বর্তমানের আমাদের নিজেদের অবস্থা নিয়ে আমাদের সচেতন হতে হবে। পাশ্চাত্য পরাশক্তিরা ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন অর্থ ব্যায় করছে তাদের সামরিক খাতের উন্নতির জন্য। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এ বছর ৮৮৬ বিলিয়ন অর্থ সামরিক খাতে ব্যায় করেছে। চীন নিজেদের সামরিক বাজেট ৮.৬% বৃদ্ধি করেছে। একইভাবে উত্তর কোরিয়া, রাশিয়া ইত্যাদি দেশ তাদের সামরিক শক্তিকে বৃদ্ধি করার জন্য তাদের সর্বাত্মক সম্পদকে এই খাতে ব্যায় করছে। কথা হচ্ছে এই যে প্রতিটি পরাশক্তি তাদের সামরিক শক্তিকে দিনদিন বৃদ্ধি করেই চলছে এর পিছনে কারণ কী? তারা কী এই শক্তি জমা করে রাখবে?
অবশ্যই নয়। এই শক্তির যথাযথ ব্যবহার তারা অবশ্যই করবে। যদি বর্তমান পৃথিবীর দিকে আমরা দৃষ্টিপাত করি তবে দেখতে পাব যে পুরো পৃথিবী আজ দাবানলের মত জ্বলছে। কয়েকদিন আগেও উত্তর কোরিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে কয়েক দফা উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়েছে। পুরো বিশ্ব জুড়ে চলছে সাম্রাজ্যবাদীদের তাণ্ডব ও শক্তিমত্তার মহড়া। মধ্যে দিয়ে আমরা মুসলিমরা সবচেয়ে অধিক নিপীড়িনের শিকার হচ্ছি। আমরা হচ্ছি লাঞ্ছিত, অপমানিত, নিগৃহীত। সকল সাম্রাজ্যবাদী শক্তিদের প্রথম নিশানায় রয়েছে মুসলিম জাতি কারণ এ জাতির কোন অভিভাবক নেই। এ জাতি আজ ফুটবলের মত হয়ে গিয়েছে, যেদিকেই যাচ্ছে সেদিক থেকেই লাথি দেয়া হচ্ছে।
সাম্রাজ্যবাদীদের এ আগ্রাসনের ফলে একের পর এক মুসলিম দেশ আজ ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। সিরিয়া, ইরাক ইত্যাদি দেশ আজ বসবাসের অনুপযোগী। লিবিয়ায় আজ দুর্ভিক্ষ। ভুললে চলবে না এই একই পরিস্থিতি আমাদের জন্মভূমির সাথেও হতে পারে। আমাদের প্রিয় জন্মভূমি বাংলাদেশ, যে মাটিতে আমরা সিজদাহ করি, নব্বই শতাংশ মুসলিমের দেশ। তাই তাদের অন্যতম নিশানা হিসেবে আমরাও সূচীতে রয়েছি। তাই আমাদের এখনই এর থেকে পরিত্রাণের একটি উপায় খুঁজতে হবে।
এই সাম্রাজ্যবাদীদের তা-ব থেকে, বর্তমান অবস্থায় থেকে, দেশকে রক্ষা করা সম্ভব হবে না। আন্তর্কলহ, রাজনৈতিক রেষারেষী ইত্যাদির কারণে আমাদের অভ্যন্তরীণ অবস্থা শোচনীয় পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছে। তাই এখন এই সাম্রাজ্যাবাদী তা-ব থেকে দেশকে ও দেশের মানুষকে রক্ষা করতে হলে আমাদের একটি সঠিক আদর্শের ভিত্তিতে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে। সঠিক আদর্শের ভিত্তিতে যদি আমরা ঐক্যবদ্ধ না হই তবে আমরা এই দাজ্জালীয় সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসন থেকে নিজেদের দেশকে ও দেশের জনগণকে রক্ষা করতে সমর্থ হব না। সেই সঠিক আদর্শের কথাই আমরা হেযবুত তওহীদ প্রচার করে যাচ্ছি।
আমাদের এখন তওহীদের, আল্লাহ ছাড়া আর কারো হুকুম মানি না, ভিত্তিতে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। এই একটি সূত্রই আমাদের সকলকে একত্রে ঐক্যবদ্ধ রাখবে। আমরা যে বর্ণের হই না কেন, যে ধর্মের হই না কেন সকলেই আমরা এক স্রষ্টায় বিশ্বাসী। তাই আমদের সকলের ঐক্যের মূলমন্ত্রই হবে যে আমরা এক স্রষ্টা হুকুম অনুযায়ী নিজেদের সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, পারিবারিক এক কথায় সকল বিষয় পরিচালনা করব। যদি আমরা এই একটি কথার উপর ঐক্যবদ্ধ হতে পারি তখন আমরা হব এক জাতি, আমাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হবে একটি, আমাদের নেতা হবে একজন যিনি হবেন ন্যায়বান ও যিনি সর্বদা দেশ ও জাতির হিতে চিন্তা করবেন ও আমাদের লক্ষ্য অর্জনে সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত করবেন।
একটি তসবিহর কথাই চিন্তা করুন। তসবিহর দানাগুলো আলাদা আলাদা থাকে। কিন্তু এই দানাগুলোকে একসাথে জোড়া দেয়া হয় একটি সুতোর মাধ্যমে। এই সুতোই হল তওহীদ, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, আল্লাহ ছাড়া কারো হুকুম মানব না। এই সুতো দিয়েই পুরো জাতিকে একসূত্রে বাঁধতে হবে। আল্লাহর রসুল এই তওহীদের সুতোর মাধ্যমেই আরবের পশ্চাৎপদ, বিভিন্ন গোত্রে বিভক্ত জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করেছিলেন। কিন্তু সেই ঐক্যবদ্ধ জাতি আজ নেই। ইবলিস তওহীদের এই সুতো কেটে দিয়েছে। ফলে আমরা হয়ে বিভক্ত হয়ে পড়েছি। টুকরো টুকরো হয়ে যাওয়ার ফলেই আজ মুসলিমদের উপর যে যেভাবে পারছে ধ্বংসলীলা চালাচ্ছে।
অতএব আমাদের এ জন্মভূমিকে বাঁচাতে হলে আমাদের এখন একমাত্র করণীয় হচ্ছে তওহীদের ভিত্তিতে ঐক্যবদ্ধ হওয়া। ঐক্যবদ্ধ হতে পারলেই আমরা আমাদের দেশকে বাঁচতে পারব। সাম্রাজ্যবাদীদের ছোবল থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য এছাড়া আর কোন উপায় নেই।