রাকীব আল হাসান:
স্রষ্টা উপাসনালয়ে থাকেন না। স্রষ্টা আর্ত-পীড়িত, নির্যাতিত মানুষের ক্রন্দন শুনে ব্যথিত হন। অথচ, ধর্মব্যবসায়ীরা এই নির্যাতিত মানুষের দায়িত্ব শয়তান, অত্যাচারী দুর্বৃত্তদের হাতে ছেড়ে দিয়ে মসজিদ, মন্দির, গির্জা, প্যাগোডায় ঢুকেছেন। তারা অর্থ উপার্জনের জন্য ধর্মকে উপাসনা, পূজা প্রার্থনার বস্তুতে পরিণত করেছেন, ধর্মগুলিকে মসজিদ, মন্দির, গীর্জা আর প্যাগোডার চার দেওয়ালের মধ্যে বন্দী করে রেখেছেন। অথচ সকল ধর্মের মতো সনাতন ধর্মেও ধর্মব্যবসা নিষিদ্ধ। আমাদেরকে বুঝতে হবে যে, নামাজ-রোজা, উপবাস, পূজা-আর্চনা ধর্মের মূল কাজ নয়। ধর্মের প্রকৃত লক্ষ্য শান্তি। ওঙ্কার ধ্বনির অর্থ শান্তি, ইসলাম অর্থও শান্তি। পৃথিবী যখন অশান্তির জ্বলন্ত অগ্নিকুণ্ড হয়ে আছে, মানুষের মুখে ভাত নেই, মসজিদ/মন্দির থেকে জুতা চুরি হয়, যে সমাজে চার বছরের শিশু ধর্ষিত হয় সেখানে যারা মসজিদে গিয়ে মনে করে ইবাদত করছেন, মন্দিরে গিয়ে দুধ-কলা দিয়ে মনে করে যে উপাসনা করছেন, মক্কা-গয়া-কাশিতে গিয়ে মনে করেন দেবতা বুঝি স্বর্গ থেকে তাদের উপর পুষ্পবৃষ্টি করছেন, তারা বিরাট ভ্রান্তির মধ্যে আছেন। মানবতার উপরে উপাসনার গুরুত্ব প্রদান একপ্রকার ভারসাম্যহীনতা যা দূর করার জন্যই আল্লাহ যুগে যুগে নতুন নবী-রসুল, অবতার পাঠিয়েছেন। আল্লাহ বলেছেন, “পূর্ব এবং পশ্চিমদিকে তোমাদের মুখ ফিরানোতে কোন পুণ্য নেই। কিন্তু পুণ্য আছে কেউ স্রষ্টার উপর, মহাপ্রলয়ের উপর, মালায়েকদের উপর এবং সমস্ত নবী-রসুলগণ তথা অবতারদের উপর ঈমান আনবে, আর স্রষ্টাকে ভালোবেসে স¤পদ ব্যয় করবে আতত্নীয়-স্বজন, এতিম-মিসকিন, মুসাফির-ভিক্ষুক ও দাসমুক্তির জন্যে (সুরা বাকারা ১৭৭)। আর সনাতনধর্মে মানবসেবাকেই বলা হয়েছে নর-নারায়ণ সেবা। প্রশ্ন আসতে পারে, তাহলে কি উপাসনার প্রয়োজন নেই? হ্যাঁ উপাসনার প্রয়োজন আছে। যারা মানুষের শান্তির জন্য কাজ করবে তাদের আত্মিক পরিশুদ্ধির জন্য প্রয়োজন উপাসনা। কিন্তু ধর্মজীবীরা এই সহজ সত্যকেও আড়াল করে রেখেছেন। স্বামী বিবেকানন্দ বলেছিলেন, “কেহ ধার্মিক কি অধার্মিক পরীক্ষা করিতে হইলে দেখিতে হইবে, সে ব্যক্তি কতদূর নিঃস্বার্থ। যে অধিক নিঃস্বার্থ সে অধিক ধার্মিক। সে পণ্ডিতই হউক, মূর্খই হউক, সে শিবের বিষয় জানুক বা না জানুক সে অপর ব্যক্তি অপেক্ষা শিবের অধিকতর নিকটবর্তী। আর যদি কেহ স্বার্থপর হয়, সে যদি পৃথিবীতে যত দেবমন্দির আছে, সব দেখিয়া থাকে, সব তীর্থ দর্শন করিয়া থকে, সে যদি চিতা বাঘের মতো সাজিয়া বসিয়া থাকে, তাহা হইলেও সে শিব হইতে অনেক দূরে অবস্থিত। (রামেশ্বর-মন্দিরে প্রদত্ত বক্তৃতা)।