হেযবুত তওহীদ

মানবতার কল্যাণে নিবেদিত

নোয়াখালীতে হেযবুত তওহীদকে উচ্ছেদের আল্টিমেটাম: আইনি পদক্ষেপের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন

আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির সুযোগে হেযবুত তওহীদের উপর সংঘবদ্ধ হামলার ষড়যন্ত্রকারী ও হুমকিদাতাদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছে অরাজনৈতিক আন্দোলন হেযবুত তওহীদ। আজ মঙ্গলবার (১০ সেপ্টেম্বর) বেলা ১১টায় বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনে (ক্র্যাব) এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

হেযবুত তওহীদের তথ্য সম্পাদক এস এম সামসুল হুদার পরিচালনায় অনুষ্ঠানে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন হেযবুত তওহীদের ঢাকা বিভাগীয় সভাপতি ডা. মাহবুব আলম মাহফুজ।

তিনি বলেন, ‘গত ৭ সেপ্টেম্বর বাদ জোহর নোয়াখালী জেলার সোনাইমুড়ি উপজেলার চাষীরহাট ইউনিয়নের পোরকরা গ্রামের নতুন বাজার এলাকায় বসবাসরত হেযবুত তওহীদের চার শতাধিক পরিবারের উপর নৃশংস আক্রমণের ঘোষণা দিয়েছে একটি ধর্মীয় উগ্রবাদী গোষ্ঠী। সেখানে হেযবুত তওহীদের সহস্রাধিক সদস্য, শিশু, নারী, বৃদ্ধ বসবাস করেন। সেখানেই হেযবুত তওহীদের মাননীয় ইমাম জনাব হোসাইন মোহাম্মদ সেলিমের বাড়ি, মসজিদ, স্কুল, গরু ও মৎস্য খামারসহ অর্ধ শতাধিক উন্নয়ন প্রকল্প, এসবের উপর হামলা করাও তাদের অন্যতম লক্ষ্য বলে মন্তব্য করেন তিনি।

ষড়যন্ত্রকারীরা ত্রাণ বিতরণের নাম করে ৭ সেপ্টেম্বর সোনাইমড়ী থানার পাশে চৌরাস্তায় সমাবেশ করে। সেখানে প্রায় ২ ঘণ্টা হেযবুত তওহীদের বিরুদ্ধে উস্কানিমূলক বক্তব্য প্রদান করে বলে অভিযোগ করেন তিনি।

সমাবেশে তারা আলটিমেটাম দিয়েছে আগামী ১৫ তারিখের মধ্যে যদি হেযবুত তওহীদকে নোয়াখালী থেকে উচ্ছেদ করা না হয় তাহলে তারা হামলা করবে, আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিবে এবং জানমালেন ক্ষতি করবে বলেও হুমকি দেওয়া হয় বলে দাবি করেন তিনি।

সমাবেশ করে এ সংক্রান্ত উস্কানিমূলক বক্তব্যের একটি ভিডিও ক্লিপও দেখানো হয় সংবাদ সম্মেলনে। সেখানে দেখা যায়, মুফতি রেজোয়ান রফিকি নামের এক ব্যক্তির নেতৃত্বে সমাবেশে বক্তারা হেযবুত তওহীদকে উচ্ছেদে নানা রকম হুমকি দিচ্ছে। এক ব্যক্তি তার বক্তব্যে থানাকে হুমকি দিয়ে বলছে- থানা যদি হেযবুত তওহীদে কোনো অভিযোগ নেয় তাহলে তারা থানা ঘেরাও করবে।

‘তাদের কাছে এমন অস্ত্র আছে যে, ১০ হাজার লোকও যদি তাদের সাথে লড়াই করে তাহলে তাদের একেকজনের সাথে পারবে না।’ সমাবেশে আরেক বক্তাকে হুমকি প্রদান করে একথা বলতে শোনা যায়।

এমন পরিস্থিতিতে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে হেযবুত তওহীদের নেতৃবৃন্দ বর্তমান অন্তবর্তীকালীন সরকার, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়, সেনাপ্রধানসহ সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে ৪ দফা দাবি পেশ করে।

দাবিসমূহ হলো- ১. যারা বেআইনি সমাবেশে একত্রিত হয়ে হামলার হুমকি ও উস্কানিমূলক বক্তব্য দিয়েছে তাদেরকে দ্রুত আইনের আওতায় আনতে হবে। ২. উগ্রবাদীদের অনুসারী, যারা ফেসবুকে হামলার হুমকি দিয়েছে তাদেরকে চিহ্নিত করে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। ৩. ঢাকার উত্তরাতে অবস্থিত আমাদের কেন্দ্রীয় কার্যালয়েও হামলার হুমকি গত একমাস থেকে দেওয়া হচ্ছে এবং উগ্রবাদীরা স্থানীয়ভাবে অপপ্রচার ও উস্কানি অব্যাহত রেখেছে। তাদের বিরুদ্ধেও আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। ৪. সাম্প্রতিক সময়ে নোয়াখালীসহ সারা বাংলাদেশে আমাদের উপর যতগুলো হামলা হয়েছে সেসব হামলার তদন্ত করে অপরাধীদের আইনের আওতায় আনতে হবে।

লিখিত বক্তব্য পাঠ শেষে বক্তব্য উপস্থাপন করেন হেযবুত তওহীদের আন্তর্জাতিক প্রচার বিষয়ক সম্পাদক মো. মশিউর রহমান। তিনি বলেন, আদর্শগত কিছু অমিলের কারণে আমরা ২৯ বছর ধরে তাদের দ্বারা অত্যাচারিত, নির্যাতিত হয়ে আসছি। এপর্যন্ত আমাদের ৫ সদস্যকে শহীদ করা হয়েছে। ২০১৬ সালে এই সোনাইমুড়ীতে হামলা চালিয়েই দুই সদস্যকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। মসজিদ গুড়িয়ে দেওয়া হয়। এভাবে আর কতদিন চলবে। এবার তারা আমাদের উৎখাতের হুমকি দিয়েছে। আমরা অনেক সহ্য করেছি আর নয়।

গত ৭ সেপ্টেম্বর তারা হেযবুত তওহীদকে উচ্ছেদের আল্টিমেটাম দিয়েছে। তাদের প্রত্যেকটা কথা বে-আইনি। দেশে কি কোনো সরকার নেই, আইন নেই, সংবিধান নেই? আজ পর্যন্ত প্রশাসনকে কার্যতঃ কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি। তাদের কাছে থাকা অত্যাধুনিক অস্ত্র উদ্ধারে কোনো অভিযান চালাতে দেখা যায়নি। আইন শৃঙ্খলা বাহিনী যদি ২০১৬ সালের মতো নিষ্ক্রিয় ভূমিকায় থাকে তাহলে আমরা আক্রান্ত হবো।
কিন্তু আত্মরক্ষার অধিকার আমাদের আছে। হেযবুত তওহীদের লক্ষ লক্ষ কর্মী-সমর্থক রয়েছে। আমরা জীবন দিব কিন্তু উগ্রবাদীদের কাছে মাথা নত করব না। আর আত্মরক্ষার্থে আমরা যদি প্রতিরোধ গড়ে তুলি তাহলে সেখানে একটি যুদ্ধ পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে। এঘটনা বাংলাদেশকে নিয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে একটি খারাপ খবার যাবে। তৃতীয়পক্ষ এর সুযোগ নিতে ছাড়বে না।

এসময় তিনি সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন। এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন হেযবুত তওহীদের ঢাকা মহানগরের সাধারণ সম্পাদক ফরিদ উদ্দিন রব্বানি প্রমুখ।

উল্লেখ্য, ২০১৬ সালে নোয়াখালীর সোনাইমুড়ীর চাষীরহাটে হেযবুত তওহীদের ইমামের বাড়িতে হামলা করে ১১৪ জন নারী শিশু বৃদ্ধকে মারাত্মকভাবে যখম করা হয়েছিল। দুইজনকে জবাই করে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছিল। ১৪ টি বাড়ি আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল।

সার্চ করুন

যুক্ত হোন আমাদের ফেসবুক পেজের সাথে...