মাননীয় এমামুযযামানের লেখা থেকে সম্পাদিত:
আল্লাহর শেষ রসুল আখেরী যামানা সম্পর্কে বোলেছিলেন, এমন সময় আসবে যখন (১) ইসলাম শুধু নাম থাকবে, (২) কোর’আন শুধু অক্ষর থাকবে, (৩) মসজিদসমূহ জাঁকজমকপূর্ণ এবং লোকে লোকারণ্য হবে কিন্তু তাতে হেদায়াহ থাকবে না, (৪) আমার উম্মাহর আলেমরা হবে আসমানের নিচে সর্বনিকৃষ্ট জীব, (৫) তাদের তৈরি ফেতনা তাদের উপরই পতিত হবে (হযরত আলী (রা:) থেকে বায়হাকী, মেশকাত)। রসুলাল্লাহর পবিত্র মুখনিঃসৃত এই বাণীগুলো আজ অক্ষরে অক্ষরে বাস্তবায়িত হোয়েছে। এর আগে আমরা ‘ইসলাম শুধু নাম থাকবে’ ও ‘কোর’আন শুধু অক্ষর থাকবে’ বর্তমানের আলোকে রসুলের এই ভবিষ্যদ্বাণীদু’টোকে আলোকপাত কোরেছিলাম। আজ আমরা আলোচনা কোরব ‘মসজিদসমূহ জাঁকজমকপূর্ণ ও লোকে লোকারণ্য হবে কিন্তু সেখানে হেদায়াহ থাকবে না’- এই বিষয়টি নিয়ে।
আল্লাহর রসুলের ভবিষ্যদ্বাণী করা তৃতীয় বিষয়টি হোচ্ছে, মসজিদসমূহ জাঁকজমকপূর্ণ ও লোকে লোকারণ্য হবে কিন্তু সেখানে হেদায়াহ থাকবে না। প্রথম অংশটির ব্যাখ্যা দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে না, কারণ এটা সকলেই জানেন যে, সারা দুনিয়াতে এমন বহু মসজিদ রোয়েছে যার গম্বুজ সোনার তৈরি। আমাদের দেশের মতো একটি দরিদ্র দেশের অলিতে গলিতে রোয়েছে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত মসজিদ, এসব মসজিদে প্রায়ই মুসল্লীদের স্থান সঙ্কুলান না হওয়ায় মসজিদ সংলগ্ন রাস্তায় চট বিছিয়ে নামাজ পড়তে দেখা যায়। কথা হোচ্ছে, রসুল বোললেন এই মসজিদগুলিতে হেদায়াহ থাকবে না। কী এই হেদায়াহ? প্রচলিত ধারণা হোল, কোনো দুষ্ট প্রকৃতির গোনাহগার লোককে যদি উপদেশ দিয়ে মদ খাওয়া ছাড়ানো যায়, চুরি-ডাকাতি ছাড়ানো যায়, তাকে নামাজী বানানো যায়, রোজা রাখানো যায় তবে আমরা বলি- লোকটা হেদায়াত হোয়েছে। এই ধারণা ভুল, কারণ মানুষ নামাজ পড়তেই মসজিদে যায় অথচ বলা হোচ্ছে সেখানে হেদায়াহ থাকবে না। তাহোলে রসুলাল্লাহর কথা মোতাবেকই বুঝা গেলো হেদায়াহ একেবারেই অন্য জিনিস। কারণ বর্তমানে যে কাজগুলিকে এবাদত মনে করা হয় যেমন নামাজ, রোজা ইত্যাদি, সেগুলি কোরলেই হেদায়াতে থাকা হোল এ ধারণা ভুল। হেদায়াহ অর্থ হোচ্ছে সঠিক দিক নির্দেশনা (Right direction, guidance, orientation) Mঅর্থাৎ আল্লাহ রসুল মানবজাতিকে যে পথ প্রদর্শন কোরেছেন, যে দিক নির্দেশনা দিয়েছেন, সেই পথে, সেই দিকে চলাই হোচ্ছে হেদায়াহ। আল্লাহ যে পথে চোলতে আদেশ দিচ্ছেন সেটা হোল সেরাতুল মোস্তাকীম- সহজ, সরল পথ, জীবনের সর্বস্তরে, সর্ব অঙ্গনে, সর্ব বিভাগে এক আল্লাহ ছাড়া আর কারো আইন-কানুন, নীতি নির্দেশ অস্বীকার করা এবং তাঁকে ছাড়া আর কারো খেলাফত না করাÑ এক কথায় তওহীদ; এই সহজ সোজা কথা। আর আজ সারা দুনিয়ার কোথাও আল্লাহকে একমাত্র এলাহ, হুকুমদাতা, সার্বভৌমত্বের মালিক হিসাবে মানা হোচ্ছে না, এমন কি ঐ জাঁকজমকপূর্ণ সোনার গম্বুজওয়ালা মসজিদগুলিতেও এই হেদায়াহ নেই, সেখানেও চোলছে তাগুতের গোলামি।
অথচ আল্লাহর রসুল এবং প্রকৃত উম্মতে মোহাম্মদী খেজুর পাতার ছাউনি দেওয়া মাটির মসজিদ থেকে অর্ধপৃথিবী শাসন কোরেছেন, তাঁদের মসজিদসমূহ কোনোই জাঁকজমকপূর্ণ ছিলো না। তবু যে ভূখণ্ডে এই জাতি শাসন কোরেছেন সেখান থেকে সমস্ত অন্যায় অবিচার, যুদ্ধ রক্তপাত, ক্ষুধা দারিদ্র্য, শোষণ এক কথায় সর্ব প্রকার অন্যায় অশান্তি লুপ্ত হোয়ে গিয়েছিল। অর্ধেক পৃথিবীর কোথাও শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষাকারী কোনো বাহিনী না থাকা সত্ত্বেও সমাজে বোলতে গেলে কোনো অপরাধই ছিলো না। সুন্দরী যুবতী নারী অলঙ্কার পরিহিত অবস্থায় শত শত মাইল পথ একা পাড়ি দিত, তার মনে কোনো প্রকার ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কাও জাগ্রত হোত না। মানুষ রাতে ঘুমানোর সময় ঘরের দরজা বন্ধ করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব কোরত না, রাস্তায় ধন-স¤পদ ফেলে রাখলেও তা খোঁজ কোরে যথাস্থানে পাওয়া যেত, চুরি, ডাকাতি, হত্যা, রাহাজানি প্রায় নির্মূল হোয়ে গিয়েছিল, আদালতে বছরের পর বছর কোনো অপরাধ সংক্রান্ত মামলা আসতো না। আর অর্থনৈতিক দিক থেকে প্রতিটি মানুষ স্বচ্ছল হোয়ে গিয়েছিল। এই স্বচ্ছলতা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছিলো যে, মানুষ যাকাত ও সদকা দেওয়ার জন্য টাকা পয়সা নিয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়াত, কিন্তু সেই টাকা গ্রহণ করার মতো লোক পাওয়া যেত না। এই পরিবেশ সৃষ্টি হোয়েছিলো, কারণ ঐ জাতি হেদায়াতে ছিলো, তওহীদে ছিলো। তাদের এলাহ, বিধাতা, হুকুমদাতা ছিলেন আল্লাহ।
আর আজ যারা সোনার গম্বুজওয়ালা মসজিদে নামাজ পড়তে যাচ্ছেন তাদের কারও এলাহ গণতন্ত্র, কারও রাজতন্ত্র, কারও সমাজতন্ত্র, কেউ সরকারী দলের, কেউ বিরোধীদলের অনুসারী, অর্থাৎ আল্লাহর সার্বভৌমত্ব কোথাও নেই। সবাই ইহুদি খ্রিস্টান ‘সভ্যতা’র অর্থাৎ দাজ্জালের সার্বভৌমত্ব মাথায় নিয়ে পাঁচ ওয়াক্ত মসজিদে দৌঁড়ে পাক্কা মুসল্লী হোচ্ছে। এ জন্যই আল্লাহর রসুল বোলেছেন, মসজিদ সমূহ ভর্তি হবে কিন্তু সেখানে হেদায়াহ থাকবে না। পাঠক, ভেবে দেখেছেন কি, মোসলেম জাতি যদি হেদায়াতেই না থাকে তবে কোথায় রোয়েছে? নিশ্চয়ই হেদায়াতের বিপরীত অর্থাৎ পথভ্রষ্টতায়, যদি সেরাতুল মোস্তাকীমেই না থাকে তবে নিশ্চয়ই রোয়েছে এবলিসের বক্রপথে। এই পথ তাদেরকে কোন গন্তব্যে নিয়ে যাচ্ছে- জান্নাতে, না জাহান্নামে?