আমার সশ্রদ্ধ সালাম জানবেন। জানি না- এত ব্যস্ততার মাঝে আমার এই চিঠি আপনার কাছে পৌঁছবে কিনা। তবু কিছু কথা আপনাকে জানাতে চাই, এজন্য উপায়ন্তর না পেয়ে খোলাচিঠির আশ্রয় নিলাম।
১৯৭১ সালে আমরা ছিলাম সাড়ে সাত কোটি। পশ্চিম পাকিস্তানের অন্যায়-অবিচার, শোষণ ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে আমাদের শক্তি বলতেই ছিল এই সাড়ে সাত কোটি জনতা। তখন আমাদের না ছিল অস্ত্র, না ছিল অর্থ, না ছিল ক্ষমতা। তবুও আমরা জয়ী হয়েছিলাম, দেশ শত্র“মুক্ত হয়েছিল। এর কারণ এই বিশাল জনসংখ্যা সেদিন জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সমস্ত রকম অন্যায়ের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল। এ ঐক্যই আমাদের বিজয়ী করেছিল। কিন্তু আমরা পরবর্তীকালে সে জাতীয় ‘ঐক্য’-কে ধরে রাখতে পারি নি। আমরা বিভিন্ন মত-পথ, দল-উপদলে বিভক্ত হয়ে পড়ি। সৃষ্টি হয় বিবিধ প্রকারের দ্বন্দ্ব-সংঘাত, হিংসা-বিদ্বেষ, কোন্দল, দাঙ্গা-হাঙ্গামা ইত্যাদি। ইতিহাসের পাতায় বহুজন বহুভাবে আমাদের এই অনৈক্যের কারণ ব্যাখ্যা করলেও গোড়ায় গেলে আমরা দেখতে পাই যে, এই অনৈক্যের জন্য দায়ী মূলত দু’টি শ্রেণি। এক- পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদী গোষ্ঠী; দুই- ধর্মের ধারক-বাহক সেজে থাকা ধর্মব্যবসায়ী শ্রেণি।
স্বাধীনতার বেশ কয়েক বছর পরে বহুদলীয় গণতন্ত্রের সুযোগে ধর্মব্যবসায়ী গোষ্ঠী ধর্ম নিয়ে অপরাজনীতি শুরু করে। এরপর থেকেই তারা সাধারণ ধর্মপ্রাণ মানুষের ধর্মানুভূতিকে তাদের রাজনীতির হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করতে থাকে। তাদের মাধ্যমে জাতির বহু ক্ষতি সাধিত হয়েছে যা সকলেই অবগত আছেন। তারা জাতির ঐক্যকে ধ্বংস করে দিয়েছে। সেই থেকে আজ পর্যন্ত এ দেশের রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার অন্যতম প্রধান কারণ ধর্ম নিয়ে অপরাজনীতি। যখনই এই ধর্মাশ্রয়ী রাজনীতিকদের স্বার্থে কোনো আঘাত লাগে, তাদের অবৈধ কর্মকাণ্ডের পথে বাধা-বিঘ্ন আসে তখনই তারা ধর্মের জিগির তুলে সাধারণ মানুষকে ভ্রান্ত পথে পরিচালিত করে, সহিংসতা ঘটিয়ে দেশকে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দেয়। এভাবেই তারা জাতিকে জিম্মি করে নিজেদের স্বার্থ হাসিল করে। বিগত বছরে এ দেশের যে অকল্পনীয় ক্ষয়-ক্ষতি সাধিত হয়েছে, অসহায় নারী-শিশুর অকাল মৃত্যু ঘটেছে, শত শত সাধারণ মানুষ আগুনে পুড়ে অঙ্গার হয়েছে তার পেছনে ছিল ধর্মব্যবসায়ীদের সৃষ্ট ধর্মোন্মাদনা। শুধু গত বছরই নয়, এ জাতিবিনাশী সংঘাত, ভাইয়ে-ভাইয়ে লড়াই, হানাহানি, রক্তারক্তির খেলা ধর্মব্যবসায়ীরা গত বহুবছর ধরেই চালিয়ে আসছে।
এছাড়া জাতির ঐক্য বিনষ্ট হওয়ার আরেকটি কারণ পশ্চিমা পরাশক্তিগুলির ষড়যন্ত্র। এদের দ্বিরাচারিতা আমাদের অজানা নয়। নিজেদের স্বার্থে এরা হেন কাজ নেই যা করতে পারে না। এরা আমাদের নাম দিয়ে রেখেছে তৃতীয় বিশ্ব (Third world)। আমাদের দেশে স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠিত হোক, উন্নতি-অগ্রগতি সাধিত হোক- এটা তাদের কোনো কালেই কাম্য ছিল না, বরং অস্থীতিশীলতা থাকলেই তাদের প্রভুত্বের স্থান বজায় রাখতে সুবিধা হয়। এমনকি এরা আমাদের স্বাধীনতারও ঘোর বিরোধী ছিল। আমাদের সামগ্রিক জীবনে ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হোক- তা কখনোই তারা চায় নি। স্বাধীনতার ৪৩ বছর পরও আমরা যাতে ঐক্যবদ্ধ না হতে পারি তা নিশ্চিত করার জন্য বিভিন্ন ষড়যন্ত্রের করে চলেছে। তারা বহুদলীয় গণতন্ত্রের নামে হাজার হাজার মত-পথ-দল সৃষ্টি করে বিভিন্ন অন্তর্কোন্দলকে উস্কে দিয়ে এক দলকে আরেক দলের বিরুদ্ধে হিংসাত্মক কাজে লিপ্ত করছে। আর এ ক্ষেত্রে তারা ব্যবহার করছে তাদের অনুগত এক শ্রেণির মিডিয়াকে। এ বিশেষ শ্রেণির মিডিয়াগুলোর বিকৃত তথ্য সরবরাহের ফলে এদেশে বহুবার সংঘাতের সৃষ্টি হয়েছে। অনেক সম্পাদককেই আমরা বারবার আদালতে গিয়ে ক্ষমা প্রার্থনা করতে দেখেছি। কিন্তু তাদের জাতিবিনাশী ষড়যন্ত্র এখনও চলছে। জাতির বিবেকের দাবিদার এ সাংবাদিকরা সুচতুরভাবে মানুষকে সত্য থেকে দূরে সরিয়ে রাখে।
ষোল কোটি বাঙালি যাতে ধর্ম-বর্ণ-দল-মত নির্বিশেষে ধর্মব্যবসা, ধর্ম নিয়ে অপরাজনীতি ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়ে পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদের ষড়যন্ত্র থেকে মুক্ত হতে পারে এবং তাদের এ দেশীয় দোসরদের প্রকৃত স্বরূপ জানতে পারে সে লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে যামানার এমাম জনাব মোহাম্মদ বায়াজীদ খান পন্নীর অনুপ্রেরণায় উজ্জীবিত দৈনিক দেশেরপত্র ও বজ্রশক্তি। আমাদের স্লোগান হলো- ‘মানবতার কল্যাণে সত্যের প্রকাশ’। এই জগৎ সংসারের রন্ধ্রে রন্ধ্রে মিশে যাওয়া মিথ্যার মুখোশ উন্মোচন করে প্রকৃত সত্যকে প্রতিষ্ঠা করাই আমাদের মূল লক্ষ্য। আর এটা স্বতঃসিদ্ধ যে, যারা মিথ্যাশ্রয়ী সত্য তাদের কাছে তিক্ত। অপরের অনিষ্ট সাধনের উদ্দেশ্যে ষড়যন্ত্রকারী ব্যক্তি বা গোষ্ঠী কখনও সত্যকে শিকার করতে পারে না, সত্যকে কেবল ভয়ই পেয়ে থাকে। ঠিক এই কারণে এদেশীয় সাম্রাজ্যবাদের দোসর কিছু তথ্যব্যবসায়ী যখন দেখল এমামুয্যামান জনাব মোহাম্মদ বায়াজীদ খান পন্নীর অনুসারীরা একটি পত্রিকার মাধ্যমে সত্যকে প্রকাশ করে দিচ্ছে, অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে জাতিকে সচেতন করার প্রয়াস চালাচ্ছে, জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করার লক্ষ্য নিয়ে দুর্দান্ত গতিতে এগিয়ে চলছে, তখন তারা এটা বুঝে গেল যে, এ কাজ চলতে দেয়া গেলে আমাদের মিথ্যার বাণিজ্য বন্ধ হয়ে যাবে, নতুন নতুন জাতিবিধ্বংসী ইস্যু সৃষ্টি করে এক পক্ষকে অপর পক্ষের বিরুদ্ধে উত্তেজিত করে দিয়ে জনজীবনে বিপর্যয় নামিয়ে এনে মোটা লাল অক্ষরে আহত-নিহতের পরিসংখ্যানসহ লিড নিউজ ছাপানো বন্ধ হয়ে যাবে, এতদিনের অপকর্মের কারণে জনগণের কাছে ধিক্কৃত ও ঘৃণিত হতে হবে। এ ভয় থেকে তারা শুরু করল যামানার এমাম, হেযবুত তওহীদ ও হেযবুত তওহীদের মুখপত্র দৈনিক দেশেরপত্র’র বিরুদ্ধে নানামুখী অপপ্রচার। বস্তুত এ শুধু অপপ্রচারই নয়, রীতিমত ষড়যন্ত্র।
আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা-বানোয়াট-আজগুবি খবর তারা গত ১৯ বছর ধরেই প্রচার করছে। প্রথমে ধর্মব্যবসায়ীরা অপপ্রচার চালিয়েছিল যে, হেযবুত তওহীদ খ্রিস্টান হয়ে গেছে। এর কিছুদিন পরে পৃথিবীতে এল জঙ্গিইস্যু। সমাজতন্ত্রের পতন ঘটাবার জন্য ইসলামের অনুভূতিকে ব্যবহার করে পশ্চিমারাই সৃষ্টি করেছিল এই জঙ্গিবাদ। পরবর্তীতে এর দায়ভার সুচতুরভাবে মুসলিম বিশ্বের ঘাড়ে চাপানো হয়। যাই হোক, পশ্চিমা মদদপুষ্ট এই তথ্যব্যবসায়ীরা এবার আমাদের বিরুদ্ধে আরোপ করে জঙ্গিবাদের অপবাদ। তাদের মানসিকতা হলো, যে করেই হোক হেযবুত তওহীদকে আটকাতে হবে। হেযবুত তওহীদ জনগণের কাছে পৌঁছে গেলে সাধারণ মানুষ আর তাদের তথ্যসন্ত্রাসে বিভ্রান্ত হবে না, উত্তেজিত হবে না, অপরের ক্ষতি সাধনের উদ্দেশ্যে উন্মত্ত রোষে ঝাঁপিয়ে পড়বে না। এক কথায় পশ্চিমা স্বার্থ রক্ষিত হবে না। অপরদিকে ধর্মব্যবসায়ীরাও হেযবুত তওহীদের বিরুদ্ধে প্রপাগান্ডা চালিয়ে গেল কারণ হেযবুত তওহীদ তাদের ধর্মব্যসার মুখোস উন্মোচন করে দিচ্ছে।
এটা সকলেই জানে যে, জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করার প্রধান ভূমিকা পালন করতে হবে সরকারকে। সরকারের সহযোগিতা ছাড়া এতবড় কাজ করা সহজসাধ্য নয়। তাই জাতির ভালো-মন্দ, করণীয়-বর্জনীয় নির্ধারণ করতে হবে আপনাদেরকেই। জাতিকে অসত্যের বিরুদ্ধে, অন্যায়ের বিরুদ্ধে, ধর্মব্যবসার বিরুদ্ধে, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে, তথ্যবাণিজ্যের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ করার কাজে আপনাদের অংশগ্রহণের কোনো বিকল্প নেই। এ কাজে ক্ষমতাসীন দলের মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মী থেকে শুরু করে ঊর্ধ্বতন নেতৃবৃন্দ সকলেরই অংশগ্রহণ সমানভাবে প্রয়োজনীয়। সে জন্যই সাধারণত আমরা সরকারদলীয় লোকদের নিয়ে বিভিন্ন সভা-সেমিনার, আলোচনা অনুষ্ঠান, ডকুমেন্টারি ফিল্ম প্রদর্শনী আয়োজন করে থাকি। বিগত দিনে আমরা সরকারদলীয় নেতা-কর্মীদের কাছ থেকে যথেষ্ট সাড়াও পেয়েছি। তাদের প্রায় সকলেই আমাদের উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়ে এই কার্যক্রমকে কীভাবে আরও বেগবান করা যায় এবং দেশব্যাপী ছড়িয়ে দেওয়া যায় সে ব্যাপারে সুপরামর্শ প্রদান করেছেন। এসব আলোচনা-সেমিনারে বেশ কয়েকজন মন্ত্রী মহোদয় থেকে শুরু করে, বহু সংসদ-সদস্য, জনপ্রতিনিধি, প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত হয়ে আমাদের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করেছেন। তারা ধর্মব্যবসা, ধর্ম নিয়ে অপরাজনীতি, জঙ্গিবাদ ইত্যাদির বিরুদ্ধে কাজ করার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন এবং দেশেরপত্রের পথচলাকে স্বাগত জানিয়েছেন। সরকারের ইচ্ছাও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করা। তাই জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে আমাদের এ উদ্যোগে আমরা আপনার ও আপনার সরকারের নৈতিক সমর্থন পাওয়ার আশা রাখি।
হেযবুত তওহীদের মুখপত্র দৈনিক দেশেরপত্রের বিরুদ্ধে এক শ্রেণির মিডিয়া সরাসরি অবস্থান নিয়েছে। আপনার প্রতি আমাদের একটাই অনুরোধ- আমাদের বিরুদ্ধে যারা প্রকাশ্য অপপ্রচার শুরু করেছে তাদের অতীত কর্মকাণ্ড মূল্যায়ন করুন, তাদের অবস্থানকে দেখুন। দেখুন এরা আদৌ এদেশের মানুষের কল্যাণ চেয়েছে নাকি অকল্যাণ চেয়েছে। আমাদের কর্মকাণ্ড যদি অন্যায়, অনৈতিক, আইন-শৃঙ্খলা পরিপন্থী হয়ে থাকে, দেশের স্বার্থবিরোধী হয়ে থাকে, তাহলে আমাদের ব্যাপারে সরকারের যে কোনো সিদ্ধান্তে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। আমরা অকপটহৃদয়ে, মানবতার কল্যাণে জাতির মুক্তির জন্য জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করার কাজে আত্মনিয়োগ করেছি। এ কাজে আমরা আমাদের সম্পূর্ণ জীবন ও সম্পদ উৎসর্গ করেছি। আমরা কোনো অর্থনৈতিক স্বার্থে কাজ করি না এবং আমাদের কোনো রাজনৈতিক অভিপ্রায়ও নেই। আমাদের এই কাজের বিনিময় আমরা নেব একমাত্র স্রষ্টার কাছ থেকে। গত ১৯ বছর ধরে কাজ করে আমরা এটাই প্রমাণ করেছি যে, হেযবুত তওহীদই একমাত্র সংগঠন যার সদস্যরা কোনোরূপ আইনভঙ্গ করে না, অন্যায় করে না, অপরাধ করে না। এটা শুধু আমাদের দাবি নয়, আদালতের রেকর্ড। কাজেই আমরা আশা করি যে, সত্যনিষ্ঠ, ন্যায়নিষ্ঠ, সম্পূর্ণ আইন-শৃঙ্খলা মান্যকারী এবং মানবতার কল্যাণে নিবেদিতপ্রাণ যামানার এমামের অনুসারীদের পথচলাকে রুদ্ধ না করে আরো সাবলীল ও নিষ্কণ্টক করার ক্ষেত্রে আপনার সহায়তা আমাদের সঙ্গে থাকবে।
লেখক: আমীর, হেযবুত তওহীদ;