এস.এম মাহফুজুর রহমান:
দৈনিক দেশেরপত্রের উদ্যোগে গতকাল শনিবার মেহেরপুরে ‘এক জাতি এক দেশ ঐক্য বাংলাদেশ’ শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে আয়োজিত উক্ত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মেহেরপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য জনাব মো. ফরহাদ হোসেন দোদুল। প্রধান আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন দৈনিক দেশেরপত্রের উপদেষ্টা মসীহ-উর রহমান। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন দেশেরপত্রের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক রুফায়দাহ পন্নী, জেলা পরিষদ প্রশাসক এ্যাড. মো. মিয়াজান আলী, মেহেরপুর সদর উপজেলা আ’লীগের সভাপতি হাজী গোলাম রসুল ও বাগুয়ান ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ আয়ুব আলী। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন দেশেরপত্রের কুষ্টিয়া অঞ্চলের ব্যুরো প্রধান মো. রানা সিদ্দিক। আলোচনা সভা শুরু হওয়ার আগে দেশেরপত্র নির্মিত ‘ধর্মব্যবসা এবং ধর্ম নিয়ে অপরাজনীতির ইতিবৃত্ত’ শীর্ষক প্রামাণ্যচিত্র বড় পর্দায় প্রদর্শন করা হয়।
প্রদর্শনী শেষে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় প্রধান আলোচকের বক্তব্যে উপদেষ্টা মসীহ উর রহমান বলেন, ‘দৈনিক দেশেরপত্র একজন মহামানবের আদর্শকে ধারণ করে এগিয়ে চলেছে। আর সেই ব্যক্তি হচ্ছেন যামানার এমাম, এমামুয্যামান জনাব মোহাম্মদ বায়াজীদ খান পন্নী, যিনি টাঙ্গাইলের ঐতিহ্যবাহী পন্নী পরিবারের সন্তান। ঐতিহ্যবাহী এই পরিবারের অনেক কৃতি সন্তানই এই দেশের সমাজ ও সভ্যতার বিনির্মাণ ও উন্নয়ন সাধনে ব্যাপক ভূমিকা রেখেছেন। এমামুয্যামান জনাব মোহাম্মদ বায়াজীদ খান পন্নী মানবতার কল্যাণ সাধনে তাঁর সারাটি জীবন ব্যয় করে গেছেন। এই কাজ করতে গিয়ে তিনি তাঁর সারা জীবনের অর্জিত ও উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া প্রায় সব সম্পত্তি ব্যয় করে গেছেন। তিনি মানবতার মুক্তির জন্য শেষ রসুলের মাধ্যমে পাঠানো আল্লাহর শেষ জীবনব্যবস্থা, যার সঠিক রূপ, সঠিক আকীদা আজ হারিয়ে গেছে তা আবার মানুষের সামনে তুলে ধরেছেন। তিনি ব্যক্তিগত জীবনে কখনো কোন মিথ্যার আশ্রয় নেননি, মিথ্যা বলেননি। কোন ধরনের পার্থিব বিনিময় ছাড়া মানবতার কল্যাণে নিজেদেরকে আত্মনিয়োজিত হয়ে কাজ করার শিক্ষা আমাদেরকে দিয়ে গেছেন। তারই দেখানো পথে কাজ করছে দৈনিক দেশেরপত্র। দেশেরপত্রের কাজই হচ্ছে সত্য প্রকাশের মাধ্যমে মানবতার কল্যাণ করা”
তিনি বলেন, ‘আমরা সত্য প্রকাশের এ কাজ করতে গিয়ে দেখলাম এক শ্রেণির ধর্মীয় মোল্লারা আমাদের বিরোধী হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর কারণ হচ্ছে, আমাদের এমামুয্যামান হাদিস-কোর’আনের আলোকে প্রমাণ করে দিয়েছেন ইসলামে ধর্মব্যবসা ও ধর্মের বিনিময় নেওয়া কোনভাবেই বৈধ নয়। ইসলাম কখনো ধর্মের নামে মানুষকে কষ্ট দিয়ে অপ-রাজনীতি, মিছিল, মিটিং ও সন্ত্রাসী কার্যক্রমকে সমর্থন দেয় না। ইসলাম আল্লাহ প্রদত্ত জীবনব্যবস্থা। ইসলাম এসেছে মানুষের কল্যাণের জন্য, মানুষের মুক্তির জন্য। একই সাথে ইসলামের জন্য যারা কাজ করবে তারা তা করবে নিঃস্বার্থভাবে, নিজের জান-মাল দিয়ে, সম্পদ খরচ করে।’ তিনি আরো যোগ করেন, ‘এদেশের সাধারণ মানুষ অত্যন্ত ধর্মভীরু এবং সহজ সরল। তারা ইসলাম সম্পর্কে সঠিক ধারণা রাখেনা। তাই ধর্মীয় ব্যাপারে ধর্মের আলেম, মোল্লাদের কাছে তারা একপ্রকারে জিম্মি হয়ে আছে। তারা যা বলে তাই তারা অন্ধভাবে মেনে নেয়, বিশ্বাস করে। তাদের কাছ থেকে ধর্মকে উদ্ধার করে তাকে সঠিক পথে ও সঠিকভাবে কাজে লাগিয়ে মানবতার মুক্তি ও শান্তি প্রতিষ্ঠাই আমাদের মূল কাজ। ধর্ম ব্যবসায়ীরা আমাদের বিরুদ্ধে যতই অপপ্রচার করুক না কেন, আমরা একাজে সাফল্য লাভ করবোই এনশা’আল্লাহ। কারণ, সত্য সব সময়ই বিজয়ী হয়।’ এছাড়াও তিনি ধর্মব্যবসায়ী ও ধর্ম নিয়ে অপ-রাজনীতিকারীদের ষড়যন্ত্রের কথা তুলে ধরে সাধারণ মানুষকে তাদের থেকে সতর্ক ও সাবধান হওয়ার আহ্বানা জানান।
মেহেরপুর সদর উপজেলা আ’লীগের সভাপতি হাজী গোলাম রসুল বলেন, ‘ধর্মব্যবসায়ীরা দেশের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে পড়ে তাদের অপপ্রচার, অপরাজনীতির উপর ভর করে শক্তি অর্জন করে চলেছে। দৈনিক দেশেরপত্র তাদের মুখোশ উন্মোচন ও জঙ্গিবাদ নিরসনে যে কাজ করে যাচ্ছে তার জন্য দেশেরপত্রকে ধন্যবাদ জানাই।’ তিনি বলেন, ‘অপপ্রচারকারীরা অত্যন্ত কৌশলের সাথে কাজ করে। যখনি কোন বাড়িতে পুরুষ মানুষ থাকে না তখনি তারা নারীদের কাছে গিয়ে মিথ্যা বোঝায়। তাদের ঐ সব কাজের বিরুদ্ধে আমাদেরকে সজাগ ও সচেতন থাকতে হবে।’
মুজিবনগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রবিউল ইসলাম মোল্লা বলেন, ‘দৈনিক দেশেরপত্র যে সত্যটি প্রচার করছে তা আমাদের জন্য, আমাদের দেশের জন্য, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের জন্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।’ তিনি বলেন, ‘আজকে আমাদের বিরুদ্ধে ধর্মব্যবসায়ীরা মিথ্যা ও অপপ্রচার চালাচ্ছে। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের একান্ত উচিত এই অপশক্তিগুলোকে রুখে দাঁড়ানো।’
দেশেরপত্রের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক রুফায়দাহ পন্নী বলেন, ‘দৈনিক দেশেরপত্র মানবতার কল্যাণে সত্যের প্রকাশ করে যাচ্ছে। আর সত্য হচ্ছে তাই যা আল্লাহর কর্তৃক নির্ধারিত। আল্লাহর দেওয়া সেই সত্যকেই তুলে ধরেছেন যামানার এমাম, এমামুয্যামান জনাব মোহাম্মদ বায়াজীদ খান পন্নী।’ তিনি বলেন, ‘দেশেরপত্র যামানার এমাম জনাব মোহাম্মদ বায়াজীদ খান পন্নীর আদর্শে উজ্জীবিত। হারিয়ে যাওয়া আল্লাহ-রসুলের সেই প্রকৃত এসলামের স্বরূপ তুলে ধরতে গিয়ে তিনি ও তাঁর প্রতিষ্ঠিত আন্দোলন সবচেয়ে বিরোধিতার সম্মুখীন হয়েছে ধর্মব্যবসায়ী এবং অবৈধ ফতোয়াবাজদের দ্বারা। সাধারণ মানুষের ধর্মীয় দুর্বলতা ও সরলতার সুযোগে তাদের ইহকাল এবং পরকাল ঐসব মোল্লাশ্রেণির বন্দক পড়ে গেছে। সেই সুযোগে তারা অবৈধ স্বার্থ উদ্ধার ও নিজেদের জীবন-জীবিকা হাসিল করে নিচ্ছে। একই সাথে এই ধর্মব্যবসায়ী শ্রেণিটি রাজনীতির ক্ষেত্রে বিভিন্ন মিথ্যাচার ও ফতোয়ার মাধ্যমে মানুষকে বিভ্রান্ত বিভক্ত করে ফেলেছে। যার কারণে আজ জাতীয় ঐক্য খণ্ড-বিখণ্ড হয়ে গেছে। দেশেরপত্র সত্য প্রকাশের মাধ্যমে মানুষকে তাদের হাত থেকে উদ্ধার করার দায়িত্ব্ নিজ কাঁধে তুলে নিয়েছে।’ তিনি আরো বলেন, ‘দেশে স্থায়ীভাবে একটি শান্তিপূর্ণ পরিবেশ প্রতিষ্ঠার জন্য ধর্মব্যবসায়ীদের এ প্রতারণা, প্রচারণা ও ফতোয়াবাজী বন্ধ করতেই হবে।’
অনুষ্ঠানের আমন্ত্রিত প্রধান অতিথি সংসদ সদস্য মো. ফরহাদ হোসেন দোদুল বলেন, ‘আমরা আজ ঐক্যহীন অবস্থায় আছি, নিজেরা নিজেরা বিভিন্ন দলে- উপদলে বিভক্ত হয়ে ঐক্যহীন জাতি হিসেবে বিশ্বের বুকে পরিচিত লাভ করেছি। আমি আজ নির্দ্ধধায় তা স্বীকার করি। ধর্মব্যবসায়ীরা ধর্মের নামে ব্যবসা করছে। ইসলামের কথা বলে বহিঃরাষ্ট্র থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে এসে লুটেপুটে খাচ্ছে। সেই সাথে তাদের মদদে সৃষ্টি হচ্ছে সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদ। এদেশের মানুষ ধর্মের প্রতি অত্যন্ত দুর্বল। সেই দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে ধর্মব্যবসায়ীরা ধর্মপ্রাণ মানুষের সাথে প্রতারণা করে যাচ্ছে। পৃথিবীতে এ পর্যন্ত যত মানুষ ধ্বংস হয়েছে তার প্রধান কারণ হচ্ছে ধর্মব্যবসায়ীদের বাড়াবাড়ীর ফল। দৈনিক দেশেরপত্রের ভিডিও চিত্র দেখে আমরা বুঝতে পেরেছি যে, আজ ধর্মের নামে সন্ত্রাস করা হচ্ছে। একই সাথে দেশেপরপত্র তার সমাধানও তুলে ধরেছে। দেশ ও জাতি আজ ধর্মব্যবসায়ীদের হাত থেকে কিভাবে রক্ষা পেতে পারে তা সারা দেশে প্রচার করে যাচ্ছে দৈনিক দেশেরপত্র। আমরা বিশ্বাস করি, আমরা এই ধর্মব্যবসায়ীদের প্রতিহত করতে পারবোই। এ জন্য আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে। তাদের বিরুদ্ধে আমরা সবাই ঐক্যবদবদ্ধ হয়ে কাজ করবো- এটাই হোক আমাদের লক্ষ্য।’
এছাড়াও অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মেহেরপুর সদর উপজেলা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. আব্দুর রব বিশ্বাস, ধানখোলা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মো. গোলাম ছরোয়ার, দৈনিক দেশেরপত্রের সাব এডিটর মাহবুব আলী, সার্কুলেশন ম্যানেজার আব্দুর রাজ্জাকসহ আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দ।