হেযবুত তওহীদ

মানবতার কল্যাণে নিবেদিত

স্রষ্টার হুকুম পরিত্যাগ করে কখনো শান্তি আসবে না

রাকীব আল হাসান:
—————–
১) মহামতি বুদ্ধকে একবার প্রশ্ন করা হয়েছিল- “যত ধর্মাচার্য দেখি, তারা সকলেই একে অপরের বিরোধী। আমরা তাদের মধ্যে কার কথা সত্য বলে বুঝব?” মহামতি বুদ্ধ অত্যন্ত সহজ, সরলভাবে বললেন- “সোনার খাঁটিত্ব পরীক্ষা করবার জন্যে যেখানে যত সোনা আছে তার পেছনে ছোটাছুটি করলে কোনো ফল হবে না। নিজের কাছে যে কষ্টিপাথর আছে, তাতেই সোনার আসল নকল যাচাই করতে হবে। অতএব তোমরা কোনো ধর্মাচার্যের রূপ-সৌন্দর্য, তার বাগ্মিতা বা লোকপ্রসিদ্ধি দেখে তার উপদেশ গ্রহণ করো না। পরন্তু তার জন্যে তোমরা তোমাদের বুদ্ধি এবং অনুভবকে কষ্টিপাথর কর।”
কোনো বক্তব্য সত্য না মিথ্যা, সঠিক না ভুল এটা বোঝার জন্য আমরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে লেবাস-সুরতধারী, নামডাক ওয়ালা ধর্মাচার্য তথা ধর্মীয় পণ্ডিত ব্যক্তি বা মোল্লা-পুরোহিতদের কাছে যাই। কিন্তু মহামতি বুদ্ধ বলেছেন, সত্য-মিথ্যা, সঠিক-ভুল যাচাই করবার জন্য নিজের বিবেক, নিজের যুক্তিবুদ্ধির প্রয়োগ করতে। নিজের বিবেকই সত্য-মিথ্যা যাচাইয়ের কষ্টিপাথর। যেটা সত্য সেটা অতি নগণ্য একজন ব্যক্তি বললেও সত্য আর যেটা মিথ্যা সেটা সমগ্র পৃথিবীর সব প্রসিদ্ধ ধর্মগুরু এসে বললেও মিথ্যা। কিন্তু আমরা অহংকার বশত নগণ্য (নিজের দৃষ্টিতে যাকে নগণ্য মনে হয়) ব্যক্তির কাছ থেকে সত্য গ্রহণ করতে পারি না আর অন্ধত্ব ও অজ্ঞানতার কারণে ধর্মজীবীদের লেবাস-সুরত, বাগ্মিতা দেখে মুগ্ধ হই। ফলে এক শ্রেণির স্বার্থবাজ ধর্মজীবী আমাদেরকে প্রতারিত করে, ধর্মকে নিয়ে বাণিজ্য করে, সত্যটা আমাদের জানতে দেয় না। একটা অতি সাধারণ যুক্তি হলো ধর্মের উদ্দেশ্য যেহেতু মানুষের কল্যাণ কাজেই মানুষের কল্যাণ হয় এমন সব কাজই মূলত ধর্মের কাজ আর মানুষের অকল্যাণ হয় এমন সব কাজই অধর্ম। কোনো একটা কাজ ধর্মের দৃষ্টিতে বৈধ না অবৈধ তার জন্য তন্ন তন্ন করে শাস্ত্র খোঁজার কী প্রয়োজন, আগে নিজের বিবেককে প্রশ্ন করুন, যুক্তি দিয়ে বিচার করুন, ভেবে দেখুন কাজটি মানুষের কল্যাণ করে নাকি অকল্যাণ, কাজটি নিজের স্বার্থে করা হচ্ছে নাকি সমাজ কল্যাণের স্বার্থে? তাহলেই উত্তর পেয়ে যাবেন। আজ আমরা বিবেকের দ্বারে তালা দিয়ে শাস্ত্র খুঁজে বেড়ায়, এই সুযোগে ধর্মজীবীরা শাস্ত্র মুখস্ত করে সেটাকে পুঁজি করে নিজ স্বার্থ হাসিল করে। আমাদের দৃষ্টিকে প্রসারিত করতে হবে, বিবেককে জাগ্রত করতে হবে, যুক্তিবোধকে সক্রিয় করতে হবে।
২) মহামতি বুদ্ধ একবার একটা উপমা দিয়ে বলেন- “একজন লোক বর্ষাকালে অচিরবতী (রাপ্তী) নদীর তীর দিয়ে যাচ্ছিল। নদীর দু’কূল ভরা। সেখানে কোনো নৌকা বা সেতু নেই। অথচ সেই লোকটাকে পারে যেতে হবে। সে ভেবে কতগুলো কাঠ একত্র করে একটা ভেলা তৈরি করে সেই ভেলায় চড়ে নদী পার হলো। ভেলাটা তার কতটা উপকার করেছিল তা বলা বাহুল্য মাত্র। কিন্তু এই উপকারের কথা স্মরণ করে সে যদি ভেলাটাকে মাথায় তুলে নেয়, তাহলে যে গ্রামে সে যাবে সেখানে তাকে সকলেই নিরেট মূর্খ ভাববে। তারা বলবে, ওরে মূর্খ ভেলা নদী পার হবার জন্যে; মাথায় নিয়ে বেড়াবার জন্যে নয়। এই কথা বলে তিনি শিষ্যদের বললেন- আমার উপদেশ ভেলার মতো কেবল পারে উত্তরণের জন্যে, ধরে রাখবার জন্যে নয়।”
আমরা মহান ব্যক্তিদের অনেক সম্মান করি; তাদের নিয়ে গান, কবিতা, প্রবন্ধ লিখি; তাদের পূজা করি; তাদেরকে মাথায় তুলে রাখি। তাদের প্রতি ভালোবাসায় আপ্লুত হয়ে অতি বাড়াবাড়ি করি কিন্তু যে কারণে ঐ মহান ব্যক্তিগণ এসেছেন সেটিই আমরা ভুলে যাই। আমরা তাদের শিক্ষাকে বাদ দিয়ে ব্যক্তিকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ি। নবী-রসুল, অবতার, মহামানবগণ এ ধরাতে এসেছেন শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে। সকল প্রকার অন্যায়, অবিচার দূর করে সমাজে শান্তি ফিরিয়ে আনাই ছিল তাঁদের মূল উদ্দেশ্য। আমরা যদি তাদের ঐ শিক্ষাকে ধারণ করতে পারি তবে সমাজ থেকে অন্যায়, অবিচার, অশান্তি দূর করে সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠা আমরাও করতে পারব। আর এটা করতে পারলেই তাঁরা আমাদের উপর সন্তুষ্ট হবেন। এটা না করে যতই তাদের ভক্তি, শ্রদ্ধা আর পূজা করি না কেন কোনো লাভ হবে না। ভেলা মাথায় করে নিয়ে বেড়ানোর মতো হবে।

সার্চ করুন

যুক্ত হোন আমাদের ফেসবুক পেজের সাথে...