‘‘আমরা মুসলিমরা যদি বাঁচতে চাই তাহলে ইসলাম ছেড়ে বাঁচতে পারব না, ইসলাম নিয়েই বাঁচতে হবে। তবেই আসবে আল্লাহর সাহায্য। আর আল্লাহর সাহায্য না পেলে অন্য কোনোকিছু দিয়েই লাভ হবে না। সেজন্য আমাদেরকে সবার আগে প্রকৃত মো’মেন হতে হবে।’’ রাজশাহীতে সন্ত্রাস জঙ্গিবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে হেযবুত তওহীদের উদ্যোগে আয়োজিত এক কর্মী সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। গত ০৩ ফ্রেব্রুয়ারি ২০১৮ রোজ শনিবার বিকেল তিনটায় রাজশাহী সদরের তালাইমারী শহীদ মিনার মাঠে কর্মী সভাটি অনুষ্ঠিত হয়। রাজশাহী জেলা হেযবুত তওহীদের সাধারণ সম্পাদক মো. তোতা শেখের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই সভায় প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন হেযবুত তওহীদের এমাম হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম। তিনি বর্তমান মানবজাতির সঙ্কট, মুসলিম জাতির সঙ্কট ও হেযবুত তওহীদের সংগ্রামী পথচলার ইতিহাস তুলে ধরে বলেন, ‘হেযবুত তওহীদের বিরুদ্ধে অপপ্রচারের শেষ নাই। যারা ধর্মকে রুটি রুজির মাধ্যম বানিয়ে নিয়েছে, রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলে ধর্মকে ব্যবহার করছে, তারা হেযবুত তওহীদের বিরুদ্ধে অনেক ডাহা মিথ্যা চালু করে দিয়েছে। যেমন হেযবুত তওহীদ খ্রিষ্টান, হেযবুত তওহীদ জানাজা দেয় না, দুই ওয়াক্ত নামাজ পড়ে, ইহুদির দালাল ইত্যাদি। যেখানে তিলও নাই, সেখানে তাল বানিয়ে ফেলা হয়েছে। আপনাদের এই রাজশাহীতেও বহু অপপ্রচার হয়েছে আমাদের বিরুদ্ধে, আর তার খেসারত দিতে হয়েছে আমার নিরীহ ভাই-বোনদেরকে।’
হেযবুত তওহীদের এমাম আরও বলেন, ‘নরসিংদীতে আমি একটি বক্তব্য রেখেছিলাম, তার একটি অংশ ফেসবুকে আপলোড করার পর আমার ঐ ভাষণটি ভাইরাল হয়েছে। এ পর্যন্ত এগারো লক্ষ মানুষ ভাষণটি দেখেছে, সাতাশ হাজার মানুষ শেয়ার করেছে। কাজেই আমার বক্তব্য লক্ষ লক্ষ মানুষের কাছে বিভিন্নভাবে পৌঁছে যাচ্ছে। কোনোকিছুই গোপন নেই আমাদের, আমরা গোপনের পক্ষে নই, প্রকাশের পক্ষে। কিন্তু শুধু নামের কারণে, ‘হেযবুত’ এই শব্দটির কারণে হেযবুত তওহীদকে নিয়ে যত অপপ্রচার হয়েছে, যত অপবাদ লেপন করা হয়েছে তা আর কোনো আন্দোলনের ক্ষেত্রে কোনোকালে হয়েছে বলে মনে হয় না। বলা হয়েছে হেযবুত তওহীদ ‘জঙ্গি’। আমরা প্রমাণ করে দিয়েছি এটা মিথ্যাচার। রক্ত দিয়ে, নারী-পুরুষের গহনা বিক্রি করে, গরু-বকরি বিক্রি করে, উৎপাদিত ফসল বিক্রি করে, এক কথায় আমাদের যা কিছু আছে সমস্ত কিছু উৎসর্গ করে মানুষের কল্যাণে দেশের কল্যাণে বিলিয়ে দিয়ে আমরা প্রমাণ করেছি আমরা জঙ্গি নই, আমরাই জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সবচাইতে সরব। শুধু নামের কারণে, সন্দেহের কারণে কী পরিমাণ হয়রানির মুখোমুখী হয়েছি তা বলে শেষ করা যাবে না। আমাদের বিরুদ্ধে শতশত মামলা হয়েছে, প্রত্যেকটি মামলায় বহু সংস্থা তদন্ত করেছে, প্রতিবেদন দিয়েছে। প্রত্যেকে বলতে বাধ্য হয়েছে হেযবুত তওহীদ একটি দেশপ্রেমিক আন্দোলন। হ্যা, আমরা রক্ত দিয়ে, লাঞ্ছনা-অপমান সহ্য করে নিজেদের সতীত্বের প্রমাণ দিয়েছি, কিন্তু অন্যদেরকে কোনো সতীত্বের প্রমাণ দিতে হয় না। তারা দেশের সম্পদ বিদেশে পাচার করেন, মানুষকে পুড়িয়ে মারেন, দেশের লক্ষ লক্ষ কোটি টাকার সম্পদ বিনষ্ট করেন, কিন্তু কোনো কৈফিয়ত দিতে হয় না।’
তিনি মানবজাতির উদ্দেশে বলেন, ‘‘উত্তরের দক্ষিণের পূর্বের পশ্চিমের, সাদা-কালো-তামাটে, লম্বা-খাটো নির্বিশেষে হে মানবজাতি তোমরা সবাই ভাই ভাই। তোমরা এক পিতা-মাতা আদম হাওয়ার সন্তান। তোমরা এতদিন বিভিন্ন ধরনের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বানিয়েছ, বিভিন্ন প্রযুক্তি কাজে লাগিয়েছ, আইনকে কঠোর থেকে কঠোর বানিয়েছ, কিন্তু অন্যায় অশান্তি একটুও বন্ধ করতে পারো নাই। তোমাদের এই সভ্যতা মানুষকে পৃথিবীতেই মুক্তি দিতে পারে নাই, কাজেই পরকালেও মুক্তি দিতে পারবে না। যদি সত্যিই মুক্তি চাও তাহলে আজই সিদ্ধান্ত নিতে হবে- আমরা সবাই এক পিতা-মাতার সন্তান, এক জাতি। সিদ্ধান্ত নিতে হবে আমরা আল্লাহর হুকুম ছাড়া কারো হুকুম মানবো না। এই সিদ্ধান্ত নিতে হবে অতি দ্রæত। কারণ অ্যাটম বোমার সুইচ নিয়ে বসে আছে ডোনাল্ড ট্রাম্প আর কিম জং উনরা। কই মাছের মতো মানুষ ঝলসে যাবে, এটা তারা জানে, কিন্তু তারা এতটুকু দ্বিধা করবে না। আজ এমন কোনো অন্যায় নাই মানুষ করছে না। দশ মাসের, বাইশ মাসের কন্যা শিশুও এখন ধর্ষিতা হচ্ছে। ইবলিস তোমাদের ধ্বংস করে ফেলেছে, তোমাদের আত্মাকে খুন করেছে। এই রাজশাহীর পদ্মার তীরে দাঁড়িয়ে আমি ঘোষণা দিচ্ছি- হে মানুষ, পৃথিবীকে তোমরা যেখানে নিয়ে এসেছো তাতে তোমাদের বাঁচার কোনো সম্ভাবনা নাই, একমাত্র আল্লাহই তোমাদের বাঁচাতে পারেন। কিন্তু তার জন্য সেই সিদ্ধান্তটা নিতে হবে- আল্লাহর হুকুম ছাড়া কারো হুকুম মানব না।’
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের বোয়ালীয়া থানা (পূর্ব) সাধারণ সম্পাদক জনাব শ্যামল কুমার ঘোষ, আওয়ামী লীগ নেত্রী মোসা. নাজিরা বেগম, হেযবুত তওহীদের কেন্দ্রীয় যুগ্মসাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দীন প্রমুখ। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে শ্যামল কুমার ঘোষ বলেন, ‘হেযবুত তওহীদের এমামের ভাষণ আমি দৈনিক বজ্রশক্তিতে নিয়মিত পড়ি। খুব ভালো লাগে। আপনারা জানেন এখন চলছে ভাষার মাস। আমাদের মায়ের ভাষায় কথা বলার জন্য এই মাসে আমরা জীবন দিয়েছিলাম, পৃথিবীর ইতিহাসে যেটা বিরল। এই ভাষার মাসে, ভাষার জন্য শহীদ হবার মাসে, এই মাসেই গুরুত্বপূর্ণ এই সভাটি অনুষ্ঠিত হচ্ছে তাও আবার শহীদ মিনারের পাশে। আমরা যদি ইতিহাসের দিকে তাকাই তাহলে দেখব- ভারত ভাগ হবার পর মনে করেছিলাম স্বাধীন পাকিস্তানে আমরা স্বাধীনভাবে চলতে পারব, স্বাধীনতা পাব, মর্যাদা পাব। কিন্তু আটচল্লিশ সালেই আমাদের ভাষার উপর আক্রমণ চালানো হয়। আমাদের পূর্বসুরীরা সেদিন প্রতিবাদ করেছিলেন, শিক্ষক-ছাত্ররা গর্জে উঠেছিল। সেই আন্দোলনের মাধ্যমেই মূলত আমাদের স্বাধীকার আন্দোলনের বীজ বপন করা হয়েছিল। তারই প্রেরণায় একাত্তর সালে বাংলার আপামর জনসাধারণ বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে জীবন-মরণ লড়াই শুরু করেছিল। কিন্তু বাংলার সাধারণ মানুষ যখন ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে লড়াইতে নেমেছে, তখন দেখলাম মৌলবাদী সংগঠনগুলো পাকিস্তানের পক্ষ নিয়েছিল। তারা সেদিন ধর্মের অপব্যবহার করে নিরীহ মানুষকে হতাহত করেছিল। আজকে হেযবুত তওহীদ সারা দেশে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে মৌলবাদের বিরুদ্ধে যেভাবে জনসচেতনা সৃষ্টি করছে। আমি মনে করি হেযবুত তওহীদের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ একটি সুন্দরতম দেশ হয়ে উঠবে। আমি তাদের সর্বাঙ্গীন সফলতা কামনা করি।’
হেযবুত তওহীদের কেন্দ্রীয় যুগ্মসাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দীন তার বক্তব্যে বলেন, ‘সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও পশ্চিমা সা¤্রাজ্যবাদীদের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে আজকের এই আলোচনা সভা। এটা কিন্তু গতানুগতিক কোনো রাজনৈতিক বক্তব্য বা ওয়াজ মাহফিল নয়। আপনারা অনেকেই আমাদের বক্তব্য বিভিন্নভাবে জেনেছেন, শুনেছেন। আমাদের এই পথ চলার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য কী? আপনারা যারা আমাদের সাথে তৃণমূল পর্যায়ে কাজ করে চলেছেন তাদের কাছে পরিষ্কার থাকতে হবে। এখানে যেন কোনো অস্পষ্টতা না থাকে, সন্দেহ না থাকে সেজন্য ঢাকা থেকে মাননীয় এমাম এসেছেন, তিনি আপনাদের সামনে কথা বলার জন্য।’
বিকেল তিনটায় কোর’আন তেলাওয়াতের মাধ্যমে সভা শুরু হয়। চারটায় হেযবুত তওহীদের এমাম সভাস্থলে প্রবেশ করলে শত শত মানুষ মুহুর্মুহু করতালি ও ¯েøাগান দিয়ে তাকে বরণ করে নেন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন আব্দুস সবুর খান।