আসলে দুইটা বানানই অভিধানে আছে, বাংলা একাডেমি কর্তৃক প্রকাশিত আরবি, ফারসি, তুির্ক, হিন্দি, ও উর্দু শব্দের বাংলা ভাষার অভিধানের ৪৬ পৃষ্ঠায় প্রচলিত বানান লেখা হয়েছে ‘ইসলাম’ এবং আভিধানিক বানান লেখা হয়েছে ‘এসলাম’। শব্দটা আমরা নতুন করে লিখছি না। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম, বিশিষ্ট এসলামী চিন্তাবিদ মওলানা আকরম খাঁ প্রমুখ লেখকগণও এসলাম, মোসলেম শব্দগুলি লিখেছেন। একটি স্থানের নাম এখনও লেখা হয় ‘এলাহাবাদ’। আরবি উচ্চারণের নিয়ম হচ্ছে- যের থাকলে
এ-কার এবং পেশ থাকলে ও-কারের উচ্চারণ করতে হয়, আর খাড়া যের বা যেরের পর ইয়া-সাকিন থাকলে ই-কারের উচ্চারণ করতে হয় এবং উল্টা পেশ বা পেশের পর ওয়া-সাকিন থাকলে উ-কারের উচ্চারণ করতে হয়। আর যবর থাকলে আ-কারের উচ্চারণ করতে হয়। অর্থাৎ অপরিহার্য পাঁচটি স্বরধ্বনির উচ্চারণ আরবি ভাষাতেও রয়েছে।
আলেম, হাফেজ, জামে মসজিদ, কাফের, জাহেল, ফাসেক, হেফাজত ইত্যাদি শব্দগুলি আমরা সকলেই বলে থাকি। নিশ্চয় হাফেজ সাহেবকে কেউ হাফিজ সাহেব কিংবা জামে মসজিদকে কেউ জামি মসজিদ বলেন না। অর্থাৎ আরবি শব্দে এ-কারের ()ে ব্যবহার সকলেই করে। একইভাবে মোবারক, মোসলেম উদ্দিন, মোশাররফ ইত্যাদি আরবি শব্দে ও-কারের (ে া) উচ্চারণও সকলেই করে। কাজেই যে কারণে হিফাজত না লিখে হেফাজত লেখা হয়, ইলহাম না লিখে এলহাম লেখা হয় সে কারণেই আমরা ইসলাম না লিখে এসলাম লিখছি। যা হোক, দু’টি শব্দই যেহেতু অভিধানে আছে সেহেতু এর যেকোনোটি ব্যবহারে বাধা আছে বলে মনে করার কোনো কারণ নেই।
বাংলা, ইংরেজি, হিন্দি, উর্দু, ফারসি, চাইনিজসহ সকল সমৃদ্ধ ভাষাতেই এ-কার এবং ও-কারের উচ্চারণ রয়েছে। এটা অতি সাধারণ জ্ঞান যে সমৃদ্ধ ভাষাতে অন্তত পাঁচটি স্বরধ্বনির ব্যবহার থাকতেই হবে, যথা- আ-কার, ই-কার, উ-কার, এ-কার এবং ও-কার। কোনো ভাষা থেকে যদি এর একটি ধ্বনিও বাদ দেওয়া হয় তবে ভাষাটি অত্যন্ত দরিদ্র হয়ে পড়ে। যেমন বাংলা ভাষা থেকে যদি এ-কারের এবং ও-কারের উচ্চারণ বাদ দেওয়া হয় তবে “বাংলাদেশকে ভালোবাসি” কথাটির উচ্চারণ করবেন কিভাবে? একটি বাক্য বলতেই যেখানে কষ্ট হচ্ছে সেখানে ধ্বনি দুটি বাদ দিয়ে একটি ভাষাকে কল্পনা করা নিতান্ত বোকামী।কেউ মানুক আর না মানুক সেটা তার ব্যাপার। কিন্তু সাধারণ মানুষদেরকে এই অপপ্রচার চালিয়ে বিভ্রান্ত করার তো কোনো মানে নেই যে, হেযবুত তওহীদ এসলাম বিকৃত করে ফেলছে, তারা ইসলামকে এসলাম লিখছে ইত্যাদি। এতে আপনারাও যেমন প্রকৃত সত্য থেকে দূরে থাকছেন তেমনি সাধারণ মানুষগুলিও প্রকৃত সত্য জানতে পারছে না। সম্মানিত পাঠকদের উদ্দেশে আমাদের কথা হলো- আপনারা ইসলামও ব্যবহার করতে পারেন এসলামও ব্যবহার করতে পারেন। তবে অধিকতর যুক্তিসংগত হবে যদি এসলাম ব্যবহার করেন। আমরা আমাদের পত্রিকার লেখাগুলি আপাতত ইসলাম লিখছি, তবে এমামুযযামানের মূল লেখার মধ্যে এসলাম লিখছি। যাতে কেউ বানান নিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে না পারে। তবে এ ব্যাপারে জনজরিপ চলছে, মতামত গ্রহণ চলছে, গবেষকদের, চিন্তাশীলদের, ভাষা বিজ্ঞানীদেরও মতামত গ্রহণ চলছে। মতামতের ভিত্তিতেই আমরা সিদ্ধান্তে পৌঁছব। অচিরেই সত্য উদ্ভাসিত হবে সেদিন সবাই এসলামই লিখবেন এনশা’ল্লাহ, সেদিনের অপেক্ষায় আমরা থাকলাম। সেদিন এনশা’ল্লাহ স্বার্থান্বেষীরা অপপ্রচার করে আর সুবিধা করতে পারবে না। প্রকৃত শব্দটাই সেদিন সবাই লিখবে এনশাল্লাহ।