হেযবুত তওহীদ

মানবতার কল্যাণে নিবেদিত

রংপুরে ধর্মব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে দুর্বার গণআন্দোলন গড়ে তোলার শপথ

আগামী বছরের জেলা কমিটি গঠনের লক্ষ্যে হেযবুত তওহীদের এমামের উত্তরবঙ্গ সফরের অংশ হিসেবে রংপুর বিভাগের উদ্যোগে নীলফামারীর সৈয়দপুরে জি. আর. পি পুলিশ ক্লাবে এক বিশাল কর্মী সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।

রংপুর বিভাগীয় আমির মো. মশিউর রহমানের সভাপতিত্বে সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন হেযবুত তওহীদের এমাম হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম। গত ২০ ফেব্রুয়ারি সকাল দশটায় পবিত্র কোর’আন তেলাওয়াতের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে সমাবেশ শুরু হয়। এসময় হাজারো কর্মী সমর্থকের উপস্থিতিতে হলরুম কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়।

প্রধান অতিথি হেযবুত তওহীদের এমাম হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম বলেন, হেযবুত তওহীদ বর্তমানে মানবজাতির জন্য আশীর্বাদস্বরূপ। পৃথিবীতে যখন বারংবার মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে, দুর্বলের উপর সবলের অত্যাচার হচ্ছে, সীমান্তে সীমান্তে সংঘর্ষ, যুদ্ধ-রক্তপাত বন্ধ করার উপায় কেউ খুঁজে পাচ্ছে না তখন হেযবুত তওহীদ মানবজাতির সামনে বিশ্বের চলমান সঙ্কট দূর করার জন্য প্রস্তাব নিয়ে এসেছে। আর সেই প্রস্তাব হচ্ছে, প্রকৃত ইসলামের আদর্শ মানুষের সামনে তুলে ধরা। আল্লাহর দেওয়া দীনুল হক মানবজীবনে যদি কার্যকরভাবে প্রতিষ্ঠা করা হয় তবে মানুষ শান্তি পাবে, পৃথীবিতে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা হবে, মানুষের অর্থনৈতিক সংকট দূর হবে। এখন যারা আন্তরিকভাবে মনে-প্রাণে চায় আল্লাহর দেওয়া দীন মানবজীবনে প্রতিষ্ঠিত হোক, তাদেরকে অবশ্যই একটা কথার উপরে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। সেটা হচ্ছে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মদুর রসুলাল্লাহ অর্থাৎ আল্লাহ ও তার রসুলের হুকুম ছাড়া আর কারো হুকুম মানবো না। এই ঘোষণা দিয়েই আরবের জাহিলিয়াতের যুগে রসুল (সা.) সাহাবীদের তওহীদের উপরে ঐক্যবদ্ধ করেছেন। এরপর সেই ঐক্যবদ্ধ সাহাবীদের রসুল (সা). কঠোর শৃঙ্খলা শিক্ষা দিয়েছেন, তাদেরকে একজন নেতার আনুগত্য করার শিক্ষা দিয়েছেন। যাবতীয় শিরক-কুফর থেকে নিজেদের দূরে সরিয়ে আল্লাহর রাস্তায় জীবন সম্পদ উৎসর্গ করার জন্য অনুপ্রাণিত করেছেন। ফলে তারা জীবনের সর্বস্ব কোরবানি করে, শত্রুর আঘাতে জর্জরিত হয়ে আরব সমাজে আল্লাহর দেওয়া দীনুল হক অর্থাৎ শান্তি প্রতিষ্ঠা করলেন। এরফলে সমগ্র আরব উপদ্বীপে এমন ন্যায়, সুবিচার ও শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল যে, মানুষ দরজা খুলে ঘুমাত, চুরি ডাকাতির ভয় ছিল না। সারা গায়ে অলংকার পরিহিত অবস্থায় একা একজন নারী শত শত মাইল পথ চলে যেত; সম্পদ বা ইজ্জত হারানোর ভয় ছিল না। জীবন-সম্পদের পূর্ণ নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। আদালতে মাসের পর মাস কোনো মামলা আসত না। মাপে কম দেওয়া বা খাদ্যে ভেজাল দেওয়ার চিন্তাও লোকে করত না। রাষ্ট্রের কর্মচারীরা ঘুষ-দুর্নীতি থেকে ছিলেন মুক্ত। মানুষের অভাব দূর হয়ে গেল, মদ্যপান বন্ধ হল, মানুষ সুস্থচিন্তার অধিকারী হল। পারিবারিক জীবনে দাম্পত্য কলহ দূর হয়ে সম্প্রীতি ও শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠিত হল। সম্পত্তির উত্তরাধিকারীরা ন্যায্য অধিকার পেল। অশ্লীলতা, ব্যভিচার বন্ধ হয়ে মানুষ পবিত্র জীবনযাপন করতে থাকল। যে নারীরা কেবল ভোগ্যবস্তু ও পুরুষের সেবক বলে গণ্য হত, সেই নারীরা সমাজের প্রতিটি অঙ্গনে তাদের যোগ্যতা প্রমাণ করার সুযোগ পেল।

তিনি আরো বলেন, কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক বিষয় হচ্ছে পরবর্তী কয়েক শতাব্দি পর মুসলমান জাতি সে আদর্শ থেকে বিচ্যুত হয়েছে। ফলে এ জাতি খন্ড খন্ড, টুকরো টুকরো হয়ে গিয়েছে। এক নেতার নেতৃত্ব এখন আর নাই। হাজারো রকমের ফেরকা, মাযহাব, তরিকা সৃষ্টি হয়েছে। পশ্চিমাদের দাসত্ব গ্রহণ করার পর তাদের পুঁজিবাদ, সমাজতন্ত্র, সাম্যবাদসহ নানা মতবাদ আমরা অনুসরণ করছি। এছাড়াও শরীয়তের ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র মাসলা-মাসায়েল নিয়ে আলেম-ওলামারা বিভিন্ন মত-তরিকা সৃষ্টি করার ফলে আমাদের ঐক্য নষ্ট হয়ে গেছে। এরইমধ্যে ব্রিটিশরা এসে আমাদেরকে পদানত করার পর মাদ্রাসার মাধ্যমে জাতিবিনাশী সুদুরপ্রসারী বিকৃত ইসলাম শিক্ষা দেওয়ার বন্দোবস্ত করেছে। সেই মাদ্রাসা থেকে বেরিয়ে আলেম নামক এক শ্রেণির লোক ধর্মকে ব্যবসা করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। তারা ধর্মীয় লেবাস ব্যবহার করে উগ্রবাদী, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টি করে তা কোর’আন-হাদিসের নাম বলে চালিয়ে দিচ্ছে। ধর্মপ্রাণ মানুষের ঈমানকে ভুলখাতে প্রবাহিত করে তাদের ব্যক্তিস্বার্থ, রাজনৈতিক স্বার্থ উদ্ধার করছে। এখন হেযবুত তওহীদ যখন ইসলামের সেই প্রকৃত আদর্শ নিয়ে মাঠে নেমেছে তখন এই উগ্রবাদী, সাম্প্রদায়িক, ধর্মব্যবসায়ী গোষ্ঠী তারা হেযবুত তওহীদের বিরুদ্ধে আদাজল খেয়ে নেমেছে। ওয়াজ মাহফিলের নামে সমাবেশ করে, মসজিদের মিম্বরের মতো জায়গায় বসে তারা হেযবুত তওহীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অপপ্রচার, গুজব রটনা করে জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টির চেষ্টা করছে।

হেযবুত তওহীদের এমাম কর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন, “ধর্মব্যবসায়ীদের ষড়যন্ত্রের ব্যাপারে সর্বদা সজাগ ও সতর্ক থাকতে হবে। তওহীদ প্রতিষ্ঠার জন্য অতীতে সাহাবীরা যেভাবে নিজেদের কোরবানী দিয়েছেন, সেভাবে নিজেদের জীবন কোরবানি দেওয়ার জন্য মানসিক প্রস্তুতি রাখতে হবে। ইস্পাতকঠিন ঐক্যবদ্ধ হয়ে, পারস্পরিক ভাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে এই উগ্রবাদী ধর্মব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে দুর্বার গণআন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। যেকোন আঘাতে হতোদ্যম না হয়ে, হতবাক না হয়ে সবর অবলম্বন করতে হবে। কেউ যদি কোথাও আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা করেন, কোন ষড়যন্ত্রকারী যদি হেযবুত তওহীদের নামে মিথ্যাচার করে গুজব রটনা করে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করে তবে সঙ্গে সঙ্গে দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে অবহিত করবেন। স্থানীয় প্রশাসন যদি আপনাদের কথায় কান না দেয়, তবে আমরা তা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় পর্যন্ত অবহিত করব।” তিনি কর্মীদের আরো বলেন, “তবুও আইন নিজের হাতে তুলে নিবেন না। বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা অন্যরা করলেও আমরা তাদের ফাঁদে পা দিবো না। তবে আমাদেরও আত্মরক্ষার অধিকার রয়েছে। আমাদের অফিস, ঘরবাড়ি, জানমাল, কল-কারখানা যা কিছু আছে সকল কিছু ক্ষয়ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করার নৈতিক অধিকার আমাদের রয়েছে। সেজন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকবেন।”

নতুন দায়িত্বপ্রাপ্ত সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক এবং থানা সভাপতিদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আপনারা একটা মহান আদর্শ নিয়ে দাঁড়িয়েছেন। এই আদর্শকে প্রতিষ্ঠা করতে হলে মহান চরিত্রের লোক লাগবে। চরিত্র হাসিল না করলে এই সত্য মানুষের কাছে গৃহীত হবে না। মানুষ আপনাদের কথা বিশ্বাস করবে না। সেই চরিত্র হচ্ছে, কথায় এবং কাজে সম্পূর্ণ মিল থাকতে হবে। কখনো মিথ্যা বলবেন না। কারো চরিত্র হননের চেষ্টা করবেন না। ওয়াদার বরখেলাপ করবেন না। পারস্পরিক লেনদেনের ক্ষেত্রে আমানত রক্ষা করবেন। একে অপরের বিশ্বস্ততা অর্জন করবেন। এবং একমাত্র আল্লাহ ছাড়া পৃথিবীতে আর কোন মানুষকে ভয় পাবেন না।

রংপুর বিভাগের এই কর্মী সমাবেশে আনুমানিক শতাধিক নতুন সদস্য হেযবুত তওহীদে যোগদান করেন। নতুন ওই সদস্যদের উদ্দেশ্যে হেযবুত তওহীদের এমাম বলেন, “কেউ যেন ঐক্য নষ্ট না করে সেদিকে সবাই সতর্ক থাকবেন। মনে রাখতে হবে, ঐক্যনষ্টকারী মুনাফেক। তাকে সম্মিলিতভাবে প্রতিরোধ করতে হবে। কেউ যেন শৃঙ্খলা নষ্ট না করে, কারণ শৃঙ্খলাই একটি দলের প্রাণ। আমিরের আনুগত্য করতে হবে। কেউ কোনো ধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত হতে পারবে না। কোনোরূপ অবৈধ অস্ত্রের সংস্পর্শে যাওয়া যাবে না। দীন প্রতিষ্ঠার কাজে কারো কাছ থেকে কোনো ধরনের বিনিময় গ্রহণ করা যাবে না। যারা দীনের বিনিময় গ্রহণ করে তাদের অনুসরণ করা যাবে না। কর্মক্ষম কেউ বেকার থাকতে পারবে না। দলের কাজের জন্য সদস্য ছাড়া অন্য কারো থেকে অর্থ গ্রহণ করা যাবে না। নিজেদের হালাল উপার্জনের একটি অংশ দীন প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে ব্যয় করতে হবে। জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষ সকল মানুষ দীনের দাওয়াত পাওয়ার হকদার। তাদের কাছে এ দাওয়াত পৌঁছে দিতে হবে। ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের উপাস্য, অবতার, ধর্মগ্রন্থ, উপাসনালয় ইত্যাদির প্রতি অবমাননা করা যাবে না।”

এরআগে কর্মী সমাবেশে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন হেযবুত তওহীদের রংপুর বিভাগীয় সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রাকিব, রংপুর জেলা সভাপতি আব্দুল কুদ্দুস শামিম, পঞ্চগড় জেলা সভাপতি আবু সাইদ, ঠাকুরগাঁও জেলা সভাপতি সোহেল রানা, দিনাজপুর জেলা সভাপতি মাহাবুর রহমান, নীলফামারী জেলা সভাপতি নুর আলম সরকার, লালমনিরহাট জেলা সভাপতি একরামুল হক, কুড়িগ্রাম জেলা সভাপতি তাজুল ইসলাম, গাইবান্ধা জেলা সভাপতি জাহিদ হাসান মুকুল ও বিভাগীয় নারীনেত্রী উম্মে হানি ইসলাম প্রমুখ। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন রংপুর জেলা সাধারণ সম্পাদক মো. আমিরুল ইসলাম।

সার্চ করুন

যুক্ত হোন আমাদের ফেসবুক পেজের সাথে...