সাইদুর রহমান:
আফ্রিকা থেকে শুরু করে ইন্দোনেশিয়া পর্যন্ত মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ সকল দেশে আজ একটি অস্থিতিশীল অবস্থা বিরাজ করছে। ঘন ঘন সরকার পরিবর্তন, আন্দোলন, ভাংচুর, হরতাল, জ্বালাও পোড়াও ইত্যাদির মাধ্যমে প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি, প্রাণহানি হচ্ছে। আমাদের দেশও এর বাইরে নয়। সারা বছর ধরে চলে সরকার আর বিরোধীদলের ইঁদুর বেড়াল খেলা, সরকার পতনের আন্দোলন, দাবি দাওয়া আদায়ের জন্য হরতাল, ঘেরাও, বিক্ষোভ, বলির পাঠা জনগণের জানমালের ক্ষয়ক্ষতি সাধন। পাঁচ বছর অন্ত্যে অনুষ্ঠিত হয় নির্বাচনী খেলা, ক্ষমতায় আসে অপর সংখ্যাগরিষ্ঠ দল। তারা এসে আবার পূর্ববর্তী সরকারের মতই দুর্নীতি, লুটপাট, স্বজনপ্রীতি, চাঁদাবাজি, অর্থ-সম্পদ বিদেশে পাচার ইত্যাদি করতে থাকে। সরকারও চালায় বিরুদ্ধবাদীদের উপর দমন পীড়ন। এভাবে একেরপর এক পরিবর্তিত হয় সরকার, কিন্তু সিস্টেম থেকে যায় আগের মতই। ফলে সাধারণ মানুষের জীবন চলে আগের নিয়মেই। একটি গাড়ি নষ্ট হলে ড্রাইভার পরিবর্তন কোন সমাধান নয়, আগে দরকার গাড়ি মেরামত করা। চলমান এই রাজনৈতিক সংস্কৃতি দেখে দেখে মানুষ বিরক্ত, হতাশ। কিন্তু তাদের কাছে কোন উত্তম বিকল্প নেই। তাই তারা একবার কড়াই থেকে চুলায় লাফিয়ে পড়ছে, আবার বাঁচার জন্য লাফিয়ে কড়াইতে উঠছে। এতে করে দিনে দিনে মানুষের যন্ত্রণা বাড়ছে এবং বাড়বে।
এই পরিস্থিতি থেকে মানবজাতির মুক্তির পথ আছে। যে পথটি জানতে আমাদের দৃষ্টি দিতে হবে ইসলাম-পূর্ব আরবের দিকে। আজ যেমন আমরা একটি ভৌগোলিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় বসবাস করি, সে সময় আরবে এমন কোন সুসংহত ব্যবস্থা ছিল না। তারা ছিল বংশধারার ভিত্তিতে বিভিন্ন গোত্র-উপগোত্রে বিভক্ত। জীবন নিয়ন্ত্রিত হতো গোত্রপতিদের সিদ্ধান্ত মোতাবেক। এই সব গোত্রগুলির মধ্যে তুচ্ছাতিতুচ্ছ কারণে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ বেঁধেই থাকত, যা পুরুষাণুক্রমে অব্যাহত থাকত। তারা ছিল বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে অবজ্ঞাত, জাহেলিয়াতের অন্ধকারে নিমজ্জিত, ক্ষুধার্ত ও নিঃস্ব বেদুইন হিসাবে পরিচিত। বাকি দুনিয়া তাদেরকে করুণার চোখে দেখতো। আরবরা তাই কোনদিন বিশ্বের দরবারে সম্মানিত আসন লাভ করার কথা কল্পনাও করতে পারতো না। জাহেলিয়াতের অন্ধকারে নিমজ্জিত এই গোত্রগুলিই যখন আল্লাহর রসুলের আহ্বানে সাড়া দিয়ে তওহীদের ভিত্তিতে ঐক্যবদ্ধ হলো, তখন তারা হয়ে গেল বিশ্বজয়ী একটি জাতি। প্রায় নিরক্ষর আরবদের থেকে এমন একটি জাতির উন্মেষ ঘোটল যারা জ্ঞানে-বিজ্ঞানে, সামরিক শক্তিতে সকল জাতির শিক্ষকের আসনে অধিষ্ঠিত হলো। বাকি দুনিয়া সভয়-সম্ভ্রমে তাদের দিকে চেয়ে থাকত। রসুলাল্লাহর আনীত আল্লাহর দেওয়া সিস্টেম পরস্পর শত্র“ভাবাপন্ন মানুষগুলোকে ভাই বানিয়ে ফেললো। আত্মিক উন্নতির ফলে প্রতিটি মানুষ একেকজন সোনার মানুষে রূপান্তরিত হয়ে গেলেন। চুরি, ডাকাতি প্রায় বন্ধ হয়ে গেল। অভাব, অনটন, দারিদ্র্য দূর হয়ে সমাজে সমৃদ্ধি আসলো। আজ আমরা রসুলাল্লাহর যে সাহাবীদেরকে আদর্শ মানুষ হিসেবে জানি, তাঁরা ইসলাম গ্রহণের আগেও কি এমনই ছিলেন? না। কিন্তু স্বল্প সময়ের ব্যবধানে তাঁরাই একেকজন অনুসরণযোগ্য মহামানবে পরিণত হলেন। আজও আমরা তাদের নামের পরে বলি ‘রাদি আল্লাহু আনহুম’ অর্থাৎ ‘আল্লাহ তাঁর প্রতি রাজি, খুশি।
বর্তমানের প্রেক্ষাপটেও আমাদেরকে সকল সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে পারে আল্লাহর দেওয়া সেই অপরূপ, নিখুঁত সিস্টেমটি। স্রষ্টার প্রদত্ত সেই সিস্টেমকে অবজ্ঞা ও উপেক্ষা করে মানবজাতি একদিকে যেমন চরম অন্যায় ও অশান্তির আগুনে পুড়ছে, তেমনি আল্লাহর দৃষ্টিতে কাফের ও মুশরিক হওয়ার ফলে পরকালেও অনন্তকাল জাহান্নামের আগুনে দগ্ধ হবে। তাই মানবজাতির প্রতি আমাদের আহ্বান- আসুন, আমরা যদি সত্যিই শান্তিতে নিরাপত্তায় জীবনযাপন করতে চাই তাহলে বার বার সরকার পাল্টানোর চিন্তা না করে চলমান সিস্টেমটাই পাল্টাই। কিসে মানুষের জীবনে শান্তি আসবে তা কে ভালো জানবে- আল্লাহ না মানুষ? নিশ্চয়ই আল্লাহ। সুতরাং আল্লাহর দেওয়া সিস্টেমই পারে সকল প্রকার অন্যায়, অবিচার ও পাপাচারের দুয়ার বন্ধ করে দিতে। আল্লাহর দেওয়া সেই সিস্টেমটি বাস্তবায়নের ফলে আজকের ঘুণে ধরা সমাজের অসৎ মানুষগুলিই একেকজন সোনার মানুষে পরিণত হবে ইনশা’আল্লাহ।