মোহাম্মদ আসাদ আলী:
বেদা’ত এর শাব্দিক অর্থ সংযোজন। আর এর পারিভাষিক অর্থ হচ্ছে, মহানবীর (দ:) সময় এই দীন, ইসলাম যা ছিল, এবং এই জীবন ব্যবস্থাকে তিনি যে অবস্থায় ছেড়ে গেছেন তাতে অতিরিক্ত কোন কিছু যোগ, সংযোজন করাই হোল বেদা’ত। আল্লাহ এই বেদা’তকে শেরকের সমপর্যায়ের গোনাহ বলে বর্ণনা করেছেন। আর আল্লাহ শেরক ও কুফরকে কখনো মাফ না করার প্রতিজ্ঞা করেছে। অর্থাৎ শেরকের সাথে বেদা’তও ক্ষমার অযোগ্য গোনাহ হয়ে গেলো। বর্তমানের বিকৃত ইসলামের অনেক আলেম মাজার পূজা, পীর পূজা, কবরে মোমবাতি দেওয়া ইত্যাদিকে বেদাতি কাজ বলে আখ্যা দিয়ে থাকে, ওগুলি নিঃসন্দেহে বে’দাতি কাজ তবে প্রকৃত যে বে’দাতকে রসুলাল্লাহ শেরকের সমতুল্য ঘষণা করলেন, সেই বেদাত এগুলি নয়। যে বেদা’ত সম্পর্কে রসুলাল্লাহ বলেছেন সেটা হোল ‘আল্লাহর তৈরি এই জীবন ব্যবস্থা, দীনের জাতীয় বিধানগুলির মধ্যে অন্যের, গায়রুল্লাহর তৈরি বিধান-আইন ইত্যাদি সংযোজন করা।’ আর এটাই আসল বেদা’ত। রসুলাল্লাহ বলেছেন ভবিষ্যতে ইসলামের ওপর যে সব বিপদ আসবে তার মধ্যে সবচেয়ে ভয়ঙ্কর বিপদ হবে বেদা’ত। এখানে তিনি কোন্ বিপদের কথা বলেছেন, নিশ্চয়ই মাজার পূজার কথা নয়?
রসুলাল্লাহ যে দীন পৃথিবীতে রেখে গেলেন সেই দীনের সবচেয়ে প্রয়োজনীয়, গুরুত্বপূর্ণ দিক-অর্থাৎ জাতীয় দিকটার কোন কিছু বদলিয়ে মানুষের তৈরি কোন কিছু যদি তাতে যোগ করা হয় তবে রসুলাল্লাহর উম্মাহর জীবনে তারচেয়ে বড় বিপদ আর কি হতে পারে? এটাই সবচেয়ে বড় বে’দাত। এই বেদা’তের কারণে মুসলিম বলে পরিচিত জনসংখ্যাটি ইসলামের মূল ভিত্তি তওহীদ থেকে সরে গিয়ে আল্লাহর আইন-কানুনকে তাদের সামষ্টিক জীবন থেকে বাদ দিয়ে ইহুদি খ্রিস্টান ‘সভ্যতা’র তৈরি অর্থাৎ মানুষের তৈরি জীবনব্যবস্থাকে তাদের দীন হিসাবে গ্রহণ করেছে। আল্লাহ যা দেন নাই, এমন কি নিষেধ করেছেন সেই বিধানগুলিই এখন দীনের অর্থাৎ আমাদের জীবন-ব্যবস্থার অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। এর চেয়ে বড় আর কোন বে’দাত হতে পারে না, বেদা’তের এই সংজ্ঞা অনুযায়ী এই মুসলিম নামধারি জাতিটি আল্লাহর দেওয়া জীবনব্যবস্থা বাদ দিয়ে মানুষের তৈরি তন্ত্র-মন্ত্র বা জীবনব্যবস্থা গ্রহণ কোরে নিয়ে সবচেয়ে বড় বেদা’তের মধ্যে ডুবে আছে। যার অনিবার্য ফল বর্তমান পৃথিবীর এই অসহনীয় অশান্তি।