জাঁকজমকপূর্ণ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে সাত দিনব্যাপী চাষীরহাট উন্নয়ন মেলা। আজ শুক্রবার বিকেল ৩টায় চাষীরহাট নুরুল হক উচ্চবিদ্যালয় মাঠে এ মেলার উদ্বোধন করেন সোনাইমুড়ীর কৃতী সন্তান, চাষীরহাট ইউনিয়নের উন্নয়নের রূপকার চাষীরহাট উন্নয়ন প্রকল্পের প্রধান উপদেষ্টা হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম।
অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন চাষীরহাট উন্নয়ন পরিষদের আহ্বায়ক মো. মহিউদ্দিন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সোনাইমুড়ী থানার অফিসার ইনচার্জ মো. বখতিয়ার উদ্দিন চৌধুরী, কররানি ফুড লিমিটেডের সিইও কাজী জাহিদুল হক, সোনাইমুড়ী প্রেসক্লাবের সভাপতি খোরশেদ আলম, ৩নং চাষীরহাট ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রাসেল চৌধুরী, ৪নং ওয়ার্ড মেম্বার আবুল কাশেম ভূইঞা, ৩নং চাষীরহাট ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জুলফিকার আলি ভুট্টো, ৩নং চাষীরহাট ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ফখরুল ইসলাম, ২নং ওয়ার্ডের মেম্বর আলমগীর হোসেন, ৩নং চাষীরহাট ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি ফয়সাল মিয়াজী মিলন, ৩নং চাষীরহাট ইউনিয়ন যুব লীগের সাধারণ সম্পাদক আহম্মদ উল্যাহ নান্টু, বিশিষ্ট সমাজ সেবক ও ব্যবসায়ী সিরাজুল ইসলাম, চাষীরহাট বন্ধুমহলের সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন সজল, ৩নং চাষীরহাট ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক ওসমান গনি, ৩নং চাষীরহাট ইউনিয়ন বিএনপির (বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল) সভাপতি নুর নবী, স্থানীয় ব্যবসায়ী আব্দুর রহিম, ৩নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম ভূইঞা, ৩নং চাষীরহাট ইউনিয়ন শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক ইমন, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আলমগীর হোসেন প্রমুখ।
নোয়াখালী জেলার সোনাইমুড়ী উপজেলার চাষীরহাট ইউনিয়নে প্রতি বছর শীতকালে এই ‘চাষীরহাট উন্নয়ন মেলা’ হয়ে থাকে। তারই ধারাবাহিকতায় এবারও শুরু হলো এই মেলা। নোয়াখালীর প্রবেশদ্বারে চাষীরহাট নুরুল হক উচ্চবিদ্যালয় মাঠে এ মেলার আয়োজন করা হয়েছে। ইতোমধ্যেই এই মেলাটি চাষীরহাটের সর্বসাধারণের প্রাণের মেলায় পরিণত হয়েছে। প্রথম দিনই দেখা গেছে উপচে পড়া ভীড়। চাষীরহাট ইউনিয়নসহ দূর-দূরান্ত থেকেও বহু দর্শনার্থী এসে ভীড় করেছে মেলায়। নানা ধরনের পণ্যে সুসজ্জিত ৬০টি স্টল রয়েছে এবারের উন্নয়ন মেলায়। প্রতিবছর এই মেলার আয়োজন করে থাকে ‘চাষীরহাট উন্নয়ন প্রকল্প’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান, যারা সোনাইমুড়ী উপজেলার চাষীরহাট ইউনিয়নকে একটি উন্নত, আধুনিক, প্রযুক্তিসুবিধাসম্পন্ন ডিজিটাল মডেল ইউনিয়ন হিসাবে প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
এই প্রকল্পের অধীনে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পরিবহন, আবাসন, গার্মেন্টস, মৎস্য, কৃষি , ক্ষুদ্রশিল্পসহ অর্ধশতাধিক উন্নয়ন প্রকল্প রয়েছে। এই প্রকল্পের নিজস্ব পণ্য প্রদর্শনীর জন্যই প্রতি বছর এই প্রদর্শনী মেলার আয়োজন করা হয়। তারই ধারাবাহিকতায় শুরু হতে যাচ্ছে এই মেলা। তবে এবার চাষীরহাট উন্নয়ন প্রকল্পের নিজস্ব উৎপাদিত পণ্য প্রদর্শনীর পাশাপাশি এই মেলায় রয়েছে যশোরের বিখ্যাত খেজুরের গুড়, চাঁদপুরের ইলিশ, লক্ষ্মীপুরের নারিকেল, সুপারি, টাঙ্গাইলের চমচম, নাটোরের কাঁচাগোল্লা, বগুড়ার দধি, পাবনার ঘি, বরিশালের মুড়ি, চাঁপাইনবাবগঞ্জের কালাই রুটিসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী ও বিক্ষাত পণ্য সামগ্রী। প্রতি বছরের ন্যায় এবারও মেলায় পাওয়া যাচ্ছে চাষীরহাট উন্নয়ন প্রকল্পের নিজস্ব প্রতিষ্ঠান মেকদাদ এন্ড মেহরাদ এগ্রো ফার্মের অর্গানিক উপায়ে উৎপাদিত গরুর গোশত, খাশির গোস্ত, দেশী হাঁস, মুরগি ও বিভিন্ন প্রজাতির দেশীয় মাছ। এছাড়াও মেকদাদ এন্ড মেহরাদ এগ্রোফার্মের উৎপাদিত দুধ, দুগ্ধজাত পণ্য, দধী, রসমালাইসহ হরেক রকমের মিষ্টিও পাওয়া যাচ্ছে। আরো পাওয়া যাচ্ছে কে আর ফ্যাশনের তৈরি প্রয়োজনীয় সব ধরনের পোশাক সামগ্রী। মেলায় রয়েছে নিজস্ব কৃষি প্রকল্পে উৎপাদিত শীতকালীন সকল প্রকার শাকসবজি ও ফলফলাদির সমাহার। ক্রেতা আকর্ষণ করতে মেলা উপলক্ষে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তাদের বেশ কিছু পণ্যে দিচ্ছে বিশেষ মূল্য ছাড়। তবে মেলার সবচেয়ে বড় আকর্ষণ হলো শীতকালীন ঐতিহ্যবাহী পিঠা-পায়েশের সমাহার। চাষীরহাট উন্নয়ন প্রকল্পের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উদ্যোগে হারিয়ে যেতে বসা বাংলার ঐতিহ্যবাহী নানা ধরনের পিঠা পায়েস বাসায় উৎপাদন করে এখানে প্রদর্শন ও বিক্রয় করা হচ্ছে। এজন্য রয়েছে আলাদা পিঠা কর্নার।
নিরাপত্তার ব্যাপারে মেলা আয়োজক কমিটি জানান, ‘মেলায় আগত দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিন্ত করতে পুরো মেলা জুড়ে রয়েছে সিসি ক্যামেরা, প্রশাসনের সহযোগিতার পাশাপাশি মেলার সার্বিক শৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত থাকছে নিজস্ব ভলেন্টিয়ার বাহিনীর শতাধিক কর্মী।’
সন্ধ্যার পর থকে মেলায় ছিল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান যেখানে হামদ, নাত, দেশাত্মবোধক গান, কবিতা ও শিশুশিল্পীদের নৃত্যসহ বেশ কিছু সাংস্কৃতিক আয়োজন দেখা যায়। মেলা কর্তৃপক্ষ জানায়, ‘মেলায় প্রতিদিন থাকবে দেশের সনামধন্য শিল্পীদের অংশগ্রহণে হামদ্, নাত, দেশাত্মবোধক, ভাটিয়ালি, ভাওয়াইয়া, জারি, সারি গান, সচেনতামূলক নাটিকা, কবিতা আবৃত্তি ইত্যাদির সমন্বয়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।’ মেলায় অংশগ্রহণকারী স্টলমালিকদের সাথে কথা বলে জানা যায় তারা অতীত অভিজ্ঞতার আলোকে আশা করছেন ভালো বিক্রির। গতবারের তুলনায় অধিক বেচা-কেনা হবে বলেও আশাবাদী তারা। সর্বপ্রকারের তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠান কে আর ফ্যাশনের স্টল পরিচালক মুনিরুজ্জামান বলেন, ‘আজ প্রথম দিনই ভালো ক্রেতা ও দর্শনার্থীর ভীড় হয়েছে, বেচা-বিক্রীও ভালোই হয়েছে। আশা করছি ক্রমান্বয়ে বিক্রী আরও বাড়বে। গতবারও বেশ ভালো বেচাকেনা হয়েছে। থ্রি-স্টার গার্মেন্টসের মালিক মশিউর রহমান বলেন, ‘মূলত আমাদের প্রতিষ্ঠানের পরিচিতির জন্য এই মেলাতে আমরা স্টল দিই। এজন্য আমরা অত্যন্ত সুলভ মূল্যে এখানে পণ্য বিক্রয় করি। গতবছরও আমরা বেশ ভালো সাড়া পেয়েছিলাম, এবারও ভালো হবেই বলেই আশাবাদী। এখন পর্যন্ত যথেষ্ট ক্রেতা আসছে।’ এই মেলার উদ্যোক্তা চাষীর হাট উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালক মো. মহি উদ্দীন বলেন, এটা মূলত চাষীরহাট উন্নয়ন প্রকল্পের প্রদর্শনী মেলা। গত বছর আমরা তিনদিনব্যাপী মেলা করেছিলাম। কিন্তু জনসাধারণের ব্যাপক উৎসাহ, উদ্দীপনা ও চাহিদার কথা বিবেচনা করে এবারের মেলাটি আমরা সপ্তাহব্যাপী করার সিদ্ধান্ত নিই। আমাদের একটা অঙ্গীকার রয়েছে সাধারণ মানুষের সাথে খাঁটি পণ্য সরবরাহ করার। কাজেই আমাদের পণ্য তো বটেই যারা সারাদেশ থেকে বিভিন্ন অঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী পণ্য বিক্রয় করবে তাদের পণ্যের মানও আমরা নিয়ন্ত্রণ করব। মানুষের এখন বিশ্বাস উঠে গেছে ভেজাল খেতে খেতে, আমরা মানুষের সেই বিশ্বাস ফিরিয়ে আনব ইনশাল্লাহ। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির ব্যাপারে তিনি বলেন, মেলার শৃঙ্খলা নিয়ে আমরা সঙ্কিত নই, এলাকাবাসীও এটা জানে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি আমাদের ভলেন্টিয়ার থাকবে পর্যাপ্ত।