দীর্ঘ এক যুগের হয়রানির পর অবশেষে মিথ্যা মামলা থেকে বেকসুর খালাস পেয়েছেন হেযবুত তওহীদের দুই সদস্য মো. ইজারনবী ও এমরান হোসেন। সোমবার (২৮ এপ্রিল ২০২৫) তাদের বেকসুর খালাস ঘোষণা করে রায় প্রদান করেন মহামান্য হাইকোর্ট।
এ সময় হেযবুত তওহীদের দুই সদস্য মো. ইজারনবী ও এমরান হোসেনকে গ্রেফতার কেন অবৈধ নয় তা জানতে চেয়েছেন মহামান্য হাইকোর্ট। এছাড়াও হেযবুত তওহীদের সদস্যদের বিরুদ্ধে ৫৪ ধারায় এবং পরে ১৫৩/১৫৩(ক)/৫০৫/৫০৫(ক) ধারায় মামলা দায়েরকে কেন অবৈধ নয় তা জানতে চেয়েছেন আদালত।
জানা যায়, ২০১২ সালের জুলাই মাসে রাজধানীর পল্টন থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি নং-১৭০৩) করা হয় তাদের বিরুদ্ধে। পরবর্তীতে ওই বছরের ২৫ নভেম্বর পল্টন থানায় প্রথমে ৫৪ ধারায় এবং পরে ১৫৩/১৫৩(ক)/৫০৫/৫০৫(ক) ধারায় মামলা দায়ের করা হয়। পরে মো. ইজারনবী ও এমরান হোসেন উচ্চ আদালতে একটি রিট আবেদন করেন।
মামলা ও আদালত সূত্রে জানা যায়, ২০১২ সালের জুলাই মাসে হেযবুত তওহীদের দুই সদস্য মো. ইজারনবী ও এমরান হোসেন রাজধানীর গুলিস্তান সংলগ্ন হকার্স মার্কেটের পূর্ব পার্শ্বে হেযবুত তওহীদের আদর্শসম্বলিত “আল্লাহর মোজেজা: হেযবুত তওহীদের বিজয় ঘোষণা” এবং দাজ্জালের প্রকৃত পরিচয়, ক্ষমতা, প্রতিপত্তি ইত্যাদি বর্ণনা করে দাজ্জাল ধ্বংসের বার্তা প্রচার করছিলেন এবং হেযবুত তওহীদ প্রকাশিত কিছু বই বিক্রয় ও প্রচারপত্র বিলি করছিলেন। এ সময় এলাকার কিছু লেবাসধারী উগ্রবাদী ব্যক্তি তাদের নিষিদ্ধ সংগঠনের সদস্য বলে মিথ্যা তথ্য পুলিশকে দেয়। পুলিশের টহল দল সেই তথ্যের ভিত্তিতে তাদের নিষিদ্ধ সংগঠনের সদস্য সন্দেহে আটক করে।
এ সময় মো. ইজারনবী ও এমরান হোসেন হেযবুত তওহীদের বৈধতার স্বপক্ষে সকল কাগজপত্র প্রদর্শন করেন। পুলিশ কাগজপত্র দেখে বৈধতার ব্যাপারে নিশ্চিত হলেও তাদের নিকট থেকে উৎকোচ দাবি করে। উৎকোচ দিতে অস্বীকৃতি জানালে পুলিশ তাদের ওপর চড়াও হয় এবং সন্দেহভাজন আসামি হিসেবে আদালতে সোপর্দ করে। পরবর্তীতে ব্যাপক তদন্ত ও অনুসন্ধান করে কোনো অপরাধ না পাওয়ার পরও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে প্রথমে ৫৪ ধারায় এবং পরে ১৫৩/১৫৩(ক)/৫০৫/৫০৫(ক) ধারায় প্রসিকিউশন দাখিল করা হয়।
দীর্ঘ তদন্ত ও অনুসন্ধানেও কোনো অপরাধের প্রমাণ না পাওয়া সত্ত্বেও মামলা চালু রাখা হয়। পরে মামলার আসামিরা উচ্চ আদালতে রিট আবেদন করেন। দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ের পর অবশেষে বিজ্ঞ আদালত সোমবার তাদের নির্দোষ ঘোষণা করে বেকসুর খালাস প্রদান করেন।
দীর্ঘদিন হয়রানির কারণে তদন্ত ও বিচারিক প্রক্রিয়ার দুর্বলতার ব্যাপারেও অসন্তোষ প্রকাশ করলেও আদালতের রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করে কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন হেযবুত তওহীদের এই দুই সদস্য। তারা বলেন, দীর্ঘ এক যুগ পরে হলেও আমাদের হয়রানিমূলক মামলাটি মিথ্যা প্রমাণ হয়েছে। এতে আমরা বিজ্ঞ আদালতের প্রতি কৃতজ্ঞ।
হেযবুত তওহীদের কেন্দ্রীয় তথ্য সম্পাদক এস. এম. সামসুল হুদা বলেন, “হেযবুত তওহীদ সারা দেশে রাষ্ট্রীয় আইন মেনে কাজ করে। আমাদের কার্যক্রমে বই বিক্রি, হ্যান্ডবিল বিলি, সভা-সমাবেশ এবং সেমিনার আয়োজন করা হয়। গত ৩০ বছরে আমরা কোনো আইন ভঙ্গ করিনি এবং ভবিষ্যতেও করব না। তা সত্ত্বেও একটি মিথ্যা মামলার জন্য এক যুগ ধরে আমাদের সদস্যদের ভোগান্তি পোহাতে হলো। এটি বিচার বিভাগের একটি নেতিবাচক দিক।”
তিনি আরও বলেন, “দুই মামলাতেই পুলিশ প্রথমে তাদেরকে ৫৪ ধারায় আটক করার পর ঘৃণা বা বিদ্বেষমূলক কাজের ১৫৩, ১৫৩(ক), ৫০৫ এবং ৫০৫(ক) ধারায় মামলা করে। কিন্তু হেযবুত তওহীদের বক্তব্য কোনোভাবেই ঘৃণা বা বিদ্বেষমূলক বক্তব্য ছড়ানোর সাথে সম্পৃক্ত নয়। আজ আদালতের রায়ে সেই বিষয়টি আবারও প্রমাণ হলো। সেই সঙ্গে হেযবুত তওহীদের সদস্যদের বিরুদ্ধে চলমান মামলাগুলোও ষড়যন্ত্রমূলক ও মিথ্যা। আমরা চাই দ্রুত সেগুলোরও নিষ্পত্তি করা হোক।”
সূত্র: হাইকোর্টের রায়ে বেকসুর খালাস পেলেন হেযবুত তওহীদের দুই সদস্য