হেযবুত তওহীদ

মানবতার কল্যাণে নিবেদিত

রাজধানীর পাবলিক লাইব্রেরিতে ‘ধর্মব্যবসায়ীদের অপপ্রচার নারী মুক্তির অন্তরায়’ শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত

Untitled-119তাসফিয়া আহমেদ:
——————
‘নারী হচ্ছে জাতির মোট চালিকাশক্তির অর্ধেক। এই বিশাল জনগোষ্ঠীকে মূল ধারার বাইরে রেখে একটি জাতির উন্নতি অসম্ভব। কিন্তু বর্তমান সমাজে ধর্মব্যবসায়ীদের অপপ্রচারে সাধারণ ধর্মপ্রাণ নারীরা প্রতারিত হচ্ছেন। তাদের একটি বড় অংশ ধর্মকব্যবসায়ীদের মিথ্যা ফতোয়াবাজিতে প্রভাবিত হয়ে সমাজের মূলধারা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে জাতির অগ্রযাত্রায় কোনো ভূমিকা রাখতে পারছেন না। তাই আজ সমাজের ঐ ধর্মব্যবসায়ীদের মুখোশ উন্মোচন করে তাদের প্রতারণা থেকে নারীকে মুক্ত করে প্রকৃত ইসলামে নারীর অধিকার ও মর্যাদা সম্পর্কে তাদের সচেতন করে তুলতে হবে।’ গতকাল বিকেলে রাজধানীর শাহবাগে গণগ্রন্থাগারের (পাবলিক লাইব্রেরি) শওকত ওসমান স্মৃতি মিলনায়তনে দৈনিক দেশেরপত্রের উদ্যোগে “ধর্মব্যবসায়ীদের অপপ্রচার নারী মুক্তির অন্তরায়” শীর্ষক আলোচনা সভায় উপস্থিত বক্তারা এসব কথা বলেন। দেশেরপত্রের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক রুফায়দাহ পন্নীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি এমপি। অনুষ্ঠানে মুখ্য আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ মহিলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মাহমুদা বেগম। এছাড়াও সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সংরক্ষিত মহিলা আসন-৯ এর সংসদ সদস্য বেগম শিরিন নাঈম পুনম ও সংরক্ষিত মহিলা আসন-২৯ এর সংসদ সদস্য এডভোকেট শামছুন নাহার বেগম (শাহানা রব্বানী), বাংলাদেশ মহিলা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি সাফিয়া খাতুন, আওয়ামী যুবলীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সহ-সম্পাদক হেলেনা আক্তার, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী মহিলা লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাবিনা পারভীন, উত্তর আওয়ামী মহিলা লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রোখসানা মলি, গুলশান থানা মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী হাসিনা বারি চৌধুরী, দেশেরপত্রের উপদেষ্টা উম্মুত তিজান মাখদুমা পন্নী প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত অ্যাডভোকেট সামসুন্নাহার বেগম এমপি (সংরক্ষিত নারী আসনে সদস্য) বলেন, ‘ইসলাম খুব সহজ একটি ধর্ম। কিন্তু আজ ধর্মব্যবসায়ীরা ইসলামকে কঠিন করে তুলেছে। তাদের অপপ্রচারের কারণে নারীরা আজ ঘরে বন্দি। কিন্তু দেশের অর্ধেক জনসংখ্যা ঘরে বন্দি থাকলে একটি জাতি কখনো উন্নতি করতে পারে না। ইসলাম ধর্ম নারীদেরকে শালীনতার সাথে সব রকমের কাজ করার অনুমতি দিয়েছে। আমাদের দেশকে উন্নত করতে হলে এই সকল ধর্মব্যবসায়ীদের অপপ্রচারের বিরুদ্ধে নারীদেরকে এগিয়ে আসতে হবে। আসুন আমরা সবাই মিলে দেশেরপত্রের সাথে ঐক্যবদ্ধ হয়ে ধর্মব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াই।’ জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত নারী আসনের আরেক সদস্য বেগম শিরিন নাঈম পুনম ধর্ম নিয়ে অপ-রাজনীতি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত একটি দলবিশেষের নাম উচ্চারণ করে বলেন, ‘আজ তাদের একটি সংঘবদ্ধ নারী চক্র মানুষের ঘরে ঘরে প্রবেশ করে মানুষকে, বিশেষ করে নারী সমাজকে ভুল বোঝাচ্ছে। তারা ধর্মের অপব্যাখ্যা দিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের চেষ্টা করছে। আরেক শ্রেণি নারীকে তেতুলের সাথে তুলনা করছে। এই পরিস্থিতি মোকাবেলায় আমাদেরও মানুষের ঘরে ঘরে গিয়ে ইসলামের প্রকৃত রূপ তুলে ধরতে হবে। প্রকৃত সত্য তাদের সামনে উপস্থাপন করতে পারলে ধর্মব্যবসায়ীদের অপপ্রচারে আমাদের কোমলমতি মা-বোনেরা বিভ্রান্ত হবে না। আসুন আমরা সবাই মিলে একে অপরের হাত ধরে কাজ করি।’
বাংলাদেশ মহিলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মাহমুদা বেগম তার বক্তব্যে বলেন, “ধর্মব্যবাসায়ীদের রুখতে হলে আগে দেশের প্রত্যেকটি ঘরকে ঠিক করতে হবে। ঘরে ধর্মান্ধকে জিঁইয়ে রেখে কোনদিনও নারীদেরকে মুক্ত করা সম্ভব নয়। তাই সামাজিক ও রাজনৈতিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। আজ শুধু সেমিনার করে এই বিশাল সমস্যা থেকে মুক্ত হওয়া সম্ভব নয়। এজন্য তৃণমূল পর্যায়ে কাজ করতে হবে। তাহলেই ধর্মব্যবসায়ীদের প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে।
বাংলাদেশ মহিলা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি সাফিয়া খাতুন বলেন, ‘পৃথিবীতে নারীদেরকে সবচেয়ে বেশি সম্মানীত করেছেন মহানবী (স)। ইসলাম নারীকে যে মর্যাদা দিয়েছে তা ধর্মব্যবসায়ীদের অপপ্রচারে ঢাকা পড়ে যাচ্ছে। নারী মায়ের জাতি। তাই সর্বক্ষেত্রে নারীরা পরম মমতার সাথে সব কাজ করে থাকেন।’ তিনি ধর্মব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে সচেতনতামূলক প্রচারণা চালানোর জন্য দৈনিক দেশেরপত্রকে ধন্যবাদ জানান এবং এমন একটি অনুষ্ঠানের জন্য মহিলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি বলেন, ‘ধর্মব্যবসায়ীরা জাতির জন্য একটি বড় সঙ্কট। এই সমস্যার সমাধানের জন্য গণমাধ্যমের একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। আর দেশেরপত্র সে কাজটাই করছে। এই জন্য আমি তাদের অভিনন্দন জানাই। আজ ধর্মব্যবসায়ীরা মুখে মুখে নারীদেরকে সম্মান জানালেও প্রকৃতপক্ষে তাদেরকে কোন সম্মান দেয় না। তারা সবক্ষেত্রেই নারীকে দূরে সরিয়ে রাখতে চায়। আজ জননেত্রী শেখ হাসিনা যখন সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে সর্বক্ষেত্রে নারীর ক্ষমতায়ন করবে তখনই এক শ্রেণির ধর্মব্যবসায়ী অপপ্রচার শুরু করেছে।’ তিনি বলেন, ‘নারীরা কখনও বেকার থাকে না। তারা বাইরে কাজ না করলেও ঘরে পরিবারকে বিভিন্ন কাজে সাহায্য করে। আজ বাংলাদেশের উন্নতির পেছনে নারীদের অনেক বড় অবদান রয়েছে।’ প্রতিমন্ত্রী সবাইকে আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘নিজেদের মধ্যে হানাহানি না করে, কোন্দল না করে দেশের উন্নয়নে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করতে হবে। তা করতে পারলে বাংলাদেশ অবশ্যই বিশ্বের বুকে একটি পরাশক্তি হিসেবে মাথা তুলে দাঁড়াবে। এই জন্য দেশের প্রতিটি গ্রামে, প্রতিটি ঘরে প্রবেশ করে মানুষকে বিশেষ করে আমাদের নারী সমাজকে সচেতন করতে হবে।’

সার্চ করুন

যুক্ত হোন আমাদের ফেসবুক পেজের সাথে...