রিয়াদুল হাসান
বুদ্ধি হবার পর থেকেই মাননীয় এমামুযযামানের মনে একটি প্রশ্ন নাড়া দিচ্ছিলো, তখন ঐ সময়ে এই উপমহাদেশসহ প্রায় সমস্ত মোসলেম দুনিয়া কোন না কোন ইউরোপীয়ান জাতিগুলির শাসনাধীন অর্থাৎ পাশ্চাত্য খ্রিস্টান শক্তির দাস। এই বিশাল জাতিটাকে ইউরোপের ছোট ছোট রাষ্ট্রগুলি টুকরো টুকরো কোরে ভাগ করে এক এক রাষ্ট্র এক এক টুকরো চুষে খাচ্ছিলো। তিনি সবার কাছে শুনতেন, বিশেষ কোরে ওয়াজে মাওলানা মৌলভীদের কাছ থেকে শুনতেন যে ইসলামই একমাত্র সঠিক ধর্ম, এই জাতিই আল্লাহর কাছে গৃহীত, এরাই একমাত্র বেহেস্তে যাবে আর সব দোযখে যাবে। এই জাতিটি, বিশেষ কোরে এই আলেম মৌলভীরা আল্লাহর অতি প্রিয়, তাদের জন্য আল্লাহ জান্নাত সাজিয়ে গুছিয়ে রেখেছেন। কিন্তু তাঁর মনে খটকা লাগতো, তাই যদি হবে, শুধু আমরাই যদি সত্য পথের পথিক হই, তবে আমাদের এই ঘৃণার দাসত্ব কেন?
বার বার কেবলই মনে হোচ্ছিল কোথায় যেন কী একটা ভয়ংকর গোলমাল আছে, কোথাও এক বিরাট শুভংকরের ফাঁকি আছে। তাঁর অবচেতন মন থেকে বোধহয় স্রষ্টার কাছে প্রার্থনা পৌঁছে গিয়েছিল- ‘আমাকে বুঝিয়ে দাও! আমাকে বুঝিয়ে দাও! তোমার সর্বশ্রেষ্ঠ রসুল, তোমার শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি, সমস্ত মানব জাতির আদর্শ কোরে যাকে তুমি তৈরি করেছো (কোর’আন- সুরা আল-আহযাব ২১), যার নামে স্বয়ং তুমি আল্লাহ তোমার মালায়েকদের নিয়ে দরুদ ও সালাম পাঠাও (কোর’আন- সুরা আল-আহযাব ৫৬), তাঁর জাতি আজ ঘৃণিত দাস কেন? দেখতে পাচ্ছি এরা তোমায় বিশ্বাস করে। তা না কোরলে তো আর নামাজ পড়তো না, রোজা রাখতো না, যাকাত দিতো না, হজ্ব কোরত না, দাড়ি রাখতো না, মোছ কাটতো না, এত নফল এবাদত করতো না, কোরবানি দিত না, খাৎনা কোরত না, পাড়া মহল্লা কাঁপিয়ে জিকির কোরত না। এরা তো এ সবই করে, শুধু তাই নয় এদের মধ্যে অনেকে তো খানকায় বোসে কঠিন আধ্যাত্মিক সাধনাও করে, আধ্যাত্মিকতার বহু স্তর অনেকে অতিক্রম কোরেছেন। তবু কেন আমরা বিধর্মীদের পদদলিত দাস? কোথায় গলদ, কোথায় ফাঁকি?’
এই মহাবিশ্বের সর্বশক্তিমান স্রষ্টা তাঁর এই বান্দার মনের আকুল জিজ্ঞাসা শুনলেন। এরপর ধীরে ধীরে একটু একটু কোরে তাঁর মনের এই প্রশ্নের উত্তর আসতে লাগলো- সারা জীবন ধরে। এখানে একটু, ওখানে একটু, বইয়ের পাতায়, ছোটখাট ঘটনায়, নিজের চিন্তার মধ্যে দিয়ে এমন কি চিন্তা না করেও হঠাৎ নিজে নিজেই জবাব মনের মধ্যে এসে যাওয়া, এমনি করে পেঁয়াজের খোসা ছাড়াবার মতো একটি একটি করে সমস্ত আবরণ ঝোরে পড়তে লাগলো। এভাবেই তাঁর সেই ‘কেন’র জবাব তিনি পেয়েছেন জীবনের একটি পর্যায়ে এসে, তাঁর পরিণত বয়সে। তিনি জানতে পারলেন কোথায় গলদ, কোথায় সেই শুভংকরের ফাঁকি, যে ফাঁকিতে পোড়ে আজ যে জাতির পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ জাতি হবার কথা- সেই জাতি পৃথিবীর নিকৃষ্টতম জাতিতে পরিণত হোয়েছে। আল্লাহর সার্বভৌমত্বের, তওহীদের ওপর ভিত্তি কোরে পৃথিবীর সমস্ত জীবন-ব্যবস্থা, দীন অবতীর্ণ হোয়েছিল, সেই সার্বভৌমত্ব, তওহীদ যেমন পৃথিবীর কোন জাতির মধ্যে নেই, তেমনি এই তথাকথিত ‘মোসলেম’ জাতির মধ্যেও নেই। অন্য সব ধর্ম ও জাতি যেমন এবং যতোখানি বহুত্ববাদের, শিরক, কুফরে ও নাস্তিক্যে ডুবে আছে এই জাতিও ততোখানিই ডুবে আছে। অন্য ধর্মের মানুষগুলোর মতো এই ধর্মের মানুষগুলোও বুঝছেনা, কেমন করে আজ আর তারা মোসলেম নেই। আকিদার (ঈড়হপবঢ়ঃ) বিকৃতিতে তওহীদ এদের কাছে শুধু মাটির, পাথরের তৈরি মূর্তিকে সাজদা না করার মধ্যে সীমাবদ্ধ। তওহীদের মূল কথা হোল, লা এলাহ এল্লা আল্লাহ, মোহাম্মাদুর (দ:) রসুল্লাল্লাহ অর্থাৎ আল্লাহ ছাড়া কোন হুকুমদাতা, নির্দেশদাতা নাই এবং মোহাম্মাদ (দ:) আল্লাহর রসুল। এই কলেমা হচ্ছে আল্লাহর সঙ্গে মানুষের একটি অঙ্গীকার বা চুক্তি যাতে বলা হোয়েছে, জীবনের ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, রাষ্ট্রীয়, অর্থনৈতিক, বিচারিক, শিক্ষা অর্থাৎ যে স্তরেই হোক, যে বিষয়ে আল্লহ ও তাঁর রসুলের কোন কথা আছে, হুকুম আছে সেখানে অন্য করো কথা বা হুকুম মানা যাবে না। যে বা যারা অন্য কোন হুকুম মানবে তারা এই কলেমার চুক্তি ভঙ্গ করবে, ফলে কাফের ও মোশরেক হয়ে যাবে। আল্লাহর শেষ রসুলের মাধ্যমে প্রেরিত ইসলামের শেষ সংস্করণ আর বর্তমানের “ইসলাম ধর্ম” যে দু’টি সম্পূর্ণ ভিন্ন ও বিপরীতমুখী জিনিস তা পরম করুণাময় আল্লাহর রহমে তাঁর কাছে দিনের আলোর মতো পরিষ্কার হয়ে ধরা দিল।
তিনি প্রভুর কাছে বুঝতে চেয়েছিলেন কোন অপরাধে, কোন গলদে তার শ্রেষ্ঠ রসুলের জাতি দারিদ্র্যে, অশিক্ষায়, কুশিক্ষায়, নিজেদের মধ্যে মারামারি, হানাহানিতে প্রায় পশু পর্যায়ের জীবে পরিণত হয়ে মোশরেক ও কাফেরদের গোলামে পরিণত হোল। রহমানুর রহীমের অনুগ্রহে এই মহাসত্যগুলি বুঝার পরে তিনি মহাবিপদে পড়ে গেলেন, ঘাড়ে এসে পড়লো ভয়াবহ দায়িত্ব। তিনি জানতেন মহানবীর বাণী- যে লোক জ্ঞান পেয়েও তা মানুষকে জানায় না, দেয় না, কেয়ামতে তার পেটে আগুন পুরে দেওয়া হবে। মহানবী এও বোলেছেন- যে হাশরের দিনে তার মুখে আগুনের লাগাম পরানো হবে। এর অর্থ এ দায়িত্ব যেমন করেই হোক ঘাড় থেকে নামাতেই হবে। এজন্য তিনি একটি বই লিখে এই মহাসত্য মানবজাতির সামনে তুলে ধোরতে চাইলেন। ১৭ বছর ধরে অক্লান্ত পরিশ্রম কোরে লিখলেন ‘এ ইসলাম ইসলামই নয়’ নামে একটি বই। বই লেখার পাশাপাশি এ বিষয়ে নিজস্ব পরিমণ্ডলের মানুষের সঙ্গে আলোচনা কোরতেন। কিছু লোক তাঁর এই কথাগুলির সঙ্গে একমত হোলেন। এদের অনুরোধ-উপরোধে এক সময় তিনি একটি আন্দোলন প্রতিষ্ঠা কোরতে সম্মত হন। এভাবেই ১৯৯৫ সনে আল্লাহর অশেষ রহমে জন্মলাভ করে হেযবুত তওহীদ। হেযবুত তওহীদ মানব জীবন থেকে সকল প্রকার অন্যায়-অবিচার-অশান্তি দূর কোরে সমস্ত পৃথিবীতে আল্লাহর সত্যদীন প্রতিষ্ঠার জন্য নিরলসভাবে সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে। মহান আল্লাহ এক বিরাট মো’জেজা (অলৌকিক ঘটনা) ঘটিয়ে জানিয়ে দিয়েছেন যে, হেযবুত তওহীদ হক, সত্য, এর এমাম আল্লাহ মনোনীত এবং হেযবুত তওহীদ দিয়েই সমস্ত পৃথিবীতে আল্লাহর সত্যদীন (দীনুল হক) প্রতিষ্ঠিত হবে এনশাল্লাহ।