শাহাদৎ হোসেন:
ফিলিস্তিনে ইসরায়েলী আগ্রাসনের প্রতিবাদে যখন উত্তাল রাজধানী ঢাকা, লাখো জনতার মুহূর্মুহু স্লোগানে যখন মুখরিত রাজপথ, তখন একই সময়ে রাজধানীর উত্তরায় একই ইস্যুতে একটি সমাবেশের আয়োজন করে ঢাকা মহানগর হেযবুত তওহীদ। সমাবেশে সংগঠনের কয়েক হাজার নেতাকর্মীর উপস্থিতিতে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন হেযবুত তওহীদের সর্বোচ্চ নেতা এমাম হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি ফিলিস্তিনে চলমান বর্বরতার তিব্র প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যক্ষ মদদে আজকে ইসরায়েল ফিলিস্তিনের ভূখণ্ডে বর্বরতম হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে যাচ্ছে। এই বর্বরতা দেখেও বিশ্ব সম্প্রদায় আজকে নিরব। জাতিসংঘসহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো ইসরায়েল ও তাদের মিত্রদের দানবীয় শক্তির সামনে আত্মসমর্পণ করেছে, দর্শকের ভূমিকা পালন করছে। তাদের এই নীরবতা ভূমিকার তিব্র নিন্দা জানান হেযবুত তওহীদের এমাম।
হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম আরো বলেন, ফিলিস্তিন সহ গোটা বিশ্বে মুসলিমদের এই চরম ক্রান্তিলগ্নে কেবল বিক্ষোভ মিছিল করে এই সংকট থেকে বের হওয়া যাবে না। এই সংকটের উত্তরণে প্রয়োজন তওহীদের উপর ভিত্তি করে মুসলিম জাতির ইস্পাতকঠিন ঐক্য। যতদিন মুসলিমরা আল্লাহর দেয়া বিধানের উপর ভিত্তি করে একজন নেতার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ হতে না পারছে, ততদিন তারা সারা পৃথিবীতে নির্যাতনের শিকার হতেই থাকবে, এমনটাই মন্তব্য করেন হেযবুত তওহীদের এই সর্বোচ্চ নেতা।
তিনি বলেন, ইতিহাস সাক্ষী, রাসুলুল্লাহ (স.) যখন তাওহীদের উপর জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করেছিলেন তখন কেউ তাদেরকে পরাজিত করতে পারে নি। তখন জাতি ছিল মুমেন, তাদের নেতা ছিলেন একজন। জাতির সামনে লক্ষ্য-উদ্দেশ্য ছিল এক ও অভিন্ন – আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম করা। ফলে তৎকালীন দুটি সুপার পাওয়ার, পারস্য ও রোম সাম্রাজ্য মুসলিমদের কাছে সামরিকভাবে পরাজিত হয় এবং সেখানে ইসলামের শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়। পরবর্তীতে দুর্ভাগ্যজনকভাবে মুসলিমরা আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠার এই সংগ্রাম ত্যাগ করে। দ্বীন প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম অর্থাৎ জেহাদকে আল্লাহ ফরজ করে দিযেছেন, সেই জেহাদের নামে মিথ্যা হাদিস চালু করে তারা ‘নফসের বিরুদ্ধে জেহাদ’ শুরু করে। তরবারি ছেড়ে তারা তসবিহ টিপতে শুরু করে। আর তখন থেকেই জাতি পরাজিত হতে থাকে এবং দুনিয়ার বিভিন্ন প্রান্তে মার খেতে শুরু করে। আজকের ফিলিস্তিন বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা নয়, বরং তারই ধারাবাহিকতা। সুতরাং সেই সোনালী অতীতের গৌরবময় অবস্থানে ফিরে যেতে হলে জাতিকে আবারো আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের উদ্দেশ্যে ইস্পাতের মতো ঐক্যবদ্ধ হতে হবে, বলেন এমাম হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম।
হেযবুত তওহীদর এমাম আরো বলেন, আল্লাহ কোরআনে বলেছেন আল্লাহ ছাড়া আর কারো বিধান না মানতে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে গত কয়েক শতাব্দী ধরে মুসলিম জাতি আল্লাহর হুকুম বাদ দিয়ে ইহুদী-খ্রিস্টানদের হুকুম দিয়ে তাদের রাষ্ট্রীয় ও সামষ্টিক জীবন পরিচালিত করছে। এর ফলে আল্লাহর সাহায্য থেকে তারা বঞ্চিত হচ্ছে। তিনি বলেন, গত কয়েকশ বছর ধরে মুসলিম জাতির উপর যে নিপীড়ন ও বর্বরতা চলছে, আল্লাহর সাহায্য ছাড়া মুসলিমরা এই নিপীড়ন থেকে মুক্ত হতে পারবে না। আর আল্লাহর সাহায্য তখনই আসবে যখন মুসলিমরা ঐক্যবদ্ধভাবে আল্লাহর দেয়া বিধান তাদের জাতীয় জীবনে প্রতিষ্ঠা করবে। আল্লাহর বিধান প্রত্যাখ্যান করে মুসলিমরা আল্লাহর সাহায্য প্রত্যাশা করতে পারে না- এমনটাই অভিমত ব্যক্ত করেন হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম।
হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম বলেন, বর্তমানে মুসলিম বিশ্ব ভৌগোলিকভাবে পঞ্চাশটির বেশি রাষ্ট্রে বিভক্ত। প্রায় প্রতিটি রাষ্ট্রই একে অপরকে শত্রু মনে করে। তাছাড়া প্রতিটি রাষ্ট্রের মধ্যেই রয়েছে অভ্যন্তরীণ দলাদলি, কোন্দল ও হানাহানি। এই অবস্থায় যতই বিক্ষোভ মিছিল করা হোক, প্রতিবাদ সমাবেশ করা হোক, ফিলিস্তিন বা অন্য কোনো ভূখণ্ডে মুসলিমরা তাদের অধিকার ফিরে পাবে না। তিনি মুসলিম নেতৃবৃন্দকে এই বাস্তবতা উপলব্ধি করে নিজেদের মধ্যকার হানাহানি বন্ধ করে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান।
সমাবেশে হেযবুত তওহীদের এমাম নিপীড়িত গাজাবাসীর প্রতি সংহতি প্রকাশ করেন এবং কাশ্মীর, মিয়ানমার, বসনিয়া-চেচনিয়া, ইরাক, সিরিয়া সহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে মুসলিমদের উপরি নির্যাতনের প্রতিবাদ জানান। এ সময় উপস্থিত হাজার হাজার নেতাকর্মী মুহুর্মুহু স্লোগানের মুখরিত হয়ে উঠে সমাবেশস্থল। ঢাকা মহানগর হেযবুত তওহীদের সভাপতি ডাক্তার মাহবুব আলম মাহফুজের সভাপতিত্বে সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় নারী বিষয়ক সম্পাদক রুফায়দাহ পন্নী। উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় কমিটি ও ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ।