কথাগুলো নির্দ্বিধায় সকলেই স্বীকার করবেন যে- চির সত্য ও চির পবিত্র আল্লাহর সারা দুনিয়ার স্রষ্টা ও মালিক। তিনি এক ও অদ্বিতীয়। তিনি ছাড়া আর কোন এলাহ (সার্বভৌম, হুকুমদাতা) নেই। তিনি চিরজীবী এবং সুপ্রতিষ্ঠিত। দুনিয়া ও আসমানে যা কিছু রয়েছে সবই তার। তিনি কারও মুখাপেক্ষী নন। তিনি অতুলনীয় ঐশ্বর্যশালী এবং অভাবহীন। তিনি সমগ্র সৃষ্টির পালনকর্তা এবং সকল প্রাণীর রেযেকদাতা। তিনি সকল প্রাণীর সৃষ্টিকর্তা।তার মধ্যে আল্লাহর মানুষকে বুদ্ধির নেয়ামত দিয়েছেন যাতে মানুষ চিন্তা-ভাবনা করতে পারে। এবং আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব, একত্বের মাঝে কাউকে শরীক না করে। তারা যেন ন্যায়-অন্যায়, সত্য-মিথ্যার পার্থক্য করতে পারে।যেহেতু আল্লাহর সকল সৃষ্টি জগতের মালিক, পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন, মানুষ অর্থাৎ তার খলিফা সৃষ্টি করেছেন। সৃষ্টির সেরা মানুষকে পৃথিবীতে পাঠালেন আল্লাহর প্রতিনিধিত্ব করার জন্য। সাধারণ জ্ঞানেই বোঝা যায়, যে যার প্রতিনিধি সে তার হুকুম অনুযায়ী কাজ করবে।
যেমন ধরুন আপনার ফ্যাক্টরি অথবা কারখানাতে কাজ করার জন্য কিছু লোক নিয়োগ দিলেন। তাদেরকে যার যার কাজ বুঝিয়ে দিলেন। তারপর দেখলেন তারা আপনার হুকুম অনুযায়ী কাজ না করে নিজেদের ইচ্ছেমতো কাজ করছে। আপনি যেভাবে বলছেন সেভাবে কাজ করছে না। তখন আপনি কী করবেন? চাকরিতে রাখবেন নাকি বিদায় করে দিবেন? নাকি তাদের মেধা, সৌন্দর্য এসব দেখে সন্তুষ্ট থাকবেন এবং বসিয়ে বসিয়ে বেতন দেবেন? অবশ্যই নয়, আপনি রাগান্বিত হবেন, বকাবকি করবেন, শান্তি দেবেন প্রয়োজনে চাকরি থেকে বরখাস্ত করবেন।তেমনি আল্লাহর মানুষকে তাঁর খলিফা অর্থাৎ প্রতিনিধি হিসেবে পৃথিবীতে পাঠালেন জীবনের প্রতিটি অঙ্গনে আল্লাহর হুকুম-বিধান দিয়ে নিজেদের পরিচালনা করার জন্য এবং পৃথিবীতে অন্যান্য মানব রচিত বিধানের উপর আল্লাহর বিধান প্রতিষ্ঠা করতে। মানুষ যেন সুখে শান্তিতে বসবাস করতে পারে।যেহেতু ইবলিস মানুষকে প্ররোচিত করে আল্লাহর হুকুমকে অস্বীকার করানোর জন্য ওৎ পেতে থাকবে তাই যুগে যুগে আলস্নাহ তার প্রিয় বান্দাদের জন্য পথপ্রদর্শক নবী-রাসুল পাঠাতেন, মানব জাতিকে সঠিক পথ দেখানোর জন্য।
নবী-রসুলগণ অনেক নির্যাতন সহ্য করে, ত্যাগ স্বীকার ও সংগ্রাম করে আল্লাহর হুকুম প্রতিষ্ঠা করতেন। সমাজে ফিরে আসত অনাবিল সুখ আর শান্তি।আজ আমরা যদি আল্লাহর দেয়া বুদ্ধির নেয়ামত দিয়ে চিšত্মা করি,তারপরে মানব জাতির দিকে তাকাই তাহলে কি দেখতে পাই? অন্যায়-অশান্তি, যুলুম-নির্যাতন, অমানবিক নিষ্ঠুরতায় পৃথিবীর অবস্থা হয়ে আছে মানুষ বাসের অযোগ্য। এর কারণ হিসেবে যে যাই ব্যাখ্যা উপস্থাপন করুক, মূল কারণের সীমানায় কেউ এখনো পৌঁছুতে পারেনি।তার একটাই কারণ -মহান রাব্বুল আলামীন আমাদের যে দায়িত্ব দিয়ে পৃথিবীতে পাঠালেন, তার হুকুম বিধান দিয়ে পৃথিবীতে ন্যায়- সুবিচার এক কথায় শান্তি প্রতিষ্ঠা করার জন্য। তার বদলে আমরা কি করছি? ব্যাক্তিগত কিছু আমল করেই ভাবছি জান্নাত আমার জন্য নিশ্চিত। ইসলামের স্বর্ণযুগ কী বলে?আল্লাহর রসুল মোহাম্মদ (সা,) শত কষ্ট, নিপীড়ন সহ্য করে অক্লান্ত পরিশ্রম করে তওহীদের উপর জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে আল্লাহর হুকুম বিধান প্রতিষ্ঠা করে দিয়ে গেলেন। উম্মতে মোহাম্মদী জাতিটিকে বলে গেলেন, তোমরা কখনো ঐক্য নষ্ট করো না। মুসলিম জাতি সে কথা ভুলে গিয়ে হাজারো মতবাদে হাজারো দলে বিভক্ত হয়েছে।
আজ মুসলিম দাবিদার সে জাতি তওহীদ থেকে দূরে সরে গেছে। আলস্নাহর হুকুম বিধানকে প্রত্যাখান করে মানব রচিত ইহূদি খ্রিষ্টানদের তৈরি জীবনবিধান গ্রহণ করে নিয়েছে। ফলে মুসলমান জাতি আজ অন্য জাতির গোলাম হয়ে অপমান আর লাঞ্ছনার জীবন অতিবাহিত করছে। আর ইবলিসের প্ররোচনায় প্রায় প্রতিটি মানুষ হয়েছে অহঙ্কারী, স্বার্থপর আত্মকেন্দ্রীক। অন্যায়ের কালো অন্ধকারে সমাজ ডুবে গেছে। চারদিকে যুদ্ধের দামামা বাজছে। কিন্তু মানুষের হুঁশ ফিরছে না।আমাদেরকে আর ঘোরের মধ্যে পড়ে থাকলে চলবে না। নতুন করে ভাবতে হবে। মানবরচিত বিধান প্রত্যাখ্যান করতে হবে। এখন মুসলিমদের এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে আবারও সেই তওহীদের উপর ঐক্যবদ্ধ হতে হবে, আলস্নাহর হুকুম সমাজে প্রতিষ্ঠা করতে হবে। তাহলেই আল্লাহর লানত থেকে এই জাতি মুক্তি পাবে।