শেখ মনিরুল ইসলাম
পৃথিবী আজ অন্যায়, অবিচার, অশান্তিতে পরিপূর্ণ। এক ইঞ্চি মাটি নেই যেখানে মানুষ শান্তিতে বসবাস করছে। এই অশান্তি থেকে পরিত্রাণের জন্য চেষ্টাও করা হচ্ছে। গঠন করা হচ্ছে আধুনিক অস্ত্রশস্ত্র দিয়ে সুসজ্জিত শক্তিশালী বাহিনী, খরচ করা হচ্ছে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার। আবার একদল মানুষ শান্তির জন্য মসজিদ, মন্দির, সিনাগগ, প্যাগোডায় ঢুকছে, প্রার্থনা করছে। কিন্তু শান্তি কি মিলেছে? পরিসংখ্যান বলছে দিন দিন অন্যায়-অবিচার, অশান্তির মাত্রা ধাঁ ধাঁ করে বাড়ছে। কারণ, শুধু প্রার্থনা করে, দোয়া চেয়ে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে না। শান্তি প্রতিষ্ঠার পথ এটা নয়। শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য লাগবে প্রচেষ্টা, সংগ্রাম। যুগে যুগে মানুষ যখন স্রষ্টার দেওয়া বিধান প্রত্যাখ্যান করে নিজেরাই আইন-কানুন বিধান তৈরি করে সেই মোতাবেক জীবন পরিচালনা করার চেষ্টা করেছে তখনই তারা অশান্তিতে পতিত হয়েছে। আর যখন সামগ্রিক জীবন পরিচালনায় মানুষ স্রষ্টার বিধানের আশ্রয় নিয়েছে তখন শান্তিতে বসবাস করতে পেরেছে। এটাই মানবজাতির প্রকৃত ইতিহাস। যুগে যুগে এটাই ঘটেছে। রামরাজত্বের ইতিহাস আমরা সকলেই জানি। বলা হয় রামরাজত্বে এতই শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল যে, বাঘে ও ছাগে এক ঘাটে জল খেত। রাজ্যের নামই হয়েছিল অযোধ্যা। কারও অধিকারে অন্য কেউ হস্তক্ষেপ করত না। সকলে সুখে-শান্তিতে বসবাস করত। একই পরিবেশ বিরাজ করছিল আজ থেকে ১৪০০ বছর আগে আরবে, যখন আরবরা শেষ নবীর মাধ্যমে আসা সত্য জীবনব্যবস্থাকে গ্রহণ করে নিয়েছিল। অনাবিল শান্তির ধারা বয়ে গিয়েছিল মানবজীবনে। সমাজ থেকে চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, হত্যা, অপহরণ, হানাহানি, রক্তারক্তি, অন্যায়-অবিচার, অত্যাচার, বৈষম্য ইত্যাদি লুপ্ত হয়ে গিয়েছিল। অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছিল যে, মানুষ যাকাতের অর্থ নিয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরত কিন্তু তা গ্রহণের লোক খুঁজে পাওয়া যেত না। এমন নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল যে, মানুষ রাতে ঘরের দরজা বন্ধ করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করত না। স্বর্ণালঙ্কার পরিহিতা একজন যুবতী মেয়ে একা শতশত মাইল পথ পাড়ি দিত তার মনে কোনো প্রকার ভয় জাগ্রত হতো না। এমন সমাজ কীভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল? সেই অভিন্ন পদ্ধতি, তথা স্রষ্টার পাঠানো বিধানের আশ্রয় নেবার ফলে। তাই শান্তি পেতে হলে মানুষকে স্রষ্টার বিধানে ফিরে যেতে হবে।’
শান্তির জন্য আমাদেরকে অবশ্যই ঐক্যবদ্ধ হতে হবে, কিন্তু আজ আমরা বিভিন্ন ধর্ম-বর্ণ-মতবাদে বিভক্ত হয়ে অনৈক্যের চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছি। একশত ঐক্যহীন লোকের উপরে মাত্র দশজন ঐক্যবদ্ধ লোক বিজয়ী হয়। অনৈক্যের প্রধান কারণ ধর্মব্যবাসায়ীরা। তারা ধর্মের চুলচেরা বিশ্লেষণ করে হাজার হাজার মতবাদ, ফেরকা-মজহাব তৈরি করে জাতিকে শত শত ভাগে বিভক্ত করে ফেলেছে। এদের তৈরি ফেরকা-মজহাবের জালে আটকা পড়ে জাতি ক্রমেই স্থবির হয়ে পড়ছে। এভাবে আর কতদিন চলবে? মানুষকে ঐক্যের পথে আহ্বান জানাতে হবে। ধর্মব্যবসায়ীদের প্রত্যাখ্যান করার আহ্বান জানাতে হবে। আজকে যদি আমরা ঐক্যবদ্ধ হতে পারি তাহলে ঐ ধর্মব্যবসায়ীরা আমাদের কোনোই ক্ষতি করতে পারবে না। ১৯৭১ সালে যেমন জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলেই যুদ্ধ করেছিল। আজও ধর্মব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে আমাদের সকলকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। আমরা ঐক্যবদ্ধ হব এই ভিত্তির উপরে যে, আমরা একই পিতা মাতার সন্তান, আমরা একই স্রষ্টার সৃষ্টি এবং সমস্ত মহামানব, অবতার, নবী-রসুল সেই একই স্রষ্টার পক্ষ থেকে এসেছেন। কাজেই আমরা সকল ধর্মের অনুসারীরা প্রকৃতপক্ষে একে অপরের ভাই। এই সূত্রে আমাদেরকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।