বিসমিল্লাহির রহমানির রাহিম
শিক্ষাব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন এখন সময়ের দাবি
যুগোপযোগী শিক্ষাব্যবস্থার প্রস্তাবনা
আমরা বর্তমানে এমন একটি সময় অতিক্রম করছি যা অতীতের যে কোনো সময়ের তুলনায় জ্ঞান-বিজ্ঞান, যোগাযোগ ব্যবস্থা, গবেষণা, তথ্য-প্রযুক্তির ব্যবহার ইত্যাদি বহু বস্তুগত দিক থেকে অগ্রসর। কিন্তু এ উন্নতি ভারসাম্যহীন। কারণ আমরা একদিকে যেমন অত্যাধুনিক প্রযুক্তির চোখ ধাঁধানো উৎকর্ষ দেখতে পাচ্ছি, অন্যদিকে দেখতে পাচ্ছি আমাদের মনুষ্যত্বের চরম অবনতি ও অবক্ষয়। মানুষের প্রতি মানুষের কোমল অনুভূতি, পারিবারিক ও সামাজিক বন্ধনের দৃঢ়তা, আর্ত-পীড়িতের প্রতি মানবতাবোধ, সহযোগিতা, জাতির প্রতি দায়বদ্ধতার অনুভূতি, ব্যক্তিগত ও সামষ্টিক জীবনের ঐক্য শৃঙ্খলা, দেশপ্রেম, অন্যায়বিরোধী চরিত্র- এক কথায় মানবিক গুণাবলির প্রতিটি ক্ষেত্রে আমরা ভয়াবহ অবনতির দিকে ধাবিত হচ্ছি। ফলে পারিবারিক কলহ ও সহিংসতা, দুর্নীতি, রাজনৈতিক সন্ত্রাস, খুন, ধর্ষণসহ যত ধরনের অপরাধ রয়েছে প্রতিটি ক্ষেত্রে আমাদের সমাজ অতীতের সকল রেকর্ড ভঙ্গ করে ফেলেছে। লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে, আমাদের সমাজে যারা শিক্ষাবঞ্চিত তাদের অপরাধের ব্যাপ্তিও সীমিত। কিন্তু যারা বড় বড় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে ভলিউম ভলিউম বই পড়ে, বড় বড় সার্টিফিকেট নিয়ে উচ্চশিক্ষা নিয়ে বেরিয়ে আসছেন তারাই লাগামহীন দুর্নীতি করে, ব্যবসায়িক সিন্ডিকেট করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে, অফিস আদালতে তারাই ঘুষ খাচ্ছে, তারাই চিকিৎসার নামে অসহায় রোগীদের ব্ল্যাকমেইল করছে, খাদ্যে ও ওষুধে ভেজাল দিচ্ছে, তারাই দেশের কোটি কোটি টাকা বিদেশে পাচার করছে, উন্নয়ন কর্মকান্ডের জন্য আনা বৈদেশিক ঋণের টাকা আত্মসাৎ করছে। তাদের এই বিবেকহীন লুটতরাজ কি আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার দৈন্যদশা ও ব্যর্থতাকেই স্পষ্ট করে তুলছে না?
শিক্ষা একজন ব্যক্তিকে প্রাণী থেকে মানুষের পর্যায়ে উন্নীত করে। শিক্ষার মাধ্যমে তার মধ্যে মানবিক গুণাবলী ও বৈশিষ্ট্যের বিকাশ সাধিত হয়। আবার একটি জাতির ক্ষেত্রে আমরা দেখি জাতির লক্ষ্য, দর্শন, রুচি-অভিরুচি, চিন্তাচেতনা, প্রগতি, সমৃদ্ধি, শৃঙ্খলা, সংস্কৃতি ইত্যাদির বিকাশ ঘটে শিক্ষার মাধ্যমে। একটি রাষ্ট্র কী অর্জন করতে চায়, তার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী তার উপর নির্ভর করেই জাতির শিক্ষাবিদগণ শিক্ষাব্যবস্থা প্রবর্তন করে থাকেন। অপরের অনুকরণ করে তৈরি করা শিক্ষাব্যবস্থা কখনেই জাতিকে তার স্বাতন্ত্র্য ও মর্যাদা প্রদান করতে পারে না, কোনো লক্ষ্যেও নিয়ে যেতে পারে না।
স্বাধীনতা লাভের পর অর্ধশতাব্দীর ঘাত-প্রতিঘাত পেরিয়ে আমরা এখন বিশ্বের মানচিত্রে একটি অবস্থানে এসে দাঁড়িয়েছি। এই ভূখন্ডে বসবাসকারী ১৭ কোটি জনসংখ্যার মধ্যে অধিকাংশই ধর্ম পরিচয়ে মুসলিম। তারা আল্লাহ, রসুল ও কোর’আনের উপর বিশ্বাস রাখে। পবিত্র কোর’আনে আল্লাহর আখেরি নবীর উম্মাহকে শ্রেষ্ঠ জাতি হিসাবে আখ্যায়িত করেছেন এই শর্তে যে, তারা মানবজাতিকে সৎকাজের আদেশ করবে এবং অসৎ কাজ করতে বাধা প্রদান করবে (সুরা ইমরান ১১০)। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, মুসলিম দাবিদার এই জাতির চরিত্র ও কর্মকান্ডে ইসলামের নৈতিকতা ও মূল্যবোধের দেখা পাওয়া যায় না। বরং দুর্নীতিতে আমাদের দেশ চ্যাম্পিয়ন হয়েছে পরপর কয়েক বছর। তিন বছরের কন্যাশিশুও এখানে ধর্ষিত হয়, ধর্মীয় শিক্ষকদের দ্বারা প্রতিদিন বলাৎকারের শিকার হচ্ছে এদেশের অসংখ্য মাদ্রাসা শিক্ষার্থী।
বিশ্বাসের সাথে যদি কর্মের সঙ্গতি না থাকে তাহলে জাতির হাল হবে হালভাঙা নৌকার মত। সেই নৌকা কোনোদিন তার গন্তব্যে পৌঁছাতে পারবে না। পবিত্র কোর’আনের ভাষ্যমতে মানুষ আল্লাহর খলিফা, প্রতিনিধি (Representative)। মানুষের কাজ হচ্ছে সে আল্লাহর প্রতিনিধি হিসাবে আল্লাহর হুকুম-বিধান মোতাবেক মানবজাতিকে শান্তিপূর্ণভাবে পরিচালিত করবে। আর আমরা জানি, আল্লাহর হুকুম অর্থই হচ্ছে অন্যায়ের বিপরীতে ন্যায়, অবিচারের বিপরীতে সুবিচার, ভয়-ভীতির পরিবর্তে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। ইসলামের শেষ নবী হজরত মোহাম্মদ (সা.) আরবের জাহেলি সমাজকে চরম আত্মত্যাগ ও দুর্বার সংগ্রামের মধ্য দিয়ে একটি আলোকিত সমাজরূপে গড়ে তুলেছিলেন। অজ্ঞতার অন্ধকারে নিমজ্জিত সেই আরবরাই অবিশ্বাস্য কম সময়ের মধ্যে ঐক্যে, শৃঙ্খলায়, আনুগত্যে, জ্ঞান-বিজ্ঞান প্রযুক্তির আবিষ্কারে, নতুন নতুন ভূখ- আবিষ্কারে, শাসন পরিচালনায়, নতুন নতুন ব্যবস্থা প্রবর্তনে, চিকিৎসা, শিল্প, মহাকাশবিদ্যা, ভূগোল, সমরবিদ্যা ইত্যাদি সকল ক্ষেত্রে পৃথিবীর সকল জাতির শিক্ষকের আসনে আসীন ছিল। বর্তমানে পাশ্চাত্যের যে প্রযুক্তিগত উন্নতির দিকে আমরা হা করে তাকিয়ে থাকি তার অধিকাংশেরই ভিত্তি রচনা করেছিলেন মুসলিম সোনালি যুগের বিজ্ঞানীরা যে ইতিহাস সুপরিকল্পিতভাবে ভুলিয়ে দেওয়া হয়েছে দাসত্বের যুগে প্রবর্তিত ষড়যন্ত্রমূলক শিক্ষাব্যবস্থার মাধ্যমে।
বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থার গোড়ার কথা:
আল্লাহর রসুলের অনুসারী প্রকৃত মুসলিম জাতিটি অর্ধ পৃথিবীতে অমর ও সোনালি সভ্যতা প্রতিষ্ঠা করেছিল। কিন্তু যখন আমরা সেই আদর্শ হারিয়েছি, ধর্মীয় মাসলা-মাসায়েল নিয়ে ফেরকা-মাজহাবে বিভক্ত হয়ে ঐক্য নষ্ট করেছি, আল্লাহর প্রতিনিধিত্ব ত্যাগ করে ভোগবিলাসে রাজত্ব আরম্ভ করেছি তখন প্রকৃতির অমোঘ নিয়মে মুসলমানদের পতন ও পরাজয়ের ঘণ্টা বেজে উঠেছে। পশ্চিমা সভ্যতা সামরিক শক্তিবলে আমাদেরকে পদানত করেছে। তাদের শাসনকে চিরস্থায়ী করার জন্য তারা চেয়েছে আমাদেরকে তাদের মানসিক দাসে পরিণত করতে। আমরা যেন কোনোদিন তাদের দখলদারিত্ব ও অন্যায় অবিচারের বিরুদ্ধে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে না পারি সেজন্য তারা আমাদের দেশসহ তাদের সকল উপনিবেশেই ষড়যন্ত্রমূলক শিক্ষাব্যবস্থা প্রবর্তন করে। এর মধ্যে দুটো ভাগ তারা সৃষ্টি করে- সাধারণ শিক্ষা ও মাদ্রাসা শিক্ষা। এই দুটো শিক্ষাব্যবস্থার মধ্যে চিন্তা-চেতনায়, আচার আচরণে মৌলিক ব্যবধান, পরস্পরবিরোধী দর্শন ও বৈপরীত্য রয়েছে যা তাদের ডিভাইড এন্ড রুল নামক শাসননীতিকে বাস্তব রূপ দান করেছে।
প্রথমে মাদ্রাসা শিক্ষাব্যবস্থা। ইউরোপীয় প্রাচ্যবিদ ও ইসলামবিদ্বেষী প-িতরা অনেক গবেষণা করে একটি বিকৃত ইসলাম তৈরি করল যা থেকে আল্লাহর সার্বভৌমত্ব, জাতীয় জীবনে আল্লাহর বিধান মানার বাধ্যবাধকতা ও অন্যায় অবিচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের চেতনাকে বাদ দেওয়া হলো এবং ব্যক্তিগত জীবনের খুঁটিনাটি বিষয়ের মাসলা-মাসায়েল, ফতোয়া, দোয়া-কালাম, মিলাদের গীত, বিশেষ করে দীনের যে বিষয়গুলো স¤পর্কে পূর্ব থেকেই বিভিন্ন মাজহাবের ফকীহদের মধ্যে বহু মতবিরোধ সঞ্চিত ছিল সেগুলোকে অন্তর্ভুক্ত করলো যেন সেগুলো নিয়ে মাদ্রাসাশিক্ষিতরা তর্ক, বাহাস, মারামারিতে লিপ্ত থাকে। সেই ইসলামটিকে জাতির মনে-মগজে গেড়ে দেওয়ার জন্য বড়লাট লর্ড ওয়ারেন হেসটিংস ১৭৮০ সনে ভারতের তদানীন্তন রাজধানী কলকাতায় আলিয়া মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করল। সেখানে নিজেরা অধ্যক্ষ থেকে পর পর ২৬ জন খ্রিষ্টান (প্রথম খ্রিষ্টান অধ্যক্ষ এ.এইচ. স্প্রিঙ্গার এম.এ. এবং শেষ খ্রিষ্টান অধ্যক্ষ এ. এইচ. হার্টি এম.এ.) ১৯২৭ সন পর্যন্ত ১৪৬ বছর ধরে মুসলিম জাতিকে সেই বিকৃত ইসলামটি শেখাল। [দেখুন- আলীয়া মাদ্রাসার ইতিহাস, মূল- আঃ সাত্তার, অনুবাদ- মোস্তফা হারুণ, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ এবং Reports on Islamic Education and Madrasah Education in Bengal by Dr. Sekander Ali Ibrahimy (Islami Foundation Bangladesh)]। মাদ্রাসা শিক্ষার উদ্দেশ্য কী ছিল তা আলিয়া মাদ্রাসার প্রাক্তন অধ্যক্ষ ইয়াকুব শরীফ “আলিয়া মাদ্রাসার ইতিহাস” বইয়ের ভূমিকায় লিখেছেন, “মুসলমানরা ছিল বীরের জাতি, ইংরেজ বেনিয়ারা ছলে-বলে-কৌশলে তাদের কাছ থেকে ক্ষমতা কেড়ে নিয়ে তাদের প্রচলিত ধর্ম, শিক্ষা ও মর্যাদা হরণ করার জন্য পদে পদে যেসব ষড়যন্ত্র আরোপ করেছিল, আলিয়া মাদ্রাসা তারই একটি ফসল।”
মাদ্রাসা শিক্ষাব্যবস্থার সিলেবাসে অংক, ভূগোল, বিজ্ঞান, অর্থনীতি, প্রযুক্তি ও কারিগরি শিক্ষা ইত্যাদি কর্মমুখী (Vocational) কোনো কিছুই রাখা হলো না। ফলে আলেমরা বাস্তব জীবনে অনিশ্চয়তার অন্ধকারে নিমজ্জিত হলেন। কিন্তু জীবিকা ছাড়া তো মানুষ চলতে পারে না। তাই অগত্যা তারা ধর্মের বিভিন্ন কাজ করে রুজি-রোজগার করাকেই নিয়তি হিসাবে গ্রহণ করলেন। সেখান থেকে কোর’আন-হাদীসের জ্ঞান নিয়ে লক্ষ লক্ষ আলেম বেরিয়ে আসছেন কিন্তু তাদেরকে জাতির ঐক্য গঠনের গুরুত্ব, জীবন-সম্পদ উৎসর্গ করে সত্যদীন প্রতিষ্ঠার প্রেরণা, সমাজে বিরাজমান অন্যায়, অবিচারের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার শিক্ষা দেয়া হয়নি। বর্তমানে ইসলামের নামে যে চরমপন্থা, বাড়াবাড়ি, সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ, মতপার্থক্যগত বিদ্বেষ-বিভাজন, ধর্মীয় উন্মাদনা, হুজুগ, ফতোয়াবাজি, অন্ধত্ব, অযৌক্তিক, কুসংস্কার বিস্তার লাভ করেছে, এটার বীজ এই মাদ্রাসা শিক্ষাব্যবস্থার গোড়াতেই প্রথিত রয়েছে। মাদ্রাসার মধ্যেও রয়েছে বহুধরনের ফেরকাগত বিভক্তি যেমন দেওবন্দী ফেরকার কওমি মাদ্রাসা, সালাফি, আহলে হাদিস, হেফজখানা ইত্যাদি। প্রত্যেকের মধ্যে রয়েছে বিরাট আকিদাগত ফারাক। এই ব্যবস্থার শিক্ষার্থীরা ইসলামের সঠিক শিক্ষা না পেলেও তাদের মধ্যে ধর্মীয় চেতনা ঠিকই রয়ে গেছে। সেটাকে অপব্যবহার করে কেউ আজ তাদেরকে অপরাজনীতির হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করছে, কেউ ধর্মীয় উন্মাদনা, দাঙ্গায়, সন্ত্রাস সৃষ্টিতে কাজে লাগাচ্ছে, কেউ বা তাদেরকে জঙ্গিবাদের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।
অপরদিকে সাধারণ শিক্ষাব্যবস্থায় (General Education System) দীন সম্পর্কে প্রায় কিছুই শিক্ষা দেওয়া হয় নি। বরং সুদভিত্তিক অংক, ব্রিটিশ রাজা-রানির ইতিহাস, ভূগোল, বিজ্ঞান, গণিত, পাশ্চাত্যের ধর্মহীন রাষ্ট্রব্যবস্থা, পাশ্চাত্য বস্তুবাদী দর্শন ইত্যাদি শিক্ষার পাশাপাশি ধর্ম সম্পর্কে, বিশেষ করে ইসলাম সম্পর্কে একটা বিদ্বেষভাব (A hostile attitude) শিক্ষার্থীদের মনে প্রবেশ করানো হলো। সাধারণ শিক্ষার মধ্যেও বর্তমানে অনেক ধরনের শিক্ষাক্রমগত বিভক্তি রয়েছে যেমন বাংলা ও ইংরেজি মিডিয়াম, বাংলা ও ইংরেজি ভার্সন, ক্যাডেট ইত্যাদি। ওখান থেকে লক্ষ লক্ষ কথিত আধুনিক ও শিক্ষিত (Modern Educated) লোক বের হচ্ছেন যারা চরম আত্মকেন্দ্রিক ও স্বার্থপর। নিজেদের বৈষয়িক উন্নতি ছাড়া আর কিছুই তারা ভাবেন না। তারা অধিকাংশই ইসলাম ও অন্যান্য ধর্মকে মনে করেন সেকেলে, মধ্যযুগীয় চিন্তাধারা; ধর্মকে মনে করেন কল্পকাহিনী। তাদের দৃষ্টিতে আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞানের যুগে ধর্ম অচল। তাদেরকে শেখানো হলো আধুনিক সমস্ত জ্ঞান-বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি পশ্চিমাদের উদ্ভাবন। কিন্তু এই জ্ঞান-বিজ্ঞানের ভিত্তি যে মুসলিমরাই নির্মাণ করেছিল সেটা তাদেরকে শিক্ষা দেওয়া হলো না। এদের মধ্যে অনেকেই আছে প্রচ- ধর্মবিদ্বেষী অথচ সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে তাদের জন্ম। এদের হৃদয়ে আল্লাহর ভয় বা আল্লাহর হুকুমের প্রতি শ্রদ্ধা না থাকায় এরা সীমাহীন দুর্নীতি, ঘুষ, অর্থ পাচার ইত্যাদি অপরাধে লিপ্ত হতে কোনো প্রকার বিবেকের দংশন অনুভব করে না।
উভয় শিক্ষাব্যবস্থা থেকে বেরিয়ে আসা শিক্ষিতজনেরা একে অপরের প্রতি অশ্রদ্ধা ও বিদ্বেষ পোষণ করেন। মাদ্রাসা শিক্ষিতরা মনে করছেন সাধারণ শিক্ষায় শিক্ষিতরা জাহান্নামে যাবে আর সাধারণ শিক্ষায় শিক্ষিতরা তাদেরকে চরম অবজ্ঞার দৃষ্টিতে দেখেন। একই জাতির মধ্যে এই যে ভাইয়ে ভাইয়ে দ্বন্দ্ব – এর মূল কারণ এই দ্বিধাগ্রস্ত দ্বিধাবিভক্ত জাতিবিনাশী শিক্ষাব্যবস্থা। এটি দূর করার জন্য আমাদেরকে অত্যন্ত কঠিন একটি সিদ্ধান্ত নিতে হবে। সেটা হচ্ছে ঔপনিবেশিক যুগে প্রবর্তিত শিক্ষাব্যবস্থাকে বাদ দিয়ে নিজেদের জাতির লক্ষ্য মোতাবেক নতুন করে একটি শিক্ষাব্যবস্থা প্রবর্তন করতে হবে। এজন্য সমগ্র শিক্ষাব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে হবে। এ লক্ষ্যে আমরা জাতির সামনে নিম্নলিখিত প্রস্তাব পেশ করছি।
আমাদের প্রস্তাব
১.দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত সাধারণ শিক্ষা ও ধর্মীয় শিক্ষা উভয়ের সমন্বয়ে ভারসাম্যপূর্ণ একমুখী শিক্ষাব্যবস্থা প্রবর্তন করতে হবে। স্নাতক পর্যায় থেকে শিক্ষার্থীরা নিজেদের আগ্রহ মোতাবেক যে কোনো বিষয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করবে। শারীরিক, মানসিক ও আত্মিক সক্ষমতাসম্পন্ন যে কোনো বয়সের শিক্ষার্থীরা উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করতে পারবেন।
২. নৈতিক চরিত্র গঠনের জন্য ধর্মের প্রকৃত শিক্ষা এবং আধুনিক বিশ্বের নাগরিক হিসাবে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির শিক্ষা প্রদান করতে হবে।
৩. নিজ জাতি ও বিশ্বের অপরাপর জাতির ইতিহাস ও ঐতিহ্য সম্পর্কে ধারণা দেওয়ার জন্য পক্ষপাতদুষ্ট উদ্দেশ্যমূলক ইতিহাস পরিহার করে সঠিক ইতিহাস শিক্ষা প্রদান করতে হবে।
৪. শিক্ষার্থীদেরকে সুনাগরিক হিসাবে গড়ে তোলার জন্য পৌরনীতি শিক্ষার মাধ্যমে তাদের মধ্যে জাতীয়তাবোধ, ঐক্যচেতনা, দেশপ্রেম, শৃঙ্খলা, জাতির নেতৃত্বের প্রতি আনুগত্য, অন্যায়বিরোধী মানসিকতা গেড়ে দিতে হবে।
৫. শিক্ষার্থীদেরকে বাস্তব ও কর্মমুখী শিক্ষা প্রদান করতে হবে যেন তারা জাতির বোঝায় পরিণত না হয়। এ লক্ষ্যে তাদেরকে আইসিটি সম্পর্কিত বহুমুখী জ্ঞান যথা হার্ডওয়্যার মেরামত, সফটওয়্যার তৈরি, গ্রাফিক্স ডিজাইন, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ব্যবহার ও প্রোগ্রামিং, ভিডিও এডিটিং, ওয়েব ডেভেলপমেন্ট ইত্যাদি, ড্রাইভিং, ইলেকট্রিক্যাল, ইলেকট্রনিক্স, অটোমোবাইল প্রভৃতি কারিগরি জ্ঞান, কৃষি/মৎস্য/পশুপালন সম্পর্কিত কৃষি উৎপাদনমুখী আধুনিক শিক্ষা দিতে হবে।
৬. জাতীয় নিরাপত্তা সংকটে ও দুর্যোগকালে যেন শিক্ষার্থীরা বড় হয়ে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে সেজন্য তাদেরকে সাধারণ সামরিক (ক্যাডেট) প্রশিক্ষণ প্রদান করতে হবে।
৭. প্রতিটি শিক্ষার্থীকে সুস্থ, সবল, সাহসী নাগরিক হিসাবে গড়ে তোলার জন্য শরীর গঠনমূলক খেলাধুলায় অংশগ্রহণ করতে হবে।
৮. দুর্বৃত্তের আক্রমণ থেকে আত্মরক্ষার কলাকৌশল তথা মার্শাল আর্ট শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করতে হবে।
৯. প্রতিটি শিক্ষার্থীকে পারিবারিক বন্ধনে বড় হওয়ার পদ্ধতি, পুষ্টিজ্ঞান ও প্রাথমিক চিকিৎসাজ্ঞান প্রদান করতে হবে।
১০. জ্ঞান অর্জন ও যোগাযোগের মাধ্যম হিসাবে প্রতিটি শিক্ষার্থীকে ইংরেজি ও বাংলা ভাষার উপর সার্বিক দক্ষতা অর্থাৎ শুদ্ধভাবে বলতে পারা, লিখতে পারা ও শুনে বা পড়ে বুঝতে পারার দক্ষতা নিশ্চিত করতে হবে। আলাদাকরে ইংরেজি ভার্সন, ইংরেজি মিডিয়াম বা বাংলা মিডিয়াম বলে কিছু থাকবে না।
১১. শারীরিক প্রতিবন্ধী ও বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের জন্য তাদের উপযোগী বৈজ্ঞানিক শিক্ষাপদ্ধতিতে শিক্ষা দিতে হবে যেন তারা সমাজের বোঝা না হয়ে মানবসম্পদে পরিণত হতে পারে।
প্রস্তাবনায়: হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম
চেয়ারম্যান, হেযবুত তওহীদ এবং জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ ও সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী সোসাইটি
বাসা ৩, রোড ২০/এ, সেক্টর ১৪, উত্তরা, ঢাকা-১২৩০,
ফোন: ০১৭১১-০০৫০২৫, ০১৬৭০-১৭৪৬৪৩, ০১৭১১-৫৭১৫৮১
ফেসবুক:www.facebook.com/emamht
ওয়েবসাইট :www.hezbuttawheed.org
ইউটিউব:www.youtube.com/@hezbuttawheed