জঙ্গিবাদ সন্ত্রাসবাদ সাম্রাজ্যবাদের চাইতে মাদকও কম জাতিবিনাশী নয়। মাদকদ্রব্য অসংখ্য জীবন ধ্বংস করে এবং সামাজিক ¶তির কারণ হয়। মাদকদ্রব্যের ব্যবসায় এবং এর প্রতিক্রিয়া আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে একটি বড় চ্যালেঞ্জ। বহু শতাব্দী ধরে মাদকদ্রব্য গ্রহণ জীবনের জন্য একটি বাস্তবতা এবং গত ৫ দশকে এতে আসক্তির পরিমাণ ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পেয়েছে।
World Drug Report 2011 মোতাবেক বিশ্বের সর্বাধিক মাদক উৎপাদনকারী দেশ আফগানিস্তান। ওপিয়ামজাত মাদকের ৯৩% বাজার আফগানিস্তানের দখলে। এই বাজারের উপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা ছিল সাম্প্রাতিক আফগান যুদ্ধের অন্যতম কারণ, আর অসিলা ছিল জঙ্গিবাদ।
বিশ্বের মধ্যে মাদকের সবচেয়ে বড় বাজার হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, রাশিয়া, নেদারল্যান্ড, স্পেন, মেক্সিকো, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, ক্যানাডা ইত্যাদি উন্নত দেশগুলো। উপমহাদেশের মাদকব্যবসায় বাংলাদেশ মাদক চোরাকারবারের একটি গুরুত্বপূর্ণ রুট হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
অবৈধ মাদকের ব্যবহার এবং অপরাধ হাত ধরাধরি করে চলে। মাদক ব্যবহারকারীরা তাদের নেশা মেটানোর জন্য মাদকদ্রব্য পেতে আ¶রিক অর্থেই যে কোন অপকর্ম করতে পারে। দেশে নেশা আসক্তের সংখ্যা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং এর স্বাভাবিক পরিণতি হিসেবে অপরাধ প্রবণতাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফিলিপাইনের প্রেসিডেন্ট রদ্রিগো দুতার্তে ক্ষমতায় আসার পর মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধের নামে হত্যা করা হয়েছে ২০ হাজার মানুষকে।
২০১৮ সনে মাদক কারবারীদের বিরুদ্ধে একই প্রকারের যুদ্ধ ঘোষণা করতে বাধ্য হয়েছিল আমাদের সরকারও। সংশ্লিষ্ট সরকারী প্রতিষ্ঠানগুলো মাদকদ্রব্যের বিরুদ্ধে জনসচেতনতা গড়ে তোলার জন্য দেশব্যাপী মাঝে মাঝে র্যালি, সেমিনার ও আলোচনাসভা অনুষ্ঠান করছে। কিন্তু পরিসংখ্যান বলছে মাদকদ্রব্যের ব্যবহার প্রতিবছর চক্রবৃদ্ধিহারে বাড়ছে।
বাংলাদেশ মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের প্রদত্ত পরিসংখ্যান মোতাবেক কেবল ২০১৭ সনে বাংলাদেশের সকল আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কর্তৃক উদ্ধারকৃত ইয়াবা ট্যাবলেটের সংখ্যা হচ্ছে ৪,০০,৭৯,৪৪৩ পিস (চার কোটি উনাশি হাজার চারশত তেতাল্লিশ পিস)। এগুলো জন্য ১,৩২,৮৮৩ জন আসামির বিরুদ্ধে মোট ১,০৬,৫৩৬ টি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
অথচ আজ থেকে সেই ১৪শ’ বছর আগে সেই আরব্য জাহেলিয়াতের যুগে আল্লাহর রসুল কেবল তিরস্কার, জুতাপেটা, বেত্রাঘাতের মতো লঘু শাস্তি দিয়ে মাদকমুক্ত সমাজ গড়ে তুলেছিলেন। আল্লাহর হুকুম কানে আসামাত্র ঘরে রক্ষিত যাবতীয় মাদকদ্রব্য রাস্তায় নিক্ষেপ করেছিল সেই জাতির লোকেরা।
আবু বকর (রা.), ওমর (রা), ওসমান (রা.) ও আলী (রা.) এর খেলাফতকালে মদ্যপানকারীকে ৪০টি বেত্রাঘাত করার ইতিহাস পাওয়া যায়। ওমর (রা.) অবশ্য কোনো কোনো মদ্যপায়ীকে তার অপরাধের গুরুত্ববিচারে ৮০টি পর্যন্ত বেত্রাঘাত করেছেন। একজন ব্যক্তিকেও মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয় নি।
কিন্তু আজ গণহারে মৃত্যুদণ্ড দিয়ে, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড করেও বহু দেশ মাদকনিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হচ্ছে। আল্লাহর রসুল যে শিক্ষা দিয়ে এমন একটি আত্মনিয়ন্ত্রণে সক্ষম চরিত্রসম্পন্ন জাতি সৃষ্টি করেছিলেন সেই আদর্শ এখন মানুষের সামনে তুলে ধরতে হবে। সেটা হচ্ছে আল্লাহর হুকুমের পক্ষে জাতিকে আগে ঐক্যবদ্ধ করা। তাহলে আল্লাহর হুকুম ও ঐক্যবদ্ধ জাতির নেতার একটি হুকুমই জাতির গতিপথ পাল্টে দিতে সক্ষম হবে।