সিস্টেমের সংস্কার নয় এর আমূল পরিবর্তন করতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন হেযবুত তওহীদের সর্বোচ্চ নেতা ইমাম হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম। শনিবার (২১ সেপ্টেম্বর) সকাল ১০ টায় রাজধানীর ইনস্টিটিউশন অফ ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশ (আইডিইবি) তে হেযবুত তওহীদ ঢাকা মহানগর আয়োজিত ‘রাষ্ট্র সংস্কারে ইসলামের ভূমিকা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় এ মন্তব্য করেন তিনি।
এসময় তিনি বলেন, যেহেতু এখন অনেকেই ভাবছেন যে, অতীতের সিস্টেম পাল্টাতে হবে। এই সিস্টেম ব্যর্থতায় বর্যবসিত হয়েছে; এটা একটা সুখবর। আমরা এতদিন এ কথাই বলে এসেছি যে, সিস্টেমটাই পরিবর্তন করতে হবে। এখন আপনারা ছাত্রনেতা, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, সাংবাদিক, শিক্ষকসহ দেশের বিরাট একটা অংশ এটা অনুভব করতে শুরু করেছেন যে গত কয়েক শতাব্দি ধরে আমাদের দেশে যে সিস্টেম দ্বারা সমাজ, রাষ্ট্র, অর্থনিতি, প্রশাসনিক ব্যবস্থা পরিচালিত হয়ে আসছে সেটা ভুল। এই সিটেমকে পাল্টাতে হবে এই সিস্টেমের সংস্কার করতে হবে। আমরা মনে করি, আপনাদের এই ভাবনাটা একটা পজেটিভ দিক, একটা ইতিবাচক দিক। এটাও তো এর আগে অনেকে স্বীকার করতেন না, এই পচা গলা সিস্টেমটাকেই বেদবাক্য মনে করতেন সবাই।’
শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে হলে আল্লাহর দেওয়া সিস্টেমের আদলে সিস্টেমকে সাজাতে হবে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘আল্লাহ মানুষ সৃষ্টি করে এমনি এমনি মানুষকে এই পৃথিবিতে ছেড়ে দেন নি। তিনি মানুষের পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র, অর্থনীতি, রাজনীতি কিভাবে পরিচালিত হবে সেটার একটা রূপরেখা, একটা সিস্টেম দিয়েছেন। এটার নাম আল্লাহ দিয়েছেন দীন অর্থাৎ জীবনব্যবস্থা। আল্লাহর দেওয়া সেই দীন, সেই সিস্টেম যদি এপ্লাই করা হয় তাহলেই কেবল প্রকৃত সংস্কার সম্ভব।’
ইসলামি দলগুলোর প্রতি প্রশ্ন রেখে হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম বলেন, আপনারা কি সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে সরকারকে প্রস্তাব দিয়েছেন যে, মাননীয় সরকার গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র নয়, যে সিস্টেমে রাষ্ট্র চলছে এই সিস্টেম নয় আল্লার বিধান মেনে নিন আপনাদের আমাদের সম্পর্ক হবে ভাই ভাই। আমরা আর মারামারি করব না, আল্লাহর বিধান দিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনা করব।
আর যদি এই হিম্মত না থাকে তাহলে ক্ষমতা হস্তান্তর করুন, আমরা আল্লার বিধান দিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনা করব। আপনার, আপনাদের কোনো নেতাকর্মীর একটা ছেড়া জুতাও আমরা ধরব না।
যদি ক্ষমতা হস্তান্তর না করেন তাহলে আপনাদের বিরুদ্ধে লড়াই হবে। আমরা লক্ষ লক্ষ তওহীদি জনতা একত্রিত হয়েছি হয় আমরা আল্লার বিধান প্রতিষ্ঠা করব না হয় জীবন দিব।
আপনারা কি এই প্রস্তাব দিয়েছেন? দেন নি। অথচ রসুল (সা.) এর দেখানো ইসলাম প্রতিষ্ঠার নীতি ছিল এটা। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা কোটা সংস্কারের আন্দোলন করতে গিয়ে জীবন দিয়েছেন। সেই আন্দোলনের তোপের মুখে সরকার পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে। আপনারা সুযোগ বুঝে ঢুকে গিয়েছেন। আপনারা মনে করেছেন ইসলাম প্রতিষ্ঠা করেছেন। না, পারেন নি। কেবল ইসলাম প্রতিষ্ঠার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এখন আপনারা যা শুরু করেছেন যদি নিবৃত না হন তাহলে এই সুযোগ চিরকালের জন্য হাতছাড়া হয়ে যাবে বলে হুশিয়ার করেন হেযবুত তওহীদের এই নেতা।
চলমান মব জাস্টিস ইসলামের সুমহান আদর্শের পরিপন্থী মন্তব্য করে তিনি বলেন, ছাত্রদের রক্তের বিনিময়ে সরকার পতনের মাধ্যমে যখন ইসলাম প্রতিষ্ঠার জন্য একটা অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে তখন ইসলামের নামে অনেকে শুরু করলেন এর বাড়িতে হামলা ওর বাড়িতে হামলা, এই মাজারে হামলা ঐ দরবারে হামলা, প্রতিপক্ষ মত-ফেরকার বিরুদ্ধে আক্রমণ, লুটপাট, ভাংচুর, অগ্নিকাণ্ড।’
বায়তুল মোকাররমের মতো মসজিদ যেটা এদেশের ধর্মপ্রাণ মানুষের ধর্মীয় চেতনার জায়গা, আশা আকাঙ্ক্ষার জায়গা সেখানে আপনারা মারামারি করলেন, রক্তারক্তি করলেন। এটা কারোরই কাম্য নয়। আফসোস করে বলেন তিনি।
সতর্ক করে দিয়ে তিনি বলেন, ‘সারা বিশ্বময় ইসলাম বিদ্বেষীরা ইসলামের বিরুদ্ধে প্রোপাগান্ডা চালাচ্ছে। ইসলাম, কোরান, রসুল (সা.) নাকি সন্ত্রাস শিক্ষা দেয়। তারা প্রচার করে বেড়াচ্ছে মুসলমান মানেই টেরোরিস্ট। এই কারণে ইউরোপ অ্যামেরিকায় ইসলাম ফোবিয়া সৃষ্টি হয়েছে। তারা মনে করে এখানে ইসলাম প্রতিষ্ঠা হলে এদেশ নরককুণ্ডে পরিণত হবে। পার্শ্ববর্তী দেশের মিডিয়াগুলো দেশকে উগ্রবাদী, জঙ্গিবাদী, মৌলবাদী বলে প্রচারণা চালাচ্ছে। আর তারা মব জাস্টিস চালু করে দিয়ে তাদের সুযোগ করে দিচ্ছেন।
আপনারা আমার বাড়ির সামনে গিয়ে হুমকি দিয়েছেন। হামলা করবেন, উচ্ছেদ করবেন আল্টিমেটাম দিয়েছেন। আমাকে নাকি কেটে টুকরো টুকরো করবেন। কাকও নাকি আমার গোশত ভাগে পাবে না। এমন বেআইনি, অসামাজিক, অসভ্যতা আপনারা করেছেন। নোয়াখালীতে সমাবেশ কওে আমাকে হত্যার হুমকি দিচ্ছেন।
হেযবুত তওহীদের ঢাকা বিভাগীয় আমির ডা. মাহবুব আলম মাহফুজের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন হেযবুত তওহীদের মুখপাত্র আন্তর্জাতিক প্রচার সম্পাদক মো. মশিউর রহমান, কেন্দ্রীয় তথ্য সম্পাদক এসএম সামসুল হুদা, কেন্দ্রীয় সাহিত্য সম্পাদক রিয়াদুল হাসান প্রমুখ।
উপস্থিত ছিলেন, ঢাকা জেলা সভাপতি ইউনুস আলী, কেন্দ্রীয় শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক সাইফুর রহমান, ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক রিয়াল তালুকদার, উত্তরা জোনের আমির মোস্তাফিজুর রহমান টিটু প্রমুখ।