গত ২৬ ফেব্বরুয়ারি ২০১৭ তারিখে ঢাকার লা ভিঞ্চি হোটেলে এক মতবিনিময় অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। বর্তমান সময়ে চলমান মহাসংকটের পরিধিকে একত্রে চিন্তা করতে গেলে কোনো বিবেকবান চিন্তাশীল মানুষ স্থির থাকতে পারে না। মানবজাতি তার ভিতরে, আত্মিকভাবে দেউলিয়া, বাইরে সর্বপ্রকার বিপর্যয়ের শিকার। কারো কোনো নিরাপত্তা নেই, চরম অর্থনৈতিক বৈষম্য বিরাজ করছে, শোষণমূলক পুঁজিবাদ মাত্র আটজন ব্যক্তির হাতে পৃথিবীর অর্ধেক জনগোষ্ঠীর সম্পদ তুলে দিয়েছে, দুর্বৃত্তরা সম্মানের আসন পাচ্ছে, শিক্ষক ছাত্রের হাতে মার খাচ্ছে, সৎ ব্যক্তি জীবনমানের ঊর্ধ্বশ্বাস দৌড়ে সর্বত্র পিছিয়ে পড়ছে। সমস্ত দুনিয়াটা যেন এক নরককু-ে পরিণত হয়েছে।
পৃথিবীর চারদিক থেকে আর্ত মানুষের হাহাকার উঠছে- শান্তি চাই, শান্তি চাই। দুর্বলের ওপর সবলের অত্যাচারে, দরিদ্রের ওপর ধনীর বঞ্চনায়, শোষণে, শাসিতের ওপর শাসকের অবিচারে, ন্যায়ের ওপর অন্যায়ের বিজয়ে, সরলের ওপর ধুর্তের বঞ্চনায়, পৃথিবী আজ মানুষের বাসের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। নিরপরাধ ও শিশুর রক্তে আজ পৃথিবীর মাটি ভেজা। পরিসংখ্যান বলছে, পৃথিবীর প্রতিটি দেশে খুন, হত্যা, চুরি, ডাকাতি, রাহাজানি, ধর্ষণ ইত্যাদি সর্বরকম অপরাধ প্রতি বছর বেড়ে চলেছে ববং বেড়ে চলেছে লাফিয়ে লাফিয়ে। এর শেষ কোথায়? এর পরিণতি চিন্তা করে সুস্থমস্তিষ্ক মানুষ আজ দিশাহারা। এর ওপর আবার ভয়াবহ বিপদ দাঁড়িয়েছে পারমাণবিক অস্ত্রের যা যে কোনো মুহূর্তে সমস্ত মানবজাতিসহ পৃথিবী গ্রহটাকেই ভেঙে ফেলতে সক্ষম।
আমাদেরকে যেমন মানবজাতি সম্পর্কে চিন্তা করতে হবে তেমনি বাঙালি জাতিকে নিয়েও চিন্তা করতে হবে, মুসলমান সম্প্রদায়কে নিয়েও চিন্তা করতে হবে। বাংলাদেশের বাসিন্দাদের উদ্বিগ্ন হওয়ার বড় কারণ হচ্ছে এ দেশের ৯০% জনগণ ধর্মীয় পরিচয়ে মুসলমান আর পরাশক্তিধর রাষ্ট্রগুলো চলমান সভ্যতার সংঘাতে একটার পর একটা মুসলিমপ্রধান দেশ ধ্বংস করছে, দখল করে নিচ্ছে, তাদের লক্ষ লক্ষ মানুষ হত্যা করছে, কোটি কোটি জনগণকে উদ্বাস্তু করছে। বাংলাদেশকেও যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত করার অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র চলমান আছে বলে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীসহ অনেক দায়িত্বশীল ব্যক্তি বারংবার উল্লেখ করেছেন।
বর্তমানে বিশ্বে ধর্ম প্রধান ইস্যু, ইউরোপ আমেরিকার দেশগুলো ধর্মবিশ্বাস ও ইসলাম-বিদ্বেষকে রাজনৈতিক ট্রাম্প কার্ড হিসাবে ব্যবহার করছে। এই ধর্ম সংক্রান্ত সংকট থেকে জাতিকে রক্ষা করতে হলে ধর্ম নিয়ে এখন সবাইকে কথা বলতে হবে, নইলে দেশ রক্ষা করাই মুশকিল হয়ে যাবে।
ইউরোপের রেনেসাঁ ও বর্তমান সংকট:
আমরা যদি অতীতের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করি দেখতে পাব যে, ঠিক এমনই সঙ্কটময় কালে ইউরোপে রেনেসাঁর সূত্রপাত হয়েছিল, যে সময়টিকে আমরা মধ্যযুগীয় বর্বরতার সময় বলে আখ্যায়িত করি। সেখানে ধর্মযাজক ও রাজতন্ত্রের যৌথশাসন মানুষের জন্য শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছিল। ধর্মের নামে যাবতীয় অযৌক্তিক, অবৈজ্ঞানিক চিন্তা, কূপম-ূকতা, অন্ধত্বের প্রসার চূড়ান্তরূপ ধারণ করেছিল। কোনো চিন্তাশীল মানুষ, দার্শনিক, সাহিত্যিক, বিজ্ঞানী বা যে কোনো পরিবর্তনকামী মানুষ গির্জার অনাচারের বিরুদ্ধে টু শব্দ করলেই তাকে পুড়িয়ে মারা হতো, শূলে চড়ানো হতো, গিলোটিনে শিরচ্ছেদ করা হতো, ফুটন্ত তেলের পাত্রে ফেলে দেওয়া হতো। ধর্মের নামে পৈশাচিক বর্বরতা ও অভিজাত শ্রেণির শোষণ থেকে মুক্তির জন্য পথের সন্ধান করতে লাগল মানুষ। তারা ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রের (ঝবপঁষধৎ ংঃধঃব) ধারণা উদ্ভাবন করলেন। প্রস্তাব করলেন শোষণমুক্ত অর্থনৈতিক ব্যবস্থা। শিল্পীরা তাদের ছবি ও ভাস্কর্যের মধ্যে এমন বিস্ময়কর মেধার প্রতিফলন ঘটালেন যা শত শত বছর পরেও গবেষণার বস্তু হয়ে আছে। নাট্যকারেরা অচলায়তন ভাঙার নাটক লিখলেন, সাহিত্যিকরা লিখলেন কবিতা, উপন্যাস। সবকিছুর উদ্দেশ্য ছিল একমুখী – এমন একটি সমাজ গড়ে তোলা যেখানে মানুষ কেবল পরকালের সুখের প্রলোভনে পৃথিবীতে অবর্ণনীয় দুঃখ সহ্য করবে না বরং পার্থিব জীবনেই স্বর্গসম শান্তিময়, নিরাপদ জীবন যাপন করবে, বাকস্বাধীনতাসহ সকল মানবাধিকার পূর্ণরূপে উপভোগ করবে। রেনেসাঁর একটি অর্থ হচ্ছে পুনর্জন্ম। রেনেসাঁ মধ্যযুগীয় বর্বরতার মহাশ্বশ্বানে নতুন ফুল ও ফসলের আগমনী গান শোনালো। উদারনৈতিক গণতন্ত্র, সাম্যবাদসহ বিভিন্ন মতবাদের জন্ম হল, সমাজ ব্যবস্থায় ভাঙাগড়া চলতে লাগল। সেই ঢেউ ছড়িয়ে পড়ল সমগ্র পৃথিবীতে এমনকি আমাদের এখানেও। কিন্তু পরিণামে আমরা কী দেখতে পেলাম? আমরা অনেক প্রযুক্তি পেলাম, বস্তুগত অগ্রগতি পেলাম কিন্তু শান্তি পেলাম না। মানুষ ভেবেছিল এমন একটি পৃথিবী পাবে যেখানে শাসনব্যবস্থায় তার অংশগ্রহণ থাকবে, মন খুলে কথা বলতে পারবে, তার পরিপূর্ণ ব্যক্তিস্বাধীনতা থাকবে। অথচ বাস্তবে কী দেখছি? সেই দুর্বলের উপর সবলের অত্যাচার, দরিদ্রের উপর ধনীর বঞ্চনা। যেভাবে আজ আকাশ থেকে বোমা ফেলে, মিসাইল ছুঁড়ে ইরাকসহ একটার পর একটা স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রকে নানা প্রকার অজুহাত দাঁড় করিয়ে ধ্বংস করে দেওয়া হচ্ছে তাতে ব্যক্তি স্বাধীনতা দূরের কথা, দেশ রক্ষার ক্ষেত্রে কোনো রাষ্ট্রের সীমানারও বিশেষ কোনো তাৎপর্য আর থাকে না। কেবল চোরাকারবারীদের মাদকদ্রব্য, গরু ইত্যাদি পাচার নিয়ন্ত্রণ এবং অবৈধ অভিবাসী আখ্যা পাওয়া উদ্বাস্তু অসহায় জনতাকে বাধা দেওয়ার কাজে সীমান্ত কাঁটাতার ব্যবহৃত হচ্ছে। রেনেসাঁর আদর্শে অনুপ্রাণিত সভ্যরাষ্ট্রগুলো সম্মিলিতভাবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে কোটি কোটি মানুষ হত্যা করার মধ্য দিয়ে যে ভয়াবহ ধ্বংসযজ্ঞ ঘটিয়েছে সেটার পর যে স্বপ্ন নিয়ে বস্তুবাদী দর্শনের রেনেসাঁ ঘটেছিল সেই স্বপ্ন ধূলায় মিশে যায়। তখন থেকে আর কোনো মানবতাবাদী শান্তিদায়ক আদর্শ পৃথিবীতে আধিপত্য করছে না, তখন থেকে চলছে জবরদস্তিমূলক শাসন, পারমাণবিক অস্ত্রের শাসন।
জঙ্গিবাদ ইস্যুটি একটি অতি কার্যকর পন্থা যাকে দক্ষতার সাথে ব্যবহার করে যুদ্ধক্ষেত্র তথা অস্ত্রের বাজার সম্প্রসারণ করে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, রাশিয়ার মতো রাষ্ট্রগুলো। জঙ্গিগোষ্ঠীগুলোকে তারাই কয়েকটি ধর্মব্যবসায়ী আরব রাষ্ট্রের সহযোগিতায় প্রয়োজনীয় শত্রুরূপে সৃষ্টি করছে।
জেহাদ-কেতাল, উন্মাদনা ও জঙ্গিবাদ
অনেকেই জঙ্গিবাদের উৎপত্তির দায় কোর’আনের উপর চাপাতে ব্যস্ত থাকেন। অথচ জেহাদ আর সন্ত্রাস কখনও এক নয়। প্রতিটি মানুষকে এখন এই ফারাক বুঝতে হবে যেন কেউ কোর’আন দেখিয়ে জেহাদের কথা বলে কাউকে সন্ত্রাসে লিপ্ত করতে না পারে। একইভাবে ধর্মীয় জনগোষ্ঠীকে উস্কানি দিয়ে ক্ষেপিয়ে তুলে দাঙ্গা পরিস্থিতি (গড়ন) সৃষ্টি করা, অপর কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর উপর ধর্মীয় নৃশংসতায় হামলা চালানো আর ইসলামের জেহাদ-কেতাল এক বিষয় নয়, এদের মধ্যে সামান্যতম সংশ্লিষ্টতাও নেই।
কেবল মানুষের অজ্ঞতাকে পুঁজি করেই ধর্মব্যবসায়ী গোষ্ঠী দুর্বলের উপর ফতোয়াবাজি করে উশৃঙ্খল জনতাকে ‘তওহীদী জনতা’ আখ্যা দিয়ে ভয়াবহ সাম্প্রদায়িক হামলা চালায়। আবার ভিন্নমতের মানুষকে গুপ্তহত্যা করারও কোনো বৈধতা আল্লাহ-রসুলের ইসলাম দেয় না। তবু জেহাদের নাম দিয়ে সেটা বেশ জোরেসোরেই চালিয়ে যাচ্ছে কিছু গোষ্ঠী। ধর্মের নামে চলা এসব ভয়ঙ্কর অপকর্ম ইসলামের বিরুদ্ধে মানুষের মনকে দিন দিন বিষিয়ে তুলছে, মুসলিমদেরকে ঘৃণার পাত্রে পরিণত করছে। আমরা অকাট্য যুক্তি, দলিল ও প্রমাণসহকারে এসবের বিরুদ্ধে আদর্শিক লড়াই করে যাচ্ছি, যেন এসব ভ্রান্ত ব্যাখ্যার বিষয়ে এ দেশের আপামর ধর্মবিশ্বাসী জনগোষ্ঠী সোচ্চার হয়। আমরা দ্ব্যার্থহীন ভাষায় বলছি, এগুলো একটাও ইসলাম নয়।
হুজুগনির্ভর ধর্মোন্মাদনা ইসলামে নেই:
এটা সরল সত্য যে গুজব বা হুজুগ কখনওই কোনো শুভফল বয়ে আনতে পারে না। বরং এ দুটোকে ব্যবহার করে সর্বযুগে রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিক স্বার্থ হাসিল করে কিছু মহল। ভাবতে অবাক লাগে মুসলমানেরা কী করে হুজুগ আর গুজবে অভ্যস্ত হয়ে উঠলো! একটা গুজব ছড়িয়ে দেয়া হয় আর মুহূর্তের মধ্যে হাজার হাজার মানুষ হৈ হৈ রৈ রৈ করে ধ্বংসাত্মক ও সহিংস কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হয়। এতে বদনাম হয় ধর্মের, অবমাননা হয় আল্লাহর, রসুলের। শোনা কথায় কান দিয়ে আকস্মিক আবেগের বশে কোনো কাজ করা আল্লাহর সরাসরি নিষেধ, ইসলাম এর ন্যূনতম সম্ভাবনাকেও প্রশ্রয় দেয় না বরং নির্মূল করে দেয়। উড়ো কথা প্রচার করা বা কারো উপর অপবাদ আরোপ করা ইসলামের দৃষ্টিতে দ-নীয় অপরাধ।
রসুলাল্লাহর জীবনে এমন একটি ঘটনাও নেই যেখানে সাহাবীরা গুজবে মেতে কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর ক্ষতিসাধন করেছেন। তিনি দাঙ্গাবাজ ছিলেন না, তিনি ছিলেন যোদ্ধা। তিনি চিরকাল নিজের সেনাবাহিনীর চেয়ে বহুগুণ শক্তিশালী বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছেন আর দুর্বল শত্রুকে ক্ষমা করেছেন, এটাই তাঁর জীবনে আমরা বার বার দেখতে পাই। এটাই হচ্ছে বীরত্বের নিদর্শন। বীর যুদ্ধ করে, কাপুরুষ দাঙ্গা করে।
ফতোয়াবাজ কথিত আলেমরা আজ হিন্দুর বিরুদ্ধে, কাল কাদিয়ানীর বিরুদ্ধে, পরশু অমুক ব্যক্তির বিরুদ্ধে নাস্তিকতা বা কাফের-মুরতাদ ফতোয়া দিয়ে গলা ফাটিয়ে ওয়াজ করে একটি উত্তেজনা সৃষ্টি করে দেন। ফলে কোনো সংখ্যালঘু দুর্বল শ্রেণি ধর্মোন্মাদ তওহীদী জনতার রোষাণলে ভস্মীভূত হয়ে যায়। বিগত সময়ে কত মানুষকে তারা হত্যা করেছে, কত মানুষের বাড়িঘর তারা জ্বালিয়ে দিয়েছে তার কোনো ইয়ত্তা নেই। এটাই হচ্ছে ফিতনা। যখন এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটে তখন তা চলে যায় স্বার্থান্বেষী রাজনৈতিক গোষ্ঠীর হাতে। তারা এটা নিয়ে নোংরা রাজনীতির খেলায় মেতে ওঠে।
এই ফেতনা সৃষ্টিকারীদের পরিণতি কী হবে?
আল্লাহর রসুল এ কথাটিও সুস্পষ্টভাবে বলে গেছেন যে তাঁর উম্মাহর মধ্যে কারা ফেতনা সৃষ্টি করবে। তিনি বলেছেন, এমন সময় আসবে যখন- (১) ইসলাম শুধু নাম থাকবে, (২) কোর’আন শুধু অক্ষর থাকবে, (৩) মসজিদসমূহ জাঁকজমকপূর্ণ ও লোকে লোকারণ্য হবে কিন্তু সেখানে হেদায়াহ থাকবে না, (৪) আমার উম্মাহর আলেমরা হবে আসমানের নিচে সবচেয়ে নিকৃষ্ট জীব, (৫) তাদের তৈরি ফেতনা তাদের ওপর পতিত হবে। [আলী (রা.) থেকে বায়হাকী, মেশকাত]
যারা ধর্মের শিক্ষা দিয়ে, ধর্মের কাজ করে ব্যক্তিস্বার্থ হাসিল করে, ধর্মকে জীবিকার হাতিয়ারে পরিণত করে তারা সমাজে প্রচলিত অন্যায়ের বিরুদ্ধে সত্যভাষণের শক্তি ও যোগ্যতা হারিয়ে ফেলে। সে যখন একজন অসাধু ব্যক্তির থেকে সুবিধা গ্রহণ করে তখন তার মস্তক সেই টাকার কাছে বিকিয়ে যায়, সেই সাথে ধর্মও বিক্রি হয়ে যায়।
সুতরাং এখনও সময় আছে ধর্মব্যবসায়ীদের হাত থেকে ধর্মানুভূতির নিয়ন্ত্রণ সরিয়ে নিতে হবে, মানুষকে ধর্মের প্রকৃত শিক্ষা দিতে হবে যেন তারা আর কারো দ্বারা প্রতারিত না হয়। এই ক্ষেত্রটিতে গণমাধ্যমগুলোর কার্যকর ভূমিকা নেওয়া অপরিহার্য বলে আমরা অনুভব করি। কিন্তু আমাদের কথা হচ্ছে ধর্মের বিরোধিতা করে, ধর্মবিদ্বেষ প্রচার করে এই সন্ত্রাসকে রোখা যাবে না। ধর্মীয় দলিল দিয়ে করতে হবে, ধর্মের প্রকৃত শিক্ষা তুলে ধরার মাধ্যমেই বিকৃত শিক্ষার অপনোদন অপসারণ করতে হবে। আল্লাহর দয়ায় সেই আদর্শ আমরা লাভ করেছি এবং সেটা প্রচারের মাধ্যমে ইসলামের নামে প্রচলিত ভ্রান্তি নিরসনের চেষ্টা করছি।
আমরা সকল অধর্মের বিরুদ্ধে, অন্যায়ের বিরুদ্ধে, সন্ত্রাস জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে, কূপম-ূতকার বিরুদ্ধে যে মহাজাগরণ সৃষ্টির চেষ্টা করছি, সেই রেনেসাঁ ঘটানোর সংগ্রামে গণমাধ্যমকেও আমাদের সাথে চাই। আমরা বিশ্বাস করি, সেটা আপনারাই ঘটাবেন। আমরা মাঠের মানুষ, মাঠে কাজ করছি। আপনারা যে দায়িত্বশীল অবস্থানে আছেন সেখান থেকেই এ লড়াইতে আমাদের সহযোগিতা করবেন বলে আশা করি। নব্বই দশকে আফগানিস্তান যুদ্ধপরবর্তী সময়ে আমাদের দেশেও একটি শ্লোগান বারবার শোনা গেছে যে, “আমরা হবো তালেবান, বাংলা হবে আফগান”। নানা কারণে এ জাতীয় শ্লোগান এখন আর রাজপথে দেওয়া না হলেও সেই চেতনা কিন্তু অদৃশ্য হয়ে যায় নি, বরং বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে, প্রসারিত হয়েছে। আমরা হেযবুত তওহীদ তালেবান হতে চাই না, বাংলাকেও আফগান বানাতে চাই না। আমরা জানি আফগান এখন বোমায় চষা জমি, পুরো দেশটা একটি বৃহৎ গণকবরের রূপ নিয়েছে। তাদের দেশের লক্ষ লক্ষ শিশু প্রতিবন্ধী হয়েছে, লক্ষ লক্ষ নারী ধর্ষিতা হয়েছে, তালেবানরা তাদের রক্ষা করতে পারে নি। আমরা নিয়তিবাদী নই, আমরা বিশ্বাস করি মানুষ যতটুকু চেষ্টা করে ততটুকুই সে ফল লাভ করে। এজন্য আমাদের এখন সম্মিলিতভাবে জাতির অবস্থা পরিবর্তনের চেষ্টা চালাতে হবে। এটা পরিবর্তনের সময়, এটা মহাকালের যুগসন্ধিক্ষণ। সবাইকে আবারও জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।