মোহাম্মদ আসাদ আলী
নাগরিকের কাছে সাধারণত রাষ্ট্র কী চায়? এই চায় যে, নাগরিক রাষ্ট্রের প্রতি অনুগত থাকবে, সবাই রাষ্ট্রের আইন-শৃঙ্খলা মেনে চলবে, কোনো জাতিবিনাশী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হবে না, অবৈধ অস্ত্রের সংস্পর্শে যাবে না, কেউ বেকার থাকবে না, বৈধ পন্থায় উপার্জনের চেষ্টা করবে, জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসবাদে জড়াবে না ইত্যাদি। কিন্তু আমাদের বাস্তবতা বড়ই দুঃখজনক।
রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য কী জিনিস আমাদের সমাজ তা জানে না। কথায় কথায় ‘মানি না মানব না’ জিগির তোলা হয়। রাষ্ট্রের কোনো একটি সিদ্ধান্ত জাতির মধ্যে সর্বসম্মতভাবে গৃহীত হবার নজির নেই বললেই চলে। অনেক ক্ষেত্রে জ্বালাও পোড়াও করে, অবরোধ করে, জনগণকে জিম্মি করে রাষ্ট্রকে বাধ্য করা হয় সিদ্ধান্ত বদল করতে। আইন-শৃঙ্খলা মেনে চলতে চায় কম লোকেই। খুন, ধর্ষণ, জবরদখল, ঘুষ, দুর্নীতি, অবিচার আর রক্তপাতে সমাজ পরিপূর্ণ। সাধারণ জনগণের কথা বাদ দিলেও যারা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত, সেই বাহিনীগুলোর বিরুদ্ধেই ভয়াবহ সব আইনভঙ্গের অভিযোগ উঠে থাকে। জাতিবিনাশী কর্মকাণ্ড করা হচ্ছে অবলীলায়। নিজের সামান্য স্বার্থের জন্য ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে পন্যের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে। খাদ্যে ভেজাল মেশাচ্ছে। শিক্ষকরা শিক্ষাবাণিজ্যে নামছে, ছাত্ররা লেখাপড়া ছেড়ে অস্ত্রের মহড়া দিচ্ছে। একের পর এক প্রশ্ন ফাঁস হচ্ছে। ক্ষমতাসীনরা খুন-খারাবী, ধর্ষণ, লুটপাট, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজী করে বেড়াচ্ছে। ধর্মগুরুরা মানুষের ঈমান কুক্ষিগত করে রেখে ধর্মবিশ্বাসী মানুষকে দিয়ে জাতির ক্ষতি করাচ্ছে। জাতির স্বার্থ চিন্তা করার যেন কেউ নেই। অবৈধ অস্ত্র স্থানে স্থানে ছড়িয়ে ছড়িয়ে আছে। সন্ত্রাসী, গুন্ডা-পান্ডারা তো আছেই, বড় বড় রাজনৈতিক দলগুলো তাদের রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের জন্য যে ক্যাডারবাহিনী পোষে সে কথা কে না জানে?
বেকারত্বের সমস্যা বোঝা হয়ে চেপে আছে পুরো জাতির উপর। দেশে এখন শিক্ষিত বেকারের সংখ্যাই অর্ধকোটি ছাড়িয়েছে। রাষ্ট্র জানে না কীভাবে এই সমস্যার সমাধান হবে। এদিকে জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসবাদের হুমকি যে কোনো সময়ের চাইতে এখন বেশি। জঙ্গিরা আত্মঘাতী হচ্ছে। গুপ্তহত্যা করছে। বেসামরিক মানুষকে জবাই করে দিচ্ছে। পৃথিবী জানে বাংলাদেশ জঙ্গিবাদে আক্রান্ত এবং দেশটিতে জঙ্গিবাদ মাত্রাতিরিক্ত পর্যায়ে পৌঁছে যাবার সমস্ত উপাদানই পুরোদমে বিদ্যমান। অর্থাৎ সোজা ভাষায় বলতে হয়- রাষ্ট্র তার কাঙ্ক্ষিত নাগরিক পাচ্ছে না।
এবার দেখুন হেযবুত তওহীদের দিকে। ছোট্ট হলেও হেযবুত তওহীদ একটি জাতি। এই জাতির বিগত ২২ বছরের ইতিহাস হচ্ছে এই দীর্ঘ সময়ে-এই আন্দোলনের একজন কর্মীও রাষ্ট্রের অবাধ্য হয় নি, একটিও আইনভঙ্গ করার নজির নেই, জাতির ক্ষতি হয় এমন কোনো কাজ কেউ করে নি, একজন কর্মীও অবৈধ অস্ত্রের সং¯পর্ষে যায় নি। হেযবুত তওহীদের কোনো কর্মক্ষম সদস্য বেকার থাকে না। তারা কোনো কাজকে ছোট মনে করে না। অনেক উচ্চশিক্ষিত সদস্য প্রয়োজনে হকারী করে জীবিকা নির্বাহ করেন তবু বেকার থাকেন না। জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসবাদে জড়িত হওয়া তো দূরের কথা, এই আন্দোলনের সদস্যরা নিজেদের জীবন বাজি রেখে দেশকে নিরাপদ রাখতে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে আদর্শিক লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। অর্থাৎ একটি রাষ্ট্র ঠিক যেমন নাগরিক চায় একমাত্র হেযবুত তওহীদই তেমন নাগরিক তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে। আর সক্ষম হয়েছে বলেই হেযবুত তওহীদ বলতে পারে জঙ্গিবাদের সমাধান একমাত্র হেযবুত তওহীদের কাছেই আছে, আত্মকেন্দ্রিক স্বার্থপর মানুষকে আত্মত্যাগী পরোপকারী মানুষে পরিণত করার উপায় একমাত্র হেযবুত তওহীদের কাছেই আছে, অনৈক্য বিশৃঙ্খল ও অবাধ্য মানুষকে ঐক্যবদ্ধ সুশৃঙ্খল ও অনুগত মানুষে পরিণত করার উপায় একমাত্র হেযবুত তওহীদের কাছেই আছে। এটা আমাদের নিছক আশ্বাসবাণী নয়, বাস্তবতা, আমরা যা ইতোমধ্যেই করে দেখিয়েছি।