হে মহান রাব্বুল আলামিন! আমরা গুনাহগার সাধারণ মানুষ। সত্য কী তা জানতাম না, বুঝতাম না। আজ আমরা তোমার অনুগ্রহে সত্য বুঝেছি। আল্লাহর সত্যদীন আমাদের কাছ থেকে হারিয়ে গিয়েছিল। আমরা মানুষের তৈরি বিভিন্ন তন্ত্রমন্ত্র তথা জীবনব্যবস্থা দ্বারা পরিচালিত হচ্ছিলাম। হে পরম ক্ষমাশীল আল্লাহ, আমাদের ভুল হয়ে গেছে, আমরা তোমার নিকট তওবা করছি।
আল্লাহ! আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি- আমরা তোমার দীন নিয়ে বাঁচতে চাই। রসুলকে (সা.) যে দীন তুমি দিয়েছ সেই দীনুল হক আমরা মানবজীবনে প্রতিষ্ঠা করতে দাঁড়িয়েছি। তুমি আমাদের সাহায্য কর, আল্লাহ। কলেমা তওহীদের মর্মবাণী, এই কথার তাৎপর্য, এই কথার অর্থ আমরা বুঝতাম না। আল্লাহ, তোমার প্রিয় বান্দা মহামান্য এমামুযযামানের মাধ্যমে আমাদেরকে তুমি অশেষ করুণায় কলেমার অর্থ বুঝিয়েছ। আমাদের তুমি মৃত্যু পর্যন্ত তওহীদের উপর অটল, অনড় ও দৃঢ় রাখো, হে মহান আল্লাহ!
হে রাব্বুল আলামিন! আমরা সাধারণ মানুষ। আমাদের সেই চরিত্র নেই, সেই আত্মার পবিত্রতা নেই, সেই জ্ঞান নেই, যে জ্ঞান থাকলে, যে পবিত্রতা থাকলে এত মহৎ কাজ করা যায়। বিশৃঙ্খল জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করা, দিশাহীন জাতিকে সঠিক দিশা দেওয়া, হতাশ হয়ে যাওয়া জাতিকে আশার আলো দেখানো কোন সাধারণ কাজ নয়। নিঃসন্দেহে এটা মহামানবদের কাজ। কিন্তু নবী তো আর আসবেন না, আল্লাহর রসুল তো আর আসবেন না। আখেরি নবী, বিশ্বনবী যে পথ আমাদের জন্য রেখে গিয়েছেন আমরা সেই পথের সন্ধান পেয়েছি, সে পথ ধরেছি। এখন তুমি আমাদেরকে সেই চরিত্র দান কর যা আমাদেরকে পরিবর্তন করে দিবে, আমাদেরকে মো’মেন হিসেবে কবুল কর, আল্লাহ। তুমি আমাদের উপর দয়া না করলে আমরা কোনদিন সফল হব না। হে সর্বশক্তিমান আল্লাহ, তোমার সাহায্য ব্যতীত ইবলিসের বিরুদ্ধে আমরা কিছুই করতে পারব না।
আল্লাহ! আমাদের এই পবিত্র মসজিদ- যেখানে দাঁড়িয়ে তোমার দীনের কথা বলা হচ্ছে, তওহীদের কথা বলা হচ্ছে, এই মসজিদ নিয়ে নানা ধরনের ষড়যন্ত্র চলছে। সেই ষড়যন্ত্রের মোকাবেলায় আল্লাহ তুমিই যথেষ্ট। তুমি তাদের মোকাবেলা কর। তাদের সমস্ত ষড়যন্ত্রকে নস্যাৎ করে দাও। এই মাটিকে তুমি কবুল কর আল্লাহ। এই মাটিতে দুইজন ভাই শহীদ হয়েছেন, বহু ভাইয়ের রক্ত ঝরেছে। এই জমিনে যেন মানুষ দীনের কথা শোনার জন্য, তওহীদের কথা শোনার জন্য দলে দলে ছুটে আসতে পারে এমন নিরাপদ করে দাও, আল্লাহ। আল্লাহ, তুমি এই এলাকার মানুষের সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠা করে দাও।
আজকে আমরা শহীদ সুজন ভাইয়ের স্মরণে এই দোয়া-মাহফিল করছি। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন! আমাদের ভাই সুজন শহীদ হয়েছেন। আল্লাহ, আমি জানি তুমি বলেছ শহীদরা জীবিত, তাঁরা মৃত নয়, তাঁরা তোমার পক্ষ থেকে জীবিকাপ্রাপ্ত। আল্লাহ তাঁদের মাগফিরাতের জন্য দোয়া করার সাধ্য আমাদের নেই। আমরা তো গুনাহগার, তাঁরা অনেক ঊর্ধ্বে উঠে গিয়েছেন, তাঁরা জান্নাতে পৌঁছে গিয়েছেন। হে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন, শহীদ সুজনের মত, শহীদ রুবেলের মত আমাদেরকেও তুমি তোমার পথে কবুল করে নাও, আল্লাহ। শহীদ সাইফুল্লাহর মত বীরপুরুষ হওয়ার তওফিক দান কর। হে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন। শহীদ পরিবারের যে সমস্ত বাচ্চারা বাবা হারিয়েছে, যে সমস্ত বোন স্বামী হারিয়ে আজকে বিধবা হয়েছেন, যে সমস্ত বাবা-মা সন্তান হারিয়ে আজকে পাগলপারা, সে সকল শহীদদের পরিবার যেন আমাদের পরিবার হয়, আমরা যেন শহীদদের পরিবারের দায়িত্ব নিতে পারি। আমাদের সহযোদ্ধারা রক্ত দিয়ে এই মাটিকে পবিত্র করে দিয়ে গিয়েছেন, আল্লাহ।
হে গাফুরুর রাহিম, আমাদের গুনাহ ক্ষমা করে দাও। আমাদের অনেক ভাই-বোন ইতোমধ্যে মৃত্যুবরণ করেছেন নানা অসুখে-বিসুখে, যাদের শহীদ হওয়ার তামান্না ছিল, তুমি তাদের উত্তম মর্যাদা দান কর, আল্লাহ। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন! তোমার নিকট বিশেষ ফরিয়াদ- আমি সাধারণ মানুষ, গুনাহগার মানুষ। এত মিথ্যার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে সংগ্রাম করতে হচ্ছে, এত মিথ্যা! এত মিথ্যা! এত মিথ্যা! আমি যেটা করি নি, যেটা বলিনি, যেটা আমার আকিদা নয়, এমন সব মিথ্যা বানিয়ে বানিয়ে সাধারণ মানুষকে আমার সম্পর্কে বিভ্রান্ত করছে, আজকে আমার জীবনকে হুমকির মুখে ঠেলে দিয়েছে। আল্লাহ! তোমার কাছে আমি আমাকে সোপর্দ করলাম। আমাদের সকল ভাই-বোনকে তুমি হেফাজত কর আল্লাহ। এই জমিনে তোমার দীনকে বিজয়ী করার জন্য যাই করতে হোক, আমরা তা করব আল্লাহ। আমরা শহীদ হওয়ার জন্য প্রস্তুত আছি। আমরা আমাদের সম্পদ কোরবানি দিতে প্রস্তুত আছি। আল্লাহ, আমাদেরকে তুমি কবুল কর। আমিন।