প্রতিবেদক: মে দিবস সম্পর্কে আপনাদের ভাবনা কি?
আমীর: আপনার প্রশ্নের উত্তরে আমি আপনাকে একটি প্রশ্ন করতে চাই, বলুন তো এইভাবে সভা, সেমিনার, লাল হেডব্যান্ড বেঁধে র্যালি, গলা ফাঁটিয়ে শ্লোগান, টক শো, গণসঙ্গীতের আসর, সরকারি ছুটি ইত্যাদি আড়ম্বর, আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে দিবস পালন করে শত শত বছরে শ্রমিকদের কতটা অধিকার আদায় হয়েছে, সমাজে তাদের সম্মান কতটুকু বেড়েছে? আসলে এইসব আনুষ্ঠানিকতা করে শ্রমিকের মুক্তি আসে নি, আরও হাজার বছর এভাবে এসব করে গেলেও আসার কোনো যৌক্তিক কারণ নেই।
প্রতিবেদক: তাহলে এই বঞ্চনা কি শ্রমিকের নিয়তি? এর কি কোনো শেষ নেই?
আমীর: শ্রমিকদের প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করে জোর করে তাদের থেকে শ্রম আদায় করার ইতিহাস মানব সভ্যতায় বহুল আলোচিত, অতি-প্রাচীন একটি বিষয়বস্তু। শ্রমিকদের বঞ্চিত হওয়া, অতঃপর অধিকার আদায়ের জন্য বিক্ষুব্ধ হওয়া, অসন্তোষ সৃষ্টি এবং দাবি আদায়ের জন্য আন্দোলন, কিছু প্রাণক্ষয়, মালিকের পক্ষ থেকে কিছু দাবি পূরণের আশ্বাসলাভ, অতঃপর আবার প্রতারিত ও বঞ্চিত হওয়া– এই চক্রে আবর্তিত হচ্ছে শ্রমিক সমাজ। স্বার্থকেন্দ্রিক সমাজব্যবস্থায় এ চক্র থেকে মুক্তির কোনো পথ নেই। প্রতিবেদক: তাহলে আপনাদের মতে নিপীড়িত শ্রমিক জনতার মুক্তি আসতে পারে কীভাবে?
আমীর: এর উত্তর জানতে হলে আমাদেরকে মানবজাতির অতীত ইতিহাসের দিকে লক্ষ্য করতে হবে। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, এই নির্যাতিত অবহেলিত শ্রমজীবি মানুষগুলি, তখনই সমাজের শোষক শ্রেণির যাঁতাকলের নিষ্পেষণ থেকে মুক্তি পেয়েছে যখন আল্লাহর কোনো নবী-রসুল, অবতার, মহামানবের মাধ্যমে ঐ সমাজে সত্যদীন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। উদাহরণ হিসাবে ফেরাউনের শাসনাধীন বনী ইসরাঈলের কথা বলা যায়। ফেরাউন বনী ইসরাইল গোত্রের লোকদেরকে চরম অবমাননাকর কঠোর পরিশ্রমের কার্যে নিযুক্ত করেছিল। সেই কাজ আদায়ের জন্য তারা বনী ইসরাইলের লোকদের উপরে জঘন্যতম নির্যাতন ও উৎপীড়ন চালাতো (কোর’আন ও বাইবেলের পাতায় পাতায় সেই নির্যাতনের বিবরণ উল্লেখিত আছে। তাদেরকে ফেরাউনের দাসত্ব থেকে উদ্ধার করতেই আল্লাহ পাঠিয়েছিলেন মুসাকে (আ.)।
প্রতিবেদক: মাঝখানে একটা প্রশ্ন করি, আপনারা অতীতের ক্রীতদাস আর আজকের শ্রমিকদেরকে কি এক দৃষ্টিতে দেখছেন?
আমীর: এটা তো সহজ কথা। অতীতকালে এই শ্রমিকদেরকে বলা হতো দাস, গোলাম। এখন দাসের বদলে শ্রমিক, কর্মী এবং এমন আরও সুন্দর সুন্দর সুশীল শব্দ ব্যবহার করা হয়, কিন্তু সুন্দর শব্দের অন্তরালে এখনও সেই ক্রীতদাসের নিপিড়ীত প্রতিমূর্তিই দেখা যায়। এমনকি আমি মনে করি, কিছু কিছু ক্ষেত্রে বর্তমানের অবস্থা আরও ভয়াবহ, কারণ দাসপ্রথায় মনিব ক্রীতদাসের সম্পূর্ণ দায়িত্ব গ্রহণ করত আর আজ নাম মাত্র মজুরিতে শ্রমিক ভাড়া করে তার শ্রম ক্রয় করা হয়, কিন্তু আর কোনো দায় দায়িত্বই নেওয়া হয় না। যাহোক যে কথা বলছিলাম, মানবজাতির স্রষ্টা আল্লাহ। কিসে মানুষ অন্যায় অবিচার শোষণ থেকে বেঁচে একটি শান্তিময় প্রগতিশীল সমাজে বাস করতে পারবে তা সবচেয়ে ভালো কে জানবেন? তিনি সূরা মুলক-এ বলছেন, যিনি সৃষ্টি করেছেন তিনি কি জানেন না? তিনি সূক্ষ্মতম বিষয়ও জানেন। এই কথার কোনো জবাব আছে কি? কী ব্যবস্থা, নিয়ম-কানুন সমাজে প্রতিষ্ঠা করলে মানুষ ‘মানুষ’ হিসাবে তার পূর্ণ অধিকার ভোগ করতে পারবে, বঞ্চিত হবে না এটা সবচেয়ে ভালো জানেন স্রষ্টা আল্লাহ। সেই ব্যবস্থা তিনি যুগে যুগে তার নবী-রসুল, অবতারগণের মাধ্যমে মানবজাতির কাছে প্রেরণ করেছেন যার ধারাবাহিকতায় শেষ জীবনব্যবস্থা হিসাবে এসেছে মহানবী (সা.) এর উপরে নাজেলকৃত ইসলামের সর্বশেষ সংস্করণটি। সেই সত্যদীন প্রতিষ্ঠার ফলে তদানীন্তন অর্ধ-পৃথিবীতে অতুলনীয় শান্তি ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।
প্রতিবেদক: ইসলামের যে শান্তিময় সমাজের কথা বলছেন তার কোনো নজির কি আছে?
আমীর: আসলে সত্য বলতে কি সেই ইতিহাস আজ খুব কম মানুষেরই জানা আছে, ইসলামের বিরুদ্ধে অপপ্রচারে সেই গৌরবময় ইতিহাস চাপা পড়ে গেছে। সেটা শুনলে কল্পনার মতো মনে হয়। যদি মানুষের জীবন ও সম্পদের নিরাপত্তার কথা বলি, একটি উদাহরণ দিলে বুঝবেন, একজন যুবতী মেয়ে একা শত শত মাইল পথ একা ভ্রমণ করত, তার মনে কোনো প্রকার ক্ষতির আশঙ্কাও জাগ্রত হতো না। মানুষ রাতে শোওয়ার সময় ঘরের দরজা বন্ধ করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করত না, রাস্তায় ধনসম্পদ হারিয়ে ফেললেও তা পরে যেয়ে যথাস্থানে পাওয়া যেত, চুরি, ডাকাতি, হত্যা, রাহাজানী প্রায় নির্মূল হয়ে গিয়েছিল, আদালতে মাসের পর মাস কোনো অপরাধ সংক্রান্ত মামলা আসত না। আর অর্থনৈতিক দিক থেকে প্রতিটি মানুষ স্বচ্ছল হয়ে গিয়েছিল। এই স্বচ্ছলতা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছিল যে, মানুষ যাকাত ও সদকা দেওয়ার জন্য টাকা পয়সা নিয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়াতো কিন্তু সেই টাকা গ্রহণ করার মত লোক পাওয়া যেত না। শহরে নগরে লোক না পেয়ে মানুষ মরুভূমির অভ্যন্তরে যাকাত দেওয়ার জন্য ঘুরে বেড়াতো। এটি ইতিহাস। মানবরচিত কোনো জীবনব্যবস্থাই এর একটি ভগ্নাংশও মানবজাতিকে উপহার দিতে পারে নাই।
প্রতিবেদক: একটা বিষয় পরিষ্কার করুন, আজকে ১৬০ কোটির মতো মুসলিম দুনিয়াতে আছে। কিন্তু তাদের জীবনে এই অকল্পনীয় শান্তির লেশমাত্রও দেখা যায় না। বরং তারা সর্বত্র নিগৃহিত। আসলে রসুলাল্লাহর সময়ে এই শান্তি ও নিরাপত্তা অবস্থা কিভাবে সৃষ্টি হয়েছিল?
আমীর: এর একমাত্র কারণ, সেই অর্ধেক পৃথিবীর মানুষ সকল মিথ্যা ব্যবস্থা, বিধান প্রত্যাখ্যান করে তারা স্রষ্টার দেওয়া সত্য-জীবনব্যবস্থা গ্রহণ এবং জাতীয় ও ব্যক্তিগত জীবনে সামগ্রিকভাবে প্রয়োগ করেছিল অর্থাৎ ‘লা- ইলাহা ইল্লাল্লাহ, আল্লাহ ছাড়া আর কারও বিধান গ্রহণ করি না’ এই মূলমন্ত্রের ভিত্তিতে জীবন পরিচালনা করেছিল। আজও যদি সেই সত্য-জীবনব্যবস্থা প্রয়োগ করা হয়, সেই একই ফল আমরা পাবো। আর সেটাকে পরিত্যাগ করে যত রকম উপায়েই চেষ্টা প্রচেষ্টা করা হোক মানবসমাজে শান্তি, সঙ্গতি ও শৃঙ্খলা আসবে না, শ্রমখাতেও আসবে না। এই যে মে দিবস, মানবাধিকার সংস্থা, ট্রেড ইউনিয়ন ইত্যাদি যা কিছু করা হচ্ছে, আমি পরিষ্কারভাবে বলতে চাই, এগুলি সব ভুল চিকিৎসা। যে অসুখের জন্য যে ঔষধ তা প্রয়োগ না করে রোগীকে সান্ত্বনাসূচক অন্য ঔষধ প্রয়োগ করা হচ্ছে। রোগীও আরোগ্যের আশায় সেই ঔষধই সেবন করে যাচ্ছে। আসলে রোগ সারানো ডাক্তারের উদ্দেশ্য নয়, উদ্দেশ্য নিজের স্বার্থকে সমুন্নত রাখা। এটা রোগী বুঝতে পারছে না। বুঝতে পারছে না যে, তারা একটি হীন চক্রান্তের শিকার।
প্রতিবেদক: এরা কার চক্রান্তের শিকার?
আমীর: সুস্পষ্টভাবে বলতে গেলে, কেবল এরা নয়, আমরা সবাই ইহুদি খ্রিষ্টান সভ্যতার তৈরি ব্যবস্থার শিকার। আমাদের এ যামানার এমাম জনাব মোহাম্মদ বায়াজীদ খান পন্নী রসুলাল্লাহর ভবিষ্যদ্বাণী থেকে সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করেছেন যে, এই ইহুদি খ্রিষ্টান সভ্যতাই হচ্ছে মানবজাতির মহাশত্র“ দাজ্জাল। বস্তুবাদী ধর্মহীন এই ‘সভ্যতা’র প্রতারণামূলক মতবাদগুলি সারা দুনিয়াতে কায়েম করার মাধ্যমে দাজ্জাল মানবজাতিকে তার পদানত করে রেখেছে। এই পদানত করে রাখার একটি কৌশল হলো, সে চায় অধিকাংশ মানুষ যেন নিজেদের জীবনধারণের জন্য সকাল থেকে রাত পর্যন্ত রোজগার করতে বাধ্য হয়। দু’মুঠো অন্ন, মাথা গোঁজার ঠাঁই আর কিছু মৌলিক চাহিদা পূরণের জন্য যদি তাকে উদয়াস্ত রক্ত পানি করে পরিশ্রম করতে হয়, এর পিছনে তার সমস্ত সময়, শ্রম, মেধা, যোগ্যতা খরচ করে ব্যস্ত থাকতে হয় তাহলে সে তার এই দাসত্বের জীবন থেকে মুক্তির চিন্তাও করতে পারবে না, কোনোদিনই ঐ শোষকদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হতে পারবে না। ওসব চিন্তা করতে গেলেই তাকে না খেয়ে খোলা আকাশের নিচে থাকতে হবে। এইভাবে দাজ্জাল পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষকে পাকস্থলী কেন্দ্রীক করে ফেলেছে। তাছাড়া সমগ্র মানবজাতিকে ব্যক্তিস্বার্থের চিন্তায় আকণ্ঠ নিমজ্জিত করে রাখা হয়েছে, মানুষগুলি হয়ে গেছে আত্মকেন্দ্রিক, স্বার্থপর, মানুষ হিসাবে এখানেই তার চূড়ান্ত পরাজয়। এতে করে তার কর্তৃত্ব ও শাসন বিরাট ঝুঁকি থেকে মুক্ত হয়ে গেছে। সে যে ব্যবস্থা (ঝুংঃবস) করে রেখেছে এতে একদিকে কিছু পূঁজিপতি মানুষের বিরাট সম্পদের পাহাড় জমে উঠবে, সেই পাহাড়ে বসে তারা অকল্পনীয় ভোগ বিলাসে মত্ত থাকবে, অপরদিকে সেই গুটিকয় মানুষের ভোগ বিলাসের অর্থ যোগান দিতে গিয়ে কোটি কোটি বনী আদম তাদের ন্যূনতম অধিকার থেকেও বঞ্চিত হয়ে প্রায় পশু পর্যায়ের জীবন যাপন করতে বাধ্য হবে।
প্রতিবেদক: আপনার কথাগুলি একপাক্ষিক হয়ে গেল না? শ্রমিকদের সুবিধা অসুবিধা নিয়ে আলোচনা করার জন্য ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকার আছে, আরও বহু প্রতিষ্ঠান আছে।
আমীর: হ্যাঁ, এটা সত্য যে আন্দোলনের পথ তারা খোলা রেখেছে, তবে সেই সাথে দাজ্জালের ব্যবস্থা মালিকদেরকে বলছে দ্রব্যের উৎপাদন ব্যয় হ্রাস করো। মালিকরা যদি শ্রমিক ইউনিয়নের চাপ, অসহযোগ আন্দোলন, লক-আউট ইত্যাদির কারণে তাদের কিছু দাবি দাওয়া মেনে নেয় বা মজুরি বৃদ্ধি করে ওদিকে দাজ্জালের অনুগত সরকারগুলি তাদের যাতায়াতভাড়া, গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে দেয় এবং ব্যবসায়ীরা নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য বাড়িয়ে দেয়। ফলে শ্রমিকের মজুরি দু’ টাকা বাড়লে ব্যয় বাড়ে দশ টাকা। এভাবেই আবর্তিত হয় শোষণের চক্র। এ চক্রান্ত শাখের করাত, দুই পাশেই কাটে।
এই যে বললেন ট্রেড ইউনিয়ন, মানবাধিকার সংস্থা। একটা কথার জবাব দিন তো, আল্লাহ তো এতিমদের প্রতি মমতা প্রদর্শন করতে, তাদের সম্পদ ভোগ না করতে আদেশ করেছেন। আল্লাহর রসুলও এতিমদের প্রতি অত্যন্ত স্বহৃদয় ছিলেন, তিনি নিজেও শৈশব থেকে এতিম ছিলেন। এই উম্মাহর এতিমদের জন্য রসুলাল্লাহ কি পারতেন না এতিমখানা নামে একটি পৃথক দাতব্য প্রতিষ্ঠান সৃষ্টি করতে? পারতেন, একটা নয়, এমন বহু প্রতিষ্ঠান যেমন পঙ্গু আবাসন, বৃদ্ধাশ্রম ইত্যাদি তিনি সৃষ্টি করতে পারতেন। কিন্তু তিনি তা করেন নি। কারণ তিনি জানতেন আল্লাহর সার্বভৌমত্ব ভিত্তিক জীবনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে পারলেই কেবল এতিম নয়, শ্রমিক নয়, সকল মানুষের অধিকার সুপ্রতিষ্ঠিত হবে, নিশ্চিত হবে। সমস্ত মানবজাতির জীবনে ন্যায়, সুবিচার, সাম্য, উন্নতি, প্রগতির একমাত্র সূত্র আল্লাহর তওহীদ অর্থাৎ আল্লাহর সার্বভৌমত্ব।
প্রতিবেদক: তাহলে মুসলামান দেশগুলিতে এই দিবস পালন করা হচ্ছে কেন?
আমীর: এটা যে করবে তা আল্লাহর রসুল ভবিষ্যদ্বাণী করে গেছেন। তিনি বলেছেন, তোমরা ভবিষ্যতে তোমাদের পূর্ববর্তী অর্থাৎ ইহুদি খ্রিষ্টানদের অনুসরণ, অনুকরণ করবে, এমন কি তারা যদি সরীসৃপের গর্তে প্রবেশ করে তবে তোমরাও তাই করবে। আরেক হাদীসে আল্লাহর রসুল বলেছেনÑ নিশ্চয়ই এমন সময় আসছে যখন বনি এসরাঈলীদের এমন পদে পদে অনুকরণ করা হবে যে তাদের কেউ যদি তার মায়ের সঙ্গে প্রকাশ্যে ব্যভিচার করে তবে আমার উম্মাহর মধ্য হতেও কেউ তাই করবে। বাস্তবেও তাই। এই মুসলিম নামক জনসংখ্যাটি আজ আত্মপরিচয় ভুলে, ইতিহাস, ঐতিহ্য, নিজেদের নবীর শিক্ষা সর্বস্ব বিকিয়ে দিয়ে তারা পশ্চিমা সভ্যতার নিখুঁত অনুকরণে ব্যস্ত। তারা একবার চেয়ে দেখছে না যে তাদের সকল অধিকার, সমৃদ্ধি, উন্নতি তাদের হাতেই রয়েছে, সেটা হচ্ছে দীনুল হক, সত্য-জীবনব্যবস্থা।
প্রতিবেদক: ইসলামে শ্রমিকদের অধিকার সম্পর্কে কিছু বলুন।
আমীর: শ্রমিকদের ব্যাপারে রসুলাল্লাহর হুকুম হচ্ছে, শ্রমিকের ঘাম শুকিয়ে যাওয়ার আগেই তার মজুরি দিয়ে দাও। এটা রসুলাল্লাহর কেবল উপদেশবাণী নয়, এটা ছিল উম্মাহর প্রতি তাঁর হুকুম, নির্দেশ যা উম্মাহ কিভাবে বাস্তবায়ন করেছে তা ইতিহাস। রসুলাল্লাহ বলেছেন, ‘তোমাদের সেবক তোমাদের ভাই। তারা বাধ্য হয়ে তোমাদের অধীন হয়েছে। তাই যার ভাই তার নিজের অধীন তার উচিত, সে নিজে যা খায় তা-ই তাকে খেতে দেয়, নিজে যা পরে তা-ই তাকে পরতে দেয় এবং সাধ্যের বাইরে তার কাছ থেকে কোনো কাজ আদায় না করে।’ প্রত্যেক মুসলিম তাই তার অধীনস্থ ব্যক্তিকে তাকে শ্রমিক, কাজের লোক, দাস যাই বলেন, তাকে নিজের ভাই জ্ঞান করতেন। আর আজ ‘মালিক শ্রমিক ভাই ভাই’ এমন অসামঞ্জস্যপূর্ণ কথা রাজনৈতিক বক্তব্যেও বলা হয় না। ওমর (রা.) নিজে যেরুযালেম যাওয়ার সময় অর্ধেক পথ নিজে উটে আরোহণ করেছেন, বাকি অর্ধেক পথ নিজের দাসকে উটে আরোহণ করিয়ে নিজে উটের রশি টেনে নিয়ে গেছেন। সত্যদীন প্রতিষ্ঠিত থাকার ফলে খলিফার সঙ্গে কোনো দেহরক্ষী বাহিনীরও প্রয়োজন পড়ে নি। এমন একটি অবস্থা কি আজ কল্পনা করা যায়? সত্যদীন পৃথিবীর যে অংশে প্রতিষ্ঠিত হবে, সেখানে কেবল মানুষই তার অধিকার পাবে তাই নয়, সেখানে প্রতিটি প্রাণীর অধিকার নিশ্চিত হবে। আল্লাহর রসুল বলেছেন, ‘হে মানুষ! বাকহীন পশুর সাথেও রহম করো। যখন তোমরা এদেরকে সফরে নিয়ে যাও তখন তাদের উপর সাধ্যাতীত বোঝা চাপিয়ে দিও না।’ পশু দূরে থাক, আমরা দেখি আজকের শিল্প কারখানাগুলিতে শ্রমিকরা যেন চাকুরী করতে বাধ্য থাকে সেজন্য তাদের মাসের পর মাস বেতন ও ওভারটাইমের টাকা বকেয়া রেখে দেয়া হয়। ঘাম তো বহু আগেই শুকিয়ে গেছে, এবার না খেয়ে রক্ত মাংস শুকিয়ে হাড্ডিসার হয়ে যায়।
যে জীবনব্যবস্থা কায়েমের ফলে মানুষ টাকা পয়সা, খাদ্য নিয়ে মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরতো কিন্তু নেওয়ার লোক ছিল না, সেই জীবনব্যবস্থার উত্তরাধিকারীরা আজ পশ্চিমা সভ্যতার জীবন-ব্যবস্থা গ্রহণ করে হীনতার, দরিদ্রতার এমন পর্যায়ে গিয়েছে যে মাসের পর মাস রক্ত পানি করে শ্রম দিয়ে অতঃপর নামমাত্র বেতন, ন্যায্য বেতনের তো প্রশ্নই আসে না, সেটা আদায়ের জন্য রাস্তায় বিক্ষোভ করে, পুলিসের গুলি খেয়ে জীবন দেয়। মালিক পক্ষের গাফেলতির কারণে আগুনে পুড়ে, ইট-পাথরের নিচে চাপা পড়ে মরতে হয় শ’য়ে শ’য়ে। এই নিপীড়ত মানবতার মুক্তির একমাত্র পথ যে সত্যদীন সেটা হেযবুত তওহীদ মানবজাতির সামনে তুলে ধরছে।
প্রতিবেদক: মে দিবস প্রসঙ্গে মানবজাতির প্রতি কিছু বলুন।
আমীর: আমাদের কথা হচ্ছে, ১৮৮৬ সালের শিকাগোতে একটি রক্তাক্ত ঘটনার স্মরণ করে এই মে দিবস পালন হচ্ছে। আমরা এটুকু বলতে পারি, আল্লাহর সত্যদীন প্রতিষ্ঠিত থাকলে সেদিন হে মার্কেটের সামনে শ্রমিকদের বিক্ষোভ সমাবেশ করা লাগতো না, মে দিবসও সৃষ্টি হতো না। আমাদের কথা হচ্ছে, শ্রমিক নয় কেবল, যে কোনো অধিকার আদায়ের জন্য বিক্ষোভ, দাঙ্গা, হরতাল ইত্যাদি করে কস্মিনকালেও কোনো লাভ হবে না। কার কাছে আপনারা অধিকার চাইবেন, বিশ্বপ্রতারক ইহুদি খ্রিষ্টান ‘সভ্যতা’ দাজ্জালের অনুসারীদের কাছে? দাজ্জাল তো বহু আগেই পৃথিবীর সকল শ্রেণির মানুষের অধিকার হরণ করে নিয়েছে এবং তাদেরকে প্রতারণামূলক মোহনীয় মতবাদের জালে আটকে পদানত গোলাম বানিয়ে রেখেছে। একদল’ বুভুক্ষু হাড্ডিসার দুর্বল মানুষ ন্যায্য পাওনা আদায়ের জন্য ‘চাই’ ‘চাই করে মিছিল করছে, আরেকদল শক্তিমান (গঁংপষবসধহ) মানুষ তাদেরকে রাজপথে পিটিয়ে রক্তাক্ত ও পদদলিত করছে। এভাবে আর কত বছর, কত যুগ, কত শতাব্দী যাবে? আসুন, আমরা আমাদের সকলের যিনি স্রষ্টা, আমাদের সকলের যিনি মালিক, তাঁকে আমাদের জীবনের একমাত্র ইলাহ, হুকুমদাতা, সার্বভৌমত্বের মালিক হিসাবে মেনে নেই। আল্লাহ তাঁর দেওয়া জীবনব্যবস্থায় প্রত্যেকের প্রাপ্য অধিকার দিয়ে রেখেছেন। আল্লাহকে আমাদের প্রভু হিসাবে মেনে নিলে কেবল শ্রমিকদের অধিকারই প্রতিষ্ঠিত হবে না, মালিকেরও অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে, সবাই সবার অধিকার ফিরে পাবেন। আসুন, আমরা যামানার এমাম, হেযবুত তওহীদের প্রতিষ্ঠাতা জনাব মোহাম্মদ বায়াজীদ খান পন্নীর ডাকে ঐক্যবদ্ধ হই, আল্লাহর সত্যদীন দুনিয়াতে প্রতিষ্ঠা করে মানবজাতির মহাশত্র“ দাজ্জাল অর্থাৎ ইহুদি খ্রিষ্টান ‘সভ্যতা’র কবল থেকে মানবজাতিকে মুক্ত করি।