হেযবুত তওহীদ

মানবতার কল্যাণে নিবেদিত

মানবতার মুক্তির জন্য পৃথিবীর বুকে আবার এসেছে- তওহীদের বালাগ

Tawheeder-balag1

আল্লাহ আদম (আ:) থেকে শুরু করে শেষ নবী মোহাম্মদ (দ:) পর্যন্ত যত নবী ও রসুল পৃথিবীর বিভিন্ন মানব সম্প্রদায়ের প্রতি প্রেরণ করেছেন তাদের প্রত্যেকের প্রতি একটি অভিন্ন দায়িত্ব অর্পণ করেছেন, তা হোল বালাগ। নবী ও রসুলগণ প্রত্যেকে তাঁদের স্ব স্ব সম্প্রদায়কে বলেছেন, “আমাদের দায়িত্ব তো কেবলমাত্র সুস্পষ্টভাবে সংবাদ পৌঁছে দেয়া” (সূরা ইয়াসীন ১৭)। এখানে আল্লাহ শব্দ ব্যবহার করেছেন “বালাগুল মুবীন” যার অর্থ সুস্পষ্টভাবে পৌঁছানো। সুতরাং আল্লাহর পক্ষ থেকে কোন কিছুর সংবাদ পরিষ্কারভাবে পৌঁছে দেওয়াই ছিল নবী-রসুলদের একমাত্র কাজ, কে সেটা গ্রহণ করবে আর কে প্রত্যাখ্যান করবে সেটা তাদের বিবেচ্য বিষয় নয়, সেটা আল্লাহর এখতিয়ারভুক্ত।

ইসলামের বালাগ কাদের প্রতি:
মক্কার ১৩ বছরের জীবনে রসুলাল্লাহ ও তাঁর সঙ্গীরা কাফের মোশরেকদেরকে সালাহ, সওম ইত্যাদি কোন আমলের দিকে আহ্বান করেন নি, তাঁরা আহ্বান করেছেন কেবলমাত্র কলেমার দিকে, তওহীদের দিকে। অনেকে মনে করেন মক্কার সেই কাফেরদের আল্লাহর প্রতি এবং আল্লাহর একত্বের প্রতি ঈমান ছিল না। এ ধারণাটি সঠিক নয়। সেই মোশরেকরাও আল্লাহর একত্বে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস কোরত, কিন্তু তারা আল্লাহর হুকুম, বিধান মানত না অর্থাৎ তারা আল্লাহর আনুগত্য কোরত না। তখনকার আরবরা বিশ্বাস কোরত যে তারা আল্লাহর নবী এব্রাহীমের (আঃ) উম্মাহ। তারা আল্লাহকে সৃষ্টিকর্তা বলে, পালনকারী বলে বিশ্বাস কোরত, নামাজ পড়ত, কাবা শরীফকে আল্লাহর ঘর বলে বিশ্বাস কোরত, ঐ কাবাকে কেন্দ্র করে বাৎসরিক হজ্ব কোরত, কোরবানি কোরত, রোজা রাখত, আল্লাহর নামে কসম কোরত, এমনকি খাত্নাও কোরত। শুধু তাই নয়, প্রয়োজনীয় দলিল, বিয়ে শাদীর কাবিন ইত্যাদি সমস্ত কিছু লেখার আগে আমরা যেমন ‘বিসমিল্লাহ’ লেখি তেমনি তারাও আল্লাহর নাম লিখত। আরবের মোশরেকরা যে আমাদের মতোই আল্লাহয় বিশ্বাসী ছিলো এ কথার সাক্ষ্য দিচ্ছেন স্বয়ং আল্লাহ। কোর’আনে তিনি তাঁর রসুলকে বলছেন- তুমি যদি তাদের জিজ্ঞাসা করো, আসমান ও যমীন কে সৃষ্টি করেছেন? তবে তারা অবশ্যই জবাব দেবে- সেই সর্বশক্তিমান, মহাজ্ঞানী (আল্লাহ) (সুরা যুখরুফ- ৯)। অন্যত্র বলেছেন- তুমি যদি তাদের প্রশ্ন করো আসমান ও যমীন কে সৃষ্টি করেছেন এবং কে সূর্য ও চন্দ্রকে তাদের (কর্তব্য কাজে) নিয়োজিত ও নিয়ন্ত্রণ করছেন, তবে তারা নিশ্চয়ই জবাব দেবে- আল্লাহ (সুরা আনকাবুত- ৬১)।
এমন আরও অনেকগুলি আয়াত এবং ইতিহাস থেকে দেখা যায় সেই মোশরেকদের আল্লাহর অস্তিত্ব ও একত্বের ওপর ঈমান ছিলো। তারা মূর্তিপূজা কোরত ঠিকই কিন্তু ওগুলোকে তারা স্রষ্টা বলে মানত না। তারা বিশ্বাস কোরত যে ঐ দেব-দেবীকে মানবে, ওগুলোর পূজা করবে তাদের জন্য ঐ দেব-দেবীরা আল্লাহর কাছেই সুপারিশ করবে (সুরা ইউনুস- ১৮, সুরা যুমার ৩)। এত ঈমান সত্ত্বেও তারা কাফের ছিল কারণ তারা তাদের ব্যক্তিগত, সামাজিক ও সামষ্টিক জীবন নিজেদের মনগড়া নিয়ম-কানুন দিয়ে পরিচালনা কোরত। যেহেতু তারা আল্লাহর প্রদত্ত হুকুম মানত না, তাই তাদের ঐ ঈমান ছিল অর্থহীন, নিষ্ফল এবং স্বভাবতই আল্লাহর হুকুম না মানার পরিণতিতে তাদের সমাজ অন্যায়, অত্যাচার, অবিচার, নিরাপত্তাহীনতা, সংঘর্ষ ও রক্তপাতে পরিপূর্ণ ছিল। ঠিক আজকেও আল্লাহর প্রতি আমাদের পূর্ণ বিশ্বাস থাকলেও আল্লাহর হুকুম, আইন, বিধান অমান্য করার ফলে আমাদের সমসাময়িক পৃথিবীও চরম অন্যায় ও অশান্তিতে পরিপূর্ণ হয়ে আছে।
একইভাবে বর্তমানে ‘মোসলেম’ বোলে পরিচিত জনসংখ্যাটি তদানীন্তন আরবের মানুষের মতোই আল্লাহকে মনে প্রাণে বিশ্বাস করে, তাকে স্রষ্টা বোলে, জীবন-মরণের প্রভু বোলে মানে, কিন্তু আরবের ঐ মোশরেকদের মতোই তাঁর দেয়া দীন, জীবন-বিধান মোতাবেক সমষ্টিগত, জাতীয় জীবন পরিচালনা করে না। আরবের মোশরেকরা দেব-দেবীর পুরোহিতদের দেয়া বিধান অনুযায়ী তাদের জাতীয় জীবন পরিচালনা কোরতো, বর্তমানের মোসলেম দুনিয়া নতুন দেব-দেবী গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, ধর্ম-নিরপেক্ষতা, রাজতন্ত্র, একনায়কতন্ত্রের পুরোহিত ইহুদি-খ্রিস্টানদের তৈরি করা জীবন-বিধান অনুযায়ী তাদের জাতীয় জীবন পরিচালনা কোরছে। তফাৎ শুধু এইটুকু যে আরবদের হাবল, লা’ত, মানাতের মূর্তিগুলি ছিল কাঠ এবং পাথর দিয়ে তৈরি, বর্তমানের মূর্তিগুলি কাঠ পাথরের নয়, তন্ত্রের মূর্তি। বরং এই তন্ত্রের মূর্তিগুলোর পুজা ঐ কাঠ পাথরের মূর্তিপূজার চেয়েও বড় র্শেক ও কুফর। তাহোলে বিশ্বনবী যাদের মধ্যে আবির্ভুত হোয়েছিলেন আরবের সেই আল্লাহয় বিশ্বাসী অথচ মোশরেক কাফেরদের সঙ্গে বর্তমানের আল্লাহয় বিশ্বাসী কিন্তু কার্যত মোশরেক ‘মোসলেম’ জনসংখ্যার তফাৎ কোথায়? এজন্যই আল্লাহর রসুল মক্কার ঐ আল্লাহ-বিশ্বাসী কাফের মোশরেকদেরকে আল্লাহর সার্বভৌমত্ব অর্থাৎ তওহীদের বালাগ দিয়েছিলেন, আর একই কারণে মাননীয় এমামুযযামান মানবজাতিকে তওহীদ মেনে নেওয়ার আহ্বান কোরেছেন।
তওহীদের বালাগ চিরন্তন:
আল্লাহ শেষ রসুলকে (দ:) বলছেন, ‘আপনার পূর্বে আমি যে রসুলই প্রেরণ করেছি, তাকে এ আদেশই প্রেরণ করেছি যে, আমি ব্যতীত অন্য কোন এলাহ (সার্বভৌমত্বের মালিক বা হুকুমদাতা) নেই (সুরা আম্বিয়া ২৫)। অর্থাৎ সকল নবী ও রসুলগণের বালাগ ছিল ‘লা- এলাহা এল্লাল্লাহ’র প্রতি অর্থাৎ তওহীদের প্রতি। আল্লাহ ছাড়া জগতের সকল বিধানদাতা, হুকুমদাতা, সার্বভৌম অস্তিত্বকে অস্বীকার করাই হচ্ছে তওহীদ, এটাই এই দীনের ভিত্তি। সংক্ষেপে এর মর্মার্থ হচ্ছে আমি জীবনের প্রতিটি বিষয়ে যেখানেই আল্লাহ ও তাঁর রসুলের কোন বক্তব্য আছে সেটা ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, আইন-কানুন, দণ্ডবিধি যে বিভাগেই হোক না কেন, সেই ব্যাপারে আমি আর কারও নির্দেশ মানি না। যে বিষয়ে আল্লাহ অথবা তাঁর রসুলের কোন বক্তব্য নেই সে বিষয়ে আমরা স্বাধীনভাবে যে কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারি। বর্তমান দুনিয়ার কোথাও এই তওহীদ নেই, সর্বত্র আল্লাহকে কেবল উপাস্য বা মা’বুদ হিসাবে মানা হচ্ছে, কিন্তু এলাহ বা সার্বভৌমত্বের আসনে আল্লাহ নেই। মানুষ নিজেই এখন নিজের জীবনব্যবস্থা তৈরি করে সেই মোতাবেক জীবন চালাচ্ছে, মানুষ নিজেই এখন এলাহ অর্থাৎ বিধাতার আসনে আসীন। আজ মানুষের তৈরি জীবন-ব্যবস্থাগুলিকেই (দীন) মানবজীবনের সকল সমস্যার যুগোপযোগী সমাধান হিসাবে মনে করা হচ্ছে যদিও সেগুলির সবই মানুষকে শান্তি দিতে চরমভাবে ব্যর্থ। বর্তমান দুনিয়ার সীমাহীন মারামারি, কাটাকাটি, রক্তপাত, অনাচারই এই ব্যবস্থাগুলির ব্যর্থতার যথেষ্ট প্রমাণ।
বালাগের বিনিময় নেওয়া চলবে না:
মানুষকে আল্লাহর তওহীদের দিকে আহ্বান করার জন্য কোনরূপ বিনিময় গ্রহণ করা সম্পূর্ণ নিষেধ। আল্লাহ তাঁর রসুলকে নির্দেশ দেন, তুমি তাদের নিকট কোন মজুরি দাবি করো না (সুরা ইউসুফ-১০৪)। মানুষকে তওহীদের দিকে আহ্বান কোরে প্রত্যেক নবীই বলতেন, আমি তোমাদের কাছে কোন মজুরি চাই না, আমার বিনিময় তো আল্লাহর কাছে (সুরা শুয়ারা-১৮০)। আল্লাহর নবী রসুলগণ যখনই তাঁদের গোত্রের লোকদেরকে হেদায়াতের দিকে আহ্বান কোরেছেন, তখন তাদের প্রত্যেকেই সেই সমাজের ধর্মীয় পুরোহিত, ধর্মব্যবসায়ী আলেম শ্রেণির প্রবল বিরোধিতার সম্মুখীন হোয়েছেন। এর কারণ ধর্মই ছিল তাদের রুটি-রুজির একমাত্র বাহন। নবী রসুলরা তাদের এই ধর্মব্যবসাকে নিষিদ্ধ বোলে ঘোষণা কোরেছেন, যার ফলে তারা রুজি রোজগার বন্ধের আশঙ্কায় শঙ্কিত হোয়ে নবীরসুলদের বিরুদ্ধে প্রবল প্রতিরোধ গড়ে তুলেছেন এবং সাধারণ মানুষকে তাদের বিরুদ্ধে প্ররোচিত কোরেছেন।
ধর্মকে রুজি রোজগারের মাধ্যম বানানোর ফলে সেটার মধ্যে বিকৃতি প্রবেশ করে এবং ব্যবসায়ীদের মধ্যে যেমন সিন্ডিকেট তৈরি হয় তেমনি ধর্মব্যবসায়ীদের মধ্যেও এক প্রকার সিন্ডিকেট তৈরি হয়। তারা তাদের বাণিজ্যিক স্বার্থ হাসিলের জন্য সত্য গোপন করে। ফলে ধর্ম মানুষের কল্যাণের জন্য না হোয়ে নিপীড়নের যন্ত্রে পরিণত হয়। এক পর্যায়ে মানুষ ধর্মকে ঘৃণা কোরতে শুরু করে এবং এর নাগপাশ থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করে। মানব ইতিহাসে এই ঘটনা সর্বদেশে সর্বযুগে বার বার ঘোটেছে। মধ্যযুগে ইউরোপের রেনেসাঁর পেছনে কারণ ছিল মূলতঃ এটাই।
হেযবুত তওহীদের ক্ষেত্রেও ঠিক একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘোটেছে। আল্লাহ যখন এমামুযযামানকে বুঝিয়ে দিলেন যে, বর্তমানের প্রচলিত ইসলামটি একটি তওহীদহীন বিকৃত বিপরীতমুখী ইসলাম এবং ব্রিটিশরা তাদের শাসনামলে এই বিকৃত ইসলামটিকেই প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিয়ে ১৪৬ বছর ধোরে শিক্ষা দিয়ে এদেশের মানুষের মনে মগজে গেঁড়ে দিয়ে গেছে, তিনি এই কথা বই লিখে ও আলোচনার মাধ্যমে প্রকাশ কোরতে শুরু কোরলেন। এই মহাসত্য প্রকাশ কোরে দেওয়ায় বিকৃত ইসলামের ধ্বজাধারী আলেম মোল্লারা এমামুযযামান ও হেযবুত তওহীদের বিরোধিতা আরম্ভ করে। তারা এমামুযযামানের বক্তব্যের অপব্যাখ্যা কোরে মসজিদে মসজিদে, ওয়াজ মাহফিলে, খোতবায় অপপ্রচার চালিয়ে মানুষকে সত্য থেকে দূরে সোরিয়ে রাখে। ভিন্ন একটি দৃষ্টিকোণ থেকে এ দেশের গণমাধ্যমগুলিও হেযবুত তওহীদের বিরুদ্ধে নানারূপ অপপ্রচারে লিপ্ত হয়। এই উভয়পক্ষের নিরবচ্ছিন্ন অপপ্রচারের ফলে সাধারণ মানুষ হেযবুত তওহীদের বক্তব্য সঠিকরূপে জানতে পারে না। এজন্য অধিকাংশ মানুষই এতদিন হেযবুত তওহীদ সম্পর্কে একটি ভুলের মধ্যে ছিল। এই ভুল বোঝানোর কারণে হেযবুত তওহীদের মোজাহেদ-মোজাহেদাদের বালাগের সময় তাদের উপর কঠিন সামাজিক ও প্রশাসনিক নির্যাতন নিপীড়ন নেমে আসে। এভাবে ১৭ বছর হেযবুত তওহীদ অবর্ণনীয় নির্যাতন সহ্য কোরেও তাদের উদ্দেশ্য থেকে বিচ্যুত হয় নি, তারা বিভিন্নভাবে তাদের তওহীদের এই বালাগ চালিয়ে গেছে। সূর্য যখন উদিত হয় কোনকিছু দিয়েই তার আলোকে আড়াল কোরে রাখা যায় না, তেমনি আল্লাহর প্রকৃত ইসলাম, সত্যদীন যখন আবার আল্লাহ এমামুযযামানের মাধ্যমে পৃথিবীতে দান কোরেছেন, তাকেও ঢেকে রাখা যাবে না, এর আলো উদ্ভাসিত হবেই হবে। সত্যসন্ধানী মানুষেরা এখন আল্লাহর দয়ায় একটু একটু কোরে বুঝতে পারছেন যে হেযবুত তওহীদের এই বালাগ আল্লাহর রসুলের সেই সত্যদীনের বালাগ যা মানবজাতিকে অন্যায় অশান্তি থেকে মুক্ত কোরে শান্তির জীবন উপহার দেবে।
আসুন কলেমার বাণীকে কেবল যিকিরের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে আল্লাহকে একমাত্র এলাহ হিসাবে মেনে নিই এবং মানবজাতির মধ্য থেকে সর্বপ্রকার অন্যায় অশান্তি অবিচার লুপ্ত করে পৃথিবীকে একটি শান্তিময় জান্নাতের বাগানে পরিণত করি।

লেখাটি শেয়ার করুন আপনার প্রিয়জনের সাথে

Email
Facebook
Twitter
Skype
WhatsApp
সার্চ করুন

যুক্ত হোন আমাদের ফেসবুক পেজের সাথে...