রাকীব আল হাসান:
আল্লাহর রসুল বলেছেনÑ আদমের সৃষ্টি থেকে নিয়ে শেষদিন (অর্থাৎ কেয়ামত) পর্যন্ত যা কিছু ঘটেছে ও ঘটবে তার মধ্যে দাজ্জালের চেয়ে বড় আর কিছু ঘটবে না। [ইমরান বিন হুসাইন (রা.) থেকে মুসলিম]
মানবজাতির ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ফেতনা, আল্লাহর সার্বভৌমত্বকে অস্বীকারকারী এবং মানবজাতির রব দাবিদার দাজ্জাল সম্পর্কে রসুলাল্লাহ যে সকল ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন সেগুলো খুবই চিত্তাকর্ষক এবং উদ্বীগ্নকর। উদ্বিগ্নকর এজন্যই যে দাজ্জাল সমস্ত পৃথিবীর ইতিহাসের মোড় ঘুরিয়ে দেবে, মানবজাতিকে অশান্তির সর্বোচ্চ চূড়ায় পৌঁছে দেবে। আর তাই দাজ্জালকে কোনভাবেই ছোট করে দেখার অবকাশ নেই। তবে হতাশার বিষয় হলো এরকম একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে মুসলিম নামধারী এই জাতিটি আজ গাফেল। তারা তাদের শত ব্যস্ততার মাঝে দাজ্জালকে নিয়ে চিন্তা করার মোটেও সময় পান না। আর যারা কোর’আন-হাদিস নিয়ে পড়ালেখা করেন, গবেষণা করেন, সাধারণ মানুষ যাদেরকে আলেম হিসাবে জানে তারা তাদের সঙ্কীর্ণ দৃষ্টিতে অপেক্ষা করে বসে আছেন একটা দৈত্যাকার মানবের জন্য, যে কিনা বিরাট ঘোড়ায় চড়ে এসে তাদেরকে বলবে তাকে রব বলে মেনে নিতে, তার পায়ে সাজদাহ করতে। তাদের এই সঙ্কীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গির বাইরে এসে দেখা আর সম্ভব হয় না যে ইতোমধ্যেই সেই মহাদানব দাজ্জাল পৃথিবীতে এসে গেছে এবং শুধু তাই নয়- মুসলিম নামধারী এই জাতিটিসহ সমস্ত পৃথিবীর মানুষ আজ দাজ্জালের পায়ে সেজদায় অবনত।
দাজ্জাল সম্পর্কিত রসুলাল্লাহর হাদিসগুলো একত্র করলে আমরা পাই- শেষ যামানায় এক চক্ষু বিশিষ্ট এক ভয়ঙ্কর দানবের আবির্ভাব ঘটবে। সে মানবজাতিকে বলবে তাকে ‘রব’ বলে মেনে নিতে। সমগ্র পৃথিবী তার করায়ত্ব হবে, চামড়া দিয়ে মোড়ানো একটা ডিমের মতো করে পৃথিবীকে সে হাতের মুঠোয় রাখবে। পৃথিবীর কোথায় কী হচ্ছে সব সে দেখতে ও শুনতে পাবে। তার আদেশে আকাশ থেকে বৃষ্টি বর্ষিত হবে। তার গরু, বকরি, মহিষ ইত্যাদি বড় বড় আকারের হবে এবং সেগুলোর স্তনের বোট বড় বড় হবে (যা থেকে প্রচুর পরিমাণে দুধ হবে)। দাজ্জাল মাটির নিচের সম্পদকে আদেশ করবে উঠে আসার জন্য, তখন সম্পদ উঠে আসবে এবং তার হুকুমের অনুসরণ করবে। সে আকাশ দিয়ে বায়ু তাড়িত মেঘের মতো উড়ে যাবে। মানুষের মধ্যে যারা তাকে রব বলে মেনে নেবে তাদেরকে সে শান্তিতে (তার জান্নাতে) রাখবে আর যারা তাকে মানবে না তাদেরকে চরম কষ্ট দেবে (তার জাহান্নামে দেবে)।
হেযবুত তওহীদের এমাম, এমামুয্যামান জনাব মোহাম্মদ বায়াজীদ খান পন্নী কোর’আন-হাদীস-বাইবেল থেকে সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করেছেন যে, পাশ্চাত্যের বস্তুবাদী ইহুদি-খ্রিষ্টান যান্ত্রিক সভ্যতাই হলো রসুলাল্লাহ বর্ণিত সেই দাজ্জাল। তিনি বলেছেন, রসুলাল্লাহ (সা.) দাজ্জাল সম্পর্কে যে বর্ণনা দিয়েছেন তা আসলে আক্ষরিক বর্ণনা নয় বরং রূপক বর্ণনা। পাশ্চাত্য ইহুদি-খ্রিষ্টান বস্তুবাদী আত্মাহীন সভ্যতা (!) আজ সমগ্র পৃথিবীকে হাতের মুঠোয় নিয়েছে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির মাধ্যমে বহু কিছু আবিষ্কার করলেও সে এক চক্ষু বিশিষ্ট হবার কারণে আল্লাহকে আস্বীকার করে, আত্মাকে অস্বীকার করে। পৃথিবীর কোথায় কী হচ্ছে সব কিছুই সে স্যাটেলাইটের মাধ্যমে দেখতে ও শুনতে পাচ্ছে, কেমিক্যাল প্রয়োগের মাধ্যমে ইচ্ছে মতো স্থানে বৃষ্টি ঝরাতে পারছে। তাদের উদ্ভাবিত হাইব্রিড জাতের গরু, মহিশ, বকরি ইত্যাদি বেশ বড় বড় আকৃতির ও অনেক দুধ প্রদান করে। সমগ্র মানবজাতি আজ দাজ্জালের তৈরি বিভিন্ন তন্ত্র-মন্ত্র মেনে নিয়ে আল্লাহর হুকুম প্রত্যাখ্যান করেছে, বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে আজ সকলেই তাদের দারস্থ হচ্ছে। অর্থাৎ প্রায় সকলেই এই সভ্যতাকে ‘রব’ বলে মেনে নিয়েছে। এভাবে মিলালে দাজ্জালের সমস্ত বর্ণনার সাথে মিলে যায়। আর যদি আক্ষরিক অর্থে ধরি তবে প্রশ্ন আসে- যে দানব সমগ্র পৃথিবীকে হাতের মুঠোয় নেবে সে দাঁড়াবে কোথায়? সে মানুষের সাথে কথা বলবে কীভাবে?
যাইহোক, তর্কের খাতিরে আমি যদি ধরেও নেই যে, “ইহুদি-খ্রিষ্টান সভ্যতা (!)” দাজ্জাল নয়, বরং ভবিষ্যতে ঘোড়ায় উপবিষ্ট এক চক্ষু বিশিষ্ট এক দানব আসবে, সমগ্র পৃথিবী চামড়া দিয়ে মোড়ানো একটা ডিমের মতো হয়ে যার হাতের মুঠোয় থাকবে, সে মানুষকে বলবে- আমাকে রব (পালনকর্তা) বলে মেনে নাও, যে তাকে রব হিসাবে মেনে নেবে সে তার এক হাতে থাকা জান্নাতে প্রবেশ করবে আর যে তাকে মানতে অস্বীকৃতি জানাবে সে তার অন্য হাতে থাকা জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে। যদিও সত্যিকার অর্থে তার জাহান্নামই হলো জান্নাত আর তার জান্নাতই হলো জাহান্নাম। তখন দাজ্জাল হবে মানবজাতির সবচেয়ে বড় শত্রু। কিন্তু আমার প্রশ্ন এই মুহূর্তে মানবজাতির সবচেয়ে বড় শত্রু কে বা কারা? বিশেষ করে মুসলিমদের সবচেয়ে বড় শত্রু কারা? একবাক্যে নিশ্চয় এর উত্তর হবে- পাশ্চাত্য ইহুদি-খ্রিষ্টান বস্তুবাদী সভ্যতা। তারা সুপরিকল্পিতভাবে মুসলিম জাতিকে ধ্বংস করে দেওয়ার পরিকল্পনা করছে, বিভিন্ন ইস্যু সৃষ্টি করে একটার পর একটা মুসলিম দেশ তারা ধ্বংস করে দিচ্ছে। এই মুহূর্তে তারা তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে এনেছে মানবজাতিকে। দুই-দুইটা বিশ্বযুদ্ধ বাধিয়ে ১১ কোটি বনি-আদমকে তারা নির্মমভাবে হত্যা করেছে, তার চেয়েও বহুগুণে মানুষ আহত, বিকলাঙ্গ হয়েছে, বাস্তুচ্যুত হয়েছে। সমগ্র পৃথিবীকে শোষণ করে তারা সম্পদের পাহাড় গড়েছে। তাদের ভোগ-বিলাসিতার খেসারত দিতে গিয়ে এই মুহূর্তে কোটি কোটি মানুষ দুর্ভিক্ষের মধ্যে পড়ে মারা যাচ্ছে। তাদের তৈরি আইন, বিধান, সুদভিত্তিক অর্থনীতি, সমাজব্যবস্থা অনুসরণ করে মানবজাতি আজ চরম দুঃখ-কষ্টে নিপতিত। প্রতিটা দেশে, প্রতিটা সমাজে অন্যায়, অবিচার, যুলুম, নির্যাতন, চুরি, ডাকাতি, সন্ত্রাস, ছিনতাই, হত্যা, ধর্ষণ, দাঙ্গা, যুদ্ধ-বিগ্রহ এক কথায় অশান্তি দিনকে দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাহলে এই বস্তুবাদী সভ্যতা দাজ্জাল হোক আর নাই হোত সে যে মানবজাতির সবচেয়ে বড় শত্রু এতে কি সন্দেহ থাকে?
তাহলে এখন কি মুসলিম জাতিকে এই বস্তুবাদী সভ্যতার বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হওয়া উচিত নয়? মানবজাতিকে কি এই শক্তির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হওয়া উচিত নয়? আমরা হেযবুত তওহীদ মানবজাতিকে এই প্রতারক সভ্যতার বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ করে এক নতুন ভারসাম্যপূর্ণ, সত্য ও ন্যায়ভিত্তিক সভ্যতার জন্ম দেওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছি।
যারা মাননীয় এমামুযযামান জনাব মোহাম্মদ বায়াজীদ খান পন্নী তথা হেযবুত তওহীদের দাজ্জাল বিষয়ক বক্তব্যকে কোনো বিবেচনা ছাড়াই, বিচার-বিশ্লেষণ ছাড়াই এক তুড়িতে উড়িয়ে দিতে চান তারা বুঝে হোক আর না বুঝেই হোক কার্যত পাশ্চাত্য ইহুদি-খ্রিষ্টান সভ্যতার স্বার্থ রক্ষা করে চলেছেন, কার্যত তাদের দালালী করে যাচ্ছেন। মুসলিম জাতিকে তাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হতে দিচ্ছেন না।
ভবিষ্যতে তেমন কোনো দানব আসলে আমরা সকলেই তার বিরুদ্ধে লড়াই করব, তবে এই মুহূর্তে আসুন মানবতার সবচেয়ে বড় শত্রুর বিরুদ্ধে মানবজাতিকে ঐক্যবদ্ধ করি, সহযোগিতা করতে না পারেন দয়া করে এই মহৎ কাজে বাধা দিয়েন না। এটাকে দাজ্জাল বলে মানতে না পারেন অন্তত এটা মানুষকে বলুন যে, পাশ্চাত্য ইহুদি-খ্রিষ্টান বস্তুবাদী আত্মাহীন, স্রষ্টাহীন এই সভ্যতা আসলেই মানবজাতির সবচেয়ে বড় শত্রু, কাজেই তাদের বিরুদ্ধে মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।