হেযবুত তওহীদ

মানবতার কল্যাণে নিবেদিত

মানবজাতি এখন দাজ্জালের পদতলে

মোসলেম উদ্দিন:
১০ জানুয়ারি গাজা স্ট্রিপের রাফায় ইসরায়েলি বোমাবর্ষণে নিহত পরিবারের সদস্যদের মরদেহের পাশে দাঁড়িয়ে একটি শিশু। (মোহাম্মদ আবেদ/এএফপি) দাজ্জাল সম্পর্কে নানা ধারণা মুসলিম বিশ্বে চালু আছে। বিশ্বনবী মোহাম্মদ (সা.) বলেছেন, আখেরি যামানায় বিরাট বাহনে চড়ে এক চক্ষুবিশিষ্ট মহাশক্তিধর এক দানব পৃথিবীতে আবির্ভূত হবে; তার নাম দাজ্জাল। সে আল্লাহর বদলে নিজেকে মানবজাতির প্রভু (রব) বলে দাবী করবে। দাজ্জালের সঙ্গে জান্নাত ও জাহান্নামের মতো দুইটি জিনিস থাকবে। সে যেটাকে জান্নাত বলবে সেটা আসলে হবে জাহান্নাম, আর যেটাকে জাহান্নাম বলবে সেটা আসলে হবে জান্নাত। যারা তাকে প্রভু বলে মেনে নেবে তাদেরকে সে তার জান্নাতে স্থান দেবে। তার কাছে রেযেকের বিশাল ভাণ্ডার থাকবে। যারা তাকে রব বলে মেনে নেবে তাদেরকে সে সেখান থেকে দান করবে। আর যারা তাকে রব বলে অস্বীকার করবে, অর্থাৎ তার আদেশমতো চলবে না, তাদের সে তার ভাণ্ডার থেকে দান তো করবেই না বরং তাদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা (Sanction) ও অবরোধ (Embargo) আরোপ করবে। তার পদতলে সমগ্র মুসলিম বিশ্বের করুণ পরিণতি নেমে আসবে (বোখারী, মুসলিম)। মহানবী এই দাজ্জালের আবির্ভাবকে আদম (আ.) থেকে কেয়ামত পর্যন্ত মানবজাতির জন্য সবচেয়ে গুরুতর ও সাংঘাতিক ঘটনা বলে চিহ্নিত করেছেন, শুধু তা-ই নয়, এর মহাবিপদ থেকে তিনি নিজে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চেয়েছেন।

আল্লাহর অশেষ করুণায় হেযবুত তওহীদের প্রতিষ্ঠাতা এমামুয্যামান জনাব মোহাম্মদ বায়াজীদ খান পন্নী সেই দাজ্জালকে চিহ্নিত করেছেন। তিনি প্রমাণ করেছেন, পাশ্চাত্য বস্তুবাদী ইহুদি খ্রিষ্টান যান্ত্রিক সভ্যতাই (ঔঁফবড়-ঈযৎরংঃরধহ গধঃবৎরধষরংঃরপ ঈরারষরুধঃরড়হ) হচ্ছে বিশ্বনবী বর্ণিত সেই দাজ্জাল, যে দানব প্রায় পাঁচশো বছর আগেই জন্ম নিয়ে তার শৈশব, কৈশোর পার হয়ে বর্তমানে যৌবনে উপনীত হয়েছে এবং দোর্দণ্ড প্রতাপে সারা পৃথিবীকে পদদলিত করে চলেছে; আজ মুসলিমসহ সমস্ত মানবজাতি তাকে প্রভু বলে মেনে নিয়ে তার পায়ে সাজদায় পড়ে আছে।

দাজ্জাল শব্দের অর্থ চাকচিক্যময় প্রতারক, যেটা বাইরে থেকে দেখতে খুব সুন্দর কিন্তু ভেতরে কুৎসিত, যেমন মাকাল ফল। পাশ্চাত্য যান্ত্রিক সভ্যতা বাইরে থেকে দেখতে চাকচিক্যময়, এর প্রযুক্তিগত সাফল্য মানুষকে মুগ্ধ করে, চোখ ধাঁধিয়ে দেয়, কিন্তু এর প্রভাবাধীন পৃথিবী অন্যায়, অত্যাচার, অবিচার, যুদ্ধ, ক্ষুধা, রক্তপাত, ক্রন্দন, অশ্রুতে ভরপুর। বিগত শতাব্দীতে এই ‘সভ্যতা’ দুইটি বিশ্বযুদ্ধ ঘটিয়ে চৌদ্দ কোটি আদম সন্তান হতাহত করেছে এবং তারপর থেকে বিভিন্ন যুদ্ধে আরও দুই কোটি মানুষ হত্যা করেছে। আর এ নতুন শতাব্দীতে শুধু এক ইরাকেই হত্যা করেছে দশ লক্ষাধিক মানুষ। তাই এর নাম দাজ্জাল, চাকচিক্যময় প্রতারক। ইহুদি-খ্রিষ্টান ‘সভ্যতা’ প্রকাশ্য ঘোষণা দিয়ে দিয়েছে যে সে আল্লাহর সার্বভৌমত্বকে হটিয়ে দিয়ে সমস্ত পৃথিবীতে নিজের অর্থাৎ মানুষের সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠা করবে। এবং মানবজাতি ইতোমধ্যেই তার সার্বভৌমত্বকে মেনে নিয়েছে। মানবরচিত সমস্ত তন্ত্র-মন্ত্র ও বাদ-ই মানুষের জীবনব্যবস্থার সর্বশ্রেষ্ঠ প্রণালীÑএ মিথ্যা ও কুফরকে প্রায় সমস্ত মানবজাতি সত্য বলে গ্রহণ করে নিয়েছে। মুসলিম বলে পরিচিত এ জাতিটিও দাজ্জালের তৈরি জীবনব্যবস্থাকে জীবনের সকল সমস্যার সমাধান বলে মনে করছে। এভাবেই তারা দাজ্জালকে তাদের রব বলে মেনে নিয়েছে। কিন্তু শান্তি কি মিলেছে? না। বরং দাজ্জালকে না চিনে তার তৈরি জীবনব্যবস্থাকে গ্রহণ করে মুসলমান জাতি দাজ্জালের তৈরি জাহান্নামে পতিত হয়ে সীমাহীন অশান্তিতে জীবন কাটাচ্ছে।

দাজ্জাল সম্পর্কে আল্লাহর রসুলের বহু হাদিস থেকে নিঃসন্দেহে প্রমাণিত হয় যে দাজ্জাল কোনো দৃশ্যমান বা শরীরী (Physical) দানব নয়, তখনকার দিনের মানুষদেরকে বর্তমান সভ্যতার শক্তি সম্পর্কে ধারণা দেওয়ার জন্য একটি রূপক (অষষবমড়ৎরপধষ) বর্ণনা।

দাজ্জাল প্রতিরোধকারীদের মৃত্যু হচ্ছে না:
দাজ্জাল প্রকৃতপক্ষেই ইহুদি খ্রিষ্টান যান্ত্রিক সভ্যতা কিনা, একটি বিশেষ কারণে এটি এখন আর যুক্তি তর্কের বিষয় নেই, সকল যুক্তি তর্কের ঊর্ধ্বে চলে গেছে। সেই কারণটি হল: বিশ্বনবী বলেছেন, “অভিশপ্ত দাজ্জালকে যারা প্রতিরোধ করবে তাদের মরতবা বদর ও ওহুদ যুদ্ধে শহীদের মরতবার সমান হবে (বোখারী ও মুসলিম)।”

রসুলাল্লাহর এ হাদিসটি এখন বাস্তবে পরিণত হয়েছে। এমামুয্যামান জনাব মোহাম্মদ বায়াজীদ খান পন্নী দাজ্জালকে চিহ্নিত করেছেন এবং হেযবুত তওহীদের সদস্যগণ দাজ্জালের পরিচয় বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরছেন, এভাবে তারা দাজ্জালকে প্রতিরোধ করছেন। হেযবুত তওহীদ ছাড়া পৃথিবীতে আর কেউই দাজ্জালকে দাজ্জাল বলে চিনছে না, সুতরাং তাকে প্রতিরোধও করছে না। কাজেই বিশ্বনবীর হাদিস মোতাবেক হেযবুত তওহীদের প্রত্যেক অকপট মোজাহেদ মোজাহেদা (সদস্য-সদস্যা) জীবিত অবস্থাতেই দুই জন করে শহীদের সমান মর্যালা লাভ করবেন ইনশাল্লাহ। এটা কেবল কোনো তাত্ত্বিক বা মৌখিক দাবী নয়, এর বাস্তব প্রমাণও আল্লাহ দিয়ে দিয়েছেন এবং এখনও দিচ্ছেন। সেটা হচ্ছে এই যে, চিকিৎসা বিজ্ঞানমতে মানুষ মারা গেলে দুই ঘণ্টা পর থেকেই শক্ত হতে আরম্ভ করে। ১২ ঘণ্টার মধ্যে মৃতদেহ এক খণ্ড কাঠের মতো শক্ত হয়ে যায় এবং তাপমাত্রা বরফের মতো ঠাণ্ডা হয়ে যায়। ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত দেহ এভাবে শক্ত অবস্থায় থাকে। এর পর থেকে দেহ আবার নরম হয়ে পঁচতে গলতে আরম্ভ করে। চিকিৎসাবিজ্ঞান মতে মানুষের মৃত্যুর সবচেয়ে বড় প্রমাণ এই শক্ত হয়ে যাওয়া। শুধু মানুষ নয়, পুরো জীবজগতে এই নিয়মের কোনো ব্যতিক্রম নেই, প্রত্যেক প্রাণীর দেহই মৃত্যুর পর একই ভাবে কাঠের মতো শক্ত হয়ে যায়। চিকিৎসা বিজ্ঞানে এই শক্ত হওয়াকে বলে রিগারমর্টিস (Rigor Mortis).

অত্যন্ত আশ্চর্যের বিষয় হল, হেযবুত তওহীদের অনেকের ক্ষেত্রে এই চিরন্তন প্রাকৃতিক নিয়মটি কার্যকরী থাকছে না। এ আন্দোলনের অনেক মোজাহেদ-মোজাহেদাদের ইন্তেকালের পর তাদের দেহ শক্ত হয়নি, এমন কি তাপমাত্রাও স্বাভাবিক মৃতের ন্যায় শীতল হয়ে যায়নি। একজন মোজাহেদের দেহে ইন্তেকালের ৩১ ঘণ্টা পরও মৃত্যু পরবর্তীকালীন এই স্বাভাবিক লক্ষণগুলি পরিলক্ষিত হয়নি। তারা আল্লাহর রাস্তায় যুদ্ধ করে মৃত্যুবরণ করেছেন এমন নয়, স্বাভাবিকভাবে রোগে ভুগে বা দুর্ঘটনায় ইন্তেকাল করলেও তাদের ক্ষেত্রে এ ঘটনাই ঘটছে। এমন ঘটনা একটি দু’টি নয়, অনেকগুলি হয়েছে। ঘটনা ও সাক্ষীদের স্বাক্ষরসহ বিস্তারিত বিবরণ আমাদের কাছে আছে। কেউ দেখতে চাইলে দেখানোও যাবে। এন্তেকালের পর দেহ শক্ত না হওয়ার কোনো নজির চিকিৎসা বিজ্ঞানে নেই। এর ব্যাখ্যা জানার জন্য আমরা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের অনেক চিকিৎসককে সরাসরি জিজ্ঞাসা করেছি, মেইল করে সকল নথি-প্রমাণ পাঠিয়েছি, কিন্তু এর কোনো সদুত্তর কেউ দিতে পারেননি। এখন প্রশ্ন হল, প্রাকৃতিক নিয়মের ব্যতিক্রম এ ঘটনার ব্যাখ্যা কি?

আমাদের কাছে এর একমাত্র ব্যাখ্যা হচ্ছে, দাজ্জাল প্রতিরোধ করার কারণে হেযবুত তওহীদের সত্যনিষ্ঠ সদস্যদেরকে মহান আল্লাহ জীবন্ত অবস্থাতেই শহীদ হিসাবে কবুল করে নিয়েছেন। আল্লাহ পবিত্র কোর’আনে বলেছেন, “যারা আল্লাহর পথে নিহত হয় তাদেরকে তোমরা মৃত বলো না, বরং তারা জীবিত। কিন্তু তোমরা উপলব্ধি করতে পারো না” (সুরা বাকারা ১৫৪)। তিনি বিষয়টি আরো সুস্পষ্ট করে দিয়েছেন এই বলে যে, “যারা আল্লাহর পথে নিহত হয়েছে তাদেরকে কখনোই মৃত মনে করো না, বরং তারা জীবিত এবং তাদের রবের কাছ থেকে রেযেক প্রাপ্ত” (সুরা ইমরান ১৬৯)। সুতরাং আল্লাহর কথা মোতাবেক শহীদরা হবেন জীবিত। এদিকে রসুল (সা.) বলেছেন, দাজ্জাল প্রতিরোধকারীগণ জীবন্ত অবস্থাতেই শহীদ। তাই আল্লাহ ও রসুলের কথা অনুযায়ী আখেরি যামানার দাজ্জাল প্রতিরোধকারীগণ শহীদের মর্যাদা পাবেন। আমরা মনে করি এ কারণে হেযবুত তওহীদের অনেকেই সেই মর্যাদা পাচ্ছেন যার নিদর্শনস্বরূপ তাদের দেহে মৃত্যুপরবর্তী লক্ষণগুলো পরিলক্ষিত হয়নি এবং হচ্ছে না।

সুতরাং এ থেকে সন্দেহাতীত ভাবে প্রমাণিত হচ্ছে যে, হেযবুত তওহীদ যাকে প্রতিরোধ করছে অর্থাৎ ইহুদি খ্রিষ্টান বস্তুবাদী যান্ত্রিক সভ্যতা, সেটাই দাজ্জাল। সেই সাথে এও প্রমাণিত হচ্ছে যে, হেযবুত তওহীদই সেই দল যার বিষয়ে আল্লাহর রসুল ১৪০০ বছর আগে ভবিষ্যদ্বাণী করে গিয়েছেন। তা সত্ত্বেও সকলের প্রতি আহ্বান, মৃত্যুর পর রিগার মর্টিস না হওয়ার আর কোনো যৌক্তিক কারণ কারো জানা থাকলে আমাদেরকে জানাতে পারেন।

[লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট; যোগাযোগ: ০১৭১১০০৫০২৫, ০১৭১১৫৭১৫৮১, ০১৭১১২৩০৯৭৫]

সার্চ করুন

যুক্ত হোন আমাদের ফেসবুক পেজের সাথে...