গত মঙ্গলবার রাতে পাবনায় হেযবুত তওহীদের জেলা কার্যালয়ে সন্ত্রাসী হামলা ও নৃশংসভাবে মো. সুজন নামে এক সদস্যকে হত্যার প্রতিবাদে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়েছে। বুধবার ২৪ আগস্ট সকাল দশটায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এ মানববন্ধনের আয়োজন করে হেযবুত তওহীদের ঢাকা মহানগর শাখা।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, জঙ্গিবাদ, ধর্মব্যবসা, সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে হেযবুত তওহীদ বারবার আক্রান্ত হচ্ছে। ২০১৬ সালে নোয়াখালীর সোনাইমুড়িতে হেযবুত তওহীদের দুই সদস্যকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। যার বিচার আজও হয়নি। গত মঙ্গলবার রাতেও পাবনায় হেযবুত তওহীদের এক সদস্যকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। হেযবুত তওহীদের কার্যালয়ে সশ্রস্ত হামলা চালিয়ে ১০জনকে আহত মারাত্মকভাবে আহত করা হয়েছে। একটা সভ্য রাষ্ট্রে একের পর এক এভাবে হত্যাকাণ্ড চলতে পারে না। সোনাইমুড়ি ঘটনার বিচার হলে আজকে পাবনায় এ ঘটনার পুনরাবৃত্তি হতো না। যারা যারা এ হামলা চালিয়েছে এবং যারা পেছন থেকে হামলার ইন্ধন যুগিয়েছে তাদের রাজনৈতিক পরিচয় ও ধর্মীয় সামাজিক পরিচয় যাই হোক না কেন তারা সন্ত্রাসী। তাদেরকে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।
এসময় মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারীরা ‘বিচার চাই বিচার চাই, সুজন হত্যার বিচার চাই’, ‘পাবনায় হেযবুত তওহীদের উপরে হামলা কেন, কর্তপক্ষের জবাব চাই’, ‘জঙ্গিবাদের ঠিকানা, বাংলাদেশে হবে না’, ‘এক সুজন শহীদ হলে, লক্ষ সুজন ঘরে ঘরে’ শ্লোগান দিতে থাকেন।
মানববন্ধনে হেযবুত তওহীদের গণমাধ্যম বিষয়ক সম্পাদক এস এম সামসুল হুদা বলেন, “হেযবুত তওহীদ গত ২৮ বছরে একটিও অপরাধ করেনি। তারপরও হেযবুত তওহীদের নামে ক্রমাগত অপপ্রচার-গুজব ছড়ানো হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দরস্থ হয়েও আমরা পর্যাপ্ত নিরাপত্তা পাচ্ছি না। পাবনার ঘটনার একমাস আগে থেকেই আমরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে হামলার সম্ভাবনার ব্যাপারে জানিয়েছিলাম। পাবনা সদর থানায় সাধারণ ডায়েরিও করা হয়েছিল। কিন্তু তারা আমাদের অভিযোগ আমলে নেয় নি। যদি তখনই এইসব অপপ্রচারকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হতো তাহলে আজকে আমাদের এক ভাইকে হারাতে হতো না। তিনি আরো বলেন, এখন সময় এসেছে সমস্ত গণমাধ্যমকর্মীদের, বুদ্ধিজীবীদের, আইন প্রয়োগকারী বাহিনীর সোচ্চার হতে হবে। আমাদের ধৈর্যের পরীক্ষা নিবেন না। আমরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে চুপ করে থাকি, কিন্তু আমাদের ধৈর্যের বাঁধ ভেঙ্গে গেলে আমরা দেখে নিব বাংলার মানুষ কাদের গ্রহণ করে। আমি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীসহ সবার কাছে এই ন্যক্কারজনক ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবী করছি।”
হেযবুত তওহীদের সহকারী সাহিত্য সম্পাদক মো. আসাদ আলী বলেন, “গতকাল রাত ছিল আমাদের জন্য এক বেদনাদায়ক রাত। পাবনা জেলা কার্যালয়ে হামলা শুরু হওয়ার পর থেকেই আমরা নানা ধরনের খবর পেতে থাকি। বিভীষিকাময় এ রাতের কথা বলে বোঝানোর মত না। হামলার ঘটনার জানার পরও কি আমাদের কিছু করার ছিল না? আমরা কি চাইলেই পাল্টা পদক্ষেপ নিতে পারতাম না? আমরা রাষ্ট্রের আইনশৃঙ্খলা মেনে চলি, এগুলা আমাদের দুর্বলতা নয়। যারা দুর্বলতা মনে করবেন, তারা ভুল করবেন। আজকে আমরা যখন হামলার শিকার হচ্ছি তখন রাষ্ট্র, সরকার, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, মানবাধিকার সংস্থাগুলো কোথায়? তাদের তো কোন উচ্চবাচ্য শোনা যাচ্ছে না। তিনি আরো বলেন, আমরা জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে, ধর্মব্যবসার বিরুদ্ধে, ধর্ম নিয়ে অপরাজনীতির বিরুদ্ধে কথা বলি এটাই কি আমাদের অপরাধ? আজকে সুজনের এই আত্মত্যাগ কোন সাধারণ আত্মত্যাগ নয়। সুজন হত্যার বিচার করতে হবে। দায়ী ব্যক্তিদের ফাঁসিতে ঝোলাতে হবে।
যাত্রাবাড়ি থানার সভাপতি মো. ওয়ালিউল্লাহ খান বলেন, একটা গোষ্ঠী দিনের পর দিন হামলা করবে, তা আর মেনে নেওয়া হবে না। দেশে আত্মরক্ষার জন্য সাংবিধানিক অধিকার রয়েছে, পরবর্তীতে আমরা তা প্রয়োগ করতে পিছপা হবো না। সোনাইমুড়ি, পাবনার ঘটনায় নিহত ভাইদের ত্যাগ বৃথা যেতে দিব না। মতিঝিল থানার সভাপতি মেজবাহ উল হক বলেন, আমি প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। এই হামলার সুষ্ঠু তদন্তপূর্বক দোষীদের বিচার নিশ্চিত করতে হবে। একইসাথে হেযবুত তওহীদের এমামকে প্রতিনিয়ত হত্যার হুমকি দেওয়া হচ্ছে, তার নিরাপত্তাও সরকারের পক্ষ থেকে নিশ্চিত করতে হবে। উত্তরা ও গাজীপুর অঞ্চলের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান টিটু সুজন হত্যার বিচার দাবী করে বলেন, দেশে ধর্মব্যবসা আইন করে নিষিদ্ধ করতে হবে, ধর্ম নিয়ে অপরাজনীতি নিষিদ্ধ করতে হবে। কারণ ধর্মের নাম করেই সাম্প্রদায়িকতার বিদ্বেষ ছড়িয়ে এসব হামলা করা হচ্ছে।
মানববন্ধনের আরো বক্তব্য দেন হেযবুত তওহীদের কেন্দ্রীয় অনলাইন প্রচার বিষয়ক সম্পাদক মোখলেসুর রহমান সুমন, ঢাকা মহানগর হেযবুত তওহীদের সাধারণ সম্পাদক ফরিদ উদ্দিন রাব্বানী, সাভার ও আশুলিয়া অঞ্চলের সভাপতি ইউনূস মিয়া, তেজগাঁও থানার সভাপতি আলহামদ, মিরপুর থানার সভাপতি আব্দুল হক বাবুল প্রমুখ।