মোহাম্মদ আসাদ আলী:
যারা বিশ্বের খোঁজ রাখেন, তাদের জানা আছে ইসলামবিদ্বেষীরা প্রতিনিয়ত আল্লাহর রসুল (সা.) সম্বন্ধে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য, গালাগালি ও কটূক্তি করে চলেছে। এসব শত-সহস্র কটূক্তি, গালাগালি, ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ ও কুরুচিপূর্ণ মন্তব্যের মধ্যে বিচ্ছিন্ন বিক্ষিপ্তভাবে কিছু কটূক্তির ঘটনা কখনও কখনও মিডিয়াতে উঠে আসে এবং ব্যাপক আলোচনা-বিতর্কের জন্ম দেয়। তা হয়ে ওঠে জাতীয় বা আন্তর্জাতিক গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু, যা ক্রমেই উত্তাপ ছড়াতে থাকে মুসলিমপ্রধান দেশগুলোতে। শুরু হয় বিক্ষোভ, আন্দোলন, মানববন্ধন, সমাবেশ, মিছিল ইত্যাদি। অনেকে পণ্য বর্জনের ডাকও দিয়ে থাকেন। সম্প্রতি ভারতে ক্ষমতাসীন বিজেপির সাবেক মুখপাত্র নূপুর শর্মার মন্তব্যকে ঘিরে এরকমই উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছিল বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন মুসলিমপ্রধান দেশে।
প্রশ্ন হলো, যারা আল্লাহর রসুলকে নিয়ে আজেবাজে মন্তব্য করে, তারা কি জানে একজন মুসলমানের বিশ্বাসের, ভালোবাসার, শ্রদ্ধার, সম্মানের কোন জায়গায় অবস্থান করেন মহানবী মুহাম্মদ (সা.)? রসুলকে গালি দিলে, অপমান করলে, তাঁর পবিত্র চরিত্র নিয়ে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করলে প্রতিটা মু’মিনের হৃদয়ে আগুন জ্বলে উঠবে এটাই স্বাভাবিক। রসুলাল্লাহ (সা.) এমন একজন মহামানব, যার অনুসারীর সংখ্যা বর্তমানে প্রায় ১৮০ কোটি। বিশ্বের অন্তত ৫৭টা রাষ্ট্রে তারা সংখ্যাগরিষ্ঠ। এই ১৮০ কোটি মুসলমান প্রতিদিন, প্রতি রাকাত নামাজে রসুলকে দরুদ পাঠায়, প্রত্যেক খুতবায় রসুলাল্লাহর পরিবারের প্রতি সালাম পাঠানো হয়। তিনি বিশ্ব-মুসলিমের হৃদয়ের স্পন্দন। বিপদে পড়লে মু’মিনরা রসুলাল্লাহর বিপদকালীন জীবনের দিকে তাকিয়ে ধৈর্যের প্রেরণা পায়, ত্যাগের প্রশ্ন আসলে মু’মিনরা রসুলাল্লাহর ত্যাগ ও কুরবানির দিকে তাকিয়ে উৎসাহ খুঁজে পায়, অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের সময় রসুলে করিম (সা.) এর বিপ্লবী জীবনের অটলতা, অনড়তা ও আপসহীনতার উদাহরণ থেকে শক্তি খুঁজে পায়। সেই মহামানবকে নিয়ে কেউ কটূক্তি করলে, কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করলে মুসলিমদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও উত্তেজনা তৈরি হওয়াই স্বাভাবিক নয় কি?
বিশ্বের বহু অমুসলিম ইতিহাসবিদ ও গবেষক রসুলাল্লাহর জীবনী পড়ে, নবীজীবনের বিভিন্ন দিক বিশ্লেষণ করতে গিয়ে রসুলাল্লাহর তারিফ না করে পারেননি। রসুলাল্লাহর যুদ্ধকৌশল, ব্যক্তিত্ব, প্রতিভা, সাহস, আপসহীনতা, ক্ষমা, দয়া, সততা, আমানতদারিতা, ন্যায়বিচার, শাসননীতি- যেদিকেই তাকিয়েছেন এমন একজন মানুষকে দেখতে পেয়েছেন যার সমালোচনা করার জায়গা খুঁজে পাওয়া দুরূহ। তারা ব্যক্তিগতভাবে অমুসলিম হয়েও রসুলাল্লাহর ভক্ত হয়ে গেছেন অনেকেই। বিশ্বে এরকম মানুষের সংখ্যা কম নয় যারা ব্যক্তিগতভাবে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান হয়েও রসুলাল্লাহকে আত্মা থেকে সম্মান করেন, শ্রদ্ধা করেন। এমন একজন কালজয়ী সার্বজনীন হিতাকাক্সক্ষী মহামানবকে গালি দেওয়া কোনো সুস্থ মস্তিষ্কের মানুষের পক্ষে কীভাবে সম্ভব হতে পারে? যারা এই গর্হিত কাজটা করে, তারা কোনো সভ্য সমাজে বসবাসের অধিকার রাখে কি? সভ্যতা কাকে বলে তা ইসলাম থেকে তাদের শিখে যাওয়া উচিত। মুসলিমরা যেন অন্য ধর্মের দেব-দেবী ও সম্মানীত আরাধ্যকে গালমন্দ না করে সেজন্য আল্লাহ কঠোরভাবে নিষেধ করে দিচ্ছেন সুরা আনআমের ১০৮ নম্বর আয়াতে। আল্লাহ বলেন, ‘যদি তোমরা তাদেরকে মন্দ বলো তাহলে অজ্ঞতাবশত তারাও আল্লাহকে মন্দ বলবে।’ এটাই ইসলামের সৌন্দর্য!
আসলে যারা ইসলামের বিরুদ্ধে এ ধরনের কটূক্তি করে থাকে, রসুলকে নিয়ে বাজে কথা বলে, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তাদের রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধির অসৎ উদ্দেশ্য থাকে। এরা ধর্মীয় দাঙ্গা-হাঙ্গামা সৃষ্টি করে, দেশে দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করতে চায়। এসবের সঙ্গে জড়িয়ে থাকে বিভিন্ন পরাশক্তিধর দেশের আন্তর্জাতিক অস্ত্রব্যবসা ও সাম্রাজ্যবাদী ষড়যন্ত্রের নীল নকশা, কিংবা বিভিন্ন দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক দলগুলোর এজেন্ডা বাস্তবায়ন। ইসলাম ও মুসলিমদেরকে তারা বলির পাঠা বানাতে চায় মাত্র। কাজেই রসুল অবমাননার প্রতিবাদ জানানোর পাশাপাশি আমাদেরকে এ বিষয়েও সতর্ক থাকতে হবে- যেন আমাদের ঈমানকে ব্যবহার করে অন্য কেউ খেলতে না পারে। আমরা যেন কারো ঘুটি না হয়ে যাই। আমাদেরকে মনে রাখতে হবে, অত্যন্ত কঠিন একটি সময় আমরা এখন পার করছি। অত্যন্ত সাবধানে পা ফেলতে হবে। আল্লাহর রসুলকে আমাদের মতোই কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হয়েছে। কিন্তু আল্লাহর রহমে গত ১৪০০ বছর কেউ ইতিহাস থেকে বলতে পারেনি আল্লাহর রসুলের কোনো একটি পদক্ষেপ ভুল ছিল, ব্যর্থ ছিল। তিনি নবীজীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে গভীর জ্ঞান, প্রজ্ঞা ও দূরদর্শিতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। যখন রসুলাল্লাহর নিজের কোনো রাষ্ট্র নেই, আল্লাহর দীন যখন প্রতিষ্ঠিত হয়নি, অর্থাৎ মক্কাজীবনে আল্লাহর রসুল একাধারে শুধু তওহীদের বালাগ (দাওয়াত) চালিয়ে গেছেন। এসময় মহানবীকে নিয়ে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য স্বয়ং মহানবীর সামনে দাঁড়িয়ে করা হয়েছে, তবু রসুল (সা.) কিছু বলেননি। অপরিকল্পিতভাবে মোকাবেলা করতে যাননি। তাঁর সাহাবীরাও ছিলেন সুশৃঙ্খল ও অনুগত। নেতার আদেশ মোতাবেক তারা শুধু জাতিকে তওহীদের দিকে ডেকে গেছেন, ঐক্যবদ্ধ হতে বলেছেন। যখন মানুষ ঐক্যবদ্ধ হলো, আরব উপদ্বীপে দীন প্রতিষ্ঠিত হলো, তখন আল্লাহর রসুল আল্লাহর হুকুম মোতাবেক রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্ববলে কটূক্তিকারীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ পরিচালনা করলেন ও শাস্তি কার্যকর করলেন। হাজার হাজার কটূক্তিকারী, যারা একসময় রসুলকে (সা.) শত্রু মনে করতেন, তারাই রসুলাল্লাহর পায়ের কাছে নিজেদের তলোয়ার সোপর্দ করে দিয়ে বলেছেন, ইয়া রসুলাল্লাহ! এখন থেকে এই তলোয়ার শুধু ইসলামের কল্যাণেই ব্যবহৃত হবে।
যারা ইসলাম চায় না, ইসলামের অগ্রযাত্রা সহ্য করতে পারে না, তারা রসুলকে নিয়ে কটূক্তি করবেই, গালাগালি করবেই, এ কথা সবযুগের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। কিন্তু আমরা কী করব? আমরা তো যা ইচ্ছা করতে পারি না। আমাদের আদর্শ আছে। আমরা সর্ববিষয়ে আল্লাহর হুকুম ও রসুলের সুন্নাহ মেনে চলতে অঙ্গীকারবদ্ধ। সেটা ভালোভাবে বুঝে নিতে হবে।
ইসলামবিদ্বেষ মোকাবেলায় করণীয়:
গঠনমূলক জবাব দেওয়া:
প্রথমেই আমাদের উচিত হবে ইসলামবিদ্বেষীদের সমস্ত অপপ্রচার, মিথ্যাচার ও অভিযোগের যৌক্তিক, গঠনমূলক, ঐতিহাসিক তথ্য-প্রমাণসমৃদ্ধ জবাব প্রদান করা। পবিত্র কোর’আনে আল্লাহ নিজেই শত শত আয়াতে ইসলামবিদ্বেষীদের অপপ্রচারের জবাব দিয়েছেন, আর জনগণকে বলেছেন মনোযোগ দিয়ে কথা শুনে যেটা উত্তম তা গ্রহণ করতে। কাজেই, ইসলামবিদ্বেষীরা ইসলামের বিরুদ্ধে যত অভিযোগ, প্রশ্ন ও যুক্তি উত্থাপন করে থাকে, সেগুলোর জবাব দেওয়া আমাদের ঈমানী কর্তব্য। তা করলে চিন্তাশীল মানুষ খুব সহজেই অপপ্রচারকারীদের গোঁজামিল ধরতে পারবেন ও সতর্ক হতে পারবেন।
আইনীভাবে মোকাবেলা করা:
অপপ্রচারের জবাব দেওয়ার পাশাপাশি আইনীভাবে ইসলামবিদ্বেষীদের গালাগালি ও কটূক্তির মোকাবেলা করা উচিত। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ধর্মীয় মহামানবদের নিয়ে গালাগালি, কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য ‘বেআইনী’ হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকে। যুক্তরাষ্ট্রের ‘লাইব্রেরি অব কংগ্রেস’ এর মতে ২০১৭ সালে ৭৭টি দেশের আইনে ‘ব্লাসফেমি, ধর্ম অবমাননা, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত ও অনুরূপ আচরণ’কে অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। আমাদের বাংলাদেশেও ধর্মীয় স্থাপনা, ধর্মগ্রন্থ, ধর্মীয় সম্মানীত ব্যক্তি, উপাসনলায় ইত্যাদি নিয়ে কটূক্তি ও গালগালির বিরুদ্ধে দণ্ডবিধি ও ফৌজদারী কার্যবিধি আইনের ধারা রয়েছে। ফৌজদারি দণ্ডবিধির ২৯৫ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে, ‘কোন ধর্মীয় স্থান বা সেখানকার কোনো বস্তু ধ্বংস করা, ক্ষতি করা বা অসম্মান করা ধর্মীয় অবমাননা হিসাবে গণ্য হবে। এক্ষেত্রে দুই বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড, জরিমানা বা উভয় দণ্ড হতে পারে।’ ২৯৫ (ক) ধারায় যোগ করা হয়েছে, ‘ইচ্ছাকৃতভাবে দেশের কোন নাগরিককে মৌখিক, লিখিতভাবে বা অন্য কোন উপায়ে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করা হলে তা ধর্মীয় অবমাননা বলে গণ্য হবে।’ এছাড়াও ২৯৬, ২৯৭ ও ২৯৮ ধারায় ধর্মীয় অবমাননার আইন রয়েছে। সুতরাং আমরা আইনগতভাবে ইসলামবিদ্বেষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারি।
জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করা:
পাঠক, আমাদের সকল পরাজয়, অপমান ও লাঞ্ছনার প্রধান কারণটাই হলো অনৈক্য। আমরা প্রথমত ৫৭টার মতো ভৌগোলিক রাষ্ট্রে বিভক্ত, দ্বিতীয়ত ধর্মীয়ভাবে শত শত ফেরকা মাজহাব, দল উপদলে বিভক্ত, তৃতীয়ত আধ্যাত্মিকভাবে বিভিন্ন তরিকায় বিভক্ত, চতুর্থত রাজনৈতিকভাবে হাজার হাজার দল-উপদল ও তন্ত্র-মন্ত্রে বিভক্ত। আমাদের ধর্মীয় নেতারা বছরের প্রতিটা দিনই ইসলামের বিভিন্ন গুরুত্বহীন বিষয়ে তর্ক-বিবাদ, ঝগড়া, কোন্দলে লিপ্ত থাকেন। ওয়াজ মাহফিলে বক্তৃতার সময় এক আলেম আরেক আলেমকে কাফের আখ্যা দেন। এমনকি রসুল অবমাননার প্রতিবাদেও আলেমদেরকে এক কাতারে দেখা যায় না। কখনও ঐক্যবদ্ধ কর্মসূচি দিলেও দু’দিন বাদে নেতৃত্ব ও ক্ষমতা নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে সেই ঐক্য ভেঙে পড়ে। যেমন, ২০১৩ সালে হেফাজতে ইসলামের ব্যানারে দেশের কওমি ঘরানার সবগুলো দল মিলে একসঙ্গে কর্মসূচি দিয়েছিলেন, কিন্তু এরপরেই শুরু হয় ভাঙন। সেই ভাঙন এই পর্যন্ত যায় যে, হেফাজতে ইসলামের সাবেক আমির আহমদ শফির মৃত্যুর জন্যও হেফাজতের অন্তর্কোন্দলকে দায়ী করেন হেফাজতের একাংশ। আমাদের ঐক্যহীনতার আরেক দুঃখজনক ফল হলো এই যে, আমাদের কোনো কেন্দ্রীয় নেতা নেই, কর্তৃপক্ষ নেই। অথচ মো’মেনদের জন্য আল্লাহর আনুগত্য ও রসুলের আনুগত্যের মতই ইমাম ও আমিরের (উলিল আমর) আনুগত্য করা বাধ্যতামূলক। (নিসা: ৫৯)
পাঠক, ভাবুন তো, আজ যদি বিশ্বের ১৮০ কোটি মুসলমান একজন ইমামের (নেতা, খলিফা, আমিরুল মু’মিনিন) অধীনে তওহীদের ভিত্তিতে সীসাগলানো প্রাচীরের মতো ঐক্যবদ্ধ থাকত, যে কোনো বিষয়ে নেতার আদেশ হয়ে গেলে জীবন-সম্পদ দিয়ে সেই আদেশ পালনে ঝাঁপিয়ে পড়ত, তাহলে বিশ্বের বুকে কেউ কি হুজুরে আকরাম হজরত মোহাম্মদ (সা.) এর নামে একটাও বাজে শব্দ উচ্চারণ করার সাহস পেত? কখনই না। কিন্তু এখন সহজেই যা ইচ্ছা বলতে পারে, কারণ আমরা নিজেরা ঐক্যবদ্ধ নই। এক ভাই আরেক ভাইয়ের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছি, যুদ্ধ করছি, একে অপরকে ধ্বংস করতে ইসলামবিদ্বেষী পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদীদের সহযোগিতা নিচ্ছি। আমাদের এই অনৈক্য-সংঘাতই আমাদেরকে ভেতর থেকে শেষ করে দিয়েছে। অথচ, ঐক্যবদ্ধ হওয়া ও ঐক্যবদ্ধ থাকার পক্ষে পবিত্র কোর’আনে ও হাদিসে এত আদেশ, নিষেধ আছে যা বলতে চাইলে আলাদা বই লিখতে হয়। আল্লাহর সেই হুকুম আমরা মানিনি, আল্লাহর রসুলের সুন্নাহও মানিনি। ঐক্যবদ্ধ হতে পারলে আমরা হতাম বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী জাতি, আমাদের নেতা হতেন বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী নেতা এবং আমাদের রসুল (সা.) এর শানে বেআদবী করার আগে ইসলামবিদ্বেষীদেরকে একশবার চিন্তা করতে হত।
কিন্তু প্রশ্ন হলো, আমরা তা পারব কিনা? আমরা আল্লাহকে অনেক ভালোবাসি, আল্লাহর রসুলকেও অনেক ভালোবাসি এতে কোনো সন্দেহ নেই, কিন্তু আল্লাহ-রসুলের হুকুম মানি না। এটা উম্মাহর ঐক্য ও অস্তিত্বের জন্য খুবই ভয়াবহ একটি বার্তা। আমরা যদি এখনও হাজার হাজার ভাগে বিভক্ত থাকি আর যার যার রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, গোষ্ঠীগত স্বার্থের পালে হাওয়া দিতে থাকি, জ্ঞানের অহংকার দেখিয়ে অন্য কারো আনুগত্য করতে অস্বীকৃতি জানাই, ছোটখাটো তুচ্ছ বিষয় নিয়ে তর্ক-বিবাদ, হানাহানি, বাহাস, দ্বন্দ্ব, বিরোধ ইত্যাদি ভুলতে না পারি, তাহলে কখনই শক্তিশালী জাতি হিসেবে বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারব না। আর ইসলামবিদ্বেষীদের ষড়যন্ত্রও মোকাবেলা করতে সক্ষম হব না। কাজেই এখনই ঘুরে দাঁড়াতে হবে নতুন উদ্যোমে। আমাদেরকে অবশ্যই অপরিণামদর্শী কোনো কাজ করা যাবে না, সন্ত্রাস সৃষ্টি করা যাবে না, একজনের দোষে আরেকজনকে শাস্তি দেওয়া যাবে না, যার যা খুশি তা-ই করা যাবে না। এটা শৃঙ্খলা নয়। সকল বিভেদ ভুলে, স্বার্থ ভুলে ও অহংকার ভুলে আমাদেরকে দাঁড়াতে হবে একজন ইমামের পেছনে। গড়ে তুলতে হবে এক আল্লাহ, এক কিতাব, এক রসুলের অনুসারী অখণ্ড উম্মতে মোহাম্মদী।
[লেখক: সদস্য, সাহিত্য বিভাগ, হেযবুত তওহীদ; ফোন: ০১৬৭০-১৭৪৬৪৩, ০১৭১১-০০৫০২৫, ০১৭১১-৫৭১৫৮১]