হেযবুত তওহীদ:
দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে কিছু মাদ্রাসা পড়–য়া ছাত্র, শিক্ষক ও ধর্মব্যবসায়ী সম্প্রতি দৈনিক দেশেরপত্র ও এর সাপ্তাহিক ম্যাগাজিনে প্রকাশিত কিছু তিক্ত সত্যের বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ হোয়েছেন। তাদের এই ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ হিসাবে তারা যেখানে হেযবুত তওহীদের সদস্যদেরকে পাচ্ছেন তাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার কোরছেন, হামলা ও মারধর কোরছেন, নিজেদের আস্তানা অর্থাৎ মাদ্রাসা-মসজিদে নিয়ে আটকও কোরে রাখছেন। তারা যুক্তি-প্রমাণ দিয়ে হেযবুত তওহীদের প্রকাশিত মহাসত্যগুলির জবাব দিতে না পারায় হিংসাত্মক পথ বেছে নিয়েছেন। বলা হোয়ে থাকে, ‘সহিংসতা অক্ষমের শেষ অবলম্বন’, তাদের বেলায় এই কথাটি বিগত ১৯ বছর ধোরে প্রমাণিত হোচ্ছে। ১৯৯৫ সনে হেযবুত তওহীদ প্রতিষ্ঠার পর থেকেই তারা আমাদের বিরুদ্ধে ফতোয়াবাজি থেকে শুরু কোরে ধর্মকে ব্যবহার কোরে হাজারো রকম মিথ্যাচার, অপপ্রচার, সামাজিক নির্যাতন চালিয়ে আসছেন। আমাদের বিরুদ্ধে তাদের এই অবস্থান গ্রহণের কয়েকটি প্রধান কারণ হোল:
১. আমরা প্রচলিত এসলামের বিকৃতিগুলি চিহ্নিত করার পাশাপাশি প্রকৃত এসলামের শিক্ষাকে মানবজাতির সামনে তুলে ধরছি। ধর্মব্যবসায়ীরা মনে করেন যে, যেহেতু তারা মাদ্রাসায় পড়াশুনা কোরেছেন, তাই মাদ্রাসায় যা শেখানো হয় সেটাই এসলাম এবং তারা ছাড়া আর কারও এসলাম সম্পর্কে কোনো মতামত দেওয়ার অধিকার নেই। হেযবুত তওহীদের প্রতিষ্ঠাতা এমাম এবং তাঁর অনুসারীদের অধিকাংশই মাদ্রাসাশিক্ষিত নন বোলে তথাকথিত আলেমরা এর বিরুদ্ধে মুখর।
২. আমরা একটি ঐতিহাসিক সত্য আমাদের প্রকাশনাগুলিতে তুলে ধোরি যা ধর্মজীবী আলেম ও তালবে আলেমদের জন্য অস্বস্তিকর এবং বিব্রতকর। সেটা হোচ্ছে, বর্তমানে যে মাদ্রাসা শিক্ষাব্যবস্থা চালু আছে তার সিলেবাস ও কারিকুলাম ব্রিটিশদের তৈরি, এসলামকে বিকৃত করার উদ্দেশ্যে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে এই মাদ্রাসা শিক্ষাব্যবস্থা চালু করা হোয়েছিল। ১৭৮০ সনে ভাইসরয় লর্ড ওয়ারেন হেস্টিংস কলকাতায় আলীয়া মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেন। ২৬ জন খ্রিস্টান পণ্ডিত এই মাদ্রাসার অধ্যক্ষপদে থেকে তাদের তৈরি বিকৃত একটি আত্মাহীন মৃত এসলাম ১৪৬ বছর ধোরে এই জাতিকে শিক্ষা দিয়েছেন। সেই বিকৃত মাসলা-মাসায়েল সর্বস্ব এসলাম এই জাতির মনে-মগজে, অস্থি-মজ্জায় গ্রথিত হোয়ে গেছে। আমরা ব্রিটিশদের তৈরি করা সেই বিকৃত এসলামকে প্রত্যাখ্যান করার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি, স্বভাবতই এর ধারক বাহকদের কাছে তা শুভ সংবাদ বোলে মনে হোচ্ছে না।
৩. এই মাদ্রাসা শিক্ষাব্যবস্থায় ধর্ম বিষয়ক জ্ঞান ছাড়া কর্মমুখী কোনো শিক্ষা দেওয়া হয় না। ফলে মাদ্রাসা থেকে পাশ কোরে বেরিয়ে এসে আলেম সাহেবদের বিভিন্ন ধরনের ধর্মব্যবসা কোরেই অন্ন-সংস্থান কোরতে হয়। উপার্জন দুই প্রকার: বৈধ এবং অবৈধ। ধর্মব্যবসা কোরে উপার্জন করাকে আল্লাহ দ্ব্যার্থহীন ভাষায় হারাম বা নিষিদ্ধ কোরেছেন। তিনি বোলেছেন এসলামের কাজ কোরে পার্থিব সম্পদ হাসিল করা হোচ্ছে আগুন খাওয়া। যেহেতু ধর্মব্যবসায়ীরা সিস্টেমের ফাঁদে পড়ে বা যেভাবেই হোক নিজেরা হারাম পথে উপার্জন কোরছেন তাই এটা যে হারাম তা তারা প্রকাশ কোরতে নারাজ। এই সত্যটি যেই প্রকাশ কোরবে তারা তার বিরুদ্ধেই প্রবল সংগ্রামে অবতীর্ণ হবে- কেননা এটা তাদের জীবিকার উপর আঘাত। কিন্তু আমরা নিরুপায়। আল্লাহ যা হারাম কোরেছেন তা আমাদেরকে এসলামের স্বার্থে বোলতেই হবে কারণ আমরা আল্লাহকে মানবজাতির একমাত্র বিধানদাতা হিসাবে প্রতিষ্ঠা কোরতে চাই।
আমরা অকপটচিত্তে জানাচ্ছি যে, আমরা প্রকৃত এসলাম যা ১৪০০ বছর আগে আল্লাহ তাঁর রসুলকে দান কোরেছিলেন সেই এসলামকে আবার সমগ্র পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠা কোরতে চাই। আমরা বোলছি যে, বর্তমানে সমগ্র মানবজাতি আল্লাহর সার্বভৌমত্ব তওহীদ এবং তাঁর দেওয়া জীবনব্যবস্থা এসলাম থেকে সোরে গেছি এবং ইহুদি-খ্রিস্টান বস্তুবাদী সভ্যতা ‘দাজ্জাল’-এর তৈরি করা জীবনব্যবস্থা গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, একনায়কতন্ত্র, রাজতন্ত্র ইত্যাদি মেনে চোলছি। সুতরাং মোসলেম দাবিদারসহ সমগ্র মানবজাতি এখন কার্যত মোশরেক এবং কাফেরে পরিণত হোয়েছে। তাদের নামাজ-রোজা-হজ্ব-যাকাত, দাড়ি-টুপি, তসবিহ-তাহলিল, জেকের আজকার, তাহাজ্জুদ কোনো কিছুই আল্লাহ গ্রহণ কোরছেন না। এখন তাদের মুক্তির জন্য আগে তাদেরকে তওহীদের ভিত্তিতে ঐক্যবদ্ধ হোতে হবে। আল্লাহর শেষ রসুলও তাঁর নব্যুয়তি জীবনের প্রথম ১৩ বছর মানুষকে ‘এক আল্লাহ ছাড়া আর কারও হুকুম মানবো না’ এই কলেমার ভিত্তিতে ঐক্যবদ্ধ করার জন্য চেষ্টা কোরেছেন, আমরাও মানুষকে এই একই আহ্বান কোরছি। আমরা সম্পূর্ণ নিস্বার্থভাবে, কোন রকম পার্থিব বিনিময় না নিয়ে নিজেদের জায়গা-জমি, বাড়ি-ঘর সব আল্লাহর রাস্তায় কোরবান কোরে কাজ কোরে যাচ্ছি। এই সত্যকে প্রতিষ্ঠা করা ছাড়া আমাদের জীবনের আর কোন চাওয়া পাওয়া নেই, আমরা মহাশক্তিধর এক চোখা দানব, বস্তুবাদী, আত্মাহীন, পাশ্চাত্য ‘সভ্যতা’ দাজ্জালকে ধ্বংস করার জন্য দাঁড়িয়েছি যার হাতে আজ সারা পৃথিবী। সুতরাং আমাদের সামনে এসে দাঁড়াবে এমন কোনো বাধাই আমরা পরোয়া কোরি না এনাশল্লাহ। আমাদের এই সত্যপ্রকাশে কাদের স্বার্থে আঘাত লাগবে, কারা এর পথরোধ কোরতে আসবে এবং কিভাবে সেই বাধাকে মোকাবেলা কোরতে হবে সে ব্যাপারে আমরা সম্পূর্ণ সজাগ ও সচেতন। যে কোন পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত হোয়েই আমরা পথে নেমেছি। যারা আমাদেরকে বাধা দিচ্ছেন, বিক্রয় কর্মীদেরকে একা পেয়ে মারধোর কোরছেন, আটক কোরছেন তারা সম্ভবত আমাদের বিষয়ে সুস্পষ্টভাবে জানেন না। তাদের প্রতি আমাদের সবিনয় বক্তব্য হোচ্ছে, ‘আপনারা অহেতুক আমাদের কাজে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি কোরবেন না, কারও মতপ্রকাশে বাধাদান দেশের সংবিধান পরিপন্থী এবং কাপুরুষতাও বটে। মাদ্রাসার সরলপ্রাণ ছাত্রদেরকে মিথ্যা ফতোয়া দিয়ে আমাদের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দেওয়াটা বিরাট অপরাধ। অতীতে মাদ্রাসা কেন্দ্রীক ধর্মব্যবসায়ীরা বহুবার বিভিন্ন ইস্যুতে ধর্মীয় হুজুগ সৃষ্টি কোরে নিরীহ ছাত্রদেরকে জেহাদের নামে ধ্বংসাত্মক কাজে উদ্বুদ্ধ কোরেছেন। তাদের জীবনকে ঝুঁকিপূর্ণ কোরে তুলেছেন। এভাবেই এদেশে জঙ্গিবাদের প্রসার হোয়েছে। জাতীয় সম্পদের ক্ষতিসাধন, অন্যায়ভাবে জ্বালাও পোড়াও, ভাঙচুর ইত্যাদি দেশবিরোধী কাজে তারা ব্যবহৃত হোয়েছে, প্রাণ দিয়েছে, কিন্তু পার্থিব ও রাজনৈতিক স্বার্থ উদ্ধার হোয়েছে আপনাদের।
আপনাদের এই কর্মকাণ্ডে এসলামের গায়েও কালীমা লেগেছে। এসলামের নাম শুনলেই সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ও বীতশ্রদ্ধা সৃষ্টি হয়। আমরা চাই না আপনারা এই মাদ্রাসার ছাত্রদেরকে প্রকৃত এসলাম প্রচার ও প্রতিষ্ঠায় সংগ্রামরত হেযবুত তওহীদের পেছনে লেলিয়ে দেন। আপনারা ভাবছেন আমরা যে সত্য প্রকাশ কোরছি তাতে আপনাদের অবৈধ রুটি-রুজিতে আঘাত লাগছে। কিন্তু এটা ভুললে চোলবে না যে, আপনাদের ব্যক্তিস্বার্থের জন্য মানবজাতির অনেক বড় ক্ষতি হোয়ে যাচ্ছে, সত্যের উদ্ভাসন বাধাগ্রস্ত হোচ্ছে। বর্তমানের এই ঘোর সঙ্কটে মসজিদের এমামতি, খতম পড়িয়ে উপার্জন, মাদ্রাসায় চাকুরি কোরে সংসার চালানো এসবের চেয়ে অনেক বড় হোল জাতির ঐক্য ও উন্নতি। এই উন্নতি আল্লাহর সার্বভৌমত্ব ছাড়া আসবে না। আল্লাহর কোর’আনের একটি শব্দও রাষ্ট্রীয়ভাবে আজ কোথাও কার্যকরী নেই, যার ফলে জীবনের কোনো অঙ্গনেই শান্তি নেই। আমরা সেই শান্তিপ্রতিষ্ঠার জন্য কাজ কোরছি। আমরা চাই আপনারাও ক্ষুদ্র স্বার্থ ভুলে আমাদের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ হোন। আপনারা আমাদের সম্পর্কে জানুন-বুঝুন। আইন নিজের হাতে তুলে নেবেন না, ধর্মের ধুয়ো তুলে সন্ত্রাস ও জঙ্গিপনার পথ বেছে নিবেন না। আমরা আল্লাহর রসুলের প্রকৃত এসলাম নিয়ে কাজ কোরছি, কোনো ভুল কাজ কোরছি না। আজ পর্যন্ত আমাদের একটি শব্দও কেউ ভুল প্রমাণ কোরতে পারে নি। সবচেয়ে বড় কথা, আমরা কোন পার্থিব স্বার্থে কাজ কোরছি না, তাই আমাদের স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট ভুল হওয়ার সম্ভাবনা একেবারে শূন্যের কোঠায়। তবুও যদি আপনাদের বুঝতে কোথাও সমস্যা হয় কিংবা আপনাদের কাছে ভুল মনে হয় তবে সৎ সাহস রেখে যথাযথ নিয়ম মেনে আমাদের কাছে প্রতিবাদ পাঠান, আমাদের ভুলগুলো ধরিয়ে দিন। যেহেতু আমরা সত্য প্রকাশের জন্য নিজেদেরকে নিয়োজিত করেছি সেহেতু আমরা নিজেদের ভুল হলে সংশোধন হওয়ার জন্যও সদা প্রস্তুত।
আমরা মানবজাতিকে সত্যের পক্ষে, আল্লাহর পক্ষে ঐক্যবদ্ধ কোরতে কাজ কোরে যাচ্ছি। আমাদেরকে এই কাজ কোরতে দিন। জাতিকে ঐক্যবদ্ধ কোরতে পারলে আল্লাহর বিধান সমুন্নত হবে, সমাজে অনাবিল শান্তি আসবে। আমাদেরকে সহযোগিতা কোরলে আপনারাও সম্মানিত হবেন। ধর্মের ধারক হিসাবে আপনাদের দায়িত্ব ছিল এই কাজ করা, আপনারা তা কোরছেন না, কিন্তু যারা কোরছে তাদেরকেও বাধা দিচ্ছেন। এটা অনুচিত। সহযোগিতা কোরতে না পারেন অন্তত মিথ্যা প্রচার থেকে বিরত হোন। এটা আপনাদের প্রতি আমাদের সনির্বন্ধ অনুরোধ।
এরপরও যদি অন্যায়ভাবে আমাদেরকে হামলা-নির্যাতন করার অপচেষ্টা অব্যাহত রাখেন তাহোলে মনে রাখবেন প্রতিটি ঘটনায় কারা হামলা কোরছে, কারা ইন্ধন যোগাচ্ছে তাদের নাম, ঠিকানা ও পরিচয় আমাদের কাছে বিস্তারিতভাবে লিপিবদ্ধ থাকে। তাছাড়া প্রত্যেকটি ঘটনায় প্রচলিত আইনে মামলাও করা হয়। সেখানেও তথ্য-উপাত্ত জমা থাকে। আজকে আমরা বৃহত্তর স্বার্থের দিকে চেয়ে এসব ক্ষুদ্র ঝামেলাগুলির বিষয়ে সবর অবলম্বন কোরছি, যেভাবে মক্কী জীবনে আল্লাহর রসুল ও তাঁর আসহাবগণ কাফেরদের অত্যাচারে সবর অবলম্বন কোরেছিলেন। পরবর্তীতে সেই মো’মেনদের হাতে কাফেরদের কী অবস্থা হোয়েছিল সে ইতিহাসও আপনাদের অজানা নয়। আপনারা যতই বিরোধিতা কোরুন না কেন, আমাদের প্রচারিত সত্যকে লাখো মানুষ হৃদয় দিয়ে গ্রহণ করে নিচ্ছেন, সমর্থন কোরছেন। আপনারা যদি এ অন্যায় থেকে বিরত না হোন, তবে জনতার সম্মিলিত প্রতিরোধে একদিন সমস্ত ষড়যন্ত্র নস্যাৎ হবে। আপনারা যারা ক্ষুদ্র স্বার্থে অন্ধ হয়ে আমাদের বিরোধিতায় অবতীর্ণ হোয়েছেন আপনারা আপনাদের ইহকাল ও পরকাল অর্থাৎ দুই জীবনের ক্ষতিই কোরছেন। আল্লাহ সূক্ষ্ম হিসাব গ্রহণকারী, আপনারা কেন সত্যের বিরুদ্ধে নেমেছেন সেটা আল্লাহ অবগত আছেন। অতএব, আপনাদের মঙ্গলের জন্যই আপনাদেরকে সতর্ক করে দিচ্ছি। একই সাথে আহ্বান কোরছি, প্রকৃত এসলাম প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে নিজেদেরকে সম্পৃক্ত করে উভয় জীবনে স্বার্থক হোন। আল্লাহ আপনাদেরকে সঠিক পথ প্রদর্শন কোরুন।