অনেক শৌখিন মানুষকেই বিশেষ একটি প্রাণী পুষতে দেখা যায় যার সংস্পর্শে অধিকাংশ মানুষই যেতে ঘৃণা বোধ করেন। কিন্তু সেই প্রাণীটিকে যারা পোষেন তারা তাকে নিজেদের পরিবারের সদস্যের মতই আদর যত্ন করে থাকেন, চুমুও খান। তাকে দামি খাবার পরিবেশন করা হয়, তাদের পেছনে লাখ লাখ টাকা ব্যয় করা হয়। ইউরোপ আমেরিকায় অনেকে নিজের বিছানায় সেই পোষা প্রাণীকে নিয়ে ঘুমান পর্যন্ত। কিন্তু যত আদর যত্নই তারা করুন না কেন, মালিক কিন্তু কখনও সেই পোষা প্রাণীর খাদ্য খান না। অর্থাৎ মালিকের খাদ্য আর পোষা প্রাণীর খাদ্য কখনও এক হয় না। এটা প্রকৃতিরই একটি নিয়ম। প্রবল ভালবাসাও প্রকৃতির সৃষ্ট এই ব্যবধানকে টপকাতে পারে না। প্রভু আর দাসের মধ্যেও এরকম পার্থক্য থাকে। আমাদের এককালীন প্রভু ব্রিটিশসহ বিশ্ব মোড়লগণ দিনরাত গণতন্ত্রের জয়গান করে, কিন্তু তারা নিজেরা কতটুকু গণতন্ত্রের চর্চা করে? গণতন্ত্রকে কি ব্রিটিশরা নিজেদের খাদ্য বলে গ্রহণ করেছে নাকি কেবল তৃতীয় বিশ্বের দাসদের খাদ্য মতবাদ বলে বিশ্বাস করে। তাদের পালন করা গণতন্ত্র আর তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে তাদের চাপিয়ে যাওয়া গণতন্ত্র মোটেও এক জিনিস নয়। ব্রিটিশরা তাদের ঔপনিবেশিক শাসনামলে এক মুহূর্তের জন্যও আমাদের উপর গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করে নি। বরং তারা বন্দুক আর চাবুকের শক্তিতেই দুই থেকে তিন শতাব্দী তাদের শাসন ও শোষণ চালিয়ে গেছে। তারা এদেশের কোন ব্যাপারে সাধারণ মানুষের কারও কোন মতামত নেওয়ার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে নি। কিন্তু যাওয়ার সময় একটি ‘হাওয়া মিঠাই’ সদৃশ মতবাদ আমাদের উপরে আরোপ করে যায়। গণতন্ত্রে বলা হয় ‘আইন সবার জন্য সমান’। কিন্তু ইউনাইটেড কিংডম অর্থাৎ ব্রিটিশ রাজতন্ত্রে রাজা আইনের উর্দ্ধে থাকেন। কারণ তিনিই আইনের উৎস (Fount of justice) । তার নামেই ব্রিটেনসহ পৃথিবীতে তাদের অধীন অন্যান্য রাজ্যগুলো শাসিত হয়। রয়্যাল অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে রাজা বা রানীর নিরঙ্কুশ সার্বভৌমত্বের ব্যাপারে পরিষ্কার বলা আছে [Civil and criminal proceedings cannot be taken against the Sovereign as a person under UK law. অর্থাৎ তারা ব্রিটেনের আইনের অধীন নন। প্রশ্ন হোল তারা এই অগণতান্ত্রিক সিদ্ধান্ত কেন নিলো?
এর যথার্থ কারণও রোয়েছে। একটি জাতিসত্ত্বার বিকাশ ঘটাতে এবং এর অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে সর্বাগ্রে জাতির প্রয়োজন একটি নিরঙ্কুশ সার্বভৌম নেতৃত্ব যাকে সকল কিছুর উর্দ্ধে অবস্থান কোরতে হবে। নতুবা অনেক সমস্যার কোন সমাধান হবে না যেগুলি জাতির ভিত্তিকে, গঠনকে দুর্বল করে দেবে। কোন একটি বিষয়ে বিতর্কের সূচনা হলে তা অনন্তকাল ধরে চলতেই থাকবে। এর অবধারিত ফলাফল অনৈক্য ও ধ্বংস। ব্রিটিশ রাজপরিবার প্রায় দীর্ঘ বারশো বছর আগে থেকে ব্রিটিশ জাতির মেরুদণ্ড হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এর আগেও অন্য রাজা ব্রিটেনে ছিলো। যখনই যারা ব্রিটেনে রাজত্ব করেছে জাতি তাদেরকে কেন্দ্র করে ঐক্যবদ্ধ থেকেছে। এর মাধ্যমেই তারা তাদের জাতিসত্ত্বা এবং নিজস্ব বিকাশকে ধরে রাখতে সক্ষম হোয়েছে। যখনই রাজ্যে কোন কঠিন সমস্যার উদ্ভব হয়েছে, রাজার হস্তক্ষেপে সেটার সমাধান নিষ্পন্ন হোয়েছে। কোন সমস্যাই স্থায়ী রূপ নিতে পারে নি। এখানেই শেষ নয়, দীর্ঘকাল ধরে টিকে থাকার কারণে জাতিটি সর্বদিকে তাদের শক্তি, শিক্ষা, সামর্থ্যকে বিকশিত করে এক সময় প্রায় গোটা দুনিয়াকে তাদের পায়ের তলায় নিয়ে আসতে পেরেছিলো। ব্রিটিশ এম্পায়ারে সূর্য অস্তমিত হয় না- এটা ছিলো তাদের ন্যায্য অহঙ্কার।
ব্রিটেনে প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রিপরিষদের উপস্থিতি এবং সংসদীয় ব্যবস্থা দেখে অনেকেই ব্রিটেনকে গণতান্ত্রিক দেশ আখ্যা দিয়ে থাকেন। কিন্তু তাদের গণতন্ত্রের সার্বভৌম ক্ষমতা নেই। তাদের রাষ্ট্র পরিচালনায় যে সকল প্রতিষ্ঠান আছে তাদের নামের দিকে তাকালেই বোঝা যায় সেখানে প্রাচীন পারিবারিক রাজতন্ত্রই নিরঙ্কুশ ক্ষমতার অধিকারী। তাদের সর্বোচ্চ বিচারালয় (রয়েল কোর্ট- রাজকীয় বিচারালয়) থেকে শুরু করে সামরিক বাহিনী পর্যন্ত রাজা বা রানীর অধীনেই অবস্থান করে। দেশটির নাম পর্যন্ত ইউনাইটেড কিংডম বা যুক্তরাজ্য । তাদের বিমান বাহিনীর নাম রয়্যাল এয়ার ফোর্স, নৌ বাহিনীর নাম রয়্যাল নেভি বা রয়্যাল মেরিনস। শুরু থেকেই এই বাহিনীর সর্বাধিনায়ক থাকতেন ব্রিটেনের রাজা বা রানী। বর্তমানে আছেন ক্ষমতাসীন রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ।
তারা আমাদের উপরে যে গণতন্ত্র চাপিয়ে দিয়েছে তাদের বলা হয়ে থাকে জনগণ সকল ক্ষমতার উৎস অর্থাৎ সার্বভৌমত্বের মালিক। কিন্তু কার্যত দেশ পরিচালনার ব্যাপারে সাধারণ মানুষের ন্যূনতম সম্পৃক্ততা নেই। সার্বভৌম ক্ষমতা ভাগ হয়ে গেছে একাধিক ভাগে। রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে আদালতের রায়কে চূড়ান্ত বলে মান্য করা হয়, সে অর্থে আদালত হোচ্ছে সার্বভৌম এবং চূড়ান্ত সিদ্ধান্তকারী প্রতিষ্ঠান। সেই আদালতে বিচার করা হয় যে আইন দিয়ে সেই আইন প্রণেতা অর্থাৎ সাংসদ বর্গ মনে করেন সংসদই হোচ্ছে সার্বভৌম, যেহেতু গণতান্ত্রিক দেশ, জনপ্রতিনিধিরাই সার্বভৌম। কিন্তু সংবিধানে লেখা, আইন সবার জন্য সমান। সেই বিচারে সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী থেকে সাধারণ মানুষ সবাই আইনের অধীন। অর্থাৎ সংবিধানমতে সংসদও সার্বভৌম থাকে না। আবার আদালতের রায়ে যখন সাংসদরাও অভিযুক্ত হন তখন তাদের ক্ষমতা নিয়েও প্রশ্ন উঠে। অপরদিকে সংসদ সদস্যদের রচিত আইন ও তার মানদণ্ড দিয়ে আদালত যখন কাউকে অভিযুক্ত করে বা মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেয় তখন রাষ্ট্রপতি চাইলে তাকে ক্ষমা করে দিতে পারেন। সুতরাং এ বিষয়ে তিনি চূড়ান্ত কর্তৃপক্ষ। তাকে রাষ্ট্রের অভিভাবক বলে আখ্যায়িত করা হয়, কিন্তু কার্যত তাকে মান্য কোরতে মন্ত্রী পরিষদ, আদালত, বা সংসদ কেউই বাধ্য নয়। প্রচলিত গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় সরকারি দল ও বিরোধী দলের বিপরীতমুখী অবস্থানের কারণে দেশে অরাজক পরিবেশ দেখা দিলে রাষ্ট্রপতিকে হস্তক্ষেপ করার আহ্বান করা হলে তিনি সাফ জানিয়ে দেন যে তার সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা আছে। অর্থাৎ তিনিও সংবিধানের উর্দ্ধে নন, সার্বভৌম নন। আবার তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোর সামরিক বাহিনীও কম যায় না। তারা ইচ্ছে কোরলেই ক্ষমতা দখল করে সংবিধান বাতিল করে দিয়ে মার্শাল ল জারি করে এবং সার্বভৌম ক্ষমতার মালিক হয়ে যায়। দেখা যাচ্ছে এ সকল দেশের পূর্ণাঙ্গ সার্বভৌম ক্ষমতা কারো হাতেই নেই। ক্ষমতা বিভিন্ন ভাগে ভাগ হয়ে যাওয়ার কারণে সবাই সবার ক্ষমতা প্রদর্শন কোরতে চায়। ফলস্বরূপ এদের মধ্যে দেখা দেয় দ্বন্দ্ব। চিরাচরিত ফলাফল রাষ্ট্রীয় সর্ব অঙ্গনে অরাজকতা, অনৈক্য ও অব্যবস্থাপনা। এ সকল কারণে এসব রাষ্ট্র কখনো স্থিতিশীলতা লাভ কোরতে পারে না। নানা সময় একের পর এক গোলমাল ও রাজনৈতিক অস্থিরতা লেগেই থাকে।
প্রশ্ন হোচ্ছে ব্রিটিশ প্রভুরা যে গণতন্ত্র মানে এবং যে গণতন্ত্র মেনে নিজেরা নিজেদের উন্নতি সাধন করেছে তা আমাদেরকে শেখায় নি কেন? এর উত্তর হোচ্ছে আমরা গোলাম। আমাদেরকে চিরস্থায়ী গোলাম করে রাখার জন্য যে ধরনের গণতন্ত্র দরকার তাই তারা আমাদের উপর চাপিয়ে দিয়ে গেছে। কারণ সেই পুরনো প্রাকৃতিক নিয়ম, অর্থাৎ প্রভুর খাবার আর দাসের খাবার সব সময় আলাদা।
সার্বভৌমত্বহীন এক বায়বীয় জীবনব্যবস্থাকে পুঁজি করে আমরা তৈলাক্ত বাঁশ বেয়ে বানরের গতিতে এগিয়ে চলেছি। প্রভুদের হুকুম মানতে গিয়ে আমরা তাদের থেকে পিছিয়ে আছি কয়েকশ বছর ব্যবধানে। সুতরাং এই গণতন্ত্র পালন করে আমরা কখনোই আমাদের জাতিসত্ত্বার বিকাশ ঘটাতে পারবো না। অন্যদের দয়া-ভিক্ষার উপর নির্ভর করে আমাদের বেঁচে থাকতে হবে চিরকাল।
ইসলামে সার্বভৌমত্বের অবস্থান: ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা। এর সার্বভৌমত্বের মালিক সৃষ্টি জগতের স্রষ্টা মহান আল্লাহর হাতে। সৃষ্টি জগতে আল্লাহ সার্বভৌম, মালেকুল মুলক। আল্লাহ তাঁর সার্বভৌমত্বের যৌক্তিকতা তুলে ধরতে গিয়ে বলেন, ‘আসমান ও যমীনে যদি এক আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন ইলাহ থাকতো তা হলে আসমান ও যমীন বিপর্যস্ত হয়ে যেতো (সুরা আম্বিয়া -২২)। মানুষের জীবন পরিচালনার জন্য সকল প্রকার বিধি-বিধানের একমাত্র উৎস স্বয়ং তিনিই। কিন্তু তিনি স্বয়ং নিজে এসে শাসন কাজ পরিচালনা করেন না। তাঁর প্রেরিত নবী রসুলদের মাধ্যমে তিনি আইন-কানুন প্রেরণ করেন। সর্বশেষ তিনি সমগ্র পৃথিবীর রসুল হিসেবে পাঠিয়েছেন মোহাম্মদ (দ.) বিন আবদাল্লাহকে। তাঁর মাধ্যমেই নবী-রসুল পাঠানোর ধারাবাহিকতার ইতি টেনেছেন। রসুলাল্লাহ যে জাতিটি তৈরি করে গিয়ে গেছেন তার নাম উম্মতে মোহাম্মদী। এই জাতি সব সময় একজন নেতৃত্বের অর্থাৎ এমামের অধীনে ঐক্যবদ্ধ থাকবে। সেই এমাম পৃথিবীতে জাতি পরিচালনার ব্যবহারিক ক্ষেত্রে নিরঙ্কুশ ও সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী। তিনি আল্লাহর নির্ধারিত হুকুম অনুযায়ী সে সিদ্ধান্ত প্রদান কোরবেন অপরাপর মোসলেমগণ তা মানতে বাধ্য থাকবেন। এমামের অবস্থান থাকবে সকল প্রশ্নের উর্দ্ধে। তাঁর রায়ই হবে চূড়ান্ত। কেউ কোন কিছু বুঝতে না পারলে প্রশ্ন কোরতে পারবে কিন্তু কোন সিদ্ধান্ত যখন চূড়ান্ত হয়ে যাবে তখন তার বিরুদ্ধে কোন মন্তব্য করাও রাষ্ট্রদ্রোহিতা বলে গণ্য করা হবে। উদাহরণ হিসাবে বলা যায়, উমরের খেলাফতকালে একজন মোসলেম জুম’আর খোতবা দেওয়ার সময় উমরকে (রা:) থামিয়ে প্রশ্ন কোরেছিলেন যে, খলিফা সকল মোসলেমের থেকে অধিক কাপড় কোত্থেকে পেলেন? খলিফা সেই প্রশ্নের যৌক্তিক ও সন্তোষজনক উত্তর প্রদান করেন এবং তারপর পুনরায় খোতবাহ দিতে শুরু করেন। সুতরাং জানার জন্য প্রশ্ন করার পূর্ণ অধিকার সকল মোসলেমের রোয়েছে, কিন্তু এমামের সিদ্ধান্তের ব্যাপারে দ্বিমত পোষণ করার অধিকার কারও নেই। এ প্রসঙ্গে একটি ঘটনা উল্লেখ করা যায়। মদিনার দুই ব্যক্তি নিজেদের মধ্যে একটি বিবাদের মীমাংসার জন্য রসুলাল্লাহর দরবারে নালিশ জানায়। রসুলাল্লাহ তাদের কথা শুনে একটি ফায়সালা দেন। কিন্তু সেই সিদ্ধান্ত স্বভাবতই একজনের বিরুদ্ধে যায়। সেই ব্যক্তি অসন্তুষ্ট হয়ে উমরের (রা:) কাছে গিয়ে রসুলাল্লাহর ফায়সালা বিষয়ে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করে এবং উমরকে (রা:) বলে রসুলাল্লাহর কাছে গিয়ে তাদের অভিযোগটি পুনর্বিবেচনার অনুরোধ জানাতে। উমর (রা:) তখন তাকে জবাব দেন, “আফসোস তোমার জন্য, তুমি নিজেকে একজন মোসলেম বলে দাবি করো এবং আমাকে বলছো রসুলাল্লাহর সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আর্জি জানাতে। তুমি তো একজন কাফের এবং তোমার এই কুফরের শাস্তি তো মৃত্যু ছাড়া কিছু নয়।” এই বোলে তিনি তলোয়ার দিয়ে লোকটি মস্তক দেহ থেকে পৃথক করে দিলেন। উমরের (রা:) এই কাজকে সমর্থন করে আল্লাহ আয়াত নাজেল করলেন, “অতএব, (হে রসুল) তোমার পালনকর্তার কসম, সে লোক ঈমানদার হবে না, যতোক্ষণ না তাদের মধ্যে সৃষ্ট বিবাদের ব্যাপারে তোমাকে ন্যায়বিচারক বলে মনে না করে। অতঃপর তোমার মীমাংসার ব্যাপারে নিজের মনে কোন রকম সংকীর্ণতা পাবে না এবং তা হৃষ্টচিত্তে কবুল করে নেবে। [সুরা নিসা: ৬৫] (সূত্র: আসোয়াদ থেকে ইবনে তাইমিয়া, বালাজুরি প্রমুখ ঐতিহাসিকবৃন্দের গ্রন্থ)। আল্লাহর রসুল বোলেছেন, ‘যদি কোন ব্যক্তি শাসকের (এমাম) বিরুদ্ধাচারণ করার সংকল্প নিয়ে তোমদের নিকট আসে, অথচ অবস্থা হোল এই যে, তোমরা কোন একজন শাসকের আনুগত্যে ঐক্যবদ্ধ রয়েছ। তবে যে লোক তোমাদের সেই ঐক্য ও সংহতিকে বিনষ্ট করার উদ্দেশ্যে দাঁড়িয়েছে তাকে কতল করে দাও (হাদিস, আরফাজা (রা:) থেকে মোসলেম)’। রসুলাল্লাহর পরে যিনি জাতির এমাম হবেন তার সিদ্ধান্তও এমনই চূড়ান্ত বলে জাতির মধ্যে গৃহীত হবে।ইসলামের নীতি এটাই য
ে, কোন অবস্থাতেই জাতিকে বিভক্ত হতে দেওয়া যাবে না। মোসলেম উম্মাহ যদি ইসলামের এই নীতিকে গ্রহণ করে একতাবদ্ধ হয় তবেই ১৬০ কোটির বিশাল এই জনগোষ্ঠী আবার তাদের হারানো অবস্থান ফিরে পাবে।
মানুষের তৈরি বিধান আর স্রষ্টার তৈরি বিধান ইসলামের সার্বভৌমত্বের পার্থক্য হোল, স্রষ্টা হলেন নিখুঁত। তিনি সমস্ত পক্ষপাতিত্ব, ভোগবিলাস, ভুল-ত্র“টি, সীমাবদ্ধতার ঊর্ধে। তাই স্রষ্টার সার্বভৌমত্বের যারা ধারক হবেন তারও হবে স্রষ্টা আগত মানদণ্ডের উপর প্রতিষ্ঠিত ও ন্যায়নিষ্ঠ। তাদের অন্তরে সর্বদা আল্লাহর ভয় জাগ্রত থাকবে, তাঁরা সর্বদা স্রষ্টার নিকট জবাবদিহির আশঙ্কায় কম্পিত থাকবেন, তাই তাদের দ্বারা কোন অন্যায় কাজ করা সম্ভব হবে না। কিন্তু মানবরচিত জীবনব্যবস্থায় সার্বভৌম ক্ষমতার মালিক নির্দিষ্ট কোন ন্যায়নীতির মানদণ্ডের দ্বারা আবদ্ধ থাকেন না (ব্রিটিশ রাজার মত)। বস্তুবাদী ধারণার প্রভাবে তাদের হৃদয়ে স্রষ্টার ভয়, স্রষ্টার কাছে জবাবদিহিতার কোন স্থান থাকে না। ফলে তারা হয়ে পড়ে স্বেচ্ছাচারী, ভোগবিলাসী, নীতিনৈতিকতাহীন। কিন্তু তবুও স্থায়ী ও শক্তিশালী জাতিস্বত্তা বিনির্মাণে বর্তমানের নিরঙ্কুশ সার্বভৌমত্বহীন গণতান্ত্রিক মতবাদের চেয়ে ঐ রাজতন্ত্র বহুগুণ বেশি কার্যকরী ও শক্তিমান ব্যবস্থা, যার প্রমাণ ব্রিটিশ জাতি এবং আরও যে জাতিগুলি প্রাচীনকাল থেকে রাজতন্ত্র মেনে আসছে। কিন্তু নীতিভ্রষ্টতার জন্য রাজতন্ত্র মানুষকে শান্তি দিতে পারে নি। কাজেই এখন প্রয়োজন হয়ে পড়েছে স্রষ্টার সার্বভৌমত্বের উপর ভিত্তি করা এমন এক শক্তিশালী জাতি যার এমাম হবেন পৃথিবীর বুকে নিরঙ্কুশ ক্ষমতার অধিকারী।