আল্লাহর রসুল (সা.) বিদায় নেওয়ার ৬০/৭০ বছর পর ইসলামের প্রকৃত আকিদা এ জাতির সামনে থেকে হারিয়ে যায়। এর কয়েকশ বছর পর পর্যন্ত জাতির মধ্যে জন্ম নিতে থাকে শত শত ফকিহ, মুফাসসির, মুহাদ্দিস যাদের কাজই ছিল দীনের বিভিন্ন বিষয়ের ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করে মাসলা-মাসায়েল আবিষ্কার করা। আল্লাহ পবিত্র কোর’আনে দীন নিয়ে বাড়াবাড়ি করতে নিষেধ করেছেন (সুরা মায়েদা- ৭৭, ৮৭, সুরা নিসা- ১৭১) এবং আল্লাহর রসুলও বিদায় হজের ভাষণে দীন, জীবনব্যবস্থা নিয়ে বাড়াবাড়ি করতে নিষেধ করেছেন। বাড়াবাড়ি অর্থ হচ্ছে অতি বিশ্লেষণ এবং যতটুকু বলা হয়েছে তার চেয়ে বেশি বেশি করা, আধিক্য (তাশাদ্দুদ) করা। এমন কোনো কাজ দেখলে রসুলাল্লাহ রেগে লাল হয়ে যেতেন এবং যারা তা করত তাদেরকে কঠিনভাবে তিরস্কার করতেন। অত্যন্ত প্রয়োজনীয় কোনো বিষয়ে মাসলাহ জানতে চাইলে বিশ্বনবী (দ.) প্রথমে তা বলে দিতেন। কিন্তু কেউ যদি আরও একটু খুঁটিয়ে জানতে চাইত তাহলেই তিনি রেগে যেতেন। একজন সাহাবা তাকে একটু খুঁটিয়ে প্রশ্ন করাতে তিনি উষ্মাভরে বলেছিলেন- তোমাদের পূর্ববর্তী অনেক জাতি তাদের নবীদের এমনি করে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে প্রশ্ন করত, তারপর সেই উত্তরগুলি নিয়ে নানা গবেষণা করে মতভেদ সৃষ্টি হতো এবং ফলে তারা ধ্বংস হয়ে গেছে। আমি তোমাদের যতটুকু করতে বলেছি ততটুকু করতে চেষ্টা করো, ওর বেশি আমাকে প্রশ্ন করো না। [ইবনে মাসুদ (রা.) থেকে বোখারী]।
কিন্তু তাঁর অত ক্রোধেও, অত নিষেধেও কোনো কাজ হয় নি। তাঁর জাতিটিও ঠিক পূর্ববর্তী নবীদের (আ.) জাতিগুলির মত দীন নিয়ে অতিরিক্ত বাড়াবাড়ি করে অতি মুসলিম হয়ে মাসলা-মাসায়েলের তর্ক তুলে বিভেদ সৃষ্টি করল। অতি-বিশ্লেষণকারী আলেম, পণ্ডিত, ফকিহগণ দীনের প্রায় প্রত্যেকটি বিষয় নিয়ে বাড়াবাড়ি করেছেন। খাবার-দাবার থেকে শুরু করে, দাড়ি, টুপি, লেবাস, আঞ্চলিক সংস্কৃতির চর্চা, গান-বাজনা, টাখনু, কুলুখ, অজু-গোসল, দোয়া-কালাম, জিকির-আজকার, নামাজ, রোজার ইত্যাদির মাসলা মাসায়েল নিয়ে ব্যাখ্যা, অতি ব্যাখ্যা, আরো ব্যাখ্যা করে করে দীনটাকে ভীতিকর, জটিল, দুর্বহ ও দুর্বোধ্য বানিয়ে ফেলেছেন। এর যে ভয়ঙ্কার পরিণাম হলো তা হচ্ছে জাতির অর্ধেক জনগোষ্ঠী নারী গৃহবন্দী হয়ে গেল এবং মুসলিম উম্মাহ ঐক্য হারিয়ে হতবল, শক্তিহীন হয়ে শত্রুর কাছে পরাজিত হয়ে তাদের গোলামে পরিণত হলো। আজও এই উম্মাহর ঐক্যবদ্ধ হতে না পারার প্রধান কারণ হচ্ছে অতি ছোটখাটো বিষয় নিয়ে আমাদের আলেম সমাজের মধ্যে বিরাজিত বিভক্তি ও মতভেদ।
সবচেয়ে বেশি গবেষণা হয়েছে সম্ভবত নারীর পর্দা, পুরুষের দাড়ি-টুপি, লেবাস, সঙ্গীত-সংস্কৃতির বিরোধিতা ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয় নিয়ে। পর্দা নিয়ে বাড়াবাড়ি করার কারণে জাতির নারীরা ধীরে ধীরে গৃহবন্দি হয়ে গেল। কিন্তু প্রকৃত ইসলামের শিক্ষাটি কী সেটা জানার জন্য আমাদেরকে এসব মাসলা-মাসায়েলের কেতাব না দেখে দেখতে হবে আল্লাহ নারীদের সম্পর্কে কী বলেছেন এবং রসুলাল্লাহ যে সমাজ নির্মাণ করেছেন সেখানে তাদেরকে কী অবস্থানে রেখেছেন।
মসজিদে নারী: আরব জাতি ছিল ঐক্যহীন। তাদেরকে আল্লাহর তওহীদের ভিত্তিতে ঐক্যবদ্ধ করাই ছিল রসুলাল্লাহর সামনে বড় চ্যালেঞ্জ। জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করার প্রশিক্ষণ প্রদান করার জন্য কেন্দ্র হিসাবে রসুলাল্লাহ প্রতিষ্ঠা করলেন মসজিদে নববী। সেখানে তিনি নারী-পুরুষ নির্বিশেষে জাতির সকল সদস্যের উপস্থিতি নিশ্চিত করলেন। এটা প্রতিষ্ঠিত ইতিহাস যে রসুলাল্লাহর যুগের মো’মেন নারীরা পাঁচ ওয়াক্ত সালাত মসজিদে পুরুষদের সঙ্গে একই জামাতে কায়েম করতেন। তথাপি আজকে আমাদের সমাজের মসজিদে কেবল পুরুষদেরকেই দেখা যায়। অনেক মসজিদে এও লেখা থাকে যে, মহিলাদের প্রবেশ নিষেধ। কিন্তু রসুলাল্লাহর যুগ থেকে মসজিদে নববীতে আজও নারী ও পুরুষরা একই জামাতে সালাহ কায়েম করে আসছেন। মক্কার মসজিদুল হারামেও নারী-পুরুষ একত্রেই সালাহ করছেন, হজ্ব করছেন। ইতিহাস হচ্ছে, পুরুষরা রসুলের ঠিক পেছনে কাতারবদ্ধ হয়ে দাঁড়াতে শুরু করতেন এবং প্রথম কাতারটি পূর্ণ হয়ে গেলে তার পেছনের কাতারে দাঁড়াতেন। অন্যদিকে, নারীরা মসজিদের সর্বশেষ কাতার থেকে দাঁড়াতে শুরু করতেন এবং সর্বশেষ কাতারটি পূর্ণ হয়ে গেলে তার সামনের কাতারে দাঁড়াতেন। আর ছোট ছেলেরা পুরুষ ও নারীদের মাঝখানে কাতারবদ্ধ হয়ে দাঁড়াত।
নারী-পুরুষের কাতারের মাঝখানে কোনো দেয়াল বা পর্দা ছিল না। বরং পুরুষদের শেষ কাতারের পরেই সরাসরি নারীদের প্রথম কাতার ছিল। অনেকগুলো হাদিসে এই বিষয়টি বর্ণিত হয়েছে। যেমন একজন প্রসিদ্ধ নারী সাহাবি আসমা বিনতে আবু বকর (রা.) বলেন, আমাদের মধ্য থেকে রসুলাল্লাহ উঠে দাঁড়ালেন এবং আমাদের উদ্দেশ্য বক্তব্য প্রদান করলেন। তিনি বললেন, আসল ফিতনা হলো যা কোনো মানুষের কবরে ঘটে থাকে। কথাটি বলার পরেই লোকজন আওয়াজ করতে লাগলো। ফলে রসুলের শেষ কথাটি বুঝতে আমার সমস্যা হয়েছিল (সহিহ বোখারি, জানাজা অধ্যায়, ৩/৪৭৯)। তারপর লোকেরা নীরব হলে আমি আমার কাছের পুরুষ সাহাবিকে বললাম, “আল্লাহ আপনার মঙ্গল করুন! রসুল (সা.) তাঁর বক্তব্যের শেষে কী বলছিলেন?” পুরুষটি জবাব দিলেন, “রসুলাল্লাহ বললেন, আমার উপর এই মর্মে ওহী অবতীর্ণ হয়েছে, তোমরা কবরে যে ধরনের ফেতনার সম্মুখীন হবে, সেটা দাজ্জালের ফিতনার মতোই।” (বোখারি, নাসায়ী ৭/২০০)।
এরপর ফাতিমা বিনতে কায়েস (রা.) বলেন, “জামায়াতে সালাহ কায়েমের উদ্দেশ্যে মানুষদেরকে আহ্বান করা হলো। তাদের সাথে আমিও নামাজ আদায় করতে গেলাম। আমি ছিলাম নারীদের প্রথম কাতারে এবং আমার কাতারটি ছিল পুরুষদের কাতারের ঠিক পেছনে। রসুলাল্লাহ সালাত শেষে হাসতে হাসতে মিম্বরে বসলেন। তিনি বললেন, প্রত্যেকেই নিজ নিজ সালাতের স্থানে বসে থাকো। তারপর বললেন, তোমরা কি জান, আমি কেন তোমাদের সমবেত করেছি? সবাই বললো, আল্লাহ ও তাঁর রসুলই সর্বাধিক অবগত। তিনি বললেন, আল্লাহর শপথ! আমি তোমাদের কোনো উৎসাহব্যঞ্জক বা ভীতিকর খবরের জন্য সমবেত করিনি। বরং এ উদ্দেশ্যে সমবেত করেছি যে, তামীমে দারী নামক এক ব্যক্তি আমার কাছে এসেছে। সে ছিল একজন খ্রিস্টান। সে আমার কাছে এমন একটি ঘটনা বর্ণনা করেছে যা আমি মাসীহে দাজ্জাল সম্পর্কে তোমাদের ইতোপূর্বে যে কথা বলেছিলাম তার সাথে হুবহু মিলে যায়…।” (সহিহ মুসলিম, ফিতনা অধ্যায়, ৮/২০৫।)
এই ঘটনাগুলো কী প্রমাণ করে? এটাই প্রমাণ করে যে, রসুলের যুগে নারী-পুরুষ একত্রে মসজিদে সালাহ কায়েম করতেন। সালাতের সময় বা আলোচনার সময় তাদের মধ্যে কোনো পর্দা টাঙানো থাকত না।
জুমার দিনে রসুলাল্লাহর কাছ থেকে নারীদের শিক্ষাগ্রহণ: রসুলুল্লাহ (স.) বক্তব্য দেওয়ার সময় নারীরা তাঁর সম্মুখেই বসে থাকতেন। এমনও হয়েছে, কোনো কোনো নারী রসুলের (স.) কাছ থেকে সরাসরি তেলাওয়াত শুনে কোর’আনের অনেক আয়াত মুখস্থ করে ফেলেছেন। উম্মে হিশাম বিনতে হারেসা বিন নোমান (রা.) বলেন, রসুল (স.) প্রত্যেক জুমায় তাঁর বক্তব্যে সুরা কাফ তেলাওয়াত করতেন। আমি কেবল তাঁর নিকট থেকে শুনেই সুরাটি মুখস্থ করে ফেলেছিলাম। (সহিহ মুসলিম, জুম’আ অধ্যায়, ৩/১৩)
ইবনে আব্বাস (রা.) হতে বর্ণিত আরেকটি হাদিস বোখারি ও মুসলিম শরিফে রয়েছে। তিনি বলেন, উম্মুল ফজল বিনতে হারেস (রা.) আমার কাছ থেকে সুরা মুরসালাত পাঠ করতে শুনেছিলেন। উম্মুল ফজল মন্তব্য করলেন, হে বৎস আমার! তোমার তেলাওয়াত আমাকে মনে করিয়ে দিল, আল্লাহর রসুলের (স.) নিকট থেকে আমার শোনা এটাই হচ্ছে সর্বশেষ সুরা। মাগরিবের নামাজে তিনি এটি তেলাওয়াত করেছিলেন। (সহিহ বোখারি, আজান অধ্যায়, ২/৩৮৮। সহিহ মুসলিম, সালাত অধ্যায়, ২/৪০।)
নফল সালাতে রসুলের সঙ্গে নারী:
আসমা বিনতে আবু বকর (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহর (স.) জীবদ্দশায় একবার সূর্যগ্রহণ হয়েছিল। তারপর আমি এসে মসজিদে প্রবেশ করে দেখতে পেলাম, রাসুলুল্লাহ (স.) নামাজে দাঁড়িয়ে আছেন। আমিও তাঁর সাথে দাঁড়িয়ে নামাজে সামিল হলাম। তিনি এত দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকলেন যে আমার বসে যেতে ইচ্ছা করছিল। এমন সময় আমি খেয়াল করলাম, একজন দুর্বল মহিলাও আমার পাশে দাঁড়িয়ে আছে। তখন আমি বললাম, এই মহিলা তো আমার চেয়েও দুর্বল। কাজেই আমিও দাঁড়িয়ে থাকলাম। এরপর রসুলুল্লাহ (স.) রুকু করলেন। রুকুতে তিনি দীর্ঘ সময় থাকলেন। তারপর মাথা উঠিয়ে এমনভাবে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে রইলেন যে, বাইরে থেকে তখন কেউ আসলে তার কাছে মনে হবে, তিনি বুঝি রুকুই করেননি। (সহিহ মুসলিম, সূর্যগ্রহণ অধ্যায়, ৩/৩২।)
আলোচনাসভায় রসুলাল্লাহর সঙ্গে নারীদের কথোপকথন:
একদিন রসুলাল্লাহ সাহাবিদের সঙ্গে মসজিদে নববীতে বসে আছেন। সেখানে উপস্থিত হলেন নারী সাহাবি ফাতেমা বিনতে উতবা (রা.)! তিনি বিনয়ের সাথে আরয করলেন- “ইয়া রসুলাল্লাহ! একটা সময় ছিল যখন আমি কামনা করতাম দুনিয়ার মধ্যে যদি কেবল আপনার ঘরটাই ধ্বংস হয়ে যেত-আর সবই থাকত ঠিকঠাক। আর আজ আপনার প্রতি আমার ভালোবাসা এমন- আমার মন বলে এই পৃথিবীতে আর কারও ঠিকানা থাকুক আর না থাকুক, আপনারটা যেন অটুট থাকে।”
একথা শোনার পর রসুল (সা.) বললেন: “দেখ, যতক্ষণ পর্যন্ত আমাকে তোমার নিজের সত্তার চাইতেও অধিক ভালো না বাসবে ততক্ষণ পর্যন্ত তুমি মো’মেনই হতে পারবে না।” ফাতিমা (রা.) বললেন, “হে রসুল (সা.)! আপনি আমার কাছে আমার জীবনের চাইতেও অধিক প্রিয়!”
এখানেও লক্ষ্যণীয় যে, মসজিদে রসুলাল্লাহর আলোচনা চলাকালে নারী-পুরুষ উভয়েরই অবাধ যাতায়াত ছিল এবং নারীদেরকে সেখানে বিচ্ছিন্ন করে রাখার কোনো পদ্ধতি ছিল না।
বর্তমানে নারীদের মসজিদে যাওয়ার কথা শুনলেই এক শ্রেণির মানুষ তেলেবেগুনে জ্বলে ওঠেন। তাদের যুক্তি হলো, নারীরা মসজিদে গেলে তারা নাকি অমনোযোগী হয়ে পড়বেন, ফলে নামাজই পড়তে পারবেন না। তাছাড়া পরবর্তী যুগের আলেমরা নাকি ইজমা কিয়াস করে রসুলের সময়ের এই নিয়মকে পাল্টে দিয়েছেন।
প্রশ্ন হচ্ছে- প্রকৃত ইসলাম তাহলে কোনটি? এবার আসুন দেখি কোর’আন কী বলে। সুরা আরাফের ৩১ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলেন, , “Children of Adam! Wear your beautiful apparel at every time and place of prayer. “হে আদম সন্তানেরা! তোমরা সালাতের উদ্দেশ্যে মসজিদে যাওয়ার সময় উত্তম পোশাক পরবে।” (সুরা আরাফ, ৩১)।
এখানে আল্লাহ কেবল পুরুষদেরকে মসজিদে যেতে বলেন নি, সম্বোধন করেছেন – ‘হে আদমসন্তান’, যার মধ্যে নারী ও পুরুষ উভয়েই পড়ে। সুতরাং এই হুকুম স্বয়ং আল্লাহর, কোনো মানুষের এ বিষয়ে ভিন্ন হুকুম দেওয়ার কোনো এখতিয়ারই নেই। প্রয়োজনে সমাজব্যবস্থা পাল্টাতে হবে এবং সমাজকাঠামোকে আল্লাহর হুকুম মান্য করার অনুকূলরূপে সাজাতে হবে। ঘুনে ধরা বিকৃত প্রথাকে ধর্মের বাতাবরণ দিয়ে সেটাকে আল্লাহ রসুলের নাম দিয়ে চালিয়ে যাবার সুযোগ নেই। অথবা একটি ব্যবস্থা আল্লাহর রসুলের সময়ে কায়েম হয়েছে, এখন পরিবর্তিত সময়ে সেটা আবার প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয় বলে এড়িয়ে যাওয়ারও সুযোগ নেই। কারণ ইসলাম একটি চিরন্তন জীবনব্যবস্থা।
মসজিদে নববীর ঝাড়ুদার নারী:
আমরা অনেকে হয়ত এও জানি না যে, রসুলাল্লাহর সময় মসজিদে নববী ঝাড়ু দিতেন একজন মহিলা সাহাবি। তিনি যেদিন মারা যান সেদিন রসুলাল্লাহর সাহাবিরা নিজেদের উদ্যোগে তাঁর জানাজা ও দাফন করেন। তাঁর মৃত্যুসংবাদ রসুলাল্লাহকে জানানো হয়েছিল না। তিনি যখন সংবাদটি জানলেন খুব আফসোস করে বললেন, ‘তোমরা যদি আমাকে খবরটি দিতে’। [বোখারি, সালাত অধ্যায়, হা/৪৫৮; মুসলিম, ‘জানাজা’ অধ্যায়, হা/৯৫৬।]
জানাজার সালাতে নারী:
প্রচলিত ইসলামের ধ্যান-ধারণা মোতাবেক নারীদের কারো জানাজায় অংশগ্রহণের অনুমতি নেই, এমন কি স্বামী সন্তানের জানাজাতেও না, নারীদের জানাজাতেও না। কিন্তু প্রকৃত ইসলামের ইতিহাস অন্য কথা বলে। রসুলাল্লাহর ঘনিষ্ঠ সাহাবি সা’দ বিন আবি ওয়াক্কাস (রা.) যখন এন্তেকাল করেন তখন রসুলাল্লাহর স্ত্রীগণ তাঁর জানাজায় অংশ গ্রহণের জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেন এবং তাঁর মৃতদেহ মসজিদে নিয়ে আসার জন্য বলেন। তাঁদের কথা মোতাবেক সা’দ বিন আবি ওয়াক্কাসের (রা.) দেহ মসজিদে নববীর অভ্যন্তরে নিয়ে আসা হয়। তখন তাঁর জানাজার সালাতে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে বহু সাহাবি অংশগ্রহণ করেন। রসুলাল্লাহর স্ত্রীগণও তাতে অংশগ্রহণ করেন। এ হাদিসটি সহিহ মুসলিম শরীফের জানাজা অধ্যায়ের মসজিদে জানাজা পড়া অনুচ্ছেদের (৩য় খণ্ড) ৬৩ পৃষ্ঠায় রয়েছে।
এ ঘটনাটি থেকে এটা সুস্পষ্ট হয়ে যায় যে, নারীদেরকে জানাজায় অংশ গ্রহণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার সিদ্ধান্তটি ইসলামের নয়, এই ধ্যান ধারণার জন্ম হয় বহু পরে যখন পর্দা প্রথার নামে নারীদেরকে পেছনে ফেলে রাখার নানা মাসলা-মাসায়েল আবিষ্কার করা হয় তখন। সেসব মিথ্যা বানোয়াট মাসলা-মাসায়েলের জালে আটকা পড়ে আছে আজকের নারীরা।