হেযবুত তওহীদ

মানবতার কল্যাণে নিবেদিত

সাম্যবাদ ও ইসলামের নেতৃত্বের প্রভেদ

এমামুয্যামান জনাব মোহাম্মদ বায়াজীদ খান পন্নীর লেখা থেকে

কমিউনিস্ট রাশিয়ার রাষ্ট্রনেতা জোসেফ স্ট্যালিন

ধনতান্ত্রিক পুঁজিবাদী ব্যবস্থা যে অমানবিক, এটা যে ধনীকে আরও ধনী গরীবকে আরও গরীব করে, একথা আজ যুক্তি-তর্ক দিয়ে প্রমাণ করার দরকার নেই। এই ব্যবস্থার নিষ্ঠুর পরিণতি দেখেই মানুষ বিকল্প ব্যবস্থা খুঁজেছিল। যদি উম্মতে মোহাম্মদী তাদের ওপর আল্লাহর রসুলের অর্পিত দায়িত্ব ত্যাগ করে পরিণামে একটি বিচ্ছিন্ন ঐক্যহীন, অশিক্ষিত, ঘৃণ্য জাতিতে পরিণত না হতো তবে পুঁজিবাদের বিকল্প ব্যবস্থা মানুষকে খুঁজতে হতো না। তাদের ওপর আল্লাহর দেয়া অর্থনৈতিক ব্যবস্থা উম্মতে মোহাম্মদীই প্রতিষ্ঠা করে সর্ব রকম অর্থনৈতিক অবিচার নির্মূল করে দিত।

উম্মতে মোহাম্মদী তার ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হওয়ায় মানুষকে পুঁজিবাদী ব্যবস্থার একটা বিকল্প ব্যবস্থা উদ্ভাবন করতে হল এবং স্বভাবতঃই সেটা ঐ পুঁজিবাদের মতই হল মানুষ দ্বারা সৃষ্ট এবং সে স্রষ্টা হলেন কার্ল মার্কস। জয়জয়কার পড়ে গেলো- পাওয়া গেছে, মানুষের অর্থনৈতিক সমস্যার প্রকৃত সমাধান পাওয়া গেছে। আর অর্থনৈতিক অবিচার হবে না, প্রতিটি মানুষ অর্থনৈতিকভাবে সমান হবে, কেউ প্রাচুর্যে বিলাসে কেউ দারিদ্র্যে বাস করবে না। বলা হল এই হোচ্ছে স্বর্গরাজ্য। কিন্তু হয়েছে কি? সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলির নেতারা এবং সাধারণ নাগরিক শ্রমিক-কৃষক একই মানের জীবন যাপন করেন কি? একই মানের খাবার খান কি? একই রকম পোষাক পরিচ্ছদ পড়েন কি? অবশ্যই নয়। এই কথায় গত মহাযুদ্ধের একটা ঘটনার কথা মনে পড়ে যাচ্ছে।

পুঁজিবাদী ইংল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিল মস্কো গিয়েছিলেন, কমিউনিস্ট রাশিয়ার রাষ্ট্রনেতা জোসেফ স্ট্যালিনের সাথে যুদ্ধের ব্যাপারে বুদ্ধি পরামর্শ করার জন্য। ক্রেমলিনের বিরাট প্রাসাদে বসে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করতে করতে গভীর রাত্রে চার্চিলের ক্ষিদে পেয়ে গেলো, যদিও রাত্রের প্রথম দিকে তারা যে ভোজ খেয়েছিলেন তা রাশিয়ার সাধারণ মানুষ, শ্রমিক, কৃষক জীবনেও দেখেনি। যাই হোক, ক্ষিদে চাপতে না পেরে চার্চিল বলেই ফেললেন যে কিছু না খেলে আর চলছে না। খাওয়া-দাওয়ার পাট আগেই চুকে গিয়েছিলো বলে স্ট্যালিন আর কাউকে ডাকাডাকি না করে উঠে গিয়ে ফ্রিজ খুলে ভেড়ার একটি আস্ত রানের রোস্ট বের করে এনে টেবিলে রাখলেন। চার্চিল তো চার্চিলই, এক হাত নেবার লোভ সামলাতে পারলেন না। রোস্ট চিবুতে চিবুতে বললেন “ইস! কবে আমি এমন কোরতে পারবো যে ইংল্যান্ডের প্রতিটি ঘরে ফ্রিজের মধ্যে এমনি ভেড়ার রানের রোস্ট থাকবে”। স্ট্যালিনের গালে এটা ছিল একটা মারাত্মক চড়। অর্থনৈতিক সাম্যবাদের দেশে রাশিয়ার ঘরে ঘরে ফ্রিজের মধ্যে রানের রোস্ট নেই, স্ট্যালিনের প্রাসাদের ফ্রিজে আছে। কিন্তু বলার কিছু ছিল না। স্ট্যালিনকে চুপ কোরে চড়টা হজম করতে হয়েছিল। স্ট্যালিন যখন চার্চিলকে রানের রোস্ট খাওয়াচ্ছিলেন ও খাচ্ছিলেন, তখন তুমুল যুদ্ধ চলছে। হিটলারের বাহিনী মস্কোর কাছাকাছি পৌঁছে গেছে। লক্ষ লক্ষ রাশিয়ান অর্ধাহারে অনাহারে থেকে প্রাণপণে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে। হাজার হাজার সৈনিক প্রচণ্ড শীতে জমে মারা পড়ছে।

অনেকটা অনুরূপ অবস্থায় এই শেষ জীবন-ব্যবস্থার নেতারা কি করেছেন তার একটা তুলনা দেয়া দরকার। এই ইসলাম যখন ইসলাম ছিল- অর্থাৎ বিশ্বনবীর কাছ থেকে যারা সরাসরি শিক্ষা-গ্রহণ করেছিলেন, তাদের অন্যতম, দ্বিতীয় খলিফা ওমরের (রা.) সময় দুর্ভিক্ষ হয়েছিল। যতদিন দুর্ভিক্ষ ছিলো ততদিন দুর্ভিক্ষ পীড়িত মানুষ যেমন অর্দ্ধাহারে অনাহারে থাকে তিনিও তেমনি থাকতেন। ওমর (রা.) প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, যতদিন না জনসাধারণ এমন অবস্থায় পৌঁছবে যে তারা ভালো কোরে খাবার পরও উদ্বৃত্ত থাকবে ততদিন তিনি গোশত-মাখন এমনকি দুধ পর্যন্ত খাবেন না এবং খানও নি, যা ছিল তখনকার আরবের প্রধান খাদ্য।
তিনি বলতেন “আমি যদি ঠিকমত খাই তবে আমি কী করে বুঝবো আমার জাতি কী কষ্ট সহ্য করছে?” এই অর্ধাহারে অনাহারে থেকে খলিফা ওমরের (রা.) মুখ রক্তশূন্য ও চুপসে গিয়েছিল। এই ঘটনা ও ওমরের (রা.) ঐ কথা গুলো ঐতিহাসিক সত্য (ইসলামের কঠোর বিরুদ্ধবাদী, মহানবীকে প্রতারক, ভণ্ড বলে প্রমাণ করা চেষ্টায় প্রথম সারির লেখক স্যার উইলিয়াম ম্যুর এর দ্যা আর্লি খেলাফাত বইয়ের এর ২৩২-২৩৩ পৃঃ দেখুন)।

সার্চ করুন

যুক্ত হোন আমাদের ফেসবুক পেজের সাথে...