আজ ১৪ মার্চ ২০১৯। আজ থেকে তিন বছর আগে এই দিনে বাংলাদেশের ইতিহাসের এক জঘন্যতম হত্যাকা- ঘটানো হয় নোয়াখালীর সোনাইমুড়ি উপজেলার পোরকরা গ্রামে। নতুন নতুন ঘটনার বন্যায় পুরানো ঘটনাগুলো ভেসে চলে যায়, কিন্তু যাদের স্বজন নির্মমতার শিকার হয় তাদের বুকের ভেতরের ক্ষত থেকে রক্তক্ষরণ বন্ধ হয় না। অনেকেরই হয়তো মনে আছে কী ঘটেছিল সেদিন?
হ্যাঁ, সেই ঘটনা জানতে হবে সকল মানুষকে, জানতে হবে বিশ্ববাসীকেও। কারণ এই ঘটনার নেপথ্যে রয়েছে ধর্মের চরমতম অপব্যবহার। ধর্মের প্রকৃত শিক্ষঅ যখন লুপ্ত হয়ে যায় তখন ধর্মের নাম করেই একটি লেবাসধারী শ্রেণি মেতে ওঠে নিষ্ঠুরতা বর্বরতায়। এটা মানবইতিহাসে বার বার ঘটে এসেছে। এভাবে তারা সৃষ্টির আদিলগ্ন থেকে আজ পর্যন্ত কোটি কোটি আদম সন্তান রক্ত ঝরিয়েছে।
সেদিন রক্ত ঝরেছিল এমন একদল মানুষের যারা মানবজাতিকে জঙ্গিবাদ, ধর্মব্যবসা, সাম্প্রদায়িকতাসহ ধর্মের যাবতীয় অপব্যবহারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সোচ্চার হয়েছিল। অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো সেই মানুষগুলোর পরিচয়, তারা হেযবুত তওহীদ, তারা মো’মেন মুসলিম।
তাদের উপর সেদিন মিথ্যা ধর্মীয় হুজুগ সৃষ্টি করে হাজার হাজার সন্ত্রাসীকে লেলিয়ে দেয় ধর্মব্যবসায়ী স্বার্থান্বেষী একটি গোষ্ঠী। হেযবুত তওহীদের সদস্যদের বাড়িগুলো লুটপাট করে পুড়িয়ে ভস্মীভূত করে ফেলা হয়। গাছগুলো কেটে ফেলা হয়, ভাঙচুর করে ধ্বংশস্তুপ পরিণত করা হয় বসতভিটা। ১১৪ মানুষকে জীবত্মা পুড়িয়ে মারার ষড়যন্ত্র করে তারা। দু’জন কর্মীর চোখ তুলে, অঙ্গহানী করে, হাত পায়ের রগ কেটে ফেলে তারপর গরু জবাই করা ছুরি দিয়ে জবাই করে হত্যা করা হয়। তারপর তাদের শরীরে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়।
কেন এই আক্রোশ? কেন এই জঘন্য পৈশাচিকতা ও বর্বরতা? আজও অনেকের কাছে এ রহস্য অজানা। সেটা জানতে আমাদের একটু পেছনে ফিরে যেতে হবে।
১৯৯৫ সনে টাঙ্গাইলের ঐহিত্যবাহী পন্নী পরিবারের সন্তান জনাব মোহাম্মদ বায়াজীদ খান পন্নী। হাজারো বিকৃতির নিচে চাপা পড়ে থাকা আল্লাহ-রসুলের প্রকৃত ইসলামকে তার অনাবিল রূপে মানবজাতির সামনে তুলে ধরলেন তিনি। কোর’আন হাদিস ও অকাট্য যুক্তি দিয়ে তিনি প্রমাণ করে দিলেন ইসলামে ধর্মীয় কাজের বিনিময়ে কোনোরূপ অর্থ গ্রহণ করা হারাম, জঙ্গিবাদ একটি ভ্রান্ত মতবাদ, ধর্ম নিয়ে রাজনীতি চলে না। ধর্ম এসেছে মানুষের কল্যাণ সাধনের জন্য, স্বার্থ হাসিলের জন্য নয়। তাঁর এই বলিষ্ঠ উচ্চারণ ধর্মব্যবসায়ী গোষ্ঠীর ভিত নাড়িয়ে দিল। জনগণের সামনে তাদের মুখোস দিন দিন খুলে যেতে লাগল। ধর্মব্যবসায়ীরা তাঁর মুখ বন্ধ করার জন্য উঠে পড়ে লাগে। কিন্তু তিনি থাকেন সত্যের উপর অবিচল, অনড়, সংশপ্তক।
১৯৯৯ সনে হেযবুত তওহীদের বর্তমান এমাম জনাব হোসাইন মোহাম্মদ সেলিমের হাত ধরে নোয়াখালী জেলায় শুরু হয় আন্দোলনের কার্যক্রম। এখানেও যে শ্রেণিটি ধর্মকে বিক্রি করে জীবনধারণ করে থাকে তারা একাট্টা হলো হেযবুত তওহীদের বিরুদ্ধে। তাদের বড় শক্তি হলো তারা চাইলেই ওয়াজের দ্বারা সাধারণ ধর্মবিশ্বাসী মানুষের ধর্মীয় আবেগকে উত্তেজিত করে তুলতে পারে। সাধারণ মানুষ ধর্ম সম্পর্কে গভীর জ্ঞান রাখে না। তাই আলেম নামধারী ধর্মব্যবসায়ীরা যখন তাদেরকে যাই বলেন তারা সেটাই বিশ্বাস করে। এভাবে তাদেরকে দিয়ে ধর্মের দোহাই দিয়ে বহু নৃশংস কর্মকা- করিয়ে নেওয়া হয়। এই ধর্মব্যবসায়ী শ্রেণিটি সাধাণ মানুষের মধ্যে রটিয়ে দিল হেযবুত তওহীদ খ্রিষ্টান, তারা কালো কাপড় দিয়ে দাফন করে, বসিয়ে কবর দেয়, উরম্নতে সিল দিয়ে তাদেরকে খ্রিষ্টান হতে হয়, পূর্ব দিকে ফিরে নামাজ পড়ে ইত্যাদি। এদিকে প্রাচীন গ্রাম্য শত্রুতা চরিতার্থ করার জন্য উঠে পড়ে লাগে পোরকরা গ্রামের দুটো পরিবার। একটি হচ্ছে ইউনুস মাস্টারের পরিবার আরেকটি আলী হায়দারের পরিবার। তাদের প্রত্যড়্গ নেতৃত্বে ও পৃষ্ঠপোষণে ধর্মব্যবসায়ীরা বানোয়াট মিথ্যা সব অপপ্রচার করে মানুষের মনকে হেযবুত তওহীদের বিরুদ্ধে বিষিয়ে তোলে।
আরেকটি শ্রেণি যারা ধর্মকে রাজনীতির হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করছে তারা হেযবুত তওহীদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়। কারণ ধর্ম নিয়ে রাজনীতি যে একপ্রকার ভাওতাবাজি তা জনগণের সামনে ইসলামের দলিল ও ইতিহাস থেকে তুলে ধরছে। সত্য জেনে গেলে তো আর ভোট মিলবে না, দাওয়াতও জুটবে না।মসজিদে মসজিদে, ওয়াজ মাহফিলে এমন কি মাইকিং করে অপপ্রচার প্রোপাগান্ডা করে মানুষের কান ভারি করে তোলা হয়েছে।
সমাজে যারা আলেম মওলানা মুফতি বলে সম্মানিত, মাদ্রাসায় পড়া লোকদের মুখে এসব কথা শুনে সাধরণ ধর্মবিশ্বাসী মানুষ বিনাবিচারে তা বিশ্বাস করে নেয়। হেযবুত তওহীদের সবগুলো পরিবারকে একঘরে করে রাখা হয়। কেউ তাদের কাছে জিনিসপত্র বিক্রি করে না, কেউ তাদের খেত-খামারে কাজ করে না। প্রশাসনিকভাবেও হয়রানি করা হয়। রাস্তাঘাটে আক্রমণ করে মারধোর করা হয়। আর দিনরাত গালিগালাজ ও মিথ্যা অপবাদবর্ষণ তো রয়েছেই।
২০০০ থেকে ২০১৬ পর্যন্ত বাপ-দাদার ভিটা থেকে তাদেরকে উৎখাত করে দেওয়ার জন্য এই সামাজিক চাপ চলতে থাকে। এরই মধ্যে চার চারবার চালানো হয় সশস্ত্র হামলা। হাজার হাজার মানুষ নিয়ে একবার ২০০০ সনে হেযবুত তওহীদের বর্তমান এমামের বাড়িতে সারারাত চলে ইট পাথর নিক্ষেপ। স্থানীয় কয়েকজন মুরুব্বিদের মধ্যস্থতায় তা চূড়ান্ত সহিংসতায় রূপ না নিলেও সম্পদের ক্ষয়ক্ষতী হয় প্রচুর। এরপর কিছু করতে না পেরে দেওয়া হয় মিথ্যা মামলা। সেই মামলায় নির্দোষ প্রমাণিত হয় হেযবুত তওহীদ।
২০০৯ সন। আবারও শুরু হয় ষড়যন্ত্র। সহিংসতার পটভূমি তৈরির জন্য দিনের পর দিন চলতে থাকে খুতবা ও মাহফিলের মধ্যে বিদ্বেষপ্রচার। চলে গুজবের ছড়াছড়ি। পটভূমি প্রস্তুত হলে একদিন সকাল থেকে মসজিদের মাইকে শুরু হয় ধর্মোন্মাদনা সৃষ্টি করে হামলা করার নির্দেশ। হাজার হাজার মানুষ ভেঙে পড়ল হেযবুত তওহীদের গুটিকয় সদস্যের উপর। একে একে তাদের আটটি বাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হল। কয়েকজনকে মেরে মারাত্মক আহত করা হল। ঘেরের শত শত মণ মাছ বিষ দিয়ে মেরে ফেলা হল, নষ্ট করে দেওয়া হল ফলদায়ী বৃক্ষ, কেটে নেওয়া হয় খেতের পাকা ফসল। পাশাপাশি চলল মিথ্যা মামলা দিয়ে নির্যাতন। কোলের শিশু থেকে শুরু করে সত্তর বছরের বৃদ্ধ বৃদ্ধাকেও মাসের পর মাস কারাগারে থাকতে বাধ্য করা হল ষড়যন্ত্রমূলক মামলার জেরে। মিথ্যা মামলা দিয়ে হেযবুত তওহীদের সদস্যদেরকে বন্দী করে এবার তাদের বাড়িঘর ও জমিজমাগুলোকে তারা দখল করে নেওয়ার পাঁয়তারা কষতে লাগল। দীর্ঘ চার মাস কারাবন্দী থাকার পর তারা নিজ এলাকায় যেতে পারেন না। এখানে ওখানে দীর্ঘকাল মানবেতর জীবনযাপনের পর মহামান্য হাইকোর্ট জেলা প্রশাসনের প্রতি নির্দেশ প্রদান করেন হেযবুত তওহীদের ক্ষতিগ্রস্ত সদস্যদেরকে পুনর্বাসন করার জন্য। সে মতে পুলিশের সহযোগিতায় তারা নিজ নিজ বসতভিটায় বসবাস করতে আরম্ভ করেন। তাদের ভস্মীভূত গুড়িয়ে দেওয়া বাড়িঘরগুলোকে আবার মেরামত করেন।
এই একটি ঘটনারও বিচার হয়নি, একটা টাকাও ক্ষতিপুরন দেওয়ার প্রশ্ন ওঠেনি। বারবার লুটপাট ধ্বংসযজ্ঞ ও অগ্নিসংযোগ করে আসামিরা পার পেয়ে গেছে। তারা মনে করেছে তারা যতই অন্যায় করম্নক তাদের কিছুই হবে না। এই অহঙ্কারে তারা আরো বেপরোয়া হয়ে ওঠে।
২০১৬ সনের ২২ ফেব্রুয়ারি নয় বছর পর নিজ গ্রামে ফিরে যান হেযবুত তওহীদের এমাম জনাব হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম। জেলা পুলিশের অনুমতিসাপেক্ষ বাড়ির সন্নিকটে ইউনিয়ন পরিষদ অফিসের প্রাঙ্গণে একটি জনসভা করে এলাকাবাসীর প্রতি সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্যরে হাত বাড়িয়ে দেন। গ্রামবাসীকে আপ্যায়ন করেন নিজে উপস্থিত থেকে। কিন্তু তার এই উদারতা, ক্ষমা ও আতিথেয়তার প্রতিদান এলো ভিন্ন উপায়ে।
১১ মার্চ ২০১৬। শুক্রবারে টুপি পাঞ্জাবি পরিহিত কিছু যুবকের আবির্ভাব ঘটে গ্রামটিতে। তারা মোটর সাইকেলে করে মসজিদে মসজিদে গিয়ে একটি বেনামী হ্যান্ডবিল রেখে আসে। মসজিদের ইমাম সাহেবরা খোতবার সময় সেই ঠিকানাহীন হ্যান্ডবিলটি মুসলস্নীদের পাঠ করে শোনান। হ্যান্ডবিলটির শিরোনাম – “হেযবুত তওহীদ কুফরি সংগঠন”। এর প্রতিটি লাইনে লাইনে লিখিত হয়েছে হেযবুত তওহীদ সম্পর্কে বানোয়াট তথ্য, মিথ্যা অপবাদ ও অপপ্রচার। যে কথাগুলোয় ধর্মান্ধ জনতা ড়্গপ্তি হয়ে ধ্বংসলীলায় মেতে ওঠে সেই কথাগুলো ধর্মব্যবসায়ীদের চেয়ে কে ভাল জানবে?
এরপর তারা তৈরি করে ষড়যন্ত্রের নীল নকশা। হেযবুত তওহীদের সদস্যরা পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ার জন্য ওদিকে তাদের এমামের বাড়ির আঙিনায় তৈরি করছেন একটি মসজিদ। আশপাশে বসবাসকারী সদস্যরা এসেছে স্বেচ্ছাশ্রম দিতে। সেখানে তারা আজান দিয়ে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তেও শুরু করেন। গুজব রটনাকারীরা সর্বত্র প্রচার করতে থাকে, এটি আসলে একটা গির্জা বানানো হচ্ছে। আমাদের গ্রামে খ্রিষ্টানদের গির্জা হতে দেওয়া যাবে না। ওয়াজ মাহফিল করে ফের চলতে থাকে অবিশ্রাত্ম মিথ্যাচার, চোখরাঙানি ও ফতোয়াবাজি।
আসে ১৪ মার্চ
অপপ্রচারে পুরো এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছিল। মানুষের কানে কানে পৌঁছে দেওয়া হলো একটি আওয়াজ – খ্রিষ্টান মারো, গির্জা ভাঙো। কওমী মাদ্রাসাগুলো থেকে ছাত্রদেরকে এনে মিছিল করানো হলো। শিক্ষকদের আনা হলো সহিংসতায় ইন্ধন যোগানোর জন্য।
ভন্ডামির নমুনা দেখুন। সেই ধর্মব্যবসায়ীরা প্রশাসনকে বোঝাতে লাগল যে তারা শান্তি বিক্ষপ মিছিল করছেন। নিয়মতান্ত্রিকভাবে স্মারকলিপি জমা দেওয়ার জন্য একটি দল চলে গেল উপজেলা কর্মকর্তার কার্যালয়ে। আর এদিকে তারা শুরু করল হেযবুত তওহীদের সদস্যদেরকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ। তাদের হাতে লাঠিসোটা, কিরিচ, গরু জবাই করা ছুরি, লোহার রড ইত্যাদি। এমন ঘটনা যে ঘটতে পারে তা প্রশাসনকে আগেই বারবার জানানো হয়েছিল। ধর্মোন্মাদনায় মাতাল হয়ে মানুষ কী পর্যন্ত পাশবিক হয়ে উঠতে পারে তা আঁচ করতে পেরে হেযবুত তওহীদের সদস্যরা উপস্থিত হলেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে, গেলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে, গেলেন নোয়াখালী এসপি’র কাছে। সেখানে ষড়যন্ত্রকারীদের স্পষ্ট তালিকা সংবলিত স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে। সবাই আশ্বাস দিলেন যে তারা বিষয়টা দেখবেন। থানায় জিডিও করা হলো কিন্তু থানা ঘটনার সময় কোনো প্রকার পদড়্গপেই নিল না। গড়িমসি করে কালক্ষপ করতে লাগল। হেযবুত তওহীদের সদস্যদের শত আবেদন নিবেদন যেন অরণ্যে রোদন বলেই মনে হলো।
ফলে যা হবার তা-ই হলো। সকাল এগারোটা থেকে শুরু হয় হামলা। হেযবুত তওহীদের নিরস্ত্র সদস্যরা আত্মরক্ষা জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করতে থাকেন কিন্তু হাজার হাজার মানুষের বিরুদ্ধে তাদের কিছুই করার থাকে না। ইট পাটকেল ছোড়া চলতে থাকে বৃষ্টির মতো। হেযবুত তওহীদের সদস্যদের মাথা ফেটে, শরীরের বিভিন্ন স্থানে ধারালো অস্ত্রের আঘাত লেগে রক্তের বন্যা বয়ে যেতে থাকে। তারা আগুন ধরিয়ে একে একে বসতবাড়িগুলো পুড়িয়ে দেয়। মসজিদটাও গুড়িয়ে দেয়। এরপর তারা খোকন ও রুবেল নামে হেযবুত তওহীদের দুজন সদস্যকে নির্মমভাবে জবাই করে হত্যা করে। তাদের হাত পায়ের রগগুলো কেটে ফেলে, তারপর চোখ উপড়ে নেয় ছুরি দিয়ে। লাশ বিকৃত করার পর তা পেট্রোল ঢেলে আগুনে পুড়িয়ে দেয়। সত্য প্রতিষ্ঠার জন্য নিজেদের জীবনকে আলস্নাহর পায়ে সঁপে দেন দুই উম্মতে মোহাম্মদী শহীদ খোকন – শহীদ রুবেল।
এই হত্যাযজ্ঞে যোগ দেওয়ার জন্য তারা পাগলের মতো যে যেভাবে পারে সন্ত্রাসীদেরকে আহ্বান করতে থাকে। ফেসবুকে তারা উল্লাস প্রকাশ করতে থাকে। বলতে থাকে, দুজন খ্রিষ্টানকে আমরা হত্যা করেছি। দুজন মানুষকে প্রকাশ্য দিবালোকে জবাই করার পর প্রশাসন এই সহিংসতা বন্ধ করতে উদ্যোগী হয়। তারা হেযবুত তওহীদের আহত সদস্যদেরকে উদ্ধার করার নাম করে থানায় নিয়ে আসে। প্রশাসনের চোখের সামনে সব ঘটেছে। তারা যদি শুরুতেই কার্যকর ভূমিকা নিত তাহলে এত বড় ঘটনা ঘটত না। সারাদিন দেশি-বিদেশি গণমাধ্যমগুলোতে এই সংবাদ প্রচারিত হতে থাকে। কিন্তু হায়! এই আহত, বৃদ্ধ, মৃতপ্রায় মানুষগুলোর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে পরদিন জেলা কারাগারে তারা প্রেরণ করে। তারা পরে আদালতের সিদ্ধান্ত মুক্তিলাভ করেন।
পরবর্তীতে সন্ত্রাসীদের হোতাদের বিরুদ্ধেও মামলা করা হয়। আজ তারা অনেকেই থানা-পুলিশের ভয়ে ঘর ছাড়া, কেউ বিদেশে, কেউ পালানো পথ খুঁজছে। আর যারা ধর্মব্যবসায়ী উস্কানিদাতাদের খপ্পরে পড়ে ন্যক্করজনক ঘটনাটি ঘটিয়েছে তারা তাদের ভুল বুঝতে পেরেছে। কিন্তু কর্মফল কেউ এড়াতে পারবে না। যে নির্দোষ মানুষগুলো ধর্মের নামে চলা যাবতীয় অন্যায়ের বিরম্নদ্ধে রুক্ষে দাঁড়িয়েছিল তাদের একটাই চাওয়া, ১৪ মার্চের সেই ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার সুষ্ঠু তদন্ত করা হোক, এবং প্রকৃত অপরাধীরা দৃষ্টান্তমূলক শান্তি পাক।