রাকীব আল হাসান
আমাদের দেশে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি, জামায়াত, জাসদসহ অর্ধশতাধিক রাজনৈতিক দল রয়েছে, যাদের প্রত্যেকেই নিজেদেরকে গণতান্ত্রিক দল হিসেবে পরিচয় দিয়ে থাকে। যদিও দলগুলির আলাদা আলাদা মতাদর্শ রয়েছে যেমন কেউ ইসলামপন্থী, কেউ সমাজতন্ত্রী, কেউ ধর্মনিরোপেক্ষতাবাদী, কেউ জাতীয়তাবাদী ইত্যাদি ইত্যাদি। ভিন্ন ভিন্ন মতাদর্শের হলেও তারা একটি বিষয়ে একমত (অন্তত মুখে তারা যা বলে), সেটা হলো তারা সবাই গণতন্ত্র চায়, গণতন্ত্রের মাধ্যমে ক্ষমতার লড়াইটা চালিয়ে যেতে চায়। ইসলামপন্থী এবং সমাজন্ত্রীরা কিভাবে মুখে গণতন্ত্রের কথা টেনে আনে সেটা আমার বোধগম্য নয়। সে যাই হোক, কোনো রাজনৈতিক দলের প্রধান নেতা-নেত্রীদের কাছে যদি বলেন, আপনার দলের মধ্যে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা দরকার, অর্থাৎ একটি রাষ্ট্রে যেমন গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করলে নানা কর্মসূচির নানা দল গজিয়ে ওঠে ঠিক একইভাবে আপনার দলের মধ্যেও কিছু গ্রুপ তৈরি করা দরকার, এতে দলের নেতাদের স্বৈরাচারী মনোভাব দূর হবে, যা ইচ্ছা তা করতে পারবে না। ধরুন দলের মধ্যে দশটি গ্রুপ করলেন, প্রতিটা গ্রুপের একজন করে গ্রুপ লিডার থাকলো। এবার দলের সাধারণ সদস্যদের মধ্যে ভোটের মাধ্যমে একটি গ্রুপকে দলে কর্তৃত্ব করার ক্ষমতা দেওয়া হলো। পরাজিত নয়টি গ্রুপ এবার পরবর্তী ভোটের আগে পর্যন্ত সাধারণ সদস্যদের মাঝে বিজয়ী গ্রুপের ত্রুটি তুলে ধরে তাদের জনপ্রিয়তা ধূলোয় মেশানোর চেষ্ট করে যাবে। এছাড়াও বিজয়ী গ্রুপের যে কোনো কাজের ত্রুটি বের করে তাদের অধিকাংশ কর্মসূচি বাস্তবায়নে বাধা সৃষ্টি করতে থাকবে। তবুও যদি কর্তৃত্বকারী গ্রুপটির স্বৈরাচারী মনোভাব দূর না হয় তবে বাকি নয়টি গ্রুপ মিলে হরতাল, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ইত্যাদি কর্মসূচির মাধ্যমে ঐ গ্রুপকে টেনে হিঁচড়ে কর্তৃত্ব থেকে নামানোর চেষ্টা করবে, এতে সাধারণ সদস্যদের প্রাণহানী হলে হোক, অর্থের ক্ষতি হয় হোক তাতে আপনাদের কী? অন্তত আপনার দলের মধ্যে গণতন্ত্র তো প্রতিষ্ঠা হবে!
আমার এই সহজ-সরল যুক্তি নির্ভর প্রস্তাবটি সত্যিকারের গণতন্ত্রমনা যে কোনো দলের নেতৃবৃন্দের মেনে নেওয়া উচিত, কিন্তু প্রকৃত সত্য হলো কোনো দলের উচ্চ পর্যায়ের চেয়ারগুলিতে নেহায়েত উন্মাদ, পাগল অথবা নির্বোধ কোনো প্রাণী বসে থাকলেই কেবল দলবিধ্বংসী এমন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারে। আরেক শ্রেণির নেত্রীবৃন্দ প্রস্তাবটি গ্রহণ করতে পারে, যারা নিজ স্বার্থ রক্ষার্থে দল ধ্বংস করতে সর্বদাই প্রস্তুত থাকে। তাদের কাছে দলীয় স্বার্থ নয়, নৈরাজ্যই পছন্দ।
আমার আপাত সুন্দর এই প্রস্তাবটি অর্থাৎ প্রচলিত সিস্টেম বা গণতন্ত্র গ্রহণ করলে একটি বৃহৎ শক্তিশালী দলও ভেঙ্গে টুকরো টুকরো হয়ে যাবে, ঐক্য নষ্ট হয়ে মুখ থুবড়ে পড়বে, সামনের দিকে অগ্রসর হওয়া বন্ধ হয়ে যাবে। একইভাবে এই সিস্টেম যখন কোনো জাতির উপর চাপিয়ে দেওয়া হয় তখন ঐ জাতিও নানা দলে, উপদলে বিভক্ত হয়ে নিজেরা নিজেরা সংঘাত, সংঘর্ষ করে অকার্যকর, ব্যর্থ ও পশ্চাৎপদ জাতিতে পরিণত হয়, এটা অতি সাধারণ জ্ঞানেই বোঝা যায়। তাই ছোট্ট একটি প্রশ্ন রেখেই আজ শেষ করতে চাই, “একটি দলকে টিকিয়ে রাখার জন্য যদি গণতন্ত্র বাদ দিয়ে সামষ্টিক ঐক্যকে বেছ নিতে হয়, তবে জাতীয় ঐক্যের স্বার্থে বহুদলীয় গণতন্ত্রের পরিবর্তে জাতির জন্য বৃহত্তর ঐক্য কেন নয়?”