আমরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে জানাচ্ছি যে, গত ২৪ ফেব্রুয়ারি রংপুরের পীরগাছা থানার অন্তর্গত ছিদামহাট গ্রামে হেযবুত তওহীদের সদস্যদের উপর একটি পরিকল্পিত সন্ত্রাসী হামলা চালানো হয়েছে। আমরা মনে করি, এ হামলা কেবল হেযবুত তওহীদের উপর, বরং এটি মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, ধর্মীয় স্বাধীনতা এবং মানবাধিকারের ওপর নগ্ন আঘাত।
হেযবুত তওহীদ সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক ও ধর্মীয় সংস্কারমূলক আন্দোলন। ইসলামের প্রকৃত আদর্শকে উদারনৈতিকভাবে তুলে ধরার লক্ষ্যে এ আন্দোলনটি কাজ করে যাচ্ছে। আমরা ধর্মব্যবসা, সাম্প্রদায়িকতা, ধর্মীয় কূপমণ্ডূকতা, নারীবিদ্বেষ, অপরাজনীতি, উগ্রবাদের বিরুদ্ধে এ যাবৎ দুই লক্ষাধিক সভা সমাবেশ করেছি। প্রতিষ্ঠার ৩০ বছরে আমাদের দ্বারা কোনো বিশৃঙ্খলা বা আইনভঙ্গের নজির নেই।
ঘটনার বিবরণ
হেযবুত তওহীদ রংপুর বিভাগীয় নবনিযুক্ত সভাপতি আব্দুল কুদ্দুস শামীম ২৫ ফেব্রুয়ারি নিজ বাড়িতে একটি ভোজসভার আয়োজনের প্রস্তুতি নেন। এজন্য তিনি গ্রামবাসীদের সঙ্গে বসে আলোচনা করেন এবং এসপি, থানার ওসি সবাইকে অবগত করেন। কিন্তু অনুষ্ঠানের কথা শোনার পর থেকেই শুরু হয় জামায়াত-শিবিরের স্থানীয় নেতাকর্মী ও উগ্রবাদী গোষ্ঠীর ষড়যন্ত্র।
২৪ ফেব্রুয়ারি সকাল ৯টা থেকে ‘মুসলিম তওহীদী জনতা’-র ব্যানারে জঙ্গি মিছিল নিয়ে জামায়াত শিবিরের স্থানীয় নেতৃবৃন্দ এক কিলোমিটার দূরবর্তী নাগদাহ গ্রাম থেকে ছিদামহাটে এসে উপস্থিত হয়। হেযবুত তওহীদের সদস্যরা দ্রুত এসপি, ডিসি, ওসি ও গোয়েন্দা সংস্থাকে বিষয়টি অবহিত করেন। কিন্তু পুলিশ বা সেনাবাহিনীর কোনো ফোর্স যথাসময়ে উপস্থিত হয় না। এরই মধ্যে মিছিলের ৫/৬শ লোক নিয়ে পীরগাছা উপজেলার জামায়াতের আমীর বজলুর রশিদ মুকুল আব্দুল কুদ্দুস শামীমের বাড়ি ভাঙচুর শুরু করে।
তারা মসজিদের মাইকে ‘হিন্দুরা মসজিদে হামলা চালিয়েছে, হেযবুত তওহীদ মহানবীকে কটূক্তি করেছে’ এধরণের স্পর্শকাতর গুজব রটিয়ে সাধারণ মুসলিম জনতাকে উত্তেজিত করে তোলে। তারা সেনাবাহিনী ও পুলিশের সামনেই আব্দুল কুদ্দুসের বাড়িসহ লাগোয়া পাঁচটি বাড়িতে লুটপাট, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। তাদের হিংস্র আক্রমণের শিকার হয়ে হেযবুত তওহীদের ২০ জন সদস্য আহত হন, যাদের মধ্যে ৭ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক, দুজনের পা ভেঙে যায়, একজনের হাতের আঙ্গুল পড়ে যায়। একইসাথে তারা পাঁচটি বাড়ির টিভি, ফ্রিজ, আসবাবপত্রসহ সকল জিনিসপত্র, চারটি দোকানের সমস্ত মালামাল, গোয়াল থেকে ১২ টি গরু, ৫ টি ছাগল সব লুট করে নিয়ে যায়। সব মিলিয়ে সেখানে ১ কোটি ৭৬ লক্ষ টাকার সম্পদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
ঘটনার পর থেকে এখনও হামলাকারীরা এলাকায় মিছিল-মিটিং করে যাচ্ছে এবং তাতে যোগ দেওয়ার জন্য এলাকার লোকজনকেও হুমকি ধামকি দিয়ে বাধ্য করছে। তাদের কারণে গ্রামের অন্তত চল্লিশটি পরিবার নিজেদের পৈত্রিক ভিটা ছেড়ে উদ্বাস্তুর ন্যায় এখানে সেখানে খোলা আকাশের নিচে অর্ধাহারে অনাহারে মানবেতর জীবনযাপন করছে।
জামায়াতে ইসলামীর স্থানীয় নেতারা কেন এই বর্বরচিত হামলাটি করল এ বিষয়ে দলের কেন্দ্রীয় পর্যায় থেকে এখন পর্যন্ত কোনো বিবৃতি দেয়নি। উপরন্তু হামলাকারীরাই হেযবুত তওহীদের সদস্যদেরকে আসামি করে একটি মিথ্যা মামলা দায়ের করেছে, যার ফলে আমাদের সদস্যদেরকেই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় হাতকড়া পরিয়ে রাখা হয়েছে।
এই ঘটনার প্রেক্ষিতে আমাদের দাবি-
১. নজিরবিহীন এই হামলার সাথে যারা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত তাদের প্রত্যেককে বিচারের আওতায় আনতে হবে এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।
২. সারা বাংলাদেশে হেযবুত তওহীদের সদস্যদের জান-মালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
৩. এই ঘটনায় হেযবুত তওহীদের যে সকল সদস্যরা আহত হয়েছে প্রশাসনকে নিজ দায়িত্বে তাদের উন্নত ও সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে।
৪. বাস্তুহারা পরিবারগুলোর পুনর্বাসনে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
৫. ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের ক্ষতিপূরণ প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে হবে।
নিবেদক,
মো. মশিউর রহমান
মুখপাত্র, হেযবুত তওহীদ
ফোন: ০১৭৮৩ ৫৯৮ ২২২









