হুমায়ূন কবির:
শ্রীমদভাগবতগীতার উদ্গাতা শ্রীকৃষ্ণের সঠিক পরিচয়কে উদ্ঘাটন কোরতে গিয়ে বহু মনীষী, জ্ঞানী-গুণী পণ্ডিত ব্যক্তি সুগভীর গবেষণা কোরেছেন। তাদের অনেকেই অভিমত দিয়েছেন যে, আল্লাহ সকল জাতিগোষ্ঠীতে ও জনপদে ঐ এলাকার ভাষায় রচিত ধর্মগ্রন্থ সহকারে তাঁর নবী-রসুলদেরকে পাঠিয়েছেন। কিন্তু ঐ নবীদের বিদায়ের পরে তাঁর শিক্ষা ও ধর্মগ্রন্থ বিকৃত কোরে ফেলা হোয়েছে। ফলে ঐ এলাকার মানুষকে নতুন কোরে পথ দেখাতে আবির্ভূত হোয়েছেন অন্য নবী যারা পূর্বের বিকৃত গ্রন্থকে রদ ঘোষণা কোরেছেন এবং নতুন বিধান জাতিকে প্রদান কোরেছেন। কেউ তাকে মেনে নিয়েছে, কেউ মেনে নেয় নি। এভাবে জন্ম হোয়েছে একাধিক ধর্মের। কালক্রমে অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে, এক এলাকার ধর্মের অনুসারীরা অন্য এলাকায় অন্য ভাষায় নাযেলকৃত ধর্মকে ধর্ম হিসাবে এবং ঐ ধর্মের প্রবর্তককে নবী হিসাবে স্বীকৃতি দিতে নারাজ। যেমন ইহুদিরা ঈসা (আ:) কে আল্লাহর প্রেরিত বোলে স্বীকার করে না, খ্রিস্টানরা আখেরী নবী মোহাম্মদ (দ:)-কে নবী হিসাবে স্বীকার করে না একইভাবে মোসলেমরা ভারতীয় অঞ্চলে ভারতীয় ভাষার মানুষের প্রতি আল্লাহর প্রেরিত বৌদ্ধ ও শ্রীকৃষ্ণ এঁদেরকে নবী হিসাবে স্বীকার করেন না। কিন্তু তাদের প্রচারিত ধর্মগ্রন্থের মধ্যে আখেরী নবীর আগমনের বহু ভবিষ্যদ্বাণী উল্লেখিত আছে যা গবেষণা কোরলে স্পষ্ট বোঝা যায় যে ঐ ধর্মগুলিও আল্লাহরই প্রেরিত (যা এখন বিকৃত হোয়ে গেছে), এবং স্বভাবতই সেগুলির প্রবক্তারা আল্লাহরই বার্তাবাহক অর্থাৎ নবী ও রসুল। এমনই একজন গবেষক ন্যাশনাল ব্যাংক ট্রেনিং ইনস্টিটিউট এবং ধর্মীয় বৈজ্ঞানিক গবেষণা ও ইসলাম প্রচার মিশনের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ কে.এম.এ হোসাইন তার গবেষণা গ্রন্থ ‘ইসলাম কি ও কেন’- তে গৌতম বুদ্ধ ও শ্রীকৃষ্ণের নবী হওয়ার পক্ষে বিস্তারিত যুক্তি ও প্রমাণ উল্লেখ কোরেছেন। নিুলিখিত প্রবন্ধটি এমনই একটি গবেষণাকর্ম যাতে জনাব কে.এম. হোসাইনের বইসহ আরও বেশ কিছু বইয়ের সহায়তা নেওয়া হোয়েছে।
ভারতীয় অবতার শ্রীকৃষ্ণ কে ছিলেন?
শ্রীকৃষ্ণকে হিন্দু ধর্মের অবতার বলা হোলেও প্রকৃতপক্ষে হিন্দু বোলে কোনো ধর্ম বা হিন্দু শাস্ত্র বোলে কোনো শাস্ত্র পৃথিবীতে নেই। বেদ, উপনিষদ, গীতায়, পুরাণে কোথাও হিন্দু শব্দই নেই। শব্দটি এশিয়া মাইনর, খুব সম্ভব তুর্কী দেশ থেকে এসেছে সিন্ধু শব্দের অপভ্রংশ হিসাবে। উপমহাদেশে প্রচলিত এই ধর্মের প্রকৃত নাম সনাতন ধর্ম, কোর’আনে যেটাকে বলা হোয়েছে দীনুল কাইয়্যেমা, শ্বাশ্বত, চিরন্তন ধর্ম, অর্থাৎ তওহীদ (কোর’আন- সুরা রূম, আয়াত ৪৩, সুরা বাইয়্যেনা, আয়াত ৫)। অবতার শব্দের অর্থ পৃথিবীতে আগমন। ঈশ্বরের অবতার বলিতে বুঝায় যে, নিখিল বিশ্বে ঐশী প্রত্যাদেশ প্রচারকারী মহামানবের পৃথিবীতে জন্মগ্রহণ করা। সেই সময় হতেই মানবজাতি যাতে পৃথিবীতে শান্তিতে বসবাস করতে পারে, মানবে মানবে হানাহানি, রক্তারক্তি, অন্যায়-অবিচার, যুলুম-অত্যাচার না করে তাই সৃষ্টিকর্তা দুনিয়াতে ধারাবাহিকভাবে নবী রসুল (অবতার, মহামানব) প্রেরণ কোরেছেন।
আল কোর’আন বলছে,
ধ প্রত্যেক জাতির জন্য রয়েছে রসুল (সুরা ইউনুস ৪৮)।
ধ প্রত্যেক জাতির জন্য হাদী বা পথ প্রদর্শক রয়েছে (সুরা রাদ ৮)।
ধ আমরা প্রত্যেক জাতি-গোষ্ঠীর মধ্যে কোনো না কোনো রসুল পাঠিয়েছি” (সুরা নাহল-৩৭)।
ধ এমন কোনো জাতি নেই, যার কাছে সতর্ককারী (নাযের) আগমন করে নাই (সুরা ফাতির -২৫)।
কোর’আনের এইসব বর্ণনা থেকে জানা যায় যে, বিভিন্ন জাতি-গোষ্ঠীর মধ্যে আল্লাহ বিভিন্ন যুগে নবী-রসুল, পথ-প্রদর্শক, সতর্ককারী ও সুসংবাদাতা পাঠিয়েছেন। মোসলেম হওয়ার শর্ত হিসাবে ঐ সব নবী-রসুলগণের উপর বিশ্বাস স্থপন করা অবশ্য জরুরি। তাদের মধ্যে কোনরূপ পার্থক্য করতেও আল্লাহ নিষেধ কোরেছেন। মো’মেনদের কাছ থেকে অঙ্গীকার নেয়া হোয়েছে,
ধ মো’মেনরা বলে, আমরা রসুলগণের মধ্যে কোনো তারতম্য কোরি না (সুরা বাকারা- ২৮৫) অর্থাৎ কোনো নবীকে মানবো, কোনো নবীকে অস্বীকার করবো তা হবে না, তারা সকলেই আল্লাহর রসুল। এ বিষয়েই আল কোর’আন বলছে,
ধ যারা চায় আল্লাহ এবং কতককে অস্বীকার, আর তারা চায় যেন এই দুয়ের মধ্যে একটি মাঝামাঝি পথ অবলম্বন করতে। এই সমস্ত লোকেরাই হোচ্ছে পাক্কা কাফের। মো’মেন হ’ল তারা যারা আল্লাহ এবং রসুলগণের উপর ঈমান আনে এবং তাদের মধ্যে – কোনো পার্থক্য করে না (সুরা নেসা ১৫০-১৫২)।”
এইসব বর্ণনা থেকে স্পষ্ট বুঝা যায় যে, যুগে যুগে আগত সকল নবী-রসুলগণের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা প্রতিটি মো’মেন মোসলেমের জন্য অবশ্য কর্তব্য (ফরদ)। যদি একজন নবীকেও অস্বীকার করা হয়, তবে সে ব্যক্তি “সত্যিকার কাফের” হোয়ে যায় এবং পরিণাম হোচ্ছে লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি (সুরা বাকারা-১৫২)।
পাঠকগণ, পবিত্র কোর’আনে মাত্র ২৫ জন নবীর নাম উল্লেখ করা হোয়েছে। হাদিস পাঠে আমরা এক লক্ষ চব্বিশ হাজার বা মতান্তরে দু-লক্ষ চব্বিশ হাজার নবী রসুলগণের পৃথিবীতে আগমনের কথা জানতে পারি। কোর’আন বলছে-
ধ আমরা তোমার পূর্বেও অনেক রসুল পাঠিয়েছি, যাদের মধ্যে কারো বিষয় তোমার কাছে বর্ণনা করেছি এবং তাদের মধ্যে কারো কারো বিষয় বর্ণনা করি নাই (সুরা মো’মেন-৭৯)।
যদি সব নবীদের নাম-ধাম বৃত্তান্ত আল-কোর’আনে বর্ণনা করা হত তাহোলে একটি বিশ্বকোষের আকার ধারণ করতো। বাইবেলে বর্ণিত সকল নবীর নামও কোর’আনে উল্লেখ করা হয় নাই, আর তার প্রয়োজনও নেই। প্রত্যেক নবী-রসুলগণ তাঁদের জাতির ভাষায় তথা মাতৃভাষায় ঐশীবাণী প্রচার কোরেছেন, যাতে তাদের জাতির লোকেরা সহজেই নবীর শিক্ষাকে বুঝতে ও অনুসরণ করতে পারে। আর এ বিষয়েই আল-কোর’আন বলছে, –
ধ আমরা প্রত্যেক রসুলকেই তাঁর জাতির ভাষায় পাঠিয়েছি, এই জন্য যে, যেন তাদের নিকট স্পষ্ট করে (আমার বাণী) প্রচার করতে পারে (সুরা এব্রাহীম-৫)।
এই আয়াতের মর্মবাণী হোচ্ছে, অতীতের প্রত্যেক নবী-রসুলগণ যে যে অঞ্চল ও জাতিতে আগমন কোরেছেন, সেই জাতি ও সেই জাতির ভাষাতেই তারা ওহী, এলহাম, দিব্যজ্ঞান, বোধি লাভ করে সেই অঞ্চলে একই ভাষা-ভাষীর মধ্যে প্রচারকার্য চালিয়েছেন। ঐসব ভাষা হিব্র“ পার্শী, সংস্কৃত,পালি, চীনা বা অন্য যে কোনো ভাষাই হোক না কেন। সুতরাং অতীত জাতির নবীদের জানতে হলে আমাদের অবশ্য বিভিন্ন ভাষায় রচিত ধর্মগ্রন্থগুলি যথা ‘বেদ-বেদান্ত, পুরাণ-গীতা-সংহীতা, উপনিষদ, মহাভারত, ত্রিপিটক, দিঘা-নিকায়া, জেন্দাবেস্তা, তওরাত-যবুর-ইঞ্জিল’ ইত্যাদি গবেষণা ও পাঠ করে কোর’আনের আলোকে অতীত নবীদের সম্বন্ধে সত্যিকার পরিচয় জানতে হবে।
উপরোক্ত আলোচনার সাপেক্ষে নিশ্চিত করে বলা যায় যে, পাক-ভারত উপমহাদেশেও আল্লাহ নবী-রসুল-অবতার প্রেরণ কোরেছেন এবং তাঁদের প্রচারিত বাণী-ঐশীগ্রন্থ বিকৃত অবস্থায় হলেও ঐ জাতির মধ্যে এখনও বংশ-পরম্পরায় অনুসৃত হোয়ে আসছে, তাদের ভক্ত-অনুরক্ত অনুসারীদের মাধ্যমে। এখন আমরা জানার চেষ্টা করবো যে, শ্রীকৃষ্ণ ও মহামতি গৌতম বুদ্ধ আমাদের প্রস্তাবিত উপমহাদেশের আল্লাহ প্রেরিত নবী-রসুল-অবতার ছিলেন কিনা।
ইসলামী চিন্তাবিদ ও মোসলেম মনীষীদের দৃষ্টিতে শ্রীকৃষ্ণ
ভারতীয় মোসলেম চিন্তাবিদ ও ইসলামিক দার্শনিকগণ শ্রীকৃষ্ণ সম্বন্ধে যেসব সুচিন্তিত মতামত রেখেছেন এবং কোর’আন হাদিসের আলোকে তাঁর সম্বন্ধে যে বক্তব্য দিয়েছেন ঐসব মতামতও বক্তব্য বিচার-বিশ্লেষণ করে এই ধারণা সৃষ্টি হয় যে, শ্রীকৃষ্ণ একজন নবী।
ধ মোজাদ্দেদে আলফেসানী সরহিন্দ (রা:) কাশ্ফে প্রায় ৩০-৫০ জন ভারতীয় নবীর সমাধি দর্শন কোরেছেন বলে হাদীকা মাহমাদিয়া গ্রন্থে উল্লেখ রয়েছে।
ধ ভারত উপমহাদেশের প্রখ্যাত ইসলামী চিন্তাবিদ ও রাজনীতিক ব্যক্তিত্ব আবুল হাশিম তাহার বিখ্যাত Creed of Islam গ্রন্থে গৌতম বুদ্ধকে আল্লাহর নবী বলে তথ্যপ্রমাণ দিয়েছেন এবং নবীদের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত দরুদ ও সম্মানসূচক “Peace be upon him বা আলাইহে সালাম (আ:) ব্যবহার কোরেছেন।
ধ খ্যাতনামা তাপস মির্জা মাজহার জানজানান এক স্বপ্নের ব্যাখ্যা করতে গিয়ে শ্রীকৃষ্ণ এবং রামচন্দ্রকে নবীরূপে স্বীকার করে ‘মাকামাতে মাজহারি’ গ্রন্থে উল্লেখ কোরেছেন।
ধ দেওবন্দ মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা মোহাম্মদ কাসেম নানুতবী শ্রীকৃষ্ণ এবং রামচন্দ্রকে নবীরূপে সত্য নবী বলে স্বীকার কোরেছেন (মাবাহাসা শাহজাহানপুর সৎÑধর্ম প্রচার)।
ধ মাওলানা জাফর আলী খান লিখেছেন, এমন কোনো জাতি বা দেশ নেই; যার দোষ-ত্র“টি সংশোধনের জন্য উপযুক্ত সময়ে আল্লাহ তা’লা কোনো নবী রসুল প্রেরণ করেন নাই। তিনি দ্ব্যর্থহীন ভাষায় উল্লেখ কোরেছেন যে , শ্রীকৃষ্ণ মহান প্রভুর রেসালতের ধারায় ভারতীয় নবীদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন (প্রতাপ, ২৮ শে আগস্ট ১৯২৯)।
ধ উপমহাদেশের প্রখ্যাত ইসলামী চিন্তাবিদ ও মহানবী মোহাম্মদ (দ:) এর জীবনীকার “সীরাতুন্নবীর” (দ:) রচয়িতা “আল্লামা শিবলী নোমানী, ভারতীয় নবীদের সম্বন্ধে মতামত ব্যক্ত করতে গিয়ে মন্তব্য কোরেছেন যে, শ্রীকৃষ্ণ ও অন্যান্য ভারতীয় নবীদের জীবনী ও সত্যিকার পরিচয় আজ নানারূপ কল্পকাহিনীর আড়ালে ঢাকা পড়ে আছে।
ধ আল-কোর’আনের তাফসির গ্রন্থ “তাফসীরে ওয়াহিদী”-তে মাওলানা ওয়াহিদুজ্জামান অকাতরে স্বীকার কোরেছেন যে, “শ্রীকৃষ্ণ আল্লাহর এক প্রিয় ও সৎপথ প্রাপ্ত ব্যক্তি ছিলেন। এবং নিজ যুগ ও জাতির জন্য খোদার পক্ষ হতে সতর্ককারীরূপে আবির্ভূত হোয়েছিলেন।”
ধ খাজা হাসান নিজামী বলেছেন, শ্রীকৃষ্ণ প্রকৃতপক্ষে দু®কৃতিকারীদের বিনাশকল্পে প্রেরিত অবতার ছিলেন (কৃষণবিতি)।
ধ উপমহাদেশের আরও একজন প্রখ্যাত পণ্ডিত, ইসলামী চিন্তাবিদ আল্লামা সোলেমান নদভী হিন্দুদের পূজ্য অবতার শ্রীরামচন্দ্র, কৃষ্ণ ও গৌতম বুদ্ধকে নবীরূপে স্বীকার করে তাঁর “সিরাত মোবারক” ১৯৮২ গ্রন্থে উল্লেখ কোরেছেন।
ধ আল-কোর’আনের ব্যাখ্যাতা প্রখ্যাত তাফসিরকারক ও আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন মুফতি এবং প্রখ্যাত তাফসির গ্রন্থ “মা’আরেফুল কোর’আন” এর রচয়িতা (আটখণ্ড) মুফতি মোহাম্মদ শফি, তাঁর গ্রন্থের ৩য় খণ্ডে উল্লেখ কোরেছেন যে, আর্য ধর্মগ্রন্থ বেদের সকল ঋষিগণই নবী-অবতার ছিলেন। শ্রীমদভাগবতগীতার উদ্গাতা শ্রীকৃষ্ণের সঠিক পরিচয়কে উদ্ঘাটন কোরতে গিয়ে বহু মনীষী, জ্ঞানী-গুণী পণ্ডিত ব্যক্তি সুগভীর গবেষণা কোরেছেন। তাদের অনেকেই অভিমত দিয়েছেন যে, আল্লাহ সকল জাতিগোষ্ঠীতে ও জনপদে ঐ এলাকার ভাষায় রচিত ধর্মগ্রন্থ সহকারে তাঁর নবী-রসুলদেরকে পাঠিয়েছেন। কিন্তু ঐ নবীদের বিদায়ের পরে তাঁর শিক্ষা ও ধর্মগ্রন্থ বিকৃত কোরে ফেলা হোয়েছে। ফলে ঐ এলাকার মানুষকে নতুন কোরে পথ দেখাতে আবির্ভূত হোয়েছেন অন্য নবী যারা পূর্বের বিকৃত গ্রন্থকে রদ ঘোষণা কোরেছেন এবং নতুন বিধান জাতিকে প্রদান কোরেছেন। কেউ তাকে মেনে নিয়েছে, কেউ মেনে নেয় নি। এভাবে জন্ম হোয়েছে একাধিক ধর্মের। কালক্রমে অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে, এক এলাকার ধর্মের অনুসারীরা অন্য এলাকায় অন্য ভাষায় নাযেলকৃত ধর্মকে ধর্ম হিসাবে এবং ঐ ধর্মের প্রবর্তককে নবী হিসাবে স্বীকৃতি দিতে নারাজ। যেমন ইহুদিরা ঈসা (আ:) কে আল্লাহর প্রেরিত বোলে স্বীকার করে না, খ্রিস্টানরা আখেরী নবী মোহাম্মদ (দ:)-কে নবী হিসাবে স্বীকার করে না একইভাবে মোসলেমরা ভারতীয় অঞ্চলে ভারতীয় ভাষার মানুষের প্রতি আল্লাহর প্রেরিত বৌদ্ধ ও শ্রীকৃষ্ণ এঁদেরকে নবী হিসাবে স্বীকার করেন না। কিন্তু তাদের প্রচারিত ধর্মগ্রন্থের মধ্যে আখেরী নবীর আগমনের বহু ভবিষ্যদ্বাণী উল্লেখিত আছে যা গবেষণা কোরলে স্পষ্ট বোঝা যায় যে ঐ ধর্মগুলিও আল্লাহরই প্রেরিত (যা এখন বিকৃত হোয়ে গেছে), এবং স্বভাবতই সেগুলির প্রবক্তারা আল্লাহরই বার্তাবাহক অর্থাৎ নবী ও রসুল। এমনই একজন গবেষক ন্যাশনাল ব্যাংক ট্রেনিং ইনস্টিটিউট এবং ধর্মীয় বৈজ্ঞানিক গবেষণা ও ইসলাম প্রচার মিশনের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ কে.এম.এ হোসাইন তার গবেষণা গ্রন্থ ‘ইসলাম কি ও কেন’- তে গৌতম বুদ্ধ ও শ্রীকৃষ্ণের নবী হওয়ার পক্ষে বিস্তারিত যুক্তি ও প্রমাণ উল্লেখ কোরেছেন। নিুলিখিত প্রবন্ধটি এমনই একটি গবেষণাকর্ম যাতে জনাব কে.এম. হোসাইনের বইসহ আরও বেশ কিছু বইয়ের সহায়তা নেওয়া হোয়েছে।
ধ মাসিক পত্রিকা “পৃথিবীতে” মন্তব্য করা হোয়েছে যে, “গীতার শ্রীকৃষ্ণ ছিলেন একেশ্বরবাদী। এই পরমপুরুষের উল্লেখ করে মহানবী বিশ্বনবী মুহাম্মদ (দ:) বলেছেন “কানা ফিল হিন্দে নবীয়ান আসওয়াদুল লাওনা ইসমুহু কাহেন।” (হাদিসে দোলমী, তারিখে হামদান, বাবুল কাফ।) অর্থাৎ “ভারতবর্র্ষে এক নবীর আবির্ভাব ঘটে, যিনি কৃষ্ণবর্ণ এবং কানাই নামে পরিচিত।” আমরা সবাই জানি যে, শ্র্রীকৃষ্ণের আসল নাম কানাই। আর শ্রীকৃষ্ণ তাঁর সিফতি নাম। মাসিক পত্রিকা ‘পৃথিবী’ আরো উল্লেখ কোরেছে যে, ভারতের বৈদিকযুগ ছিল ইসলামের যুগ।(মাসিক পৃথিবী, ফেব্র“য়ারিÑ১৯৮৮)।
ধ ড. রফিক জাকারিয়া এক প্রবন্ধে বিভিন্ন মোসলেম মনীষী ও ওলামাদের উক্তি উদ্ধৃতি করে লিখেছেন যে, According to the Quaranic declarations, not only Moses and jesus, but all the Vedic Rishies of old and Rama, Krishna…………have alike place in the hearts of the true followers of Islam” (Ilustrated weekly of India. Dated 28.10.1973)|
ধ ইসলামের চতুর্থ খলিফা, জ্ঞানের দরজা নামে খ্যাত, নবী করিম (দ:) এর প্রিয়তম ভ্রাতা ও জামাতা ইসলামের ইতিহাসে খ্যাতনামা সমরবিদ আলী (রা:) বলেছেন, “আল্লাহ তা’লা কৃষ্ণবর্ণের এক নবী পাঠিয়েছিলেন, যার নাম কোর’আনে উল্লেখ করা হয় নাই।” (কাশশাফ, মাদারেক) এই বর্ণনা থেকে একজন কৃষ্ণ বর্ণের নবীর আবির্ভাবের সংবাদ পাওয়া গেল, যা নবী করিম (দ:) কর্তৃক ইতোপূর্বে উল্লেখিত হাদিসের “আসওয়াদুল ও এসমুহু কাহেন” কৃষ্ণবর্ণ ও কানাই নামে ভারতীয় নবী-অবতার শ্রীকৃষ্ণের মধ্যে সাদৃশ্য খুঁজে পাওয়া যায়।
ধ ড. মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ এবং আরো বহু হিন্দু মোসলেম পণ্ডিত ও ভাষাবিদ সংস্কৃত ধর্মগ্রন্থ গবেষণা করে এমন অনেক সত্যÑসনাতন বাণী খুঁজে পেয়েছেন, যার দ্বারা প্রমাণ হয় যে, বৈদিক শ্লোকগুলো ঐশীবাণী এবং বৈদিক ঋষিরা নবীÑঅবতার, অন্তিমÑঋষিÑনরাশংস, কল্কিÑঅবতার মহানবী মুহাম্মদ (দ:)। ঐ সব গ্রন্থের বাণী সত্য ও প্রবক্তারা সত্যবাদী না হলে তাঁদের ভবিষ্যৎবাণী কিরূপে সত্য হতে পারে?
ধ কবি নজরুল তাঁর মানুষ কবিতাতে লিখেছেন, মূর্খরা সব শোনো/মানুষ এনেছে গ্রন্থ; গ্রন্থ আনে নি মানুষ কোনো। আদম দাউদ ঈসা মুসা ইব্রাহিম মোহাম্মাদ/কৃষ্ণ বুদ্ধ নানক কবীর, বিশ্বের সম্পদ। এখানে পবিত্র কোর’আনে যাঁদেরকে নবী বোলে সত্যায়ন করা হোয়েছে তাদের সঙ্গে একই কাতারে কৃষ্ণ ও বুদ্ধের উল্লেখ থেকে বোঝা যায় যে, কবি নজরুল তাঁদেরকেও নবী হিসাবে বিশ্বাস কোরতেন।
শ্রীকৃষ্ণের জীবনাচার ও বৈশিষ্ট্য কি বলে?
প্রাচীন যুগ হতে প্রত্যেক ধর্মে কোরবানি বা উৎসর্গের রীতি চালু আছে। কোরবানির সময় এলে শ্রীকৃষ্ণ পশু কোরবানি কোরেছেন। এর মধ্যে একটি গাভীও ছিল (ভগবত, দশম স্কন্দ, অধ্যায়-৫৮)। এছাড়াও শ্রী-কৃষ্ণের জীবনী থেকে আমরা জানি তিনি ছোটবেলায় মেষপালক ছিলেন, যা ইসলামের অনেক নবীর জীবনীতেও আমরা পাই। এছাড়াও তাঁর জন্মের পূর্বে উনার জন্মকে ঘিরে ভবিষদ্বাণীও করা হোয়েছিল বলে জানতে পারি, যে ভবিষ্যদ্বাণীর প্রেক্ষিতে কংস রাজা বহু শিশু হত্যা করে। শ্রীকৃষ্ণ এসেছিলেন দুষ্টের দমন ও শিষ্টের লালন করার জন্য। মহাভারতে আছে
ধ “ধর্মব্যুচ্ছিতি মিচ্ছিন্তো যেই ধর্মস্য প্রবর্তকঃ অর্থাৎ- যারা ধর্মের উচ্ছেদ কামনা করে অধর্মের প্রবর্র্তন করে, সেই দুরাত্মাদেরকে বিনাশ করা একান্ত কর্তব্য (১২/৩৩/৩০)।
ধ ধর্মদ্রোহীদের বিরুদ্ধে তাঁর সংগ্রাম ছিল আপোষহীন। তিনি কোনো নতুন ধর্ম প্রবর্তন করতে আসেননি (ভগবত ধর্মের প্রাচীন ইতিহাস, ১ম খণ্ড ১৭২ পৃ.)। তিনি চির-সত্য, সনাতন ধর্মেই প্রতিষ্ঠিত ছিলেন। মহাভারত বলছে, “সত্যে প্রতিষ্ঠিতঃ কৃষ্ণ সত্যমত্রা প্রতিষ্ঠিতম (মহাভারত ৫/৮৩/১২)।
ধ তিনি কখনো ঈশ্বরত্বের দাবী করেন নি। তিনি ছিলেন একেশ্বরবাদী। ঘরÑসংসার সমাজ পরিবার-পরিজন নিয়ে তিনি বসবাস কোরেছেন। তার পিতা, মাতা, স্ত্রী, পুত্র সবই ছিল। তিনি জন্ম-মৃত্যুর অধীন মানুষই ছিলেন। যেমন মহাভারতে বলা হোচ্ছেÑ “মানুষং লোকমতিষ্ঠ বাসুদেবÑইতিশ্র“ত (মহাভারত ৬/৬৬/৮-৯)।
ধ তিনি একাধিক বিয়ে করেছিলেন। তন্মধ্যে মামাতো ও ফুফাতো বোনদের মধ্যে ভদ্রা, মিত্রবিন্দাকে বিয়ে করেছিলেন। অন্যান্য স্ত্রীদের নাম-রুক্সিনী, কালিন্দী, সত্যা, জাম্ববতী, রোহিনী, লক্ষণা, সত্যভামা, তম্বী। এক কথায় তিনি ছিলেন, “মানুষীং যোনি মস্তায় চরিষ্যতি মহিতলে (মহাভারত ৬/৬৬/১০২)। অর্থাৎ এই ধরার বুকে একজন মানুষের মত মানুষ’। তাঁর যুগের আদর্শ মানব, মহামানব।
ধ তিনি ছিলেন সত্য ধর্মের প্রচারক তথা বৈদিক ঋষিদের প্রচারিত ধর্র্মের বাহক ও প্রচারক যাহা ছিল সত্য, সুন্দর ও মঙ্গলের ধর্ম ইসলাম। সত্য ও সত্যধর্মের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। যেমন মহাভারত বলছে “নাস্তি সত্যাত পরোধর্ম” সত্যই ধর্র্ম আর ধর্মই সত্য। আর এই সত্য ধর্মের পবিত্রতা রক্ষায় শ্রীকৃষ্ণ ধর্মদ্রোহীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করতেন। সমস্ত চেষ্টা ব্যর্থ হওার পরে তিনি যুদ্ধের অনুমতি দিতেন (ভগবৎ পুরাণ ৫/১৫১/৪৫)।
ধ অন্যান্য নবী-রসুলদের ন্যায় তিনিও অযথা রক্তপাত, অন্যায় যুদ্ধ পছন্দ করতেন না। ভগবৎ পুরাণ দেখুন তাই বলছে ঃ “সর্বোথা যতমানা নামযুদ্ধ ভিকাংষ্কতাম সান্তে প্রতিহতে যুদ্ধং প্রসিদ্ধং নাপরাক্রমঃ” (ঐ ৫/৭২/৮৯)। তিনি বলেছেন, এই ধর্মযুদ্ধে নিহত হলে, “হতোবা প্রান্স্যসি স্বর্গং স্বর্গলাভ।” অথাৎ- শহীদ ব্যক্তি স্বর্গলাভ করেন (ঐ)।
ধ অন্যান্য নবীদের ন্যায় শ্রীকৃষ্ণের আপনজন আত্মীয়রাই তাঁঁর প্রধান শত্র“, বিরোধী ছিলেন। (ভগবৎ ধর্মের প্রাচীন ইতিহাস পৃৃ-৩০০) তারা তাঁর উপর নির্যাতন করেন। উল্লেখ্য যে, মথুরার রাজা কংস বা কনিষ্কো যিনি শ্রীকৃষ্ণের আপন আত্মীয়, মামা ছিলেন। তাঁর অত্যাচারের কারণেই বাধ্য হোয়ে তিনি দ্বারকায় ‘হেজরত’ করেন, যা অনেক নবীর ক্ষেত্রেই সংঘটিত হোয়েছিল।
ধ অনেক ধর্মদ্রোহী শ্রীকৃষ্ণকে বেদ-বিরোধী মনে করে তাঁর বিরোধিতা কোরেছেন (ঐ ২০০ পৃষ্ঠা)। সত্যিকার অর্থে তিনি ঐশী-গ্রন্থ বেদের বিরোধী ছিলেন না। কিন্তু পূর্ববর্তী বিকৃত বৈদিক ধর্মের পুরোহিতরা বেদ ও বেদের নামে বিকৃত প্রক্ষিপ্ত মনগড়া বাণী প্রচার করতো আর তাই তিনি এই বিকৃতধর্ম বাণীর বিরোধিতা করতেন।
ধ তিনি সত্য ও মিথ্যার মধ্যে, ধর্ম ও অধর্মের মধ্যে প্রকৃত মীমাংসা করার জন্য আবির্ভূত হোয়েছিলেন (মহাভারত ১৩/৫৮/৫-৬), যা অন্যান্য নবীদের ক্ষেত্রেও সত্য। ঐ যুগের অসুর প্রকৃৃতির (কাফের) মানুষরা সত্য-ধর্মের বিরোধিতা করতো এবং অসত্য ধর্ম প্রতিষ্ঠিত করতে তৎপর ছিল। যেমন বলা হোয়েছে, “অসত্রম প্রতিষ্ঠিংতে জগদাহুরানশ্বরম।” অর্থাৎ-সত্যধর্ম ব্যবস্থায় বিশ্বাস বা জগদীশ্বরে বিশ্বাস করতো না (গীতা-১৬/৮)।
ধ ধর্ম মানুষের মনুষ্যত্বের প্রমাণ। ধর্ম ছাড়া মানুষ পশুর সমতুল্য। যেমন শাস্ত্রে বলা হোয়েছে, “আহার নিদ্রা ভয় মৈথুনংচ সামান্য মেতৎ পশু ভিনরানাম। ধর্মেহিতেসা মধিক বিশেষঃ ধর্মে নহীনা পশুভির্সমানাঃ।” অর্র্র্থাৎ- ধর্মহীন মানুষ আর পশুর মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই, উভয়েই আহার নিদ্রা, ভয় এবং যৌন কর্মের মধ্যে দিয়ে জীবন অতিবাহিত করে।”
ধ অবতার শ্রীকৃষ্ণ সরল জীবন যাপন করতেন। আহার-নিদ্রা-বেশ-ভূষায় সাদাসিদা ও পবিত্র ছিলেন। তাঁর যুগের লোকেরা মদ্যপান করতো এবং পানাসক্তে এত বিভোর ছিল যে, শ্রীকৃষ্ণ মদ্যপানকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে আদেশ জারি করেন এবং মদ্য প্রস্তুত নিষিদ্ধ করেন (শ্রীকৃষ্ণ ও ভগবৎ ধর্মÑ১৩৫পৃ.)।
ধ মহামানব শ্রীকৃষ্ণ ধর্মীয় রীতি-নীতি শাস্ত্র মতই পালন করতেন। প্রতিদিন সকালে ‘ব্রহ্ম মুহূর্তে’ (ফজরওয়াক্তে) শয্যা ত্যাগ করে হাত-মুখ ধৌত করতঃ (আচমন-ওজু) অজ্ঞান অন্ধকারের অতীত পরমাত্মাকে (আল্লাহকে) ধ্যান (যেক্র, প্রার্থনা, উপাসনা) করতেন। ঐ পরমাত্মা এক ও অদ্বিতীয় পরমব্রহ্ম, যিনি স্বয়ং জ্যোতি (নুর), অব্যয়-নিত্য (হাইয়্যুল কাইয়্যুম) ও নিষ্কলঙ্ক (সোবহান)। সন্ধ্যাকালে উপাসনা করতেন (বিষ্ণুভগবৎ পুরণ)। তিনি রাত্রের অর্ধযাম বাকী থাকতে নিদ্রা থেকে জাগ্রত হোয়ে সনাতন ব্রহ্মকে (পরম প্রভু) ধ্যান করতেন (মহাভারত-১২/৫৩/১-২)। এখানে উল্লেখ করা দরকার যে, ‘ব্রহ্ম’ অর্থ- বৃহৎ যা আরবীতে ‘আকবর’ বলে, মহান আল্লাহ নিজেই সাদৃশ্যহীন “বৃহৎ সত্ত্বা”। আল্লাহ বিরাট বা মহান, যাকে মোসলেমগণ আরবীতে “আল্লাহু আকবর” বলে থাকেন।
ধ শ্রীকৃষ্ণ অন্যান্য নবী-রসুলদের মত তাঁর সদৃশ রূপবান, বলবান, বীর্যবান, সর্বশাস্ত্র কুশলীরাজ ব্রহ্মবিদ্যাসম্পন্ন এবং অন্যান্য মহৎগুণ সমৃদ্ধ এক পুত্র সন্তানের জন্য প্রভুর দরবারে তপস্যা করেছিলেন’ (হরিবংশ-৩/৭৩)। উপরের প্রার্থনা হতে বুঝা যায় যে, সৎ পুত্র কামনা করা প্রেরিত নবী-রসুলদের চিরায়ত রীতি, যা ইব্রাহীমও (আঃ) আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেছিলেন। কথিত আছে যে, শ্রীকৃষ্ণ ১০১ মতান্তরে ১০৫ বছর বয়সে পরলোক গমন করেন (দেশ পত্রিকা, শারদীয় সংখ্যা ১৩৮৪)।
এমন প্রমাণ আরও বহু দেওয়া যাবে, কিন্তু সত্যান্বেষী মনের জন্য এটুকুই যথেষ্ট বলে আমার বিশ্বাস। আমাদের এই সংক্ষিপ্ত আলোচনা হতে এটাই প্রতীয়মান হয় যে, জন্ম-মৃত্যু, ঘর সংসার, পরিবার-পরিজন পরিচালনা, সাধনা-উপাসনা, আদর্শ সমাজ সংস্কার, সত্য-ধর্মের সেবা, প্রয়োজনে মিথ্যার বিরুদ্ধে সংগ্রাম, সত্য, সুন্দর ও মঙ্গলের আদর্শে বিশ্বাসী ইত্যাদি গুণে গুণান্বিত ও সবকিছু মিলিয়ে শ্রীকৃষ্ণকে তাঁর যুগের একজন প্রেরিত-পুরুষ, মহামানব পথ-প্রদর্শক, নবী-অবতাররূপেই আমাদের কাছে প্রতীয়মান হয়।