সুলতানা রাজিয়া:
মানুষ মানুষের জন্য
জীবন জীবনের জন্য
একটু সহানুভূতি কি মানুষ পেতে পারেনা?
সত্যিই কি আমরা মানুষ? নিজেদের মানুষ ভাবতে আজ বড় কষ্ট হয়। যার মধ্যে মনুষ্যত্ব থাকবে সেইতো মানুষ। মনুষ্যত্বহীন জীব তো পশু। প্রতিটি জিনিসের নিজস্ব একটি ধর্ম বা গুণ থাকে, যা তার অস্তিত্বকে নির্দেশ করে। যেমন- আগুনের ধর্ম পোড়ানো, পানির ধর্ম ভেজানো। আগুন ও পানি যদি পোড়ানো ও ভেজানোর ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে তাহলে তা কি আর আগুন বা পানি থাকবে? কখনোই নয়। তেমনি মানুষের ধর্ম হচ্ছে মানবতা, অর্থাৎ দয়া, মায়া, স্নেহ, ভালোবাসা প্রভৃতি। মানুষ যখন তার এই ধর্ম হারাবে তখন সে আর যাই হোক মানুষ হতে পারে না।
একটা ক্ষুধার্ত কুকুরও যদি আমাদের দুয়ারে আসে তাকে আমরা অন্তত উচ্ছিষ্ট খেতে দেই। অথচ আমাদেরই মতো কিছু মানুষ আজ অথৈ সাগরে ভাসছে। আমরা তাদেরকে ন্যূনতম কুকুরের অধিকারটুকুও দিচ্ছি না। এরা যদি মানুষ না হয়ে অন্য কোনো প্রাণী হতো, তাহলেও হয়ত তাদের আশ্রয় দেয়া হতো। মানুষ হয়ে জন্মানোই যেন তাদের জন্য অভিশাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ তারা জাতিয়তার ভিত্তিতে অন্য দেশের। এটাই কি আমাদের মানবতা? আমরা তো নিজেদের মানুষ বলার সমস্ত গুণ হারিয়ে ফেলেছি।
এই পরিস্থিতিতে কীভাবে আমরা খাচ্ছি, ঘুমাচ্ছি, চাকরি-বাকরি করছি, উৎসব পালন করছি, আনন্দ উল্লাস করছি, স্বাভাবিক সব কাজ করছি। মসজিদ ভর্তি করে নামাজ পড়ছি, আমাদের এই এবাদত কি স্রষ্টার দরবারে কবুল হচ্ছে? আজ কোথায় আমাদের ধর্ম? কোথায় আমাদের মানবতা? যার ভেতর মানবতা আছে সেই হলো প্রকৃত ধার্মিক। মানবতাহীন ধর্ম শেকড় বিহীন বৃক্ষের মতো, যা কখনোই কোনো ফল দেবেনা। যেখানে বলা হয় জীবে দয়া করে যেজন সেজন সেবিছে ঈশ্বর, সেখানে আজ স্রষ্টার সর্বশ্রেষ্ঠ জীব মানুষকে মাঝ সমুদ্রে ঠেলে দেয়া হচ্ছে মৃত্যুর জন্য। তারা বাঁচার জন্য যতই তীরে ভিড়তে চাচ্ছে তাদেরকে শেয়াল কুকুরের মতো বন্দুকের ভয় দেখিয়ে আবার সমুদ্রে ফেরত পাঠানো হচ্ছে। এটা কোনো সভ্যতা? এ কোন্ সভ্যতায় আমরা বাস করছি?
আইয়্যামে জাহেলিয়াতের অন্ধকার যুগে নাকি মেয়ে শিশুদের জীবন্ত কবর দেয়া হতো, এখনতো সন্তান ভূমিষ্ঠ হবার আগেই তাকে জোরপূর্বক ভূমিষ্ঠ করিয়ে আগুনে পুড়িয়ে মারা হচ্ছে, ক্ষুধার্ত, তৃষ্ণার্ত, বস্ত্রহীন, বাসস্থানহীন মানুষগুলোকে শেয়াল কুকুরের মতো বিতাড়িত করা হচ্ছে, পিপাসা নিবারণের জন্য নিজের মূত্র পানে বাধ্য করা হচ্ছে, এ কোন্ জাহেলিয়াতের সমাজে আমরা আছি? আসমান জমিন সবইতো এক আল্লাহর সৃষ্টি। তাঁর এত বড় দুনিয়াতে এই অসহায় মানুষদের কি কোনো ঠাঁই নেই? আমাদের চোখের সামনে এভাবে নারী, পুরুষ, বৃদ্ধ, নিষ্পাপ শিশুরা ধুঁকে ধুঁকে মারা যাবে? আর আমরা যার যার উপাসনালয়ে ঢুকে স্রষ্টার সান্নিধ্য পাবার আশা করতে থাকব? স্রষ্টার সৃষ্টি জীবকে ক্ষুধার্ত, পিপাসার্ত রেখে আমারা কিভাবে তাঁর ভালোবাসা পাবার আশা করছি। মানবতার কল্যাণের জন্য মানুষ সৃষ্টি, মানব ধর্মই প্রকৃত ধর্ম, প্রকৃত এবাদত। যে বা যাদের মধ্যে মানবধর্ম যত বেশি থাকবে সে বা তারা তত বেশি ধার্মিক। তাই আমাদের এখন সবচেয়ে বড় এবাদত হলো সকল অন্যায়ের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হওয়া এবং এমন একটি সিস্টেম প্রতিষ্ঠা করা যেন এমন অবিচার আর না হয়। এর চাইতে বড় ধর্ম, বড় এবাদত আর কিছুই হতে পারেনা।