর নির্মিত ডকুমেন্টারি প্রদর্শিত হয়। সম্মেলনের শেষ পর্যায়ে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আগত নারীদের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হয় প্রাণবন্ত ফটোসেশন। সন্ধ্যা ৭টায় সমাপনী বক্তব্যের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের সভাপতি কেন্দ্রীয় নারী সম্মেলনের সমাপ্তি ঘোষণা করেন।